-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
আউলিয়া-ই-কিরামগণের নাম মুবারকে কিভাবে লক্বব মুবারক সন্নিবেশিত হয় (পূর্ব প্রকাশিতের পর) তাঁদের মধ্যেও দু’শ্রেণী বিদ্যমান। (১) কামালতে নুবুওওয়াত তথা নুবুওওয়াতের মাক্বামের হিস্সাপ্রাপ্ত। যারা পূর্ববর্তী আউলিয়া-ই-কিরামের তর্জ-তরীক্বা মুতাবিক হিদায়েতের কার্যক্রম পূর্ণরূপে পরিচালনা করেন। (২) কামালতে রিসালত তথা রিসালতের মাক্বামের হিস্সাপ্রাপ্ত। তাঁরা ইজতিহাদের যোগ্যতা সম্পন্ন। ইমাম এবং মুজতাহিদের অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা পূর্ববর্তী আউলিয়া-ই-কিরামের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। আবার কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ভিত্তিতে ইজতিহাদ করতঃ শরীয়তকে প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁদের মধ্যে বিশেষ আর এক শ্রেণী আছেন যাদেরকে উলূল আযম বলা হয়। যারা বিশেষভাবে শরীয়তের বিধানাবলী প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হন। পূর্ববর্তী সমস্ত বিদ্য়াত, বেশরা, হারামকে দূরীভূত করে শরীয়তের বিধানাবলী প্রতিষ্ঠা করেন। অবশ্য সেজন্য তাঁদেরকে অনেক দুঃখ-কষ্ট, তাকীফ, জুলুম-অত্যাচার সহ্য করতে হয়। হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,
اشد الناس بلاء الانبياء ثم الصالحون ثم الامثال فالامثال.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সবেচেয়ে বেশী দুঃখ-কষ্ট ভোগকারী। অতঃপর ছালিহীন তথা কামালতে রিসালতে উলুল আযম আউলিয়া-ই-কিরামগণ। তারপর তাঁদের নিকটবর্তী (মর্যাদা সম্পন্ন) ব্যক্তিবর্গ।” (ত্ববারানী শরীফ, কিমিয়ায়ে সায়াদাত, ইহয়াউ উলুমিদ্দীন) আল্লাহ পাক তাঁদের উদ্দেশ্যে বলেন,
فاصبر كما صبر اولوا العزم من الرسل.
অর্থঃ- “ধৈর্যধারণ কর, যেমন উলুল আযম রসূলগণ ধৈর্যধারণ করেছেন।” (সূরা আহকাফ/৩৫) যামানার ইমাম, ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলাম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদুর রসূল, সাইয়িদুনা রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী সেই কামালতে রিসালতে উলুল আযম মাক্বাম-এর হিস্সাপ্রাপ্ত অন্যতম ওলীআল্লাহ। যা তাঁর নাম মুবারকের পূর্বে উল্লিখিত লক্বব মুবারকসমূহ তারই বহিঃপ্রকাশ। ইমামুল মুত্তাক্বীন, আল্লামাতুদ্ দার্হ, শিহাবুদ্দীন আহমাদ ইবনে মুহম্মদ খফফাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
كثرة الاسماء تدل على شرف المسمى ولو ادعاء.
অর্থঃ- “(জাতী ও ছিফতী) নামসমূহের আধিক্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মর্যাদা-মর্তবার প্রতি দালালত (নির্দেশ) করে যদিও তা অন্য কারো নামে সম্পৃক্ত হয়। (নাসীমুর রিয়াদ ফী শরহে শিফা ৩/২৪০, মাওয়াহিবুল্ লাদুন্নিয়া, সীরাতে মুহম্মাদিয়া ২/৪৩) উল্লেখ্য যে, দ্বীনের প্রচার প্রসারই হচ্ছে কামালতে নুবুওওয়াত এবং রিসালতের মাক্বাম-এর হিস্সাপ্রাপ্ত আউলিয়া-ই-কিরাম-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। যখন তাঁরা দ্বীনের প্রচার-প্রসার কাজে আত্ম নিয়োগ করেন, তখন তাঁদের মহান গুণাবলী বা মাক্বামের প্রকাশ ঘটে। যাঁর তাজদীদ বা সংস্কার যত ব্যাপক তাঁর গুণাবলী বা মাক্বামের (মর্যাদা) তত বিকাশ ঘটে থাকে। আর লক্বব বা উপাধি প্রকাশিত হয় সেই ভাবে যিনি যত মর্যাদা-মর্তবার অধিকারী তাঁর তত বেশী লক্বব বা উপাধি যাহির হয়। (অসমাপ্ত)
তাফসীরুল কুরআন ক্বমীছ বা কোর্তা মুবারকের বুযুর্গী -পীরে কামিল, হাফিয, ক্বারী, মুফতী, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুহম্মদ শামসুদ্দোহা (ধারাবাহিক) হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যখন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর আম্মাজান হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ইন্তিকাল করেন, তখন রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাশরীফ আনলেন এবং তাঁর শিয়রে বসে ফরমালেন,
يرحمك الله فانك كنت امى بعد امى تجوعين وتشبعيننى وتعرين وتكسيننى وتمنعين نفسك طيب الطعام وتطعميننى تريدين بذلك وجه الله والدار الاخرة.
অর্থাৎ- “আল্লাহ পাক আপনার প্রতি রহম করুন। আপনি আমার মা-এর পরে মা ছিলেন, আপনি নিজে ক্ষুধার্ত থেকে আমাকে তৃপ্তির সাথে খাওয়াতেন, আমাকে বস্ত্র পরাতেন এবং ভাল ভাল খাবার নিজে না খেয়ে আমাকে খাওয়াতেন। এ দ্বারা আপনার উদ্দেশ্য ছিল কেবল আল্লাহ পাক-এর রেযামন্দী ও আখিরাতের শান্তি।” অতঃপর আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে গোসল করানোর হুকুম দিলেন। গোসলের পর নিজের কোর্তা মুবারকের দ্বারা তাঁর কাফন দিলেন। অতঃপর হযরত উসামা বিন যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবূ আইয়ূব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও একজন হাবশী গোলাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে ডেকে কবর খননের নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তিনি জানাযার নামায পড়ান এবং কবরে তাশরীফ এনে তা প্রশস্ত ও সমতল করান এরপর তিনি স্বয়ং সেই কবরে অবতরণ করে শুয়ে যান এবং বলেন,
الحمد لله الذى يحيى ويميت وهو حى لايموت اغفر لامى فاطمة بنت اسد ولقنها حجتها واوسع عليها مدخلها بحق نبيك والانبياء الذين من قبلى فانك ارحم الراحمين.
অর্থঃ- “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক-এরই প্রাপ্য, যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান অথচ তিনি নিজে চিরঞ্জীব, কখনই মৃত্যু বরণ করবেন না। হে আল্লাহ পাক! আমার আম্মা (এখানে চাচীকে ام বা আম্মা বলা হয়েছে। আরবী ভাষায় চাচাকে اب (আবুন) এবং চাচীকে ام (উম্মুন) সম্বোধন করার রীতি বহুল প্রচলিত) হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদকে ক্ষমা করে দিন এবং তাঁকে তাঁর দলীল (কবরে মুনকার ও নাক্বীর-এর প্রশ্নাবলীর উত্তর) ভালভাবে বুঝিয়ে দিন আর তাঁর কবরকে প্রশস্ত করে দিন আপনার হাবীব, পেয়ারা নবী, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ঐ নবীগণের উছীলায় যাঁরা আমার পূর্বে ছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি অতিশয় দয়ালু।” (হিল্ইয়াতুল আউলিয়া) অতঃপর আরো ফরমালেন,
انما البستها قميصى لتكسى من حلل الجنة واضطجعت معها ليهون عليها.
অর্থঃ- “আমি তাঁকে নিজের জামা (মুবারক) এই জন্য পরিধান করিয়েছি যেন আল্লাহ পাক তাঁকে জান্নাতের পোশাক দান করেন এবং কবরে এই জন্য শয়ন করেছি যেন তাঁর প্রতি নম্রতা ও কোমলতা প্রদর্শন করা হয় এবং তিনি মর্যাদা ও শান্তি লাভ করেন।” (আল্ ইস্তীয়াব) হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই মহিলার সাথে আপনি এক ব্যতিক্রমধর্মী আচরণ করলেন! তিনি ফরমালেন,
يا عمر ان هذه المرأة كانت امى التى ولدتنى.
অর্থ: “হে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! এই মহিলা আমার প্রকৃত মায়ের ন্যায় ছিলেন।” তিনি আরো ফরমালেন,
وان جبريل عليه السلام اخبرنى عن ربى عز وجل انها من اهل الجنة ان الله تعالى امر سبعين الفا من الملائكة يصلون عليها.
অর্থঃ- “আমাকে হযরত জিব্রীল আলাইহিস্ সালাম আমার মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ পাক-এর পক্ষ থেকে সংবাদ দিয়েছেন যে, এই মহিলা জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্তা। আর এ সংবাদও দিয়েছেন যে, আল্লাহ পাক সত্তর হাজার ফেরেশ্তাকে তাঁর জানাযার নামায পড়ার নির্দেশ দান করেছেন।” (আল মুস্তাদ্রক লিল্ হাকিম) (অসমাপ্ত)