(ধারাবাহিক)
সারা রাত্র ঘুম হলনা। তাহাজ্জুদ নামায পড়া হল, ফজর নামায পড়া হল। উনি ফিকির করলেন, কার ফল খাওয়া হল। আমার জীবনে কখনও আমি হারাম কোন খাদ্য গ্রহণ করিনি। কারও কোন খাদ্য গ্রহণ করিনি না বলে। আজকে একটা ফল খেয়ে ফেললাম ক্ষুধার তাড়নায়। এটা কতটুকু শরীয়ত সম্মত হল, জায়িয অথবা নাজায়িয হল। উনি ফিকির করতে লাগলেন যে, এর মালিককে খুঁজে বের করতে হবে। তার মূল্য পরিশোধ করতে হবে। যদিও শরীয়তের মাসয়ালা রয়েছে,
الضرورة تبيح المحظورات.
‘জরুরত হারামকে মুবাহ করে দেয়।’ একটা লোক মা’জুর হয়ে গেলে, অক্ষম হয়ে গেলে, আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক তিন দিন ধরে না খেয়ে থাকলে, ক্ষুধার তাড়নায় তার জন্য হারাম যে কোন খাদ্য সেটা মুবাহ হয়ে যায়। সে জরুরত আন্দাজ গ্রহণ করতে পারে। শরীয়তের ফতওয়া মুতাবিক উনার আমল শুদ্ধই হয়েছে। কিন্তু উনি তো খুব বড় আলিম ছিলেন। উনি ফিকির করলেন, উনাকে ফতওয়ার উপর আমল করলেই চলবেনা, উনাকে তাক্বওয়ার উপর আমল করতে হবে। মালিককে বের করতে হবে, উনি সে চিন্তা করে বা’দ ফজর দজলা নদীর তীর দিয়ে বিপরীত দিক থেকে হেঁটে হেঁটে সেই গাছ তালাশ করতে করতে চলতে লাগলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখতে পেলেন একটা বাগান, আপেল ফলের বাগান। সেটা দেখে উনি মনে মনে চিন্তা করলেন, নিশ্চয়ই এই বাগানের ফল হবে। কারণ তার কিছু গাছ নদীর পাড়ে রয়েছে এবং তার কিছু ডালা নদীর উপরে ঝুলে রয়েছে, যার কিছু ফলও সেখানে রয়েছে এবং সে গাছগুলির নিচে কিছু ফলও পড়ে রয়েছে পানির মধ্যে। সেটা দেখে হযরত আবূ ছালেহ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি ইতমিনান হলেন, নিশ্চয়ই আমি এ বাগানের ফল খেয়েছি। তাহলে বাগানের মালিককে বের করে তার মূল্য পরিশোধ করতে হবে। উনি মূল্য পরিশোধ করার জন্য মালিককে তালাশ করলেন, মালিককে পাওয়া গেল না। বাগানের মালীকে পাওয়া গেল। যিনি মালিক ছিলেন, হযরত আব্দুল্লাহ্ সাওমাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনিও আল্লাহ্ পাক-এর ওলী ছিলেন। বাগানের যে খিদমত করতেছিলো সে বলল, আপনি অপেক্ষা করুন, কিছুক্ষণ পর মালিক আসবেন। হযরত ৫ঝন্ডছালেহ্ মুসা জিঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি অপেক্ষা করতে লাগলেন। দেখা গেল কিছুক্ষণ পর মালিক আসলেন। মালিকের সাথে সাক্ষাত করলেন, সাক্ষাত করে বললেন, আমি এসেছি একটা জরুরী কাজে। মালিক বললেন, কি জরুরত রয়েছে আমার সাথে? তিনি বললেন, আপনার বাগানের একটা ফল আমি খেয়েছি আপনাকে না বলে। সেটার মূল্য পরিশোধ করতে এসেছি। আপনার বাগানের একটা আপেল ফলের কত মূল রয়েছে? আমাকে দয়া করে জানালে আমি সেটার মূল্য পরিশোধ করব। এ কথা বলা মাত্রই হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তায়াজ্জুব হয়ে গেলেন, আশ্চর্য প্রকাশ করলেন যে, আপনি বলেন কি? আমার বাগানে হাজার হাজার গাছ রয়েছে, লক্ষ লক্ষ ফল রয়েছে, অনেক ফল গাছ থেকে পড়ে যায়, নদীতে ভেসে যায়, মানুষ কুড়িয়ে নেয়, সেজন্য আমার কোন বাধা-নিষেধ নেই, আমি কাউকে খেতে নিষেধ করিনি। যেহেতু ফল নষ্ট হয়ে যাওয়ার পূর্বে খেয়ে ফেলাটাই ভাল। আপনি একটা ফল খেয়েছেন, তার মূল্য পরিশোধ করতে হবে; এর পিছনে কি কারণ রয়েছে? উনি ব্যাপারটা খুলে বললেন যে, আমার জীবনে কখনও কারো কাছ থেকে না বলে কিছু খাইনি, কোন হারাম খাদ্যও গ্রহণ করিনি, তবে ক্ষুধার তাড়নায় তিন দিন না খেয়ে থাকার কারণে, দজলা নদীর তীর দিয়ে হেঁটে আসতেছিলাম, তখন একটা ফল পেয়ে খেয়ে ফেলেছিলাম। আমি সেটারই মূল্য পরিশোধ করার জন্য এসেছি। উনি যখন ব্যাপারটা দৃঢ়তার সহিত, মজবুতির সহিত বললেন, তখন বাগানের মালিক হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি খুব ভাল করে উনার মাথা থেকে পা পর্যন্ত লক্ষ্য করলেন একাধিকবার। এ ছেলে, এ যুবক কি বলছে? তাঁর এত বড় তাক্বওয়া? এত বড় পরহেযগারী? নিশ্চয় সে আল্লাহ্ পাক-এর ওলী হবে। সাধারণ লোকের এতটুকু তাক্বওয়া, এত পরহেযগারী থাকার কথা নয়। তখন হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, বেশ; আপনি যদি মূল্য পরিশোধ করতেই চান, তাহলে মূল্য দিয়ে দিন, কত দিবেন? হযরত আবূ ছালেহ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আমার কাছে তো কোন টাকা-পয়সা নেই, যদি টাকা-পয়সা থাকত, তাহলে তো আমি আপনার বাগানের ফল খেতাম না। তখন হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তাহলে আপনি কি করে পয়সা পরিশোধ করবেন? তিনি বললেন, আপনি যদি আমাকে অনুমতি দেন, তাহলে আপনার বাগানে আমি কিছু কাজ করব, কাজ করে যে পারিশ্রমিক পাব, সেটা দিয়ে ফলের মূল্য আমি পরিশোধ করব। সেটা শুনে হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো তায়াজ্জুব হয়ে গেলেন, আপনি বলেন কি? কাজ করে পয়সা সংগ্রহ করে সেটার মূল্য পরিশোধ করবেন? ঠিক আছে। আপনি কাজ করতে থাকুন। হযরত আবূ ছালেহ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনি কাজ করতে লাগলেন, অনেক দিন অতিবাহিত হয়ে গেল, কোন কোন রেওয়ায়েতে রয়েছে, প্রায় বার বছর অতিবাহিত হল। একদিন হযরত আবূ ছালেহ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বললেন যে, আর কত দিন আমার এ বাগানে কাজ করতে হবে? অনেক দিন হল বাড়ী থেকে এসেছি, আমাকে বাড়ীতে যেতে হবে। আপনার ফলের মূল্য কত রয়েছে? হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন যে, হ্যাঁ, আমি সেটা বলব। আপনাকে বাড়ীতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমার ফলের মূল্য কত রয়েছে, সেটাও বলা হবে। তবে আপনাকে আর কয়েকটা দিন ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আমার আরো কিছু কথা, শর্ত-শারায়েত রয়েছে আপনার সাথে। হযরত আবূ ছালেহ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি সেটা শুনে বললেন, বেশ; এই বলে তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন। কয়েকদিন পর হযরত আব্দুল্লাহ্ সাওমাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি ডেকে বললেন, হে হযরত আবূ ছালেহ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি তো ফল খেয়েছেন, পয়সা-মূল্য পরিশোধ করবেন একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টির জন্য, আল্লাহ্ পাক-এর রসূলের সন্তুষ্টির জন্য। তাই যদি সত্যিই হয়ে থাকে, তাহলে আমার এ ফলের মূল্য পরিশোধ করা এবং আমার কাছ থেকে আপনার ক্ষমা নেয়ার জন্য আরেকটা শর্ত রয়েছে, যা আপনাকে পালন করতে হবে। সে শর্ত হচ্ছে যে, আমার একটা মেয়ে রয়েছে, সে মেয়েটাকে আপনার বিয়ে করতে হবে। সেটা শুনে হযরত আবূ ছালেহ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, একটা ফল খাওয়ার সাথে একটা মেয়ে বিবাহ করার সাথে কি সম্পর্ক রয়েছে? আপনার সাথে আমার জানা নেই, শোনা নেই, চেনা নেই, পরিচয় নেই, আজনবী আমরা প্রত্যেকেই অপরিচিত। কাজেই এর মধ্যে কি সম্পর্ক রয়েছে? কিছুক্ষণ পর হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন যে, আরো কিছু জানার বিষয় রয়েছে, সেটা হচ্ছে, যে মেয়েটাকে আপনার বিয়ে করতে হবে, যা না করলে আমি আপনাকে ক্ষমা করব না। সে মেয়েটা হচ্ছে লুলা, লেংড়া, অন্ধ, বোবা, বধির, কুৎসিৎ। যখন একথা বলা হল, হযরত আবূ ছালেহ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি মনে মনে ফিকির করলেন, এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করে তার মাধ্যমে কোন খিদমত নেয়া কখনই সম্ভব হবে না। বরং তাকেই খিদমত করতে হবে। কিন্তু পরক্ষণেই ফিকির করলেন, যেহেতু আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টি, আল্লাহ পাক-এর রসূলের সন্তুষ্টির দরকার রয়েছে, যদি হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি ক্ষমা না করেন, তাহলে পরকালে জবাবদিহী করবেন কি করে? ইত্যাদি ইত্যাদি চিন্তা করে সম্মতি প্রকাশ করলেন, ঠিক আছে, যদি আপনার আপেল ফলের মূল্য পরিশোধ করার জন্য আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে হয়, তাহলে আমি রাজী রয়েছি, কোন অসুবিধা নেই, আপনি ব্যবস্থা করুন।
(অসমাপ্ত)
ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-২৭