(বিলাদাত শরীফ- ৮০ হিজরী, বিছাল শরীফ- ১৫০ হিজরী)
পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী, রাবী পরম্পরাকে সনদ বলে। (মিযানুল আখবার-০৩)
উল্লেখ্য যে, সনদের গুরুত্ব ও গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, খলীফাতুল আশির, আস সাফফাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র ইলমুল হাদীছ শরীফের জগতে সনদের গুরুত্ব অপরিসীম। এ ইলিম বা জ্ঞান পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মূল। যার মাধ্যমে রাবীগণের আদালত বা ন্যায়পরায়নতা, দ্ববত বা মুখস্থ শক্তি, জরাহ-তা’দীল বা দূর্বলতা ও মিথ্যাকে যাচাই বাছাই করা হয়। সাধারণ মানুষের বর্ণিত হাদীছ শরীফ সনদ ব্যতীত গ্রহণযোগ্য নয়।
তবে মু’তাবার ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের বর্ণিত হাদীছ শরীফ সনদ ব্যতীতই গ্রহণযোগ্য ও আমলযোগ্য। এমনকি উনাদের বর্ণিত সনদবিহীন হাদীছ শরীফ ক্ষেত্র বিশেষ সাধারণ মানুষের বর্ণিত সনদযুক্ত হাদীছ শরীফ হতেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী দলীল। কেননা মু’তাবার ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম হওয়ার প্রধান শর্ত হলো- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিসবত মুবারক। অর্থাৎ, মু’তাবার ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সরাসরি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে তাহক্বীক্ব করে করে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করে থাকেন। তাই উনাদের বর্ণিত হাদীছ শরীফে বাহ্যত সনদ পাওয়া না গেলেও সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। যা বলাই বাহুল্য।
সঙ্গতকারণেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ইমামগণ সনদ জ্ঞানের বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। এমনকি উহাকে সম্মানিত দ্বীন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সে দৃষ্টিকোণ থেকেও ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল মুহাদ্দিসীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সর্বশীর্ষে, সর্বউর্ধ্বে। তিনি সকল মুহাদ্দিসীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ইমাম ও মধ্যমণি।
১.ইমাম মুহম্মদ ইবনে সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
ان هذا العلم دين فانظروا عمن تأخذون دينكم
অর্থ: এই ইলিম (হাদীছ শরীফ) হচ্ছে সম্মানিত দ্বীন। কাজেই লক্ষ করুন কার কাছ থেকে দ্বীন গ্রহণ করছেন। (মুকাদ্দিমাতুল ছহীহ মুসলিম-১/১৪, সুনানুদ দারেমী-১/১২৪, আত তামহীদ-১/৪৬)
২. আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ হযরত সুফিয়ান সাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
الاسناد سلاح المؤمن اذا لـم يكن معه سلاح فباى شىء يقاتل
অর্থ: সনদ মু’মিনের হাতিয়ার। সুতরাং তার কাছে যদি হাতিয়ারই না থাকে তাহলে সে কি দ্বারা জিহাদ করবে বা মোকাবেলা করবে। (আদবুল ইমলা ওয়াল ইসতিমলা ১/৮, সিয়ারু আলামীন নুবালা ৭/২৭৩)
৩. আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
الاسناد من الدين لو لا الاسناد لقال من شاء ماشاء
অর্থ: সনদ হচ্ছে সম্মানিত দ্বীন, যদি সনদ না হতো, তাহলে যে কেউ যা ইচ্ছা তা বলতে পারতো। (মুকাদ্দিমাতুস ছহীহ মুসলিমীন-১/১৫, জারাহ ওয়া তা’দীল-২/১২১৬)
৪.হযরত সালেহ ইবনে আহমদ তিনি বলেন-
ان الحديث بلا اسناد ليس بشىء وان الاسناد درج الـمتن به يوصل اليها
অর্থ: সনদবিহীন পবিত্র হাদীছ শরীফ গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা সনদ মতনের সিড়ি স্বরূপ। যার মাধ্যমে তা পর্যন্ত পৌঁছা যায়। (আল কিফায়া ফি ইলমির রেওয়ায়া- ১/৩৯৩)
সনদ বাস্তবে এ উম্মতে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বৈশিষ্ট্য। পূর্বের কোন উম্মতের এ বৈশিষ্ট্য অর্জিত হয়নি যে, উনাদের উম্মতের আলিমগণ উনাদের নবী আলাইহিস সালাম পর্যন্ত সনদের সম্পর্ক জুড়েছেন। মহান আল্লাহ পাক এ জ্ঞানের মাধ্যমে উম্মতে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ও উনাদের ইমাম উনাদেরকে অনেক মর্যাদা দান করেছেন। সুবহানাল্লাহ!