কতটুকু পর্দা উনারা করেছেন, যে, রওযা শরীফের আশেপাশে আল্লাহ পাক-এর রসূলের সাক্ষাতে যাবেন, যিয়ারতে যাবেন, আফযালুন্ নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু- উনার পিতা, উনার সাক্ষাতে যাবেন, যিয়ারতে যাবেন। কিন্তু হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যেহেতু পাশে শায়িত রয়েছেন। কাজেই উনার সামনে সে অবস্থায় ওড়না না পড়ে, চাদর দিয়ে না ঢেকে গেলে সেটা পর্দার খিলাফ হবে, সেজন্য চাদর দিয়ে ঢেকে, ভাল করে নিজেকে আচ্ছাদিত করে উনি যিয়ারতে গিয়েছেন। (সুবহানাল্লাহ্) সেটা চিন্তা এবং ফিকিরের বিষয়। সেটাই বলা হয়েছে, الاماظهرمنهاতবে আপসেআপ যেটা প্রকাশ পেয়ে যায়। এখন আপসেআপ কি প্রকাশ পেয়ে থাকে? যেটা আল্লাহ পাক অন্যত্র ইরশাদ করেছেন,
والقواعد من النساء التى لايرجون نكاحا فليس عليهن جناح ان يضعن ثيابهن غير متبرجت بزينة وان يستعففن خير لهن والله سميع عليم.
‘ঐ সমস্ত মহিলা যারা বৃদ্ধা হয়ে গেছেন। বিয়ের বয়স যাদের নেই, বিয়ের ইচ্ছাও নেই,
لايرجون
لايرجون نكاحا
যারা বিয়ের আরজু করেনা বা যোগ্যতা যাদের নেই, فليس عليهن جناح তাদের গুনাহ হবেনা। ان يضعن ثيابهن তাদের কাপড় রেখে দেয় অর্থাৎ অতিরিক্ত ওড়না যদি ব্যবহার না করে, غير متبرجت بزينة অর্থাৎ সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, অতিরিক্ত কাপড় যদি ব্যবহার না করে তাতে তাদের গুণাহ হবেনা। এরপর আল্লাহ্ পাক বলেছেন, وان يستعففن خير لهنতাদের উত্তম হবে, এ অবস্থায়ও যদি তারা পর্দা করে, والله سميع عليمআল্লাহ পাক শ্রবণকারী ও জ্ঞানী। আল্লাহ পাক পূর্বের আয়াত শরীফে বলেছেন, তোমরা পর্দা করবে, হ্যাঁ, যদি অনিচ্ছাসত্ত্বে কিছু বের হয়ে যায়, সেটা কি? সেটা সম্পর্কে ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। আর এ আয়াত শরীফে বলা হয়েছে, ঐ সমস্ত মহিলা যাদের বয়স অনেক হয়ে গেছে, বিয়ের বয়স পার হয়ে গেছে, যারা বিয়ের চিন্তাই করেনা, মানুষও চিন্তা করেনা। এ সমস্ত মহিলা যারা রয়েছেন, তাদের যদি অতিরিক্ত কাপড় খুলে তারা রাখে, সৌন্দর্য প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে নয়, তাতে তাদের গুনাহ হবেনা। এরপরও যদি ঐ সমস্ত মহিলারা পর্দা করে, শরীর ঢেকে রাখে, তাহলে তাদের জন্য সেটাই উত্তম। আল্লাহ পাক سمسع عليم শ্রবণকারী এবং জ্ঞানী। এখানে পর্দার সুক্ষ্ম তাকীদ করা হয়েছে। আর যেটা বলা হয়েছে,
ولايبدين زينتهن الا ماظهر منها.
“প্রকাশ করনা সৌন্দর্য, যদি অনিচ্ছাসত্ত্বে কিছু প্রকাশ পেয়ে যায়।” এখন সেটা কি? এটা অনেকে, অনেক মুফাস্সিরীন-ই-কিরাম অনেক কথাই বলেছেন। মূল যে বিষয় যেটা বলা হয়েছে, সেটা হলো অর্থাৎ আপসেআপ যেটা বের হয়ে যায়। এখন কেউ এ প্রসঙ্গে বলেছেন যে, হাদীছ শরীফে এসেছে,
قال النبى صلى الله عليه وسلم ان المرأة اذا بلغت المحيض لن يصلح ان يرى منها الا هذا وهذا واشار الى وجهه وكفيه.
এই হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মেয়েরা যখন বালেগা হয়ে যায় তখন তারা কিছু যেন বের না করে।
الا هذا وهذا واشار الى وجهه وكفيه.
চেহারা এবং হাতের কব্জি দেখিয়ে বললেন, এই দু’টি বের করতে পারে, এছাড়া অন্য কিছু নয়। এখানে এই হাদীছ শরীফটা রয়েছে। আবার অন্যত্র ইরশাদ করা হয়েছে যে, একজন মহিলা, যখন সে কোন বেগানা পুরুষের সামনে দিয়ে চলবে, তার জরুরতে বের হবে, সে কতটুকু বের করে রাখতে পারবে? সে একটা চুলও বের করতে পারবেনা। তবে বিশেষকরে মেয়েদের জন্য, তারা যখন নামায পড়বে, নামায পড়া অবস্থায় তাদের চেহারা এবং হাতের কব্জি থেকে অতিরিক্ত, পায়ের গিরা থেকে অতিরিক্ত নিচে যা রয়েছে, সেটা বের করে দিয়ে যদি তারা নামায পড়ে তাদের নামায শুদ্ধ হবে। কিন্তু এর চাইতে অতিরিক্ত অর্থাৎ চেহারা থেকে অতিরিক্ত যা কিছু রয়েছে, হাতের কব্জির উপর যা কিছু রয়েছে, পায়ের গিরার উপর যা কিছু রয়েছে, সেখান থেকে কোন অঙ্গের যদি এক চতুর্থাংশ, তিন তাসবীহ পরিমাণ বের হয়ে যায়, অথবা বের হয়ে থাকে নামাযের মধ্যে তাহলে তার নামায শুদ্ধ হবেনা। তবে শুধু চেহারা, হাতের কব্জির অতিরিক্ত, পায়ের গিরার নিচের অতিরিক্ত যা কিছু রয়েছে পায়ের পাতা সেটা যদি বের হয়ে থাকে তাহলে নামায শুদ্ধ হবে। কিন্তু ঘর থেকে যখন তারা বের হবে, বেগানা পুরুষের সামনে যখন যাবে তখন তার এই হুকুম নয়। এটা হচ্ছে নামাযের জন্য হুকুম। যেটা হাদীছ শরীফে এসেছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
قال النبى صلى الله عليه وسلم العينان زمت خكت تلمظر والاذنان زناهما الاستماع واللسان زناه الكلام واليدان زنا هما البطش والرجلان زنا هما الخط والقلب يهوى ويتمنى ويصدق ذالك الفرج او يكذبه
যে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
العينان زناهما النظر
চোখের যিনা হচ্ছে দৃষ্টি করা,
الاستماع والاذنان زناهما النظر
কানের যিনা হচ্ছে শ্রবণ করা
,زناه الكلام واللسان
যবানের যিনা হচ্ছে কথা বলা
زناهما البطش
হাতের যিনা হচ্ছে স্পর্শ করা
, والرجلان زناهما الخط
পায়ের যিনা হচ্ছে ধাবিত হওয়া,
والقلب يهوى ويتمنى ويصدق
ذالك الفرج او يكذبه.
অন্তর সেটা চেয়ে থাকে, লজ্জাস্থান সেটা সত্যে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে থাকে। প্রত্যেকটা অঙ্গের আলাদাভাবে যিনা রয়েছে। মূল যিনা যেটা সেটা আলাদা। কিন্তু প্রত্যেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গের আলাদা হুকুম রয়েছে, সেটা বলা হয়েছে, সাধারণত যত ফিৎনা পয়দা হয়ে থাকে, সমাজের মধ্যে যত ফিৎনা-ফাসাদ হয়ে থাকে এবং যেটা আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য হাদীছ শরীফে বলেছেন, النساء حبائل الشيطان. ‘মেয়েরা হচ্ছে শয়তানের রজ্জু বা রশি।’ যাদের মাধ্যম দিয়ে পুরুষদেরকে ওয়াসওয়াসা দেয়া হয়, ফিৎনাগ্রস্ত করা হয়। একটা মেয়েকে দেখে মানুষ ফিৎনায় পড়ে তখনই যখন তার চেহারা দেখে অথবা হাত-পা দেখে অতঃপর যখন সে আকৃষ্ট হয়ে যায়। যদি একটা মেয়ে আবৃত থাকে তাহলে সেখানে তার আকৃষ্ট হওয়ার কিছু থাকে না। যখন তার চেহারা খোলা থাকে, হাত-পা খোলা থাকে, তখন সে সেটা দেখে, সে দিকে শয়তানের ওয়াসওয়াসার কারণে আকৃষ্ট হয়ে থাকে এবং একটা ছেলে যখন একটা মেয়েকে বিয়ে করতে যায় সাধারণত মানুষ যেটা দেখে থাকে সেটা হচ্ছে, তার চেহারা, আকার-আকৃতি। তার চেহারা-ছূরত দেখে সে পছন্দ করে অথবা অপছন্দ করে। কাজেই তাহলে দেখা যাচ্ছে, ফিৎনার মূল হচ্ছে মানুষের চেহারা। সেটা দেখে ফিৎনাগ্রস্ত হয়ে থাকে। কাজেই
ولايبدين زينتهن الا ماظهر منها.
তোমরা সৌন্দর্য প্রকাশ করনা। তবে অনিচ্ছাসত্ত্বে যেটা বের হয়ে যায় সেটা নয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে, এর ব্যাখ্যায় যেটা বলা হচ্ছে সেটা হল তার চেহারা এবং হাত সে খোলা রাখতে পারবেনা। সেখানেও চেহারা ঢেকে রাখতে হবে। হাত মোজা, পা মোজা যা রয়েছে সেটা তাকে ব্যবহার করতে হবে। অন্যথায় শরয়ী যে পর্দা রয়েছে সেটা হবে না। সেটাই আল্লাহ পাক পরবর্তীতে বলেছেন,
وليضربن بخمرهن على جيوبهن.
আল্লাহ্ পাক বলেন, তোমরা মাথা থেকে সিনা পর্যন্ত কাপড় ঢেলে দাও। তোমাদের ওড়না, চাদর ইত্যাদি। جيوب (জুয়ূব)-এর যদিও একাধিক অর্থ রয়েছে, এখানে অর্থ হবে সিনা পর্যন্ত চাদর অথবা পর্দা অথবা ওড়না ঢেলে দেয়া। অর্থাৎ মাথা থেকে শুরু করে সিনা পর্যন্ত সে ঢেকে দিবে। আল্লাহ পাক সেটা বলে দিয়েছেন। য (অসমাপ্ত)
ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-২৭