এ প্রসঙ্গে বলা হয়, পূর্ববর্তী যামানার একটা ঘটনা রয়েছে, সে ঘটনায় উল্লেখ করা হয়েছে- একজন আবেদ ছিল। আবেদ, যে খুব ইবাদত-বন্দিগী করত। সে খুব পরহিযগার ছিল। সমস্ত দিন এবং রাত্র সে ইবাদত-বন্দিগীতে কাটাত। এতে সে কোন ত্রুটি-গাফলতি করতনা। ইবলিস অনেক দিন যাবৎ কোশেশ করতেছিল তাকে ওয়াস্ওয়াসা দেয়ার জন্য। যত পথ ইবলিস অবলম্বন করেছে কোন পথেই তাকে কাবু করতে পারেনি। এরপরও ইবলিস একটার পর একটা পদ্ধতি অবলম্বন করতে লাগল অর্থাৎ যাতে আবেদকে কব্জা করা যায়, আবেদকে কাবু করে শরীয়তের খিলাফ কাজ করানো যায় কিনা, যখন সে পর্যায়ক্রমে কোশেশ করতে লাগল। কোন কোশেশ তার কাজ হচ্ছে না। হঠাৎ দেখা দিল, সেই দেশের সাথে তার প্রতিবেশী দেশের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। যখন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল তখন ইবলিস সুযোগ খুঁজতে লাগল। এর মাধ্যম দিয়ে তাকে কব্জা করা যায় কিনা, কাবু করা যায় কিনা। ইবলিস সেই সুযোগ তালাশ করতে করতে ধোঁকা দেয়ার একটা পথ সে পেয়ে গেল। তাহলো, সেই আবেদের প্রতিবেশীদের মধ্যে নিকটবর্তী এলাকায় দুই ভাই ছিল। যাদের এক বোন ছিল। তাদের অবস্থা স্বচ্ছল ছিল। তারাও মোটামুটি পরহিযগার ছিল। ইবলিস গিয়ে তাদেরকে ওয়াস্ওয়াসা দিল, “তোমরা এক কাজ কর, জিহাদ শুরু হয়ে গেছে, তোমরা জিহাদে অংশ গ্রহণ কর। অনেক ফযীলত রয়েছে এর মধ্যে। এতে মারা গেলে শহীদ হয়ে যাবে। অনেক মর্যাদা-মর্তবা তোমাদের হাছিল হবে। তোমরা জিহাদে চলে যাও। কারণ টাকা-পয়সা, থাকা-খাওয়ার তো কোন অসুবিধা নেই। জিহাদ করে ফিরে এসেও তোমরা তোমাদের বিষয় সম্পত্তি আবার পাবে। আর যদি তোমরা শহীদ হয়েই যাও তাহলে তো অনেক ফযীলত রয়েছে আল্লাহ্ পাক-এর কাছে।” এটা ওয়াস্ওয়াসা দিয়ে মানুষের ছূরতে গিয়ে ইবলিস তাদের বুঝালো। অনেক দিন বুঝানোর পর তারা শেষ পযর্ন্ত বলল, ‘আমরা যদি জিহাদে চলে যাই, আমাদের তো আর কেউ নেই, দুই ভাই এক বোন, তাহলে আমাদের এই বোনটাকে আমরা কোথায় রেখে যাব?’ ইবলিস প্রথম দিন কিছুই বললনা। সে বলল, ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’ সে তাদের উপদেশদাতা হিসাবে, খয়ের খাঁ হিসাবে বলল, ‘অসুবিধা নেই, আমি একটু চিন্তা-ভাবনা করে দেখি। এতবড় ফযীলতের কাজ থেকে তোমরা মাহরূম থাকবে? এটার একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।’ এটা বলে আবার দু’একদিন পর এসে বলল, ‘আমি একটা চিন্তা-ভাবনা করেছি, কি চিন্তা ভাবনা করেছ? তোমাদের নিকটবর্তী একজন আবেদ রয়েছে খুব পরহিযগার, সে সব সময় নিরিবিলি থাকে। কোন বেগানা নারীর প্রতি সে দৃষ্টি দেয়না। মহিলাদের সামনে সে যায়না। এমন একজন আবেদ রয়েছে। তোমরা এক কাজ করতে পার, সে আবেদের কাছে তোমাদের বোনটাকে রেখে যেতে পার।” তারা বলল, ‘এটা কি করে সম্ভব হবে? আমরা তাকে রেখে যাব, সেখানে সে কোথায় থাকবে, খাবে?’
ইবলিস আবার ওয়াসওয়াসা দিল, “চিন্তার কোন কারণ নেই। কারণ, তার অনেক জায়গা-সম্পত্তি রয়েছে। আর তোমাদের তো টাকা-পয়সা রয়েছেই। কিছু টাকা পয়সা দিয়ে যাবে, খোরাক দিয়ে যাবে এক বৎসরের, তারা খাবে, থাকবে অসুবিধা হবেনা।” তাহলে কিভাবে চলবে? ইবলিস বলল, “ঠিক আছে আমি আবার আসব, এসে বলব।” ইবলিস সেই আবেদের কাছে গেল। গিয়ে তাকে বলল, ওয়াস্ওয়াসা দিল মানুষের ছূরতে যে, “তুমি এখানে থাক, খাও, তোমার তো অনেক অসুবিধা হয়। যদি কেউ তোমাকে পাক-শাক করে দিতো তাহলে তোমার ইবাদত-বন্দিগী আরো বেশী করা সম্ভব হত। এখন পাক করতে তোমার অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। তোমার পাক-শাক করতে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়।” খুব সূক্ষ্ম শয়তানের তা’ছীর অর্থাৎ শয়তানের ওয়াস্ওয়াসা খুব সূক্ষ্ম। সে তাকে বলতে লাগল, “তুমি যে নিজে পাক-শাক করে খাও, তোমার তো অনেক সময় ব্যয় হয়ে যায়। তুমি এক কাজ কর, একজন লোক রেখে নাও, যে তোমাকে পাক-শাক করে দিবে, তোমার সময় বেঁচে যাবে, তুমি বেশী বেশী ইবাদত-বন্দিগী করতে পারবে।” আবেদের ইল্মের কিছু অভাব রয়েছে। সে মনে মনে চিন্তা করল, ব্যাপারটা তো খারাপ নয়, ভাল। তুমি তো আমাকে ভাল বুদ্ধি দিয়েছ, তাহলে লোক পাব কোথায়? ইবলিস বলল, ‘ঠিক আছে আমি দেখি লোক পাওয়া যায় কিনা।’ এটা বলে সে আবার সেই দুই ভাইয়ের কাছে গেল, গিয়ে বলল যে, “দেখ, আমি তো তার সাথে আলাপ করেছিলাম, তাকে যদি কেউ পাক-শাক করে খাওয়ায় তাহলে হয়ত সেখানে থাকার ব্যবস্থা হবে।” সেই দু’ভাই বলল, ‘সে কি করে থাকবে ওখানে, সে বেগানা পুরুষ।’ ইবলিস বলল, “না, অসুবিধা নেই, আলাদা একটা ঘর করে সে ঘরে থাকবে; আর আবেদ তো তার ঘরেই থাকে, সে তো সেখান থেকে বের হয়না, তাহলে অসুবিধার কোন কারণ নেই।” তখন সে দু’ভাই বলল, ‘তাহলে আপনি ব্যাপারটা বিস্তারিত আলোচনা করে আমাদেরকে জানান।’ ইবলিস তো দরবেশের মনে ছূফীর ছূরতে ধোকা দিচ্ছে। তারা ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি। শেষ পযর্ন্ত ইবলিস সে আবেদের কাছে এসে বলল যে, “আমি একজন লোকের ব্যবস্থা করেছি, তোমাকে পাক-শাক করে খাওয়াবে।” তখন আবেদ জিজ্ঞাসা করল যে, ‘পুরুষ না মহিলা?’ তাকে বলা হল, “মহিলা হলেই দোষটা কি? কারণ পুরুষরা তো ভাল পাক-শাক জানেনা, তুমি এত ইবাদত-বন্দিগী কর, তোমার তো খাবারের দরকার রয়েছে, স্বাস্থ্য সুস্থ থাকার দরকার রয়েছে, ভাল ভাল খেলে স্বাস্থ্য ভাল থাকবে, আরো বেশী বেশী ইবাদত-বন্দিগী করতে পারবে, মহিলা হলেই তো ভাল হবে।” আবেদ বলেছিল, ‘তাহলে কি করে সম্ভব?’ ইবলিস বলল, “অসুবিধার কোন কারণ নেই। কারণ, তুমি যে ঘরে থাক সে ঘরে সে প্রবেশ করবেনা। আর সে যে ঘরে থাকবে তুমিও সে ঘরে প্রবেশ করবেনা। আলাদা তাকে ঘর করে দেয়া হবে, সমস্ত ব্যবস্থা তাকে করে দেয়া হবে। সে পাক-শাক করে তোমাকে খাওয়ার ব্যবস্থা করবে।” তা কি করে সম্ভব? “সে পাক-শাক করে, তোমার ঘরে যে পর্দা রয়েছে সেই পর্দার নীচ দিয়ে সে সেই খাদ্য তোমার ঘরে পৌঁছে দিবে, তুমি সেখান থেকে সেটা নিয়ে খাবে। এরপর আবার পর্দার বাইরে বের করে দিবে, সে সমস্ত হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন যা কিছু রয়েছে সেটা সে নিয়ে পরিস্কার করে রাখবে।” আবেদ মোটামুটি এক অবস্থায় কিছুটা সম্মতি প্রকাশ করল।
এরপর ইবলিস গেল সেই দুই ভাইয়ের কাছে। গিয়ে তাদের বলল, “তোমাদের জিহাদের সময় চলে যাচ্ছে। আর কত অপেক্ষা করা যাবে? এতবড় ফযীলত তো তোমাদের হাছিল করার দরকার রয়েছে, তাড়াতাড়ি করা উচিৎ। এক কাজ কর, আমি আলোচনা করেছি, তোমরা আমার সাথে আস, তোমাদেরকে নিয়ে তার সাথে আলোচনা করব, অসুবিধার কোন কারণ নেই, কোন অসুবিধা হবেনা। তোমরা জিহাদে চলে যাবে, নেক কাজে চলে যাবে।” আর আবেদকে বলল, “যেহেতু তারা জিহাদে যাবে, তুমি তো আর জিহাদে যেতে পারতেছনা। তাহলে তাদেরকে যদি তুমি সহযোগিতা কর, তুমিও জিহাদের ছওয়াব পাবে। অর্থাৎ একদিকে তুমি জিহাদেরও ছওয়াব পাবে, অন্য দিকে ইবাদত-বান্দিগীও করতে পারবে, বেশী বেশী করতে পারবে। তাদের সহযোগিতা করা হলে অনেক ফযীলত তুমি পাবে।” ইত্যাদি ইত্যাদি উভয়কে অনেক ওয়াস্ওয়াসা দিয়ে, অনেক প্রতারণা করে ভুলিয়ে ফেলল সে। শেষ পযর্ন্ত তারা ফায়সালা করল, ঠিক আছে, তাদের সে বোনকে এখানে রেখে যাবে। একটা আলাদা ঘর রয়েছে, সেখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে, ওযূ-ইস্তিঞ্জার ব্যবস্থা রয়েছে, ইবাদত বন্দিগীরও ব্যবস্থা রয়েছে। আবেদের সেই শর্ত-শারায়েত মুতাবিক তার ভাইয়েরা তার খাদ্যের ব্যবস্থা করে দিয়ে গেল এবং আবেদকেও যাতে সে খাদ্য পৌঁছায়, কি করে খাদ্য পৌঁছাবে, যেহেতু আবেদ তো ঘর থেকে বের হয়না। সে পর্দার তল দিয়ে খাদ্য পৌঁছিয়ে দিবে, আবার খাওয়া-দাওয়া হয়ে গেলে তার প্লেটগুলো, থালা, বাটি, পেয়ালা ইত্যাদি যা কিছু রয়েছে সেটা সে আবার পর্দার তল দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিবে, সে মেয়ে সেটা নিয়ে যাবে, সে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে রাখবে। (অসমাপ্ত)
ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-আহ্কাম