এজন্য অন্য আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে বলেছেন,
يايها النبى قل لازواجك وبنتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن.
আল্লাহ্ পাক আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে সরাসরি বলেছেন, يايها النبى হে আমার নবী, আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
قل لا زواجك وبنتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن.
আপনি বলে দিন, যারা আপনার স্ত্রী রয়েছেন; উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাদেরকে বলে দিন, যারা আপনার মেয়ে রয়েছেন উনাদেরকে বলে দিন এবং যারা মু’মিন মহিলা রয়েছেন তাদেরকে বলে দিন,
يدنين عليهن من جلابيبهن.
তারা যেন তাদের উপর পর্দা ঢেলে দেয়, চাদর ঢেলে দেয়, ওড়না ঢেলে দেয় অর্থাৎ তাদেরকে যেন তারা চুপিয়ে রাখে। ذلك ادنى এটা হচ্ছে ঐ আমলের নিকটবর্তী অর্থাৎ অতটুকুর মাধ্যমে তার তাক্বওয়া, তার পরহেযগারী জাহির হবে, প্রকাশ পাবে ।
ان يعرفن فلايؤذين
এটা হচ্ছে, ঐ মহিলা যে পর্দানশীন, পরহেযগার, নেক্কার, আল্লাহ্ওয়ালী সেটা চিনার একটা লক্ষণ। যার কারণে যারা বদ চরিত্র, বদ খাছলতের রয়েছে তারা তাদেরকে আর উত্যক্ত করবেনা, বিরক্ত করবেনা।
وكان الله غفورا رحيما.
আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। হে আমার নবী, আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, সবাইকে বলে দিন, বিশেষ করে যারা উম্মূল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদেরকে, যারা আপনার মেয়ে উনাদেরকে আর আমভাবে সমস্ত মু’মিন মুসলমান নারী যারা রয়েছে, তাদেরকে বলে দিন, তোমরা প্রত্যেকেই চাদরে আবৃত হয়ে পর্দা করে বের হবে। এবং এটা তোমাদের জন্য সেই তাক্বওয়া এবং পরহেযগারীর একটা নিদর্শন যাতে যারা বদ চরিত্র, বদ খাছলতের লোক রয়েছে তারা দেখে বুঝতে পারবে, এরা পরহেযগার, মুত্তাক্বী, আল্লাহ্ওয়ালী। কাজেই তাদের সাথে কোন খারাপ আচরণ করা যাবে না, বিরক্ত করা যাবেনা, উত্যক্ত করা যাবেনা। আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল এবং দয়ালু। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে এসেছে যা তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইরশাদ করেন,
عن ابن عباس رضلى الله تعالى عنه قال امر الله نساء المؤمنين اذا خرجن من بيوتهن فى حاجة.
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন,
امر الله نساء المؤمنين اذا خرجن من بيوتهن فى حاجة ويزكين وجوههن من فوق رؤوسهن بالجلابيب.
আল্লাহ্ পাক মু’মিন নারীদেরকে আদেশ করেছেন। কি আদেশ করেছেন? যখন তারা ঘর থেকে কোন জরুরতে বের হতে চায় বা যখন সে বের হবে তখন সে কি করবে? সে তার চেহারাকে চুপিয়ে রাখবে, কিভাবে?
من فوق رؤوسهن بالجلابيب
তার মাথার উপর থেকে পর্দা ঢেলে দিবে এবং সেখানে উনি বলেছেন,
يبدين عينا واحدة.
শুধু একটা চক্ষু যেন খোলা রাখে রাস্তা দেখার জন্য, সেটা হযরত ইবনে সিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে রেওয়ায়েত রয়েছে, তিনি চাদর পড়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, কিভাবে মেয়েদের পর্দা করতে হবে। বর্তমানে যেমন বাজারে বোরকা রয়েছে বা বর্তমানে বাজারে যে বোরকা রয়েছে সেটা পূর্ববর্তী যামানায় ছিল না। পূর্ববর্তী যামানায় বড় একটা চাদর যা আট থেকে দশ হাত লম্বা এবং প্রশস্ততা একজন মানুষ থেকে কমপক্ষে দুই তিন হাত বেশী। অর্থাৎ লম্বা প্রায় দশ/বার হাত আর চওড়া কমপক্ষে ছয়/সাত হাত। চওড়া সেই চাদরটা এনে মাথার উপর থেকে সামনে সিনা পর্যন্ত ঢেলে দিবে যাতে সামনে থেকে বা ডানে বামে থেকে কোন লোক মহিলাকে দেখতে না পারে। আর চাদরটা অতিরিক্ত বড় হওয়ার কারণে আর অতিরিক্ত প্যাঁচ দেয়ার ফলে তার শরীরের আকার-আকৃতি বা সাইজ কি রয়েছে সেটাও বুঝা যাবেনা। যখন চাদরটা সে পরবে, সামনের দিক থেকে সে দেখবে না, নীচের দিক থেকে রাস্তা দেখতে পারবে। সে রাস্তা দেখে দেখে পথ চলতেও পারবে। যদি তার কোন জরুরত হয় তাহলে সে বের হবে।
يبدين عينا واحدة
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন, মুহাক্কিক, মুদাক্কিক যারা তারা বলেছেন, একটা চক্ষু বের করে রাখতে পারে। তবে অনেকে বলেছেন, যদি একটা চক্ষু বের করতেই হয় তাহলে যেন বাম চক্ষু সে বের করে রাখে অথবা অপারগতায় ডান চক্ষু সে বের করতে পারে। সেটা দিয়ে সে দেখে দেখে রাস্তা চলবে। কিন্তু কোন বেগানা পুরুষও তাকে দেখবেনা। সেও কোন বেগানা পূরুষকে দেখতে পাবেনা। শুধু সে রাস্তা চলতে পারবে এবং সেজন্যই বলা হয়েছে, কোন মহিলা বা কোন মেয়ে যদি কোন প্রয়োজনে বের হয় তাহলে যেন একাকী বের না হয়, সাথে আরেকজনকে রাখে। এখন যদি অপারগ হয়ে যায়, তার কেউ না থাকে তাহলে সে মা’জুর। তখন সে একাকী বের হবে যদি প্রয়োজন থাকে। আর যদি সম্ভব হয় তার সাথে আর কাউকে নিয়ে অর্থাৎ পুরুষ সাথে নিয়ে চলাচল করে তাহলে তার পর্দার জন্য আরো বেশী সুবিধা হবে। সেটাই আল্লাহ্ পাক বলে দিয়েছেন। এরপর আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেছেন,
ولايبدين زينتهن الا ما ظهر منها وليضربن بخمر هن على جيوبهن ولايبدين زينتهن الا لبعولتهن اوابائهن او اباء بعولتهن او ابنائهن او ابناء بعولتهن او اخوانهن او بنى اخوانهن او بنى اخواتهن او نسائهن او ما ملكت ايمانهن او التابعين غير اول الاربة من ارجال او الطفل الذين لم يظهروا على عورت النساء.
এরপর আল্লাহ্ পাক পর্দার হুকুম বলে দিয়ে এখানে বললেন যে, দেখ, এ আয়াত শরীফে যে বার প্রকার লোকের কথা বলা হয়েছে যাদের সাথে বা যাদের সম্মুখে যদি পর্দার অতিরিক্ত কাপড় তারা না পড়ে তাতে গুনাহ হবেনা। এদের মধ্যে আবার শ্রেণী বিভেদ রয়েছে। প্রথম বলা হয়েছে, الا لبعولتهنস্বামী, স্বামীর হুকুম অন্যান্য সকলের চাইতে সম্পূর্ণ আলাদা। اوابائهن তার পিতা او ابنا ئهن তার সন্তান او اباء بعولتهن তার স্বামীর পিতা। আপন পিতার যে হুকুম রয়েছে, স্বামীর পিতারও সে একই হুকুম রয়েছে। এর মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, প্রথমে স্বামীর কথা, তার হুকুম সম্পূর্ণই আলাদা। এরপর বলা হয়েছে আপন পিতার কথা, আবার বলা হয়েছে, স্বামীর পিতার কথা। আপন পিতা এবং স্বামীর পিতার মধ্যে শরীয়তের কিছু মাসয়ালা-মাসায়িল রয়েছে সেটা হচ্ছে, বিশেষ করে স্বামীর যে পিতা রয়েছে, এখন স্বামীর পিতার সামনে অর্থাৎ ছেলের বউ ছেলের স্ত্রী সে তার শশুরের কাছে কতটুকু যাবে? সেখানে শরীয়তের কি মাসয়ালা? শরীয়তের যে ফয়সালা দেয়া হয়েছে সেটা হচ্ছে, হ্যাঁ, দেখা করতে পারবে, পাক-শাক করে খাওয়াতে পারবে কিন্তু সরাসরি যে খিদমত করা যেমন হাতে পায়ে তেল দিয়ে দেয়া বা ইত্যাদি ইত্যাদি; এ সমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকাই উত্তম।য (অসমাপ্ত)