যে ঘটনাটা বলা হলো, এর মধ্যে অনেক ইবরত, অনেক নছীহত রয়েছে। ইবলিস যে ধোকা দিয়েছে, নেক কাজের ছুরতে ধোকা দিয়েছে। পাপ কাজের ছুরতে সে ধোকা দেয়নি। সে নেক কাজের ছুরতে উভয়কে একই অবস্থায় ধোকা দিয়েছে, উভয়কে সে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, আমল নষ্ট করে দিয়েছে। কাজেই সেজন্য খুব সতর্ক, খুব সাবধান থাকতে হবে এ সমস্ত বিষয়ে। অর্থাৎ পর্দার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সাধারণ মানুষ মনে করে থাকে, অল্পতে কি হবে? অল্পতে কি হবে? সে চিন্তা করেছে সত্যি কিন্তু অল্পটাই আস্তে আস্তে বিরাট আকার ধারণ করে থাকে। বৃষ্টির এক ফোটা করে পড়তে পড়তে বন্যা হয়ে যায়। একটা ইট যোগান দিতে দিতে বিশ-পঞ্চাশ তলা বিল্ডিং হয়ে যায়। আজকাল তো আর ইট জোড়া দেয়না, আজকাল পাথর দিয়ে বিল্ডিং করে থাকে। আরো গুড়া, ছোট ছোট দানা একসাথে মিলিয়ে পঞ্চাশ তলা, একশ’ তলা দুই’শ তলা বিল্ডিং হয়ে যায়। ঠিক শয়তানের ওয়াস্ওয়াসা তো একবারে ক্রিয়া করবেনা। সে বেপর্দা হয়ে মনে করে যে, অন্তর তো আমার ঠিক রয়েছে। এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। কস্মিনকালেও এটা শুদ্ধ নয় । দ্বিতীয়তঃ প্রাথমিক অবস্থায় সে নিজেকে কন্ট্রোল করবে। এরপর সে আর পারবেনা। পর্যায়ক্রমে ওয়াস্ওয়াসায় পড়ে যাবে। ঠিক সে আবেদের মত এক সময় তার কঠিন পরিণতি হবে। কাজেই খুব সাবধান থাকতে হবে, এ দৃষ্টি থেকে। সেটাই আল্লাহ্ পাক বলে দিয়েছেন, যা পুরুষ এবং মহিলাদেরকে বলে দিয়েছেন,
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم. وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن.
‘পুরুষ এবং মহিলাদেরকে দৃষ্টি সম্পর্কে সতর্ক করে দিবেন, তারা যেন দৃষ্টি অবনত রাখে।’ এরপর কি বলা হয়েছে, ويحفظوا فروجهم ويحفظن فروجهن. আল্লাহ্ পাক বলেন, ‘তারা যেন তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে।’ কি করে হিফাযত করবে? এর তাফসীরে ব্যাখ্যায় অনেক কিছু বলা হয়েছে। মূল বিষয় যেটা সেটা হচ্ছে, হাদীছ শরীফে এসেছে,
قال النبى صلى الله عليه وسلم من نظر الى محاسن امراة اجنبية عن شهوة صب فى عينيه الانك يوم القيامة.
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, من نظر الى محاسن امرأة اجنبية. কেউ যদি কোন অপরিচিত মহিলার সৌন্দর্য্যরে প্রতি দৃষ্টি করে, عن شهوة খাহেশাতে নফসানিয়ত বা খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে যদি কেউ দৃষ্টি করে; যে দৃষ্টি করবে-
صب فى عينيه الانك يوم القيامة
আল্লাহ্ পাক ক্বিয়ামতের দিন তার উভয় চোখের মধ্যে সীসা ঢেলে দিবেন। (নাউযুবিল্লাহ্) সীসা ঢেলে দিবেন, সে কেন দৃষ্টি করেছে। এখানে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, কোন বেগানা মহিলার প্রতি অর্থাৎ তার সৌন্দর্য্যরে প্রতি যদি কেউ দৃষ্টি করে, দৃষ্টি করার কারণে আল্লাহ্ পাক ক্বিয়ামতের দিন তার চোখের মধ্যে সীসা ঢেলে দিবেন। কাজেই খুব সাবধানের বিষয়। সেজন্য অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى سعيدن الخدرى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لاينظر الرجل الى عورة الرجل ولاتنظر المرأة الى عورة المرأة ولايفضى الرجل الى الرجل فى ثوب واحد ولاتفضى المرأة الى المرأة فى ثوب واحد.
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, আখিরী রসুল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, দেখ
لاينظر الرجل الى عورة الرجل.
কোন পুরুষ যেন আরেক পুরুষের যে সতর রয়েছে, সে দিকে দৃষ্টি না করে। কতটুকু তার সতরের হুকুম দেয়া হয়েছে? আমাদের হানাফী মাযহাবে ‘নাভীর নীচ থেকে হাঁটুর নীচ পযর্ন্ত’ এটা সতরের অন্তর্ভুক্ত। এ সতরের প্রতি যেন কেউ দৃষ্টি না করে। একজন পুরুষ আরেকজন পুরুষের সতরের প্রতি যেন দৃষ্টি না করে।
ولاتنظر المرأة الى عورة المرأة.
একজন মহিলা যেন আরেকজন মহিলার সতরের দিকে দৃষ্টি না করে। এক মহিলার জন্য আরেক মহিলার সতর হচ্ছে, ‘নাভীর নীচ থেকে হাটুর নীচ পর্যন্ত’ আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক। যে পুরুষের কাছে পুরুষের যতটুকু সতর; ঠিক মহিলার কাছে মহিলার জন্য ততটুকু সতর। এরপর বলা হয়েছে,
لايفضى الرجل الى الرجل فى ثوب واحد.
‘দু’জন পুরুষ যেন এক চাদরের নীচে অবস্থান না করে।’
ولاتفضى المرأة الى المرأة فى ثوب واحد.
ঠিক তদ্রুপ দু’জন মহিলাও যেন এক চাদরের নীচে না শোয়। প্রত্যেকেই যেন আলাদা হয়ে শোয়, কেউ যেন কারো সতরের প্রতি দৃষ্টি না করে এবং এমন কোন কাজ না করে যাতে সতরের প্রতি দৃষ্টি পড়ে যেতে পারে। সেটা যাতে না হয়। একই চাদরের নীচে কেউ যদি অবস্থান করে, সেটা উভয়েরই সতরের অর্থাৎ পর্দার খিলাফ হতে পারে। আরো অনেক কিছু সেখান থেকে অঘটন ঘটে যেতে পারে। সেটা নিষেধ করে দেয়া হয়েছে যে, প্রত্যেকেই তার সতরকে সে হিফাযত করবে, যার যার সতরের জন্য সে জবাবদিহী করবে, একজনের জন্য আরেকজন জবাবদিহী করবেনা। সেটা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ করেন,
عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اياكم والتعرى فان معكم من لا يفارقكم الا عند الغائط وحين يفضى الرجل الى اهله، فاستحيوهم واكرموهم.
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা বস্ত্রহীনতা থেকে সতর্ক থাক।’ অর্থাৎ শরীর থেকে কাপড় সরে যাওয়া থেকে সতর্ক থাক। শরীর থেকে কাপড় সরে যাওয়া থেকে, সতর অনাবৃত হওয়া থেকে তোমরা সতর্ক থাক, সতর খুলে যাওয়া থেকে সর্তক থাক।
من لا يفارقكم الا عند الغائط وحين يفضى الرجل الى اهله فاستحيوهم واكرموهم.
আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ঐ সমস্ত ফেরেশ্তা থেকে তোমরা সাবধান থেক, যে ফেরেশ্তারা তোমাদের থেকে যুদা হয়না। من لا يفارقكم কয়েক সময় ব্যতীত ফেরেশ্তারা তোমাদের থেকে যুুদা হয়না।” কাজেই তাদের থেকে সাবধান থেক। মানুষ থেকে তো সতর্ক থাকবেই, জীন থেকেও সতর্ক থাকবে, এমনকি ফেরেশ্তাদের কাছ থেকেও সতর্ক থেক যাতে তোমাদের সতর খুলে না যায়। কয়েক সময় ফেরেশ্তারা শুধু সরে যান, যখন তোমরা ইস্তিঞ্জাখানায় প্রবেশ কর এবং যখন স্বামী-স্ত্রী নিরিবিলিতে একাকী হয় সে সময় ব্যতীত ফেরেশ্তারা তোমাদের সাথে থেকে থাকেন, তোমরা তখন সতর্ক থেক। فاستحيوهم তোমরা তাদেরকে লজ্জা কর। واكرموهم. তাদেরকে সম্মান কর। অর্থাৎ তোমরা সে বিষয়ে সতর্ক থাক যে, তোমাদের সতর যেন কোন অবস্থাতেই না খুলে যায়।
এক ছাহাবী জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিরিবিলিতে একাকী যদি ঘরে আমার সতর খুলে যায় তাহলে অসুবিধা কি? তখন আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন যে, দেখ, সেখানে একে ফেরেশ্তা রয়েছে, দ্বিতীয় আল্লাহ্ পাক তো দেখে থাকেন। এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারে, আল্লাহ্ পাক তো বান্দার সবই দেখেন, তাহলে কাপড় পরাতে কি সম্পর্ক রয়েছে? আর কাপড় না পরাতে কি সম্পর্ক রয়েছে? এটার ব্যাখ্যায় যারা মুহাক্কিক-মুদাক্কিক তারা বলেছেন, একটা বান্দা যখন সতর ঢেকে রাখে বা কাপড় পরে থাকে তখন সে আল্লাহ্ পাক-এর কাছে مؤدب অর্থাৎ আদবের সাথে থাকে, শালীনতা বজায় রাখে অর্থাৎ সে শালীন বান্দা, আল্লাহ্ পাক-এর পছন্দনীয় ছুরতে থাকে। যখন সে বস্ত্র, সতর খুলে ফেলে তখন সে একটা বেয়াদব হিসেবে থাকে। অশালীন, খারাপ বান্দা হিসেবে আল্লাহ্ পাক-এর কাছে পরিগণিত হয়।
ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-আহ্কাম