(ধারাবাহিক)
হাদীছ শরীফে এসেছে,
دخلت حفصة بنت عبد الرحمن على عائشة عليها السلام وعليها خمار رقيق فشقته عائشة عليها السلام وستها خمارا كثيفا.
হযরত আলক্বামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন,
دخلت حفصة بنت عبد الرحمن.
হযরত হাফসা যিনি আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মেয়ে, হযরত হাফসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি একদিন আসলেন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর হুজরা শরীফে। এমন অবস্থায় আসলেন, وعليها خمار رقيق. ‘যার শরীরে ছিল পাতলা ওড়না।’ এমন পাতলা ওড়না যা দিয়ে শরীর দেখা যায়।
فشقته عائشة عليها السلام وكستها خمارا كثيفا.
সেটা দেখে হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তাঁর ওড়নাটা- পাতলা ওড়না দেখে টান দিয়ে নিয়ে ছিড়ে ফেলে দিলেন। ফেলে দিয়ে একটা মোটা কাপড়ের ওড়না তাঁকে পরিয়ে দিলেন এবং বলে দিলেন, ‘পাতলা কাপড় পরিধান করা আর বস্ত্রহীন অবস্থায় থাকা একই হুকুম।’ কাজেই চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, পোষাক-পরিচ্ছদে কোন মতেই যেন তাদের কোন সৌন্দর্য প্রকাশ না পায়। সেটাই আল্লাহ পাক বলে দিয়েছেন। সে দিক থেকে সাবধান থাকতে হবে। কারণ, যদি তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ পায় এবং বেগানা পুরুষ আকৃষ্ট হয় তাহলে অবশ্যই সে زانية অর্থাৎ ব্যভিচারিনী হিসেবে আল্লাহ পাক-এর দরবারে সাব্যস্ত হবে। কিন্তু সে জানবেনা, মনে করবে সে তো শরীয়ত মতই চলে, হয়ত সে বোরকাও পরেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বোরকার ভিতরে সে এমন সুঘ্রাণ ব্যবহার করতেছে অথবা সে রাস্তায় চলার সময় এমনভাবে হাঁটছে, তার সৌন্দর্য ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে। মানুষ সেদিকে আকৃষ্ট হচ্ছে এবং যার কারণে সে আল্লাহ পাক-এর দরবারে ব্যভিচারিনী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে যাবে। খুব কঠিন বিষয়। সেটাই আল্লাহ পাক বলেছেন,
ولايضربن بارجلهن ليعلم ما يخفين من زينتهن.
আল্লাহ পাক বলেছেন যে, ‘তোমরা এমনভাবে চলনা, হেঁটনা, এমন পোষাক পরিধান করোনা, যেটার মাধ্যম দিয়ে তোমাদের সৌন্দর্য প্রকাশ পেয়ে যায়, গুপ্ত সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। খুব সাবধান, সতর্ক থাকতে হবে এই পর্দার ব্যাপারে। খুব সাবধান থাকতে হবে, অন্যথায় কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।’ সে জন্য আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
احفظ عورتك الا من زوجتك او ما ملكت ايمانك.
‘তুমি তোমাকে হিফাযত কর। নিজের ইজ্জত-আবরু হিফাযত কর। পুরুষদের জন্য তাদের স্ত্রী ব্যতীত অন্য সকলের থেকেই নিজেদের হিফাযত করতে হবে। অথবা বাদী যারা রয়েছেন তাদের ব্যতীত। আর মহিলাদের জন্য স্বামী ছাড়া সকলের কাছ থেকে সে যেন তাকে হিফাযত করে। তার সৌন্দর্য সে প্রকাশ না করে। সেটা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে দিয়েছেন। সেজন্য বলা হয়েছে,
ملعون من نظر الى سوئة اخيه.
ঐ ব্যক্তি লা’নতগ্রস্ত, ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহ পাক-এর লা’নত, ‘কোন মুসলমান ভাই অথবা মুসলমান বোন অর্থাৎ কোন বেগানার সতরের প্রতি যে দৃষ্টি করে, অন্যের সতরের প্রতি দৃষ্টি করে, আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে তার প্রতি লা’নত।’ কাজেই পর্দার যে হুকুম রয়েছে, খুব সুক্ষ্ম হুকুম, কঠিন হুকুম। এটা আমল করার জন্য প্রত্যেককে কোশেশ করতে হবে। অনেকে হয়ত শুনে মনে করবে, খুব কঠিন। হ্যাঁ, কঠিন মনে করলেই কঠিন। আর আমল করলেই সেটা সহজ হয়ে যায়। যে সহজ হিসাবে গ্রহণ করবে, আল্লাহ পাক তাকে সহজ করে দিবেন। আর যে কঠিন মনে করবে তার জন্য সেটা কঠিন হয়ে যাবে। এ জন্য হাদীছ শরীফে এসেছে,
انا عند ظن عبدى بى.
আল্লাহ পাক হাদীছ কুদসীতে ইরশাদ করেন, ‘আমি আমার বান্দার ধারণা অনুযায়ী। বান্দা আমাকে যেমন ধারণা করবে, আমি তার সাথে ঠিক তদ্রুপ ব্যবহার করব।’ যে সহজ মনে করে কোশেশ করবে তার জন্য সহজ হয়ে যাবে। যেহেতু আখিরী যামানা, ফিৎনার যুগ। সেটাই আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, ‘আখিরী যামানায় ঈমান রক্ষা করা খুব কঠিন হবে। একটা লোক সকালে ঈমানদার থাকবে, সন্ধ্যায় সে ঈমান হারা হয়ে যাবে। আবার সন্ধ্যায় ঈমানদার হবে, সকালে ঈমান হারা হয়ে যাবে। পরিবেশ পরিস্থিতিতে চলার কারণে, মানুষের বদ ছোহবতের কারণে, সেটা হতে পারে। কাজেই এর পরেও পর্দার হুকুম-আহকাম জেনে, শুনে, বুঝে নিজের আমলগুলো শুদ্ধ রাখতে হবে, আল্লাহ পাক-এর কাছে দোয়া করতে হবে, আরজু করতে হবে যাতে আল্লাহ পাক সেই শরয়ী পর্দা মুতাবিক আমাদেরকে জীবন যাপন করার তাওফিক দান করেন।
ৎএটা প্রত্যেকের জন্যই দায়িত্ব এবং কর্তব্য। কোন নির্দিষ্ট পুরুষ বা মহিলার জন্য নয়। প্রত্যেক মুসলমান নর এবং নারীর জন্য সেটা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। যারা মুসলমান হবে নর এবং নারী মুসলমান অর্থাৎ ঈমানদার যে দাবী করবে তাদের সে দায়িত্ব। কাজেই আমরা আল্লাহ পাক-এর কাছে দোয়া করব যাতে আল্লাহ পাক আমাদেরকে শরয়ী পর্দা মুতাবিক আমল করার তাওফিক দান করেন। কারণ পর্দা আল্লাহ পাক আদেশ করেছেন, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ করেছেন পালন করার জন্য। বিশেষ করে সূরা আহযাব, সূরা নূরে। এজন্য সূরা নূরে আল্লাহ পাক পর্দা সম্পর্কে হুকুম-আহকাম উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ পাক ‘সূরা নূরের’ মধ্যে পর্দার আয়াত বর্ণনা করার পর, ইরশাদ করেন,
وتوبوا الى الله جميعا ايه المؤمنون.
হে মুমিনরা! তোমরা সকলেই আল্লাহ পাক-এর কাছে তওবা কর। আল্লাহ পাক-এর হুকুম-আহকামের দিকে প্রত্যাবর্তন কর, ফিরে আস, আদেশ-নির্দেশ যথাযথ পালন কর। لعلكم تفلحون আশা করা যায় তোমরা কামিয়াবী হাছিল করবে। এখানে لعلكم تفلحون শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, এই لعلكم শব্দটা সাধারণভাবে ব্যবহার হচ্ছে ظنى (জন্নি) অর্থে অর্থাৎ হতেও পারে, নাও হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ পাক এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে যখন لعلكم শব্দ ব্যবহার হবে, তখন সেটা ইয়াক্বিন অর্থে আসবে। অর্থাৎ অবশ্যই তোমরা কামিয়াবী হাছিল করবে।
হে মু’মিন বান্দারা তোমরা তওবা করে ফিরে আস আল্লাহ পাক-এর দিকে। যা আদেশ-নির্দেশ করা হলো, সেটা যথাযথ পালন করো; এবং সেটা পূরা করে ফিরে আসো তাহলে অবশ্যই তোমরা কামিয়াবী হাছিল করবে।