আল বাইয়্যিনাত প্রতিবেদন: কুল কায়িনাতের তথা সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ আনন্দের দিন হচ্ছে, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম ও ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এ দিনের তা’যীম-তাকরীম করা প্রত্যেক উম্মতে হাবীবী-এর জন্য একদিকে মর্যাদা বৃদ্ধির এবং পরকালে নিশ্চিত জান্নাতী হওয়ার কারণ, অন্য দিকে তা ফরয-ওয়াজিব। এ দিন পালনকে যারা বিদয়াত বলে, তারা সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব, উলামায়ে ‘ছূ’, ধর্ম ব্যবসায়ী। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ে বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করা ফরয। যারা উনার মুবারক শান-মানের সামান্যতম খিলাফ করে বলে বা লিখে, তারা সর্ব নিকৃষ্ট শ্রেণীর কাফির এবং চির জাহান্নামী।
যামানার লক্ষ্যস্থল ওলী আল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লহুল আলী বিশেষ আলোচনা মজলিসে একথা বলেন।
গাজায় জঙ্গিবাদী, বিশ্ব সন্ত্রাসী, ইসরাইলী ইহুদী হামলা প্রসঙ্গে মুজাদ্দিদে আ’যম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, ফিলিস্তিনের গাজা সিটিতে শান্তি প্রিয় মুসলমানদের উপর বিশ্বজঙ্গি ও বিশ্ব সন্ত্রাসী ইসরাইলী ইহুদীরা নির্বিচারে ধ্বংসাত্মক আগ্রাসী হামলা চালিয়ে হাজার হাজার মুসলমানকে শহীদ এবং হাজার হাজার মুসলমানকে অন্যায়ভাবে আহত করে ঐতিহাসিক বর্বর চেঙ্গিস আর হালাকু খানকেও হার মানিয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হল, কথিত জাতিসংঘরূপী ইহুদী সংঘকে নির্বিবাদে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে ইহুদীরা ঔদ্ধত্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। যা রক্ত-গোশতে গঠিত কোন মুসলমানের জন্য সহনীয় নয়। মধ্যপ্রাচ্যের সরকারগুলোর নির্বিকার ভূমিকা- বিশ্ব বিবেককে ভাবিয়ে তুলছে। প্রশ্ন উঠেছে এরাও কী তাহলে ইহুদী তোষণ নীতিতে বিশ্বাসী! ঈমানের সামান্যতম উত্তাপ থাকলেও কোন মুসলমান এ ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকতে পারে না। তিনি মুসলমানদের ঈমানী কুওওয়াতকে আরো শক্তিশালী করার এবং সকল মুসলিম উম্মাহকে একতাবদ্ধ হয়ে বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
যুদ্ধাপরাধ প্রসঙ্গে মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ’৭১-এর ঘাতক, খুনি, যুদ্ধাপরাধী, জামাতে মওদুদীর যথোপযুক্ত বিচার করা ১৫ কোটি মুসলমানের প্রাণের দাবি। ’৭১-এ যারা নির্মমভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষকে শহীদ করে, প্রায় ৫ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত হরণ করে নিষ্ঠুর নির্যাতনে হত্যা করে, তারা কী করে বিচারবিহীন ধর্মের নাম ভাঙিয়ে রাজনীতির মাধ্যমে স্বাধীন দেশের সরকার গঠন করতে পারলো এবং বর্তমানে সংসদে আসন লাভ করতে পারছে সেটাই আশ্চর্যের বিষয়! বর্তমান সরকারের উচিত সমাজের সর্বস্তর থেকে এদেরকে ছেঁকে বের করে বিচারের মাধ্যমে শাস্তি বাস্তবায়ন করা।
কুরআন সুন্নাহ’র আইন প্রসঙ্গে মুজাদ্দিদে আ’যম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, বর্তমান সরকারের পুর্বসূরিরা যেমন এদেশ থেকে মদ, জুয়া, সিনেমা বন্ধ করেছিল তেমনি বর্তমান সরকারেরও উচিত এদেশ থেকে মদ, জুয়া, সিনেমা, অশ্লীলতা, সুদ-ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধ করা এবং নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ না করা। পাশাপাশি সকল ধর্মীয় অঙ্গন থেকে যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আলবাদর, জামাতী, দেওবন্দীদের সরিয়ে দেয়া এবং কোন ক্ষেত্রেই যেন এরা নিয়োগ না পায় বিশেষ করে বায়তুল মোকাররম মসজিদে সে বিষয়ে সরকারের হুঁশিয়ার থাকা দায়িত্ব ও কর্তব্য।
দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, মানুষের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ করা প্রতিটি সরকারের নৈতিক দায়িত্ব, বিশেষ করে প্রতিটি নাগরিকের নির্ধারিত আয়ের মধ্যে ক্রয় ক্ষমতা নিশ্চিতকরণসহ জীবন যাপন স্বাভাবিকীকরণ মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং একজন নাগরিকও যাতে অনাহারে অধিকার বঞ্চিত জীবন-যাপন না করে তা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য অবশ্য কর্তব্য। কেননা, ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর শাসনামলে সরকারের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, “ফোরাতের তীরে একটি কুকুরও যদি না খেয়ে মারা যায় তবে এর জন্যও আমাকে পরকালে জবাবদিহি করতে হবে।” কাজেই, বর্তমান সরকারকেও এ ঘটনা থেকে নছীহত হাছিল করতে হবে।
উল্লেখ্য, রাজারবাগ দরবার শরীফে গত ৪ ও ৫ জানুয়ারী রবি ও সোমবার পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ওয়াজ শরীফ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মাহফিলে প্রধান অতিথির বয়ানে মুজাদ্দিদে আ’যম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, আশূরা মিনাল মুহররমে যে ঘটনাই ঘটুক না কেন প্রত্যেকটিই রহমত, বরকত ও সাকীনা পূর্ণ এবং প্রতিটি ঘটনার মধ্যেই রয়েছে উম্মতের জন্য উত্তম নছীহত। তবে ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুসহ শুহাদায়ে কারবালাগণের এ ঘটনা অবশ্যই অত্যান্ত মর্মান্তিক। যার কারণে ইয়াজিদ ও তার দল বলের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত হয়েছে। এতেও উম্মতের জন্য নছীহত রয়েছে। আশূরার ঘটনা প্রবাহ একদিকে ঈমান ও আক্বীদা বিশুদ্ধ করার, ফযীলতপূর্ণ আমল আখলাকে অভ্যস্থ হওয়ার পাশাপাশি না হক্ব শক্তিশালী হলেও আপোস না করে হক্বের উপর ইস্তিক্বামত থাকার শিক্ষা দেয়। পবিত্র আশূরার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি পুনরায় মুসলিম উম্মাহকে জেগে উঠার এবং একতাবদ্ধ হয়ে তাবৎ বাতিল শক্তির মোকাবিলা করার আহ্বান জানান।
এজন্য মূলতঃ প্রয়োজন ঈমানী কুওওয়ত আর রূহানী শক্তি। তা মুজাদ্দিদে আ’যম-এর মুবারক ছোহবত অর্জনের দ্বারাই সম্ভব।
উল্লেখ্য, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ১৬ ছফর হতে রাজারবাগ দরবার শরীফ মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদ্রাসায় ২৯ দিন ব্যাপী প্রতিযোগিতা ও বিষয়ভিত্তিক ওয়াজ শরীফ ও দোয়া এবং সামা মাহফিলের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়াও সাইয়্যিদাতুন নিসা, উম্মাহাতুল মু’মিনীন, হাবীবাতুল্লাহ হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলীয়া-এর মুবারক তত্ত্বাবধানে দেশ বিদেশ থেকে আগত অসংখ্য মহিলাদের খাছ পর্দার সহিত দ্বীনি তা’লীম-তালক্বীন-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত ও মাহফিল সংবাদ