ভূমিকা: মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি মা’রিফাত-মুহব্বত, তায়াল্লুক-নিছবত দানের নিমিত্তে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে খাছভাবে কবুল করেছেন। মুজাদ্দিদ, ইমাম এবং আখাচ্ছুল খাছ ওলীআল্লাহ উনাদের বিষয়টিও অনুরূপ মনোনীত। নিবিষ্ট মনে, দৃঢ়তার সাথে ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াযত-মাশাক্কাতের দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত ও ইহসান পাওয়া যায়। সাধনায় সিদ্ধি লাভ হয়, ওলীআল্লাহ হওয়া যায়; কিন্তু নবী-রসূল হওয়া যায় না। একইভাবে মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক হওয়া, ইমাম হওয়া তথা আখাচ্ছুল খাছ ওলীআল্লাহ হওয়াও যায় না। নবী-রসূল হওয়া, মুজাদ্দিদ হওয়ার বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ মনোনয়ন, ফযল-করম, একান্ত দয়া, দান ও ইহসানের অন্তর্ভুক্ত। তিনি যাঁকে ইচ্ছা তাঁকে কবুল করেন, মনোনীত করেন, তায়াল্লুক বা নৈকট্য দানে ধন্য করেন। যে প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
ذلك فضل الله يؤتيه من يشاء
অর্থাৎ æইহা মহান আল্লাহ পাক উনার একান্ত দয়া-অনুগ্রহ। তিনি যাঁকে ইচ্ছা তাঁকে তা দান করেন।” (সূরা জুমুয়া : আয়াত শরীফ ৪)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো বলেন-
الله يـجتبى اليه من يشاء ويهدى اليه من ينيب
অর্থাৎ æমহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে ইচ্ছা তাঁকে খাছভাবে কবুল করেন, মনোনীত করেন। আর যে ব্যক্তি উনার দিকে রুজু হন, মনোনিবেশ করেন উনাকেও তিনি হিদায়েত তথা নৈকট্য দান করেন।” (সূরা শুরা : আয়াত শরীফ ১৩)
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পর আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যাঁদেরকে খাছভাবে কবূল বা মনোনীত করেছেন উনাদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন- ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি
আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইলম-হিকমত, আক্বল-সমঝ, ধন-সম্পদ, সীরত-ছূরত, প্রভাব-প্রতিপত্তি, ব্যক্তিত্ব-অস্তিত্ব ইত্যাদির এমনি পরিপূর্ণতা দান করেছেন যে, তদানীন্তন সময়ে চক্ষুষ্মান সকল ব্যক্তিরই এরূপ হক্কুল ইয়াক্বীন পয়দা হয়েছিল যে, ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সবই জানেন, সবই বুঝেন। সুবহানাল্লাহ!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, একদিন এক ব্যক্তি উনার খিদমতে হাজির হয়ে সবিনয়ে আরয করলেন, হুযূর বেয়াদবি ক্ষমা চাই! আমার ঘরের এক স্থানে অনেক দিন আগে কিছু দিনার-দিরহাম রেখেছিলাম। কিন্তু এখন তা খুঁজে পাচ্ছি না। দয়া করে, মেহেরবানী করুন। সেগুলো কোথায় আছে, তা একটু বলে দিন। সে ব্যক্তির কাকুতি-মিনতি শুনে ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লোকটিকে বললেন- হে ব্যক্তি! তুমি তোমার দিনার-দিরহাম কোথায় রেখেছো তা আমি কিভাবে বলবো?
সে ব্যক্তি বললো- হুযূর বেয়াদবী ক্ষমা চাই! আপনি জানেন এটা আমার বিশ্বাস। আপনি আমাকে মেহেরবানী করুন।
ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ওই ব্যক্তির কথার দৃঢ়তা এবং কাকুতি-মিনতি দেখে বাধ্য হয়ে তার বাড়িতে যেতে রাযি হলেন। লোকটির বাড়িতে উপস্থিত হয়ে এক স্থানের দিকে ইশারা করে বললেন, এ জায়গা খুঁড়ে দেখ তো। লোকটি সে জায়গা কিছুদূর খুঁড়তেই তার দিনার-দিরহামগুলো পেয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! এ রকম একটি দুটি নয়, অসংখ্য-অগণিত ঘটনা রয়েছে। যা যথাস্থানে উল্লেখ করা হবে ইনশাআল্লাহ!
ইমামে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুসলিম মিল্লাতের একজন অবিস্মরণীয় ইমাম ও মুজতাহিদ। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ-এর পর দ্বীন ইসলামের খুঁটিনাটি সকল বিষয়ের শরয়ী হুকুম-আহকাম, বিধি-বিধানকে সুসংহত করার অমর কৃতিত্ব উনারই। দ্বীন ইসলামের এ সকল শরয়ী হুকুম-আহকাম যদি বর্তমান আকারে সুবিন্যস্ত না থাকতো তাহলে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা অত্যন্ত কঠিন ও কষ্ট সাধ্য হতো। উপরন্তু মুসলিম উম্মাহকে গুমরাহীর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হতে হতো।
তিনি উনার জীবনের শেষ বিন্দু রক্তের বিনিময়ে যে মাযহাব রচনা করেছেন, সেই মাযহাব এমনি মকবুল বা কবুল হয়েছে যে, যারা সেই মাযহাব অনুসরণ করেন ও করবেন তারা অতি সহজেই মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মা’রিফত-মুহব্বত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দি লাভে ধন্য হবেন। বিগত, আগত, অসংখ্য-অগণিত ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম উনার মাযহাবের অনুসারী হতে পেরে মহান আল্লাহ পাক উনার অসংখ্য প্রশংসা করেছেন। সঙ্গত কারণে উনার মুবারক জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানা আবশ্যক। অথচ উনার নির্ভরযোগ্য জীবনী মুবারকের খুবই অভাব। এই অভাব পূরণ করণার্থে যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার জীবনী মুবারক লিখার নির্দেশ দিয়েছেন। সে নির্দেশ যেন যথাযথভাবে তামিল করতে পারি সেই তৌফিক ও ফায়েজ-তাওয়াজ্জুহ কামনা করছি। (চলবে)