عن معاوية رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من يرد الله به خيرا يفقهه فى الدين وانما انا قاسم والله يعطى.
অর্থঃ- “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান, আল্লাহ পাক যার ভালাই (কল্যাণ) চান তাকেই দ্বীনের সহীহ্ ছমঝ দান করেন। আর অবশ্যই আমি (সমস্ত নিয়ামতের) বন্টনকারী, আর মহান আল্লাহ্ পাক দান করেন।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত কানযুল উম্মাল)
আলোচ্য হাদীছ শরীফের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, মহান আল্লাহ পাক স্বীয় মাখলুকাতকে দুনিয়া ও আখিরাতে যত নিয়ামত দান করেছেন, করছেন ও করবেন তা সমস্তই আল্লাহ পাক এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলায় বা তাঁর মাধ্যমে। অর্থাৎ তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ্ পাক-এর সমস্ত নিয়ামতের বন্টনকারী।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই জান্নাতের মালিক বানিয়েছেন। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকেই সেই নিয়ামত স্বরূপ জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারেন।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن مسعود رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال فاذا عملتم ذالك فلكم على الله الجنة وعلى.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঞ্জছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে বলেছেন, যখন তোমরা আমার কথা অনুযায়ী আমল করবে তখনই এর বিনিময়ে আল্লাহ পাক ও আমি (আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে জান্নাত দান করবো।” (ত্ববারানী, কানযুল উম্মাল ১৬৩, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৬/৪৭, ইবনে আবী শাইবা, ইবনে আসাকীর, মাফাহীম ২০৪)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن جابر رضى الله تعالى عنه قا كان العباس رضى الله تعالى عنه اخذ بيد رسول الله صلى الله عليه وسلم فلما فرغنا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اخذت واعطيت اى اخذت البيعة واعطيت الجنة.
অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (একদা) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাত মুবারক ধরলেন। যখন আমরা (তথা হতে) পৃথক হলাম তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বলেন, আপনি (আমার হাতে) বাইয়াত গ্রহণ করেছেন (এর বিনিময়ে) আমি আপনাকে জান্নাত দিয়ে দিলাম।” (আহমদ, ফতহুল বারী ৭/২২৩, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৬/৪৮, মাফাহীম)।
عن جابر رضى الله تعالى عنه قال ان النبى صلى الله عليه وسلم قال لهم تبايعونى على السمع والطاعة الى ان قال ولكم الجنة قال فقالو والله لا ندع هذه البيعة ابدا ولا نسلبها ابدا فبايعنا فاخذ علينا وشرط ويعطينا على ذلك الجنة.
অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আকাবার শপথকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা আমার নিকট বাইয়াত গ্রহণ কর এ কথার উপর যে, তোমরা আমার কথা শ্রবণ করবে ও আমার ইতায়াত করবে। তিনি এটাও বললেন যে, তাহলেই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন তারা বললেন, আল্লাহ পাক-এর কসম, আমরা কশ্মিনকালেও এই বাইয়াত (শপথ) ভঙ্গ করবনা। তখন তিনি আমাদেরকে বাইয়াত করালেন ও আমাদের হাত ধরে শপথ করালেন যে, এর বিনিময়ে তিনি আমাদেরকে জান্নাত দান করবেন।” (আহমদ, বাযযার, মাযমাউয্ যাওয়ায়েদ ৬/৪৬, মাফাহীম)
হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال اشترى عثمان رضى الله تعالى عنه الجنة من النبى صلى الله عيه وسلم مرتين بيع االحق حيث حفر بئر معونة وحيث جهز جيش العسرة.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হযরত উসমান যুননূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট থেকে দুই বার জান্নাত খরীদ করেছেন। প্রথমবার বীরে মাউনা খনন করার সময় ও দ্বিতীয়বার উসরার যুদ্ধের সৈন্য প্রস্তুত করার সময়।” (মুস্তাদরাকে হাকিম ৩/১০৭-২০৫ মাফাহীম)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, (হাশরের ময়দানে) সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের জন্য নূরের মিম্বরসমূহ রাখা হবে। তাতে সকলেই বসবেন কিন্তু আমার মিম্বর শরীফ খালি থাকবে, আমি তাতে বসবনা। বরং আমি মহান আল্লাহ পাক-এর সামনে বিনয়ের সাথে দাঁড়িয়ে থাকব (এজন্য যে) তিনি আমাকে (সর্ব প্রথম) জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তখন আমার উম্মতগণ (তথায়) উপস্থিত থাকবে। তখন আমি বলব, আয় আল্লাহ্ পাক! আমার উম্মতগণ, আমার উম্মতগণ, (আমার উম্মতের কি অবস্থা হবে)? তখন মহান আল্লাহ পাক বলবেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার উম্মতের ব্যাপারে কি করলে আপনি খুশী হবেন? তখন আমি বলব, আয় আল্লাহ্ পাক! আপনি তাদের হিসাব-নিকাশ দ্রুত করুন। তখন তাদেরকে ডাকা হবে ও হিসাব করা হবে। তাদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ আল্লাহ্ পাক এর রহমতে ও কেউ কেউ আমার শাফায়াতের দ্বারা জান্নাতী হবে। অতঃপর আমি পর্যায়ক্রমে শাফায়াত করতেই থাকব এমনকি অনেক লোক যাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়েছিল তাদেরকে আমি (জান্নাতে প্রবেশের) অনুমতি পত্র দিব। (তা নিয়ে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে) তখন জাহান্নামের দায়িত্বশীল মালিক ফেরেশতা বলবেন, হে আল্লাহ্ পাকের হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার (অনুমতিপত্র প্রাপ্তগণ ব্যতীত) বাকি উম্মতদেরকে (আপনার অনুমতিপত্র না পাওয়ার কারণে) তাদের উপরে আল্লাহ্ পাক-এর অসন্তুষ্টি থাকার দরুন তাদেরকে আমি আযাব থেকে রেহাই দিবনা।” (ত্ববারানী, বাইহাকী, মাফাহীম/২০৪)
আলোচ্য হাদীছ শরীফে স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাহান্নামী লোকদেরকেও জান্নাতে প্রবেশের জন্য অনুমতি পত্র প্রদান করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ সমূহের আলোকে এটা স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ্ পাক এর হাবীব, আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতের মালিক। তাঁকে মহান আল্লাহ্ পাক এখতিয়ার দিয়েছেন যেন তিনি যে কোন লোককে যে কোন অবস্থায় তার কোন আমল থাকুক বা নাই থাকুক তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারেন।
স্মর্তব্য যে, জান্নাত আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলায় তৈরী হয়েছে। যা হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
لولاك لما خلقت الجنة.
অর্থাৎ- “যদি আপনাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য না থাকত তবে আমি জান্নাত তৈরী করতাম না।” (কানযুল উম্মাল)
কাজেই জান্নাত আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলায় বা জন্যই তৈরী। সূতরাং তা তাঁর অধীন থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামতো অনেক উপরের কথা।
আল্লাহ্ পাক-এর হাবীবের আদনা উম্মত একজন হাফিজে কুরআন সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قرا القران فاستظهرة فاحل خلاله وحرم حرامه ادخله الله الجنة وشفعه فى عشرة من اهل بيته كلهم قد وجبت له النار.
অর্থঃ- “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করল, এর মধ্যকার হালালকে হালাল ও হারামকে হারাম জানল, আল্লাহ্ পাক তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন ও হাশরের ময়দানে তাকে এমন ক্ষমতা দিবেন যে, তাঁর আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে যাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়েছিল এমন দশজন ব্যক্তিকে সুপারিশ করে সে জান্নাতী করে দিতে পারবে।” (সুবহানাল্লাহ্) (আহমদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, দারিমী, মিশকাত)
অনুরূপ একজন হাজী ছাহেবও অনেক লোককে জান্নাতী করতে পারবেন। একজন শহীদ ব্যক্তিও অনেক লোককে জান্নাতে নিতে পারবেন যা অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। এছাড়া হক্কানী-রব্বানী আউলিয়য়ে কিরামগণও নিজের ইচ্ছানুযায়ী লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবেন। (আনিসুল আরওয়াহ)
সুতরাং এটাই প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ্ পাক এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাহিবে জান্নাত, ছাহিবে কাওছার ও ছাহিবে শাফায়াতে কুবরা।
আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে তাঁর প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাক্বীকী মর্যাদা-মর্তবা উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন। (আমিন)
-হাফিযে হাদীছ মাওলানা মুফতী মুহম্মদ ফযলুল হক