অছিয়ত মুবারক (৫৭): দুনিয়াবী প্রভাব-প্রতিপত্তি, সম্মান-মর্যাদার অধিকারী কোন ব্যক্তির মধ্যে যদি কখনো দ্বীন সম্পর্কীয় কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখতে পান তাহলে হিকমতের সাথে তার নিকট তা তুলে ধরবেন। এ ব্যাপারে তার প্রভাব-প্রতিপত্তির কোন পরোয়া করবেন না। কেননা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনিই আপনার গাইবী মদদকারী। আপনার ও আপনার দ্বীনের সাহায্যকারী। আপনি যদি এ কাজে একবার মনোযোগ দিতে পারেন, তাহলে তারা আপনাকে সর্বদা ভয় করবে। আর আপনার উপস্থিতিতে আপনার এলাকায় আপনার শহরে বিদয়াতের প্রচলন করতে সাহস করবে না। আপনার এই মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জন সাধারণকে শরীক করবেন। তারা যেন সম্মাানিত দ্বীন উনার সকল কাজে আপনার অনুসরণ-অনুকরণ করতে পারে।
অছিয়ত মুবারক (৫৮): রাজা-বাদশাহ, আমীর-উমারাগণকে সম্মানিত শরীয়ত বহিঃর্ভুত কোন কাজ করতে দেখলে হিকমতের সাথে এবং হিতাকাঙ্খীর পরিচয় দিয়ে তা তাঁকে অবহিত করবেন। বলবেন যে, এটা সম্মানিত শরীয়ত অনুমোদিত নয়। হিতাকাঙ্খীর পরিচয় এজন্য দিবেন যে, তিনি আপনার চেয়ে অধিক ক্ষমতাধর।
কাজেই আপনি যদি দোষারোপ ও সমালোচনার পন্থা অবলম্বন করে কথা বলেন, তাহলে সে আপনাকে অপদস্থ করার সুযোগ পাবে। আপনার মাযহাব ও দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করবে। (তাতে সম্মানিত দ্বীনের, হিদায়েতের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং নছীহতমূলক আলোচনা উপস্থাপনের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি গ্রহন করবেন যে, যেসব বিষয়ে আমার উপর আপনার দায়িত্ব রয়েছে, সে সব শরীয়তসম্মত আদেশ-নির্দেশ অবশ্যই পালনীয়। তবে আপনার আচার আচরণ ও ব্যক্তিগত আমল থেকে আমার দেখা এমন কিছু বিষয় আছে যা শরীয়ত অনুমোদিত নয়।
আপনি যখন রাজা-বাদশাহকে এ ব্যাপারে এক, দুইবার অবগত করবেন, তখন একেই যথেষ্ট মনে করবেন। কেননা যদি বার বার এ বিষয়ে আলোচনা করেন তাহলে সে ও তার পরিষদবর্গ আপনার প্রভাব-প্রতিপত্তি বিলুপ্ত করার চেষ্টা করবে। যদি তারা এ সুযোগ পায় তাহলে আপনার প্রভাব-প্রতিপত্তির প্রভাবে যারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহন করেছে তাদের মাঝে দ্বীনদারী বিলুপ্ত হবে। আর এরূপ হলে সম্মানিত দ্বীনের অভাবনীয় ক্ষতি সাধিত হবে। কাজেই আপনি এক বা দুইবার এ ব্যাপারে বাদশাহর সাথে আলোচনা করবেন যেন সে বুঝতে পারে যে, দ্বীনের প্রতি আপনার চেষ্টা ও সৎ কাজে আদেশ অসৎ কাজে নিষেধের প্রতি আপনর আগ্রহ-উদ্দিপনা আছে। আর আপনি এ কাজে সিদ্ধহস্ত।
আপনি বাদশাহকে এমনভাবে উপদেশ প্রদান করবেন যার ফলে সাধারণ মানুষও আপনার এই প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবগত হবে। তারপরেও যদি আপনি বাদশাহকে উপদেশ দান করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন তাহলে একাকী বাদশাহর দরবারে যাবেন। পাশাপাশি দরবারে গিয়ে বাদশাহর প্রতি সহানুভুতি প্রদর্শন করবেন। দ্বীনের বিষয়ে তার কল্যাণ কামনা করবেন। অর্থাৎ বাদশাহের কল্যাণ কামনা করে দ্বীনি বিষয়ে তার সাথে আলোচনা করবেন। দ্বীনি বিষয়টি তাকে বুঝিয়ে দিবেন।
বাদশাহ যদি বিদয়াতী হয় তাহলে তার সামনে উপযুক্ত দলীল প্রমাণ পেশ করবেন। রাজা বাদশাহদের উপদেশ দানের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নাহ শরীফ থেকে যা স্মরণ আসে তা বিনা দ্বিধায় আলোচনা করবেন। যদি তিনি আপনার কথা শ্রবণ করেন তাহলে তা খুবই ভালো। অন্যথায় তার জুলুম থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পানাহ চাবেন। আশ্রয় প্রার্থনা করবেন।
অছিয়ত মুবারক (৫৯): মৃত্যুকে সর্বদা স্মরণ করবেন। আপনার ওস্তাদ ও পীর-মাশায়িখগণের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। (কিতাবুল ওসিয়ত-২৯)