হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “নিশ্চয়ই সৃষ্টির সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হক্কানী-রব্বানী আলিম। আর সৃষ্টির নিকৃষ্ট সৃষ্টি হচ্ছে দুনিয়াদার, ধর্মব্যবসায়ী, নামধারী, অসৎ আলিম তথা উলামায়ে ‘সূ’।
যামানার পঙ্কিল প্রবাহের বিপরীতে, দুনিয়াবী মোহ, প্রচলিত জনমত, চলমান দুনিয়াবী মত-পথ, বিরাজমান জনশক্তি ইত্যাদিকে উপেক্ষা করে, অপূর্ব কামালতের বিকাশে, অব্যক্ত রূহানী শক্তির সমৃদ্ধতায় শাশ্বত ইসলামকে দ্বীপ্তভাবে তুলে ধরার পাশাপাশি মুজাদ্দিদে শ্রেষ্ঠত্বের অপর একটি অনবদ্য দিক হচ্ছে যে তথাকথিত মশহুর তথা নামধারী আলিমদের না-হক্ব জনপ্রিয়তাকে উপেক্ষা করে গাযেবী মদদে খোদায়ী যবানে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে তিনি বলে দিতে সক্ষম যে, তারা উলামায়ে ‘সূ’।
প্রসঙ্গত : উলামাযে ‘সূ’দের প্রত্যক্ষ প্রমাণ যে সুযোগ পেলে, স্বার্থের কারণে নিজেদেরই জীবনের পূর্ব সময়ে আমলকৃত আমলে ছলেহ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়। শুধুমাত্র সামান্য দুনিয়াবী স্বার্থ, এমনকি মন্ত্রী বা মন্ত্রীর মর্যাদার ধর্মীয় উপদেষ্টা হওয়ার জন্য কুরআন শরীফ উনার অমোঘ আদেশ-নির্দেশ, হাদীছ শরীফ উনার সুস্পষ্ট বিধান, সকল ইমাম-মুজতাহিদ আউওলিয়ায়ে কিরাম উনাদের অনুসরণীয় আমল এমনকি নিজের করা বা লেখা বক্তব্যের সাথেও প্রতারণা করে মুনাফিকী করে।
প্রসঙ্গত এ কলামে বর্তমান যামানার উলামায়ে ‘সূ’দের শীর্ষ নেতা তথাকথিত শাইখুল হাদীছ সম্পর্কে তার নিজ লেখা বই ‘আল কুরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা’ থেকে পৃষ্ঠা নং উল্লেখ করে তুলে ধরা হচ্ছে যে, পর্দা সম্পর্কে কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদের দলীল পেশ করে স্বয়ং তথাকথিত শাইখুল হাদীছ কত শক্ত কথা বলেছে। সে বলেছে, “সারকথা, যেসব স্ত্রীলোকেরা ভণ্ড, নামধারী পীর-ফকীদের (তথা শাইখুল হদসের) সামনে আসেন তারা কঠিন গুণাহে লিপ্ত। আর এ জাতীয় পীর-ফকীর (তথা শাইখুল হদস আজিজুল হক) কস্মিনকালেও দ্বীনদার হতে পারে না। বরং এরা স্পষ্ট ভণ্ড ও ফাসিক। কাজেই কোন অবস্থাতেই এদের মুরীদ হওয়া জায়িয হবেনা। দুর্ভাগ্যবশত: যদি কেউ এদের খপ্পরে পড়ে মুরীদ হয়ে গিয়ে থাকে তাদের জন্য আবশ্যক হবে, এদের (বর্তমান শাইখুল হদসের) বাইয়াত ছেড়ে দিয়ে হক্কানী ও দ্বীনদার আলিম বা পীর-মুর্শিদ উনাদের শরণাপন্ন হওয়া।” (আল কুরআন শরীফ উনার দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা, ৭৮, ৭৯ পৃষ্ঠা)
কিন্তু হতাশার বিষয় হলেও সত্য যে, শাইখুল হদসের প্রিয় ছাত্ররা শাইখুল হদসের এরূপ শক্ত নির্দেশ মানতে আদৌ পা করছেনা। অথচ শাইখুল হদসের বক্তব্য ও লিখনী মুতাবিকই তার আনুগত্য ও অনুসরণ বর্তমানে ছেড়ে দেয়া যে কত ভীষণ জরুরী তা তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হকের নিজের রচনা ‘আল কুরআন শরীফ উনার দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা’ নামক বই পড়লে মর্মে মর্মে অনুধাবন করা যায়।
পূর্ববর্তী আলোচনার পর প্রাসঙ্গিক বিষয়ে তথাকথিত শাইখুল হাদীসের বই থেকে আরো (হুবহু) তুলে ধরা হলো-
‘হাদীছ শরীফ উনার আলোকে পূর্ণাঙ্গ গুরুত্ব শীর্ষক শিরোনামে তথাকথিত শাইখুল হাদীছ তার স্বরচিত্ত বই আল কুরআন শরীফ উনার দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দার ১৭ পৃষ্ঠায় নিম্নোক্ত হাদীছ সংকলন করেছে।
“হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদীসে বলা হয়েছে যে, আমাদের গোত্রেরই এক সদ্য বিবাহিত যুবক আমাদের সাথে খন্দকের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল কিন্তু প্রতিদিন দ্বিপ্রহরের সময় রাসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুমতি নিয়ে স্ত্রীর নিকট যেতেন। একদিন অনুমতি চাওয়ার পর রাসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমার অস্ত্র সাথে নিয়ে যাও, কেননা বনু কুরাইজার লোকেরা তোমাকে আক্রমণ করতে পারে, যুবকটি অস্ত্র নিয়ে বাড়ী ফিরে এসে দেখতে পেল তার স্ত্রী ঘরের বাইরে দরজার সামনে দাঁড়ানো। স্ত্রীকে এভাবে পর্দা লংঘন করতে দেখে তাকে হত্যা করতে উদ্যত হন। স্ত্রী বললো, থামুন, আগে দেখুন আমি কেন ঘর থেকে বাইরে এসেছি, তখন সে ঘরে গিয়ে দেখলো এক বিরাট সাপ তার বিছানায় কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে আছে, এ ঘটনা থেকে বুঝা যায় তারা পর্দাকে কতটুকু গুরুত্বের সাথে মেনে নিয়েছেন।”
“উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালমা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেছেন যে, একবার আমি এবং মাইমুনাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা রসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ছিলাম, এমন সময় সেখানে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এলেন, তখন রাসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, উনার থেকে তোমরা পর্দা কর, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি তো অন্ধ; সুতরাং আমাদেরকে তো তিনি দেখবেন না, জবাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন যে, তোমরা দু’জনও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখছো না?” (মুসনাদে আহমদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ)
পাঠক! তথাকথিত শাইখুল হাদীছ, তার রচিত আল কোরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা বইয়ের ১৭-১৮ পৃষ্ঠায় এ দুটো হাদীছ শরীফ ছাড়া আরো ৩টি হাদীছ শরীফ উনার বরাত দিয়েছে। এরপর ২০ পৃষ্ঠায় সমস্ত মুসলিম নর-নারীর প্রতি পর্দার নির্দেশ হেডিং দিয়ে কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ উল্লেখ করে যা লিখেছে- “হে নবী পত্মীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও, যদি তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর, তবে পর পুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলোনা, ফলে সেই ব্যক্তি কু-বাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। তোমরা সঙ্গতভাবে কথাবার্তা বলবে, তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে, মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং মহান আল্লাহ পাক ও উনার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ! মহান আল্লাহ পাক তিনি কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পুতপবিত্র রাখতে। (পবিত্র সূরা আহযাব ৩২-৩৫)
পাঠক! বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, উপরোল্লিখিত পবিত্র আয়াত শরীফ উদ্ধৃতির পর তথাকথিত শাইখুল হাদীছ এরপর যে নছীহত কথা সংযুক্ত করেছে তা হলো-
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহে নবী পত্মীগণের প্রতি সম্বোধন করে কতিপয় হিদায়েত দান করা হয়েছে, এসব হিদায়েতে যদিও পূণ্যবর্তী স্ত্রীগণের জন্য নির্দিষ্ট নয়, বরং সমগ্র মুসলিম নারীকুলের প্রতি তা নির্দেশিত। কিন্তু এখানে তাদেরকে বিশেষভাবে সম্বোধন করে তাদের দৃষ্টি এদিকে আকৃষ্ট করা হয়েছে যে, এসব আমল ও আহকাম তো সমস্ত মুসলিম রমনীকুলের প্রতি ওয়াজিব ও অবশ্য পালনীয়। তাই এগুলোর প্রতি তাদের বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা উচিত।
পাঠক! শায়খুল হদস আজিজুল হক ‘আল কুরআন শরীফ উনার দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা”/১৮ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত হাদীছ শরীফ ও কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সাথে শায়খুল হদসের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমাদের প্রশ্ন-
সে নিজে যে বর্তমানে প্রকাশ্য বেপর্দা হচ্ছে এবং সুযোগ পেলেই রমনী নেত্রীর সাথে প্রকাশ্যে দেখা সাক্ষাৎ করছে, তখন সে নিজেই কি মুসলিম রমনীর পর্দা ভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে না? বলাবাহুল্য, শাইখুল হাদীছ হিসেবে প্রচারিত হওয়ার জন্য একটা সময় পর্যন্ত এসব কথা লেখা তার প্রয়োজন ছিল। এরপর যখন সে কাঙ্খিত প্রচার পেয়েছে বলে মনে করেছে তখন সে পরিচিতিকে সে ব্যবহার করতে চাইছে প্রচলিত গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারাবাহিকতায় অর্থাৎ জুমহুরীর মত পথে সম্পৃক্ত হয়ে একটা মন্ত্রীত্ব বাগানে প্রচেষ্ট হতে। এতদ্বপ্রেক্ষিতে ইতিপূর্বে দ্বীন ইসলামের আলোক শরয়ী পর্দার পক্ষে বিস্তর লিখলেও এখন দ্বীনে জুমহুরীর প্রেক্ষিতে তার নিজেকেই নিজের লেখার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হরদম বেপর্দা হতে হচ্ছে, বেগানা মেয়েলোকের সাথে মিলিত হতে হচ্ছে, চলতে হচ্ছে।
আর সেক্ষেত্রে তখন অনিবার্যভাবে তার নিজস্ব লেখনীর আলোকেই তাকে সাক্ষাৎ উলামায়ে ‘সূ’ তথা শাইখুল হাদীসের তবকা থেকে বিচ্যূত হয়ে শাইখুল হদস রূপে পর্যবসিত হতে হচ্ছে। মূলত: দ্বীন ইসলাম বাদ দিয়ে দ্বীনে জুমহুরী প্রবর্তনেই তার এ পরিণতি শিরোধার্য হয়েছে। যেমন হয়েছিল বাদশাহ আকবরের আমলে উলামায়ে ‘সূ’দের, দ্বীন ইসলাম বাদ দিয়ে দ্বীনে ইলাহী করার প্রেক্ষিতে।
-মুহম্মদ কাওছার জামান, ঢাকা।