একদিন সাইয়্যিদুনা হযরত আলী ইবনে হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাদেরকে নিয়ে সম্মানিত ইশার নামায আদায় করলেন। সম্মানিত নামাযে তিনি পবিত্র সূরা যিলযাল শরীফ তিলাওয়াত করছেন। ইমামুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও সে সময় উনার পিছনে নামায আদায় করেন। নামায শেষে লোকেরা নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেলেন। ইমামুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে দেখলাম তিনি নিজ স্থানে বসে আছেন। তিনি যিকির-ফিকির, মুরাকাবা করছেন। লম্বা লম্বা শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন।
আমি ভাবলাম যে, আমি মসজিদ থেকে চলে যাই। কারণ, আমার দ্বারা উনার একাগ্রতা বিনষ্ট হতে পারে। আমি বাড়ীতে চলে আসলাম। আসার সময় একটি বাতি জ্বালিয়ে রেখে আসলাম। যাতে সামান্য তেল ছিল। ছুবহি ছাদিক হলে আমি মসজিদে এসে দেখলাম, তিনি উনার হাত মুবারক উঠিয়ে দোয়া করছেন, “হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি তো বিন্দুতম নেক আমল ও বদ আমলের প্রতিদান দিয়ে থাকেন। এ অধমকে আপনি জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। ছোট-বড় সকল অনিষ্টতা থেকে নাজাত দান করুন। আর আপনার পবিত্রতম রহমত মুবারকের ছায়াতলে আশ্রয় দান করুন। আমীন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি ইমামুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট গিয়ে দেখতে পেলাম যে, বাতিটি এখনো নিভু নিভু জ্বলছে। তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে দেখে তিনি বললেন, তুমি কি বাতি নিতে এসেছ? আমি বললাম, রাত তো শেষ হয়ে গেছে। আমি আযান দিয়ে ফেলেছি। তিনি বুঝতে পারলেন যে, রাতের ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকিরের বিষয়টি আমি জেনেছি। তাই তিনি বললেন, “তুমি যা দেখেছ তা গোপন রাখবে। কারো নিকট প্রকাশ করবে না।”
অতঃপর তিনি দু’ রাকায়াত সুন্নাত নামায আদায় করে বসে রইলেন। কিছুক্ষণ পর জামায়াত শুরু হলো। তিনি ইশার নামাযের ওযু দ্বারাই ফযরের নামায আদায় করলেন। সুবহানাল্লাহ! (তাবাকাতুস সুন্নিয়্যাহ ফী তারাজিমিল হানাফিয়্যাহ, ওয়াফিয়াতুল আ’ইয়ান-৫/৪১২, উকদুল জুমান-২২৫, ইমামে আ’যম আবু হানিফা (র.) জীবন ও কর্ম-৮৩৩)
ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি আগত-অনাগত সকল সালিক বা মুরীদের আদর্শ। প্রতিটি আমল পূর্ণতার ক্ষেত্রে ফানা ও বাক্বা লাভের পন্থা-পদ্ধতি তিনি হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছেন। বেশি বেশি করে পবিত্র কুরআন শরীফ পড়া, প্রতিদিন পড়া সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। তিনি এতো বেশি পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করেছেন মিছাল বিরল। তিনি সাধারণত প্রতি রাতেই পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করতেন। (তারীখে বাগদাদণ্ড১৩/৩৫৪, তাবয়ীদ্বুস ছহীফা-১০৫)
বিশুদ্ধ মতে বর্ণিত আছে যে, ইমামুল মুহাদ্দিছীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যে স্থানে বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন সেখানে তিনি সাত হাজার বার পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (তাবয়ীদ্বুস সহীফাহ-১০৫)