পরিচয় মুবারক


পঞ্চদশ শতকের যিনি মুজাদ্দিদ এবং যিনি মুজাদ্দিদে আ’যম উনার মুবারক পরিচয়, আগমনের প্রেক্ষাপট, কারণ ও তাজদীদের ব্যাপ্তির সংক্ষিপ্ত বিবরণ

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, মুহ্ইউস সুন্নাহ্, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, ক্বইয়ূমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আওলাদু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা, রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলাহ্‌
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম
আ‌লহাসানী, ওয়ালহুসাইনী, ওয়ালকুরাইশী, ওয়ালহানাফী, ওয়ালক্বাদিরী, ওয়ালচীশতী, ওয়ালনক্‌শবন্দী, ওয়ালমুজাদ্দিদী, ওয়ালমুহম্মদী

বংশ পরিচয়:
মুজাদ্দিদে আ’যমের মুবারক বংশ পরস্পরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সম্পৃক্ত। পিতা-মাতার দিক থেকে তিনি যথাক্রমে হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাথে যুক্ত। এ কারণে তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। রক্ত মুবারকের ধারাবাহিকতায় সঙ্গতকারণেই তিনি আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাঈশী। অর্থাৎ তিনি আওলাদুর রসূল।
পথভ্রষ্ট ও গোমরাহীতে নিমজ্জিত মানুষকে হিদায়েত দানের লক্ষ্যে সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ,হাবীবুল্লাহ, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতি রহমতুল্লাহি আলাইহি বিভিন্ন দেশ হিজরত ও সফর শেষে আল্লাহ পাক এবং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সদয় নির্দেশে ছয়শত হিজরীর মাঝামাঝি সময়ে আজমীর শরীফে তাশরীফ আনেন। তাঁরই অন্তরঙ্গ সঙ্গী ঐ যামানায় আল্লাহ পাক-এর খাছ লক্ষ্যস’ল মাদারজাদ ওলী, আওলাদুর রসূল, হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আবূ বকর মুজাদ্দিদী রহমতুল্লাহি আলাইহিও আজমীর শরীফ তাশরীফ আনেন। হিদায়েত দানের কাজে নিমগ্ন হয়ে তিনি আজমীর শরীফ থেকে যান এবং সেখানেই ইন্তিকাল করেন। তাঁর অধস’ন সন্তান হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলাউদ্দিন রহমতুল্লাহি আলাইহি এগারশ’ হিজরীর শেধার্ধে হিদায়েতের আলো নিয়ে আজমীর শরীফ থেকে চট্টগ্রাম এবং অতঃপর সোনারগাঁও হয়ে বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জিলার আড়াইহাজার থানাধীন প্রভাকরদী গ্রামে হিদায়েতের কেন্দ্র গড়ে তোলেন।
তাঁর পুত্র হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মালা উদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি। তাঁর পুত্র সাইয়্যিদ মুহম্মদ ইলাহী বখশ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তাঁর পুত্র সাইয়্যিদ মুহম্মদ এলাহী বখশ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তাঁর পুত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলিছুর রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁরই পুত্র আলোচ্য মুজাদ্দিদে আ’যম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী।

পিতা-মাতা:
মুজাদ্দিদে আ’যমের বুযূর্গ পিতা-মাতা উভয়েই আল্লাহ পাক-এর খাছ ওলী। পিতা ওলীয়ে মাদারজাদ, আফদ্বালুল ইবাদ, ফখরুল আউলিয়া, লিসানুল হক্ব, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, ছাহিবে কাশফ ওয়া কারামত, ছাহিবে ইসমে আ’যম, গরীবে নেওয়াজ, কুতুবুযযামান, আওলাদুর রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলিছুর রহমান আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাঈশী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন আল্লাহ পাক-এর লক্ষ্যস’ল খাছ ওলী। তিনি নায়িবে মুজাদ্দিদ, কুতুবুল আলম, আলহাজ্জ, হযরতুল আল্লামা আবু নছর মুহম্মদ আব্দুল হাই ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিশিষ্ট খলীফা।

ইলম, আমল ও কামিয়াবীঃ
সূক্ষ্ম মননশীলতা, অনাবিল অনুসাধিৎসা, মুরাকাবার নিবিষ্টতা, গরিচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণা, ইলম অর্জনের আকুলতা, আল্লাহ পাক এবং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মা’রিফাত ও মুহব্বতের অতলান্ত গভীরতা এবং মুজাদ্দিদে আ’যমসুলভ মানসিকতা তিনি জন্ম সূত্রেই লাভ করেছেন। তিনি আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদায় পরিপূর্ণরূপে বিশ্বাসী। ইসলাম বিরোধী পুঞ্জীভূত তমসা দূর করে হিদায়েতের নূরে দুনিয়া আলোকিত করার জন্য আল্লাহ পাক তাঁর মাঝে সকল গুণ-বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। বিশ বছর বয়স মুবারকের মধ্যেই তিনি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর, ফিক্বাহ, উছূল, মানতিক, বালাগাত, ফাছাহাত, নাহু, ছরফ, সাহিত্য, কাব্য,ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন, বিজ্ঞানসহ ইসলামী ইলম-এর সকল শাখায় অতুলনীয় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। মুজাদ্দিদে আ’যমের জীবনের আয়োজন, ইলম, আমল ও কামিয়াবীর পরিধি ব্যাপকতর। ইলম, আমল, সমঝ্ ও মুহব্বত-মা’রিফাত নিজস্ব সম্পদ হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ পাক-এর উদ্দিষ্ট ব্যবস্থায় তিনি আত্মকেন্দ্রীক হতে পারেন না। মুজাদ্দিদে আ’যমের দায়িত্ব অপার। ইলমে তাছাউফ অর্জনের শরঈ কারণে তিনি কুতুবুল আলম, আমীরুশ শরীয়ত ওয়া রাহনুমায়ে তরীক্বত, সুলতানুল আরিফীন, শাইখুল আসাতিযা, নাজমুল আউলিয়া, জামিউল উলুম, ওয়াল হিকাম, মুহইস সুন্নাহ, মাহিউল বিদয়াত। লিসানুল উম্মত, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, তাজুল মুফাসসিরীন, ফখরুল ফুক্বাহা, আল্লামাতুল আইয়াম, মুফতিউল আ’যম, আশিকু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, শাহ ছূফী, আলহাজ্জ, হযরতুল আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ নানুপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট বাইয়াত হয়ে প্রধান খলীফার মর্যাদালাভ করেন এবং পরিপূর্ণ কামিয়াবী হাছিল করেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের পরিপূর্ণ অনুসারী। তিনি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্ঘরূপে সুন্নতের অনুকরণ ও অনুসরণ করেন। মুস্তাহাব আমলও তিনি কখনো তরক করেন না। তাঁর ইবাদতে মগ্নতা ও ফিকিরের গভীরতা যেনো গারে হেরায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক আল্লাহ পাককে অনুভবের মতো এক উদ্বেলিত ও নিরন্তর মনোনিবেশ।

রাসূলে মকবুল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে নিছবতঃ
মুজাদ্দিদে আ’যম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ নায়িব এবং তাঁর ক্বায়িম মক্বাম। তিনি সুন্নত যিন্দাকারী এবং বিদ্‌য়াত অপসারণকারী। অনুক্ষণ তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বতে নিমগ্ন। আচরণ, বিচরণ, কথা, কাজ, সীরত, ছূরত ও আমলের কোন কিছুতেই তিনি সুন্নতের খিলাফ কিছু করেন না। দায়িমী নিছবতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সদয় ইহ্‌সান ও নির্দেশেই আওলাদুর রসূল, মজুাদ্দিদে আ’যম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর তাজদীদসহ যাবতীয় কাজ পরিচালিত হয়।

মুজাদ্দিদ কাকে বলা হয়ঃ
ইসলাম মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ইসলাম আল্লাহ পাক-এর মনোনীত, নিয়ামত ও সন’ষ্টিপ্রাপ্ত পরিপূর্ণ এক দ্বীনি ব্যবস্থা। এতে মানুষকে হাক্বীক্বীভাবে প্রশিক্ষিত ও নিবিষ্ট করার কাজে পৃথিবীতে যুগে যুগে নিয়োজিত থাকেন ওয়ারাসাতুল আম্বিয়াগণ। আল্লাহ পাক-এর মত এবং তাঁর প্রিয়তম হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রদর্শিত পথে যাঁরা আমরণ ইস্তিক্বামত থাকেন এবং মানুষকে ইস্তিক্বামত করেন, তাঁরাই ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া। অবুঝ, লক্ষ্যভ্রষ্ট ও বিপথগামী মানুষের আক্বীদা, অনুভব ও অনুসরণকে সুন্নতের বিধানে আল্লাহমুখী করে দেয়ার জন্য এমন মহান ব্যক্তিত্ব দুনিয়ায় সব সময়ই মওজুদ থাকেন। এ মহান ও আয়াসসাধ্য দায়িত্বপালনের জন্য প্রতি শতাব্দীতেই সংষ্কারকের আবির্ভাব ঘটে। এমন সংস্কারককে মুজাদ্দিদ বলা হয়। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছেঃ “আল্লাহ পাক এই উম্মতের হিদায়েতের জন্য প্রত্যেক শতাব্দীর প্রারম্ভে এমন এক ব্যক্তিত্ব পাঠিয়ে থাকেন, যিনি উম্মতের জন্য ইসলাম ধর্মের সংষ্কারসাধন করে থাকেন।”

মুজাদ্দিদে আ’যম কাকে বলা হয়ঃ
কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস বিরোধী ভ্রান্ত আক্বীদা, আমল ও আখলাক নির্মূলে লক্ষ্যচ্যূত মানুষের ঈমান ও আক্বীদা নবায়নসহ তাদেরকে সুন্নত পালনে অভ্যস্ত করে তোলার কাজে নিয়োজিত ওলীগণকে মুজাদ্দিদে আ’যম বলা হয়। সুন্নত অবলোপনে দুনিয়ালোভী আলিমদের ঘৃণ্য কারসাজি যখন অব্যাহত থাকে, দূর্বলের প্রতি তথাকথিত সবলের উৎপীড়নের মাত্রা যখন সীমা লঙ্ঘন করে, ইনসাফের বাণী যখন নিভৃতে কাঁদে, জালিমের অত্যাচারে মজলুম যখন অতিষ্ঠ হয়, দুনিয়াদার আলিমদের নেপথ্য যোগানদারিতে ইহুদী-নাছারাসহ তাবৎ বিধর্মীরা যখন মুসলমানের ঈমান ও আক্বীদা বিনষ্টসহ সমূহ ক্ষতিসাধনে লিপ্ত থাকে এবং তাদের প্রিয় আবাসভূমি পর্যন্ত গ্রাস করতে উদ্যত হয়, নিকৃষ্ট বুদ্ধিজীবি, ও উলামায়ে ছূ’রা যখন আপন স্বার্থ হাছিলে বিধর্মীদের কূটকৌশলে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়, তখনই এসব থেকে পরিত্রানের জন্য একজন মুজাদ্দিদে আ’যমের তাজদীদ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে। মুজাদ্দিদের কর্মপরিধি থেকে মুজাদ্দিদে আ’যম-এর কর্মপরিধি ব্যাপকতর। মুজাদ্দিদে আ’যমের প্রভাব বিশ্বব্যাপী।

পঞ্চদশ শতকের মুজাদ্দিদে আ’যম-এর আগমন এবং তাজদীদের প্রকৃতি ও পরিধিঃ
শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিক্রমণে তাওহীদ ও রিসালত পরিপন্থী ঈমান, আক্বীদা ও আমলে মানুষ গোমরহীতে নিমজ্জিত হয়। কালের প্রবাহে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে মানুষের ভ্রান্ত উপলব্ধি, নৈতিক অবক্ষয় ও বিরূপ জীবনাচরণের মধ্যে বিদ্য়াত-এর জন্ম হয় এবং সুন্নাহ ও শরীয়ত বিরোধী কাজের প্রসার ঘটে। ক্রমান্বয়ে মানুষ শিরক ও কুফরীর তমসায় আচ্ছন্ন হয়। বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে এমন অবস্থাই বিরাজমান। মহান আল্লাহ পাক এবং তাঁর প্রিয়তম হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মত-পথের বিপরীত ও সাংঘর্ষিক যাবতীয় আক্বীদা, আমল, আখলাক ও রসম-রিওয়াজের মূলোৎপাটন করে হাক্বীক্বী ইসলাম ধর্ম আবাদের অনূকুল ক্ষেত্র তৈরীর প্রয়োজনে আল্লাহ পাক-এর উদ্দিষ্ট ব্যবস্থায় এবং রউফুর রহীম, রহমতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সদয় ইহ্সানে পঞ্চদশ শতকের মুজাদ্দিদে আ’যম-এর প্রয়োজন অনিবার্য হয়ে উঠে। রিসালতের ধারার ইসলামী রেনেসাঁ (তাজদীদ) এবং আধ্যাত্ম চিন্তা ও ইলমে তাছাউফ-এর সুষ্ঠু বিন্যাস ও প্রয়োগে নিরন্তর নিয়োজিত থাকায় মুজাদ্দিদে আ’যম-এর মর্যাদা সমধিক। দুনিয়ার প্রতিকূল পরিবেশ-প্রতিবেশে তাঁর তাজদীদের পরিধি ব্যাপক ও ভিন্নতর।

পঞ্চদশ শতকের মুজাদ্দিদে আ’যম-এর পরিচিতিঃ
বর্তমান প্রতিকূল প্রেক্ষাপটে মানুষের পরিত্রানের জন্য আল্লাহ পাক-এর মনোনীত এবং কুল কায়িনাতের মুবারকবাদ সিক্ত খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, মুহ্ইউস সুন্নাহ্, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, ক্বইয়ূমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আওলাদু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা, রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলাহ্‌
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনিই হলেন পঞ্চদশ শতকের মুজাদ্দিদে আ’যম। তাঁর মর্যাদা, মরতবা, শান, মান, ইজ্জত ও ঐতিহ্যের অত্যুঙ্গ সোপান কেবল আল্লাহ পাক এবং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সম্যক অবহিত। অগণিত লক্ববের মধ্যে তাঁর একটি মূল লক্বব হলো “মুজাদ্দিদে আ’যম”।

তাজদীদের ক্ষেত্রঃ
মুজাদ্দিদে আ’যমের তাজদীদের মূল লক্ষ্য ও ক্ষেত্র কোন জনপদের ভৌগোলিক সীমানা অথবা অবকাঠামো নয়। লক্ষ্য হলো মানুষের অন্তরের নোংরা অনুভব, অনৈতিক আচরণ ও শরীয়ত গর্হিত কাজ। ইসলামী পরিভাষায় যার নাম ঈমান, আক্বীদা, ইলম, আমল ও ইখলাছ। একটি সুনির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মধ্যে জনগণ, সরকার ও সার্বভৌমত্বের সমন্বিত রূপকে রাষ্ট্র বলা হয়। ইসলাম এমন রাষ্ট্র সমর্থন করে না। কারণ, ইসলাম নির্দিষ্ট কোন সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়। ইসলাম সার্বজনীন এবং এর আবেদন বিশ্বব্যাপী। ইসলামের কাজ হলো, জগৎময় মানুষের অন্তরকে শাণিত করে তোলা এবং তাঁদের মন ও মননে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের সমন্বয়ে সৃষ্ট ইলমে তাছাউফের নির্যাস প্রবেশ করিয়ে দেয়া। অর্থাৎ মানুষকে পরিপূর্ণরূপে আল্লাহওয়ালা করে তোলা এবং পৃথিবীব্যাপী “খিলাফত আলা মিন হাজিন নুবুওওয়া” প্রতিষ্ঠিত করা। এ লক্ষ্যে মুজাদ্দিদে আ’যম-এর তাজদীদের ক্ষেত্র গোটা বিশ্বের সকল মানুষ। বিপন্ন ও পথহারা মানুষের হিদায়েতের জন্য তিনি বেমেছাল রূহানী কুওওয়ত সম্পন্ন আলোকবর্তিকা। অন্যসব ধর্ম ও জাতি, গোত্র, বর্ণ নির্বিশেষে অপামর মানুষের জন্যও তিনি মনোনীত হাদী। পরিপূর্ণরূপে ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ অনুসরণে মানুষকে আল্লাহওয়ালা করে তোলা এবং জগৎব্যাপী ইনসানিয়াত প্রতিষ্ঠায় পঞ্চদশ শতকে তিনি আল্লাহ পাক এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শ্রেষ্ঠতম উপহার। আল্লাহ পাক এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আহকামের প্রতি জগৎব্যাপী মানুষের অনীহা, ভ্রান্ত আক্বীদা, সুন্নতের প্রতি অবজ্ঞা এবং ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করে তিনি বেদনাক্লিষ্ট হয়ে পড়েন। এ বেদনাবোধই তাঁর অপ্রতিরোধ্য তাজদীদের ভিত্ রচনা করে।

তাজদীদের প্রণালীঃ
বিপর্যস্ত আক্বীদা, কুফরী ও নাস্তিকতার ঘোর দুর্দিনে আল্লাহ পাক এবং তাঁর প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ লক্ষ্যস’ল মুজাদ্দিদে আ’যম হাক্বীক্বী হিদায়েতের জন্য বিশ্ববাসীকে ডাক দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে তাঁর মুবারক পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত মাসিক “আল বাইয়্যিনাত” ও দৈনিক “আল ইহ্সান” পত্রিকার সঠিক দিক নির্দেশনায় বিশ্বময় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বাতিলের মুখোশ উম্মোচন ও বাতিলকে পর্যুদস্ত করে হক্ব মত-পথ প্রতিষ্ঠায় এ দু’টি পত্রিকার অমিয় আহ্বানে মানুষ দুনিয়াদার আলিম, ইসলামের শত্রু ও বাতিলকে চিনতে ও বুঝতে শিখ্ছে। মানুষের ইছলা’র জন্য এর পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন কিতাব রচনা করে ইসলামের হক্ব বক্তব্য তুলে ধরছেন। একইভাবে সহজ-সরল এবং হৃদয়গ্রাহীভাব ও ভাষায় নিয়মিতভাবে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ওয়াজ-নছীহত ও তা’লীম তালক্বীন-এর মাধ্যমে আপামর মানুষের মনে ইসলামী জয্বা সৃষ্টি করছেন। দেশ-বিদেশের অগণিত মানুষ তাঁর মুরীদ হচ্ছে। অসংখ্য বিধর্মী ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে। তাঁর যিকির-ফিকিরের তা’লীমে লক্ষ লক্ষ মুরীদের অন্তর ইছলাহ হচ্ছে। ইলমে তাছাউফে দীক্ষিত হয়ে অগণিত মানুষ সত্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অবলুপ্ত সুন্নত জিন্দায় মানুষকে হক্ব মত-পথে ফিরিয়ে আনতে তাঁর বিশ্বময় অতুলনীয় অবদান ইতোমধ্যেই মানুষ জেনে ফেলেছে।

কতিপয় তাজদীদের বিষয়ঃ
মুজাদ্দিদে আ’যমের তাজদীদের মূল বিষয় হলো, কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরোধী বদ্ আক্বীদা, আমল, অন্যায়, অবিচারের মূলোৎপাটন। ইসলাম বিরোধী যাবতীয় বিশ্বাস ও কার্যকলাপই তাঁর তাজদীদের ক্ষেত্র। দুনিয়ালোভী আলিমদের মনগড়া ফতওয়ার কারণে বর্তমানে অনেক মানুষ সরাসরি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ বিরোধী আক্বীদা ও আমলে লিপ্ত। মুজাদ্দিদে আ’যম শরীয়তের মূল দলীল, অর্থাৎ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ভিত্তিতে সঠিক আক্বীদা ও আমল তুলে ধরছেন এবং ইসলাম ধর্মে প্রবেশকৃত সকল কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াত অপসারণের কাজে সর্বক্ষণ নিয়োজিত রয়েছেন। যেসব হারাম ও নাজায়িয বিষয়ের মূলোৎপানে তিনি

নিয়োজিত, তাঁর কতিপয় নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
বেপর্দা, ছবি, গণতন্ত্র, খেলাধুলা, নারী নেতৃত্ব, মুসলমানের মৌলবাদ দাবী, ব্লাসফেমী আইন, নবী-রসূল আলাইহিস্সালাম, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং আওলিয়ায়ে কিরামগণকে দোষারোপ করা, টিভি, ভিসিআর, ভিডিও, হরতাল, লংমার্চ, জন্ম নিয়ন্ত্রণ, সুদ-ঘুষ, রোযা রেখে ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন ইত্যাদি নেয়া, মাযহাব মানা, বিজাতীয় ও বিধর্মী যাবতীয় আমল ইত্যাদি।

মুজাদ্দিদে আ’যমের বিরোধিতাঃ
বলা হয়, “প্রত্যেক হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম, অর্থাৎ প্রকৃত হাদীর বিরোধিতার জন্য একজন ফিরাউন অর্থাৎ একজন বিরোধী রয়েছে। তদ্রুপ প্রত্যেক ফিরাউন, অর্থাৎ গোমরাহকে হিদায়েতের জন্য একজন হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম অর্থাৎ প্রকৃত হাদী থাকেন।” বাতিল পন্থীরা আল্লাহ পাক-এর মাহবুব ওলীগণের বিরোধিতায় লিপ্ত থাকে একথা নুতন নয়, বিস্মিত হওয়ার মতোও নয়। কারণ ইহুদী-নাছারাদের মনোনীত এজেন্ট দুনিয়াদার আলিমদের গোপন ও প্রকাশ্য কারসাজি মুজাদ্দিদে আ’যমের অপ্রতিরোধ্য হিদায়েতের কারণে নিষ্প্রভ হয়। কায়েমী স্বার্থ রক্ষায় বাতিলপন্থীরা অন্যায় ও দলীলবিহীন বিরোধিতায় হক্ব মিটিয়ে ফেলার অপপ্রয়াসে লিপ্ত থাকে। কিন্তু সবসময় হক্ব বিজয় হয় আর নাহক্ব নিশ্চিহ্ন হয়। এ মর্মে আল্লাহ পাক বলেন, ׂতারা (বাতিলপন্থীরা) চায় মুখের ফুৎকারে আল্লাহ পাক মনোনীত হাদীকে মিটিয়ে দিতে। অথচ আল্লাহ পাক তাঁর হাদীকে অবশ্যই কামিয়াবী দান করবেন। যদিও কাফির বা বাতিলপন্থীরা তা পছন্দ করে না।׃ (সূরা ছফ-৮) এখানে যা ফিকিরের তা হলো, সুন্নত আমলের অনেক বিষয় ওলীআল্লাহগণের হিম্মত ও অনুশীলনের পর্যায়ভুক্ত থাকে না। তবে মাহবুব ওলীগণের প্রত্যাশিত ও অপ্রত্যাশিত অনেক সুন্নতের আমল আল্লাহ পাক-এর অবারিত রহমত এবং রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সদয় ইহ্সানে পূর্ণতা পেয়ে যায়। এ কারণে তাবলীগী, ওহাবী, খারিজী, দেওবন্দী, রেযাখানী, জামাতী, লা মাযহাবীসহ যাবতীয় বাতিল ফিরক্বাসমূহের নাহক্ব বিরোধিতা ওলীআল্লাহগণের কাম্য। এতে তাঁদের তাজদীদ পূর্ণতার পথে প্রবল গতিবেগ পায় এবং তাঁদের মান, শান, ইজ্জত, ঐতিহ্য ও মর্যাদা নিরন্তন বৃদ্ধি পায়। মুজাদ্দিদে আ’যম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী’র ক্ষেত্রে হুবহু তাই ঘটেছে।

প্রকাশ্য বাহাছ ও চ্যালেঞ্জঃ
মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি ইসলামের সকল বিষয়েই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত আক্বীদা পোষণ করেন এবং আমল করে থাকেন। কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের আলোকে পৃথিবীর কেউ বা কোন মহল যদি তাঁর কোন কথা, কাজ, লিখা, সীরত, ছূরত- ও আমলে কোন ত্রুটি উদ্ঘাটন করতে পারে, তবে তিনি তা বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে সম্মত আছেন। কিন’ এসবক্ষেত্রে বিরোধী পক্ষের কোন ভুল-ত্রুটি উদ্ঘাটিত হলে দলীলের ভিত্তিতে তা তাদেরকে অবশ্যই মেনে নিতে হবে। যারা মুজাদ্দিদে আ’যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে এবং তাঁর আক্বীদা ও আমল সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে তাদের প্রতি শর্ত সাপেক্ষে প্রকাশ্য বাহাছ ও চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘোষণা নিয়েমিতভাবে মাসিক “আল বাইয়্যিনা” ও দৈনিক “আল ইহসান” পত্রিকায় দেয়া হচ্ছে। এ বাহাছ পৃথিবীর যে কোন জায়গায়, যে কোন সময় হতে পারে। কিন’ বাহাছের আহ্বানে বাতিলপন্থীরা পূর্বেও সাড়া দেয়নি, এখনো দিচ্ছে না। কখনো সাড়া দিবে বলেও মনে হয় না। কারণ, বাতিল ও নাহক্ব পন্থীদের দলীলবিহীন লম্ফঝম্ফ কেবল নির্ধারিত বৃত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মুজাদ্দিদে আ’যম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী’র সামনে আসতে তাদের চিরকালের ভয়।