(ধারাবাহিক)
এখন চিন্তা ও ফিকিরের বিষয় হলো, উঁকি মারা যদি এত বড় অপরাধ হয়ে থাকে, ‘যে উঁকি দিবে তার চক্ষু নষ্ট করে দিলেও সেটা অপরাধ হবে না। বরং যার চক্ষু নষ্ট করা হবে, সেই অপরাধী হিসাবে সাব্যস্ত হবে।’ তাহলে যখন রাস্তা দিয়ে চলবে মহিলারা, তখন তাদের কিভাবে চলতে হবে? আর পুরুষদের; তাদের সাথে কি আচরণ করতে হবে? এ হাদীছ শরীফ থেকেই সহজে সেটা অনুধাবন করা যায়। এজন্য আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আর ফতওয়াও দেয়া হয়েছে যে, ‘কোন বেগানা মেয়ে বা মহিলার জন্য চলাচল করার যে হুকুম, সেটা দূরবর্তী রাস্তা অর্থাৎ মুসাফিরের যে পথ রয়েছে সে পরিমাণ অথবা তার চেয়ে দুরবর্তী স্থান সে যেন একাকী সফর না করে। এবং যদি সে কোথাও যেতে চায় তাহলে অবশ্যই সে যেন তার মাহরাম যারা তাদের অথবা তার স্বামীর অনুমতি নিয়ে যায়।’ হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
عن معاذ رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لايحل للمرأة تؤمن بالله واليوم الاخر ان تأذن فى بيت زوجها الا باذنه ولاتخرج وهو كاره.
হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে,
لايحل للمرأة.
‘কোন মেয়ের জন্য জায়িয নেই, এটা হালাল হবে না,
تؤمن بالله واليوم الاخر.
যে আল্লাহ পাক-এর প্রতি ঈমান এনেছে এবং পরকালের প্রতি ঈমান এনেছে বা বিশ্বাস রাখে,
ان تأذن فى بيت زوجها الا باذنه.
তার স্বামীর গৃহে অর্থাৎ তার ঘরে যেন স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কাউকে প্রবেশ করতে না দেয় এবং ولاتخرج وهو كاره স্বামীর অনুমতি ছাড়া যেন সে ঘর থেকে বের না হয়। স্বামীর অনুমতি নিয়ে সে বের হবে এবং সে যদি জবরদস্তিভাবে অনুমতি নেয়, স্বামীর অসন্তুষ্টি থাকে, সে অবস্থায় তার বের হওয়া জায়িয নেই। স্বামীকে অসন্তুষ্ট করে ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। সে ঘর থেকে বের হতে পারবেনা স্বামীর অনুমতি ব্যতীত। কোন লোককে প্রবেশ করাতে পারবেনা স্বামীর অনুমতি ব্যতীত। এবং আরো বর্ণিত রয়েছে,
ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ما تحدثن من الرجال الا محرما.
“নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোন মহিলা যেন এমন কোন পুরুষের সাথে কথা না বলে, যারা তার মাহরাম; তারা ছাড়া।” অর্থাৎ যাদের সাথে দেখা দেয়া জায়িয রয়েছে, শুধু এদের সাথে সে কথা বলবে। এছাড়া কারো সাথে কথা বলবে না। হ্যাঁ, যদি বলতে হয়, তাহলে স্বামীর অনুমতি নিবে। অথবা নেহায়েত যদি জরুরত হয়, তাহলে সেটা সে বলবে। এছাড়া যেন সে কোন বেগানা পুরুষের সাথে কথা না বলে। এবং পুরুষদেরকে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করে দিয়েছেন,
نهى النبى صلى الله عليه وسلم ان تكلم النساء الا باذن ازواجهن.
“আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন যে, তোমরা পুরুষরাও কোন মহিলার সাথে, বেগানা মেয়ের সাথে কথা বলবেনা, তার স্বামীর অনুমতি ব্যতীত।” অথবা যদি কারো স্বামী না থেকে থাকে তার বাপ-ভাই যারা রয়েছেন, তাদের অনুমতি ব্যতীত তোমরা কোন বেগানা মেয়ের সাথে, মহিলার সাথে কথা বলবেনা। কারণ কথা বললে পর্যায়ক্রমে আস্তে আস্তে তার হায়া কমে যাবে। হায়া কমে গেলে ঈমানের ঘাটতি হবে। ঈমানের ঘাটতি হলে তার আমলও ঘাটতি হবে। সেটাই বলা হয়েছে,
الحياء شعبة من الايمان.
“হায়া হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ।” কাজেই তার হায়া যদি ঠিক থাকে, তার ঈমান মজবুত থাকবে। অন্যথায় ঈমান মজবুত থাকবেনা। এজন্য অন্য হাদীছ শরীফে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামূল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
اذا لم تستحى فاصنع ما شئت.
“যখন তুমি নির্লজ্জ হবে তখন যা খুশী তাই তুমি করবে।” অর্থাৎ যখন মানুষের লজ্জা থাকেনা তখন সে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। এবং আরেক হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে,
اذا فاتك الحياء فافعل ما شئت.
“যখন তোমার লজ্জা নষ্ট হয়ে যাবে, তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে।”
কারণ লজ্জা নষ্ট হয়ে গেলে তো ঈমানে ঘাটতি হয়ে যায়, তখন সে যা ইচ্ছে সেটাই করতে পারে, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সব অবস্থায় সে যে কোন কাজ করতে পারবে। যখন তার লজ্জাটা নষ্ট হয়ে যায়, লজ্জাটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ঈমানটাও ঘাটতি হয়ে যায়। তার দ্বারা যে কোন কাজ করা স্বাভাবিক হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনা কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, মানুষের যদি লজ্জা না থাকে, তাহলে তার দ্বারা যে কোন কাজ সংঘটিত হতে পারে। যে ঘটনা বলা হয়েছে সেটা হচ্ছে, একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা তারা পরস্পর স্বামী-স্ত্রী ছিল, তারা যে এলাকায় বসবাস করতো সে এলাকাতে অন্যান্য লোকজন যারা ছিল, তারাও মোটামুটি দ্বীনদার, পরহেযগার ছিল। দ্বীনদার, পরহেযগার হওয়ার কারণে সে স্বামী-স্ত্রী তারাও পর্দা করতো। এ পর্দা করা অবস্থায় তাদের একটা সন্তান জন্মগ্রহণ করলো। সন্তান জন্মগ্রহণ করার কিছুদিন পর সে পুরুষ এবং মহিলা অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী তারা সে এলাকা ছেড়ে দূরবর্তী আরেক এলাকায় তাদের বাড়ী-ঘর নির্মাণ করলো, থাকার ব্যবস্থা করলো। কিন্তু যেখানে তারা এসে থাকার ব্যবস্থা করলো সে এলাকার লোকেরা পূর্বের এলাকার লোকের মতো দ্বীনদার, পরহেযগার নয়। তাদের মধ্যে বদ্দ্বীনী-বেদ্বীনী কিছু ছিল। তাদের ছোহবতে এসে সে স্বামী বেপর্দা, বেহায়া হয়ে গেল। তার ওয়াস্ওয়াসার কারণে তার স্ত্রীও পূর্বে যেমন পর্দা করতো অর্থাৎ শরয়ী পর্দা মুতাবিক চলতো সেটাও সে ছেড়ে দিল আস্তে আস্তে। এরপর দেখা গেল, তার কিছু দিন পর অর্থাৎ তাদের বেপর্দা-বেহায়া হওয়ার পর, তাদের আরেকটা সন্তান জন্মগ্রহণ করলো।
ৎ কিন্তু স্ত্রী বারবার তার স্বামীকে বলতেছিল পর্দা করার জন্য, যেহেতু সে এলাকায় এমন পরিবেশ ছিল যে, সেখানে পর্দা করা কঠিন ছিল। সে সমাজের লোকজন সব বেহায়া, বেপর্দা, বেশরা ছিল। যার জন্য ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সে স্বামী তার স্ত্রীকে পর্দা করায়নি, সে স্ত্রী বার বার বলার পরেও। যখন আরেকটা সন্তান জন্মগ্রহণ করল। সে সন্তানটা বড় হলো, উভয় সন্তানই বড় হলো। অর্থাৎ মোটামুটি একটা বুঝ পয়দা হয়ে গেল। পাঁচ, সাত, আট বছর বয়স হয়েছে। এ অবস্থায় একদিন সে স্ত্রী তার স্বামীকে বার বার বলতে লাগলো পর্দার কথা। যখন স্বামী তার কথা শুনলো না, তখন একদিন স্ত্রী বললো যে, ‘এক কাজ করা যেতে পারে। ‘কি কাজ করা যেতে পারে?’ ‘একটা পরীক্ষা করবো।’ ‘কি পরীক্ষা করবে?’ পরীক্ষা হচ্ছে, ‘আমাদের একটা ছেলে জন্মগ্রহণ করেছে, যখন আমরা শরয়ী পর্দা করতাম তখন। আরেকটা ছেলে জন্মগ্রহণ করেছে, যখন আমরা পর্দা ছেড়ে দিয়েছি তখন। এ দু’জনের আচার-আচরণের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।’ স্ত্রী তার স্বামীকে বললো, ‘এদের আচার-আচরণের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আমি ব্যাপারটা ফিকির করেছি।’ স্বামী যেহেতু ঘরে থাকেনা সেহেতু সে ব্যাপারটা অনুধাবন করেনি। স্ত্রী ব্যাপারটা অনুধাবন করেছে। সে বললো, ‘এখনও সময় রয়েছে পর্দা করার। অন্যথায় সন্তান সব নষ্ট হয়ে যাবে।’ তখন স্বামী স্ত্রীকে বললো, ‘বেশ, তুমি কিভাবে এটা