(বিলাদাত শরীফ- ৮০ হিজরী, বিছাল শরীফ- ১৫০ হিজরী)
তিনি ইমামুল মুহাদ্দিছীন তথা মুহাদ্দিছগণ উনাদের ইমাম:
ইমামুল মুহাদ্দিছীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইউস সুন্নাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হচ্ছেন ইমামুল মুহাদ্দিছীন। তদানীন্তন সময়ে সকল মুহাদ্দিছীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সকলেরই পরম সম্মানিত ইমাম ছিলেন তিনি। গত সংখ্যার আলোচিত উনার সম্মানিত উস্তাদ উনার বর্ণনা দ্বারা সকলের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।
উনার বিশিষ্ট ছাত্র সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনা দ্বারা আরো স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, ইমামুল মুহাদ্দিছীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন কোনো মাসয়ালা বলতেন, তখন আমি কুফায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার শায়েখগণের কাছে যেতাম।
আর ইমামুল মুহাদ্দিছীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সিদ্ধান্তের সমর্থক হাদীছ শরীফগুলো সংগ্রহ করতাম।
তারপর পবিত্র হাদীছ শরীফগুলো উনাকে এই উদ্দেশ্যে শুনাতাম যে, তিনি অত্যন্ত খুশি হবেন। কিন্তু যখন হাদীছ শরীফগুলো শুনানো শেষ হতো, তখন তিনি বলতেন, অমুক হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারীর মধ্যে ত্রুটি আছে। অমুক হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী রাবী যঈফ। অমুক হাদীছ শরীফ সম্পর্কে কথা আছে। তাই কোনোটিই দলীলযোগ্য নয়। সাথে সাথে তিনি ইহাও বলতেন যে-
انا عالـم بعلم اهل الكوفة
অর্থাৎ- কুফার অধিবাসীগণের ইলিম সম্পর্কে আমি সম্যক অবহিত। (স্মারক গ্রন্থ-১১৩)
আল্লামা হযরত ইমাম আব্দুল আযীয ইবনে আবী রাওওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তার ব্যাখ্যায় বলেন-
حضرت ابو حنيفة رحمه الله تعالى المحنة من احب ابا حنيفة رحمة الله عليه فهو سنى ومن ابغض فهو مبتدع
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন পরীক্ষার বস্তু। যারা উনাকে মুহব্বত করে তারা সুন্নী। আর যারা বিদ্বেষ পোষণ করে তারা বিদয়াতী।” (স্মারকগ্রন্থ-৩৬৪)
অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের কেউই উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেননি এবং ভবিষ্যতেও করবেন না। তবে যারা চির বঞ্চিত, অভিশাপগ্রস্ত তারাই উনার বিরুদ্ধাচরণ করেছে, করছে এবং করবে। তিনি হচ্ছেন সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। ভালো-মন্দ বিচারের মাপকাঠি। সুবহানাল্লাহ!
হযরত মিসওয়ার ইবনে কিদাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইমামুল মুহাদ্দিছীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাদীছ শরীফ-এর জগতে গৌরবোজ্জ্বল অবস্থানের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন-
طلبت مع ابى حنيفة رحمة الله عليه الحديث فغلبنا واخذنا فى الزهد فبرع علينا وطلبنا معه الفقه فجاء ماترون
অর্থ: “আমি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে পবিত্র হাদীছ শরীফ অন্বেষণ করেছি। কিন্তু তিনি আমার উপর গালিব বা প্রাধান্য লাভ করেছেন। যুহদ (দুনিয়া বিরাগী) এবং পরহেযগারীতেও তিনি আমার অগ্রগামী হয়েছেন। উনার সাথে ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করেছি। কিন্তু আপনারা নিজেরাই উনার সফলতা চাক্ষুষ দেখতে পাচ্ছেন।” (তালখীস, স্মারকগ্রন্থ-৩৬১)
উল্লেখ্য যে, এই হযরত মিসওয়ার ইবনে কিদাম রহমতুল্লাহি আলাইহি সেই হাদীছ শরীফ উনার ইমাম ছিলেন। উনার স্মরণশক্তি ও নির্ভরযোগ্যতার কারণে ইমাম শু’বা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মাসহাফ লক্ববে আখ্যায়িত করে ছিলেন। হাফিয আবু মুহম্মদ রামহারমুজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উছূলে হাদীছ শরীফ-এর প্রথম দিকের সংকলন الجامع الفاضل কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, হযরত ইমাম শুবা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এবং ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মাঝে যখন কোনো হাদীছ শরীফ-এর ব্যাপারে মতানৈক্য দেখা দিতো তখন উভয়ে বলতেন-
اذهبنا الى الـميزان مسعر
অর্থ: “আমাদেরকে পবিত্র হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের মানদ- হযরত মিসওয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে নিয়ে যান।”
এখানে ফিকিরের বিষয় হলো- হযরত ইমাম শু’বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং ইমাম হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উভয়ে ছিলেন আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ। উনাদের মানদ- হচ্ছেন ইমাম হযরত মিসওয়ার ইবনে কিদাম রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি ইলমে হাদীছ শরীফ-এ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নিজের উপর প্রাধান্য দিতেন। আর উনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তাহলে ইহা আর বুঝতে অসুবিধা হবে না যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার জগতে কোনো স্তরে উপনীত হয়েছিলেন। (চলবে)
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৪) ছবর উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি