(বিলাদাত শরীফ- ৮০ হিজরী, বিছাল শরীফ- ১৫০ হিজরী)
শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার
প্রতি আদব প্রদর্শন
পূর্ব প্রকাশিতের পর
সেই হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র দর্সগাহে একটি বিপরীত ঘটনা সংঘটিত হলো। একদিন তিনি তা’লীম দেয়ার সময় মাঝে মাঝে উঠে দাঁড়াতেন। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আবার বসে যেতেন। এভাবে বেশ কয়েক বারই হলো। আর উনি দাঁড়ানোর কারণে মুরীদ-মুহিব্বীন, ত্বলাবাগণ উনারাও দাঁড়াতেন, আবার বসতেন। উনার রোব (ব্যক্তিত্বের প্রভাব) মুবারক উনার কারণে কেউ কোনো কথা বলার সাহস পাননি। মজলিস শেষ হলো। উনার একজন খাছ মুরীদ উনাকে বললেন, হুযূর! বেয়াদবী ক্ষমা চাই। আজকে আপনাকে ব্যতিক্রম আমল করতে দেখেছি। আপনি দর্সের সময় কয়েকবার দাঁড়িয়েছেন আবার বসেছেন, তার কারণ কি? তিনি বললেন, আপনারা অবশ্যই দেখতে পেয়েছেন যে, একজন ছোট্ট ছেলে দর্সগাহের নিকটবর্তী হয়েছেন। আবার কিছুক্ষণ পর চলে গেছেন। এভাবে কয়েকবারই তিনি এসেছেন আবার চলে গেছেন।
সে ছোট্ট ছেলে, যিনি ছিলেন আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধর। উনি আমার দৃষ্টি গোচর হলে উনার সম্মানার্থে আমি দাঁড়িয়ে যেতাম। উনি দৃষ্টিগোচর হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতাম। আর যখন দৃষ্টিসীমার বাইরে যেতেন তখন বসতাম ও পাঠদান (তা’লীমে) মনোনিবেশ করতাম। সুবহানাল্লাহ!
ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একদিন মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র মসজিদে হারাম শরীফে বসে ফতওয়া তথা উপস্থিত লোকদের বিভিন্ন সুওয়ালের জওয়াব দিচ্ছিলেন। সে সময় ইমামুল মুত্তাক্বীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা ইমাম জাফর সাদিক আলাইহিস সালাম তিনি উপস্থিত হলেন। মানুষদের মাঝে দাঁড়িয়ে রইলেন। ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দৃষ্টিগোচর হওয়া মাত্রই তিনি উনার সম্মানার্থে দাঁড়ালেন। আর বিনীতভাবে আরয করলেন, “হে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আওলাদ! বেয়াদবী ক্ষমা চাই। আমি যদি আপনার তাশরীফ আনার বিষয়টি জানতাম তাহলে কখনোই এভাবে আমি বসে থাকতাম না। আর কাউকে ফতওয়াও দিতাম না। তখন আওলাদে রসূল হযরত ইমাম জাফর সাদিক আলাইহিস সালাম তিনি বললেন- আপনি বসে মানুষদেরকে ফতওয়া দিতে থাকুন। আমি আমার সম্মানিত পূর্বপুরুষগণ উনাদেরকে এভাবেই পেয়েছি।” (মানাকিবুল ইমামিল আ’যম-১/১১৬, ইমাম আবু হানিফা হাদীছ শাস্ত্রের প্রধান ইমাম- ৩১৪)
ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল মুহাদ্দিসীন ওয়াল ফুকাহা, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করতেন। যা ইলমে তাসাউফ তথা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুবারক তায়াল্লুক নিছবত, মুহব্বত,মা’রিফাত হাছিলের প্রথম ও প্রধান শর্ত।
বিশিষ্ট মুহাদ্দিছ ইমাম আবু হামযা সুমালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমরা ইমাম আবু জাফর মুহম্মদ বাকির আলাইহিস সালাম উনার দরবার শরীফে একদিন উপস্থিত ছিলাম। ইমামুল মুহাদ্দিছীন ওয়াল ফুক্বাহা ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও সেই মুবারক মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। তিনি অত্যন্ত বিনয়-ন¤্রতার সাথে উনার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু জাফর বাকির আলাইহিস সালাম উনাকে কিছু মাসয়ালা-মাসায়িল সমাধানের জন্য উনার মুবারক খিদমতে পেশ করলেন। আর ইমামুল মুহাক্কিক্বীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম আবু জাফর মুহম্মদ বাকির আলাইহিস সালাম তিনি তার সমাধান দিলেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন সেই মুবারক মজলিশ থেকে চলে গেলেন তখন সাইয়্যিদুনা ইমাম আবু জাফর বাকির আলাইহিস সালাম তিনি আমাদেরকে বললেন-
ما احسن هديته وسمته وما اكثر فقهه
অর্থ: “এ ব্যক্তিত্বের হিদায়েত কতইনা উত্তম। উনার মত-পথ তথা মাযহাব কতই না শ্রেষ্ঠ। আর উনার আক্বল-সমঝের গভীরতা কতই না ব্যাপক।” (আল ইনতিক্বা ফী ফাযায়িলিল আইম্মাতিস সালাসাতিল ফুক্বাহা-১৯৩, মানাকিবুল ইমামিল আ’যম আবী হানীফা-৩৩, ইমাম আবু হানীফা হাদীছ শাস্ত্রের প্রধান ইমাম-৩০৬)
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৪) ছবর উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি