(ধারাবাহিক)
তখন স্ত্রী বললো, ‘ঠিক আছে, এক কাজ করুন। আপনি একদিন কাজে বাইরে যাবেননা। অর্থাৎ আপনি যে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরী-বাকুরী ইত্যাদি যা কিছু করেন সেটা করতে যাবেন না।’ ‘না যেয়ে কি করতে হবে?’ সাধারণতঃ মানুষ যারা টিনের ঘর করে থাকে, তারা টিনের ছাউনীর নীচে পাটাতন দিয়ে থাকে বা করে থাকে; যাকে কাঁড়ও বলে। যেখানে মানুষ অনেক মাল সামানাও রেখে থাকে এবং বসার, থাকার ব্যবস্থাও করে থাকে। স্ত্রী স্বামীকে বললো, ‘আপনি আজকে সকাল বেলা যে সময় ঘর থেকে বের হন, সে সময় ঘর থেকে বের না হয়ে আমাকে রাগারাগি করে কাঁড়ের উপর উঠে অপেক্ষা করবেন। আমি একটা পরীক্ষা করব।’ ‘কি পরীক্ষা করবে?’ ‘আমি আজকে কোন পাক-শাক করব না। পাক-শাক না করে আমি চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকব। চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকলে, ছেলেরা আসলে, আমি যা বলার বলবো। আপনি শুধু লক্ষ্য করে শুনবেন, তারা কি বলে?’ স্ত্রীর কথা মুতাবিক স্বামী কাঁড়ের উপর উঠলো, উঠে চুপ করে সে অপেক্ষা করতে লাগলো ও লক্ষ্য করতে লাগলো, নীচে কি হয়? স্ত্রী তো চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে রয়েছেন, এখন দুই ছেলে তারা খাওয়ার জন্য আসলো। নাস্তা খাবে। সে মহিলা, তাদের মা, সে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে রয়েছে, সে উঠে না। ছেলেরা এসে জিজ্ঞেস করল যে, ‘মা আপনার কি হয়েছে?’ সে বললো, ‘দেখ, তোমাদের যে পিতা রয়েছেন, তিনি তো আমাকে অনেক রাগারাগি করেছেন। তাই আমার মন খারাপ, আমি এজন্য আজকে আর পাক-শাক করবনা। কাজেই আমি পাক-শাক না করলে তোমরা আজকে খেতে পারবে না।’ যখন একথা সে বললো যে, ‘স্বামী রাগারাগি করেছেন, তোমাদের পিতা আমাকে রাগারাগি করেছেন, কাজেই আমি পাক-শাক করতে পারবনা। কাজেই তোমরা আজকে খেতে পারবেনা।’ সেটা শুনে তার বড় ছেলে সে চুপ করে তার মায়ের কাছে আসলো, এসে বললো, ‘কি হয়েছে? উনি তো আমাদের পিতা, সম্মানিত। উনি যদি আপনাকে কিছু বলেই থাকেন, সেটা তো ধরার বিষয় নয়। আপনি দয়া করে উঠে পাক-শাক করুন।’ খুব আদব, তা’যীমের সহিত ছেলেটা বললো। আর ছোট ছেলেটা যখন জিজ্ঞেস করল, ‘খাবার কোথায়?’ তার মা বললো যে, ‘তোমার পিতা তো আমাকে রাগারাগি করেছেন, আমার মন খারাপ, আমি পাক-শাক করতে পারবো না। কাজেই আজকে তোমরা খাওয়া পাবেনা।’ সে ছেলে বললো, ‘কেন খাওয়া পাবনা?’ ‘তোমার পিতা আমাকে রাগারাগি করেছেন, আমার মন খারাপ, আমি পাক-শাক করতে পারব না।’ ‘কেন রাগারাগি করেছে আপনাকে? এটার বিচার করতে হবে, আমার পিতা কেন আপনাকে রাগারাগি করেছে সেজন্য বিচার করতে হবে, আমিই বিচার করব, লাঠি দেন আমাকে।’ যখন সে উত্তেজিত হলো, সে বাচ্চা ছেলেটা একটা লাঠি নিয়ে তার বাপের বিচার করার জন্য। ঠিক এতটুকু যখন হয়ে গেল তখন মহিলা বললো, ‘ঠিক আছে বাবা, তোমাকে লাঠি নিতে হবে না। তুমি অপেক্ষা কর, আমি খাবারের ব্যবস্থা করতেছি।’ এদিকে তার স্বামী উপর থেকে সব লক্ষ্য করলো। খাবার দেয়া হলো, ছেলেরা খেলো, তাদের অজান্তেই তাদের বাবা নেমে আসলো। তখন স্ত্রী বললো যে, ব্যাপারটা যা ঘটেছে তার স্বামী সেটা লক্ষ্য করেছে কিনা? সে বললো যে, ‘হ্যাঁ, আমি লক্ষ্য করেছি। যেই সন্তানটা পর্দা অবস্থায়, তাক্বওয়া এবং পরহেযগারী অবলম্বন করা অবস্থায় হয়েছে তার আচার-আচরণ, কথাবার্তা অনেক শালীন। আর যে সন্তানটা বেশরা, বিদয়াত, বেহায়াপনার সময় জন্মগ্রহণ করেছে, তার আচার-আচরণের মধ্যে অনেক অশালীনতা রয়েছে।’ তখন স্বামী সেটা বুঝতে পারলো। তারা সেই এলাকা ছেড়ে আবার পূর্বের এলাকায় গিয়ে, ঘরবাড়ী করে সেখানে শরয়ী পর্দা মুতাবিক জীবন-যাপন করতে লাগলো। (সুবহানাল্লাহ)
এখন চিন্তা-ফিকিরের বিষয় যে, পর্দার কতটুকু তাছির বা ক্রিয়া রয়েছে। সেটাই আল্লাহ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
اذا فاتك الحياء فافعل ما شئت.
‘যখন তোমার পর্দা সরে যাবে অর্থাৎ বেপর্দা হয়ে যাবে, লজ্জা সরে যাবে, লজ্জা থাকবেনা, তখন যে কোন কাজ করা সম্ভব। হায়া না থাকলে তার দ্বারা যে কোন কাজ করা সম্ভব। যার হায়া থাকবে তার দ্বারা সব কাজ করা সম্ভব নয়। সে হিসাব-নিকাশ করে কাজ করবে। এজন্য হাদীছ শরীফে এসেছে,
قال النبى صلى الله عليه وسلم ثلاثة لايدخلون الجنة ابدا الديوث والرجلة من النساء ومدمن الخمر.
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তি কখনই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা।’ তার মধ্যে প্রথম হচ্ছে الديوث দুই নম্বর হচ্ছে الرجلة من النساء তিন নম্বর হচ্ছে مدمن الخمر এ হাদীছ শরীফে তিন প্রকার লোকের কথা বলা হয়েছে- مدمن الخمر ‘যে সব সময় শরাব পান করে ঐ ব্যক্তি’, الرجلة من النساء ‘যে মহিলা পুরুষের ছূরত ধারণ করে অথবা যে পুরুষ মহিলার ছূরত ধারণ করে।’ আজকাল তো অনেক মহিলা তাদের চুল ছেঁটে আকার-আকৃতি বিকৃতি করে, অনেকটা পুরুষের ছূরত ধারণ করে থাকে, তাদের কথা বলা হয়েছে, ঐ সমস্ত মহিলা যারা পুরুষের ছূরত ধারণ করে এবং الديوث ‘দাইয়ূছ’ যে ব্যক্তি তার অধীনস্থ মহিলাদেরকে পর্দা করায় না সে হচ্ছে দাইয়ূছ।’ এই তিন প্রকার লোক কখনই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। ঠিক অনুরূপ আরেকটা হাদীছ শরীফে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
قدحرم الله عليهم الجنة.
‘আল্লাহ পাক ঐ সমস্ত লোকদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন।’
مدمن الخمر والعاق واليوث.
এখানেও তিন প্রকার লোকের কথা বলা হয়েছে, তিন প্রকার লোকের জন্য আল্লাহ পাক জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন- مدمن الخمر যে দায়িমীভাবে শরাব পান করে সে শরাবখোর, والعاق পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, والديوث যে নিজের অধীনস্থ মহিলাদের পর্দা করায় না সে হচ্ছে দাইয়ূছ, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। তার জন্য জান্নাত হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। সেজন্য অন্য হাদীছ শরীফে রয়েছে, বেহেশ্তের দরজায় লিখা রয়েছে,
الديوث لايدخل الجنة.
‘দাইয়ূছ কখনই বেহেশতে প্রবেশ করবেনা।’ এটা বেহেশ্তের দরজায় লিখা রয়েছে। কাজেই খুব কঠিন। দাইয়ূছ হচ্ছে ঐ সমস্ত লোকেরা যারা তাদের অধীনস্থ মহিলাদের বা মেয়েদের পর্দা করায় না, তারা হচ্ছে দাইয়ূছ। তারা কখনও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। খুব চিন্তা এবং ফিকির করতে হবে। খুব চিন্তা, ফিকির করতে হবে এ ব্যাপারে। কারণ যদি কেউ বেপর্দা হয়ে যায়, বেহায়া হয়ে যায়, তাহলে তার জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে, কাজেই ইস্তিগ্ফার-তওবা করে আল্লাহ পাক-এর মতে মত হওয়ার জন্য, আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পথে পথ হওয়ার জন্য কোশেশ করতে হবে। এজন্য হাদীছ শরীফে এসেছে, “মেয়েদের চাল-চলন, আচার-আচরণ প্রত্যেকটাই সংযত রাখতে হবে। এবং শুধু তাই নয় তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ সেটাও তাদের সংযত রাখতে হবে।” (অসমাপ্ত)