উসূল রয়েছে প্রত্যেক জিনিস তার মূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। পানি নীচের দিকে গড়ায়। শিশু মায়ের বুকে শান্তিতে ঢলে পড়ে। মু’মিন বান্দা আল্লাহ্ পাক-এর দিকে প্রশান্ত চিত্তে ফিরে। মূলতঃ “যার শেষ ভাল, তার সব ভাল” এই হাদীছ শরীফেরই সমার্থক হল, ‘প্রত্যেক জিনিস তার মূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করে।’ অর্থাৎ শেষ পরিণতিই তার মূলগত অবস্থানটা প্রকাশ করে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, এদেশের কথিত এবং তথাকথিত আলিম সমাজ প্রায় সবাই সাদ্দাম সাদ্দাম করে গলা ফাটিয়েছে ‘বাপের বেটা সাদ্দাম’ বলে চিৎকার করেছে।
বিশেষতঃ তথাকথিত ইনকিলাবওয়ালারা সাদ্দাম বন্দনায় যেভাবে গদগদ হয়েছে তাতে এদেশের সাধারণ মানুষ প্রতারিত হয়েছে। নাস্তিক, কমুনিষ্ট, লম্পট, বিশ্বাসঘাতক সাদ্দামকেই তাদের ইনকিলাব পত্রিকায় দরবেশ, মুজাহিদ বলে প্রচার করা হয়েছে। অথচ সাদ্দাম এ উপমহাদেশের মীরজাফরের হুবহু প্রতিচ্ছবি। মীরজাফর যেমন কিছু নগদ অর্থের লোভে এ উপমহাদেশের আযাদী তথা কোটি কোটি মুসলমানের জীবন সম্পদ ধর্ম দু’শ বছরের জন্য বিধর্মী বেনিয়া ইংরেজদের হাতে তুলে দিয়েছিল তেমনি ইরাকের মীরজাফর সাদ্দামও ছলনার দ্বারা আমেরিকার হাতে ইরাককে তুলে দিয়ে গেল। মুসলমানদের জন্য চরম সম্ভাবনাময় দেশ, ঐতিহাসিক পবিত্র স্থান, স্বর্ণযুগের রাজধানী, ইরাককে আমেরিকার উপনিবেশ তৈরী করেছিল। সাদ্দাম কমুনিষ্ট, সে নাস্তিক এটা একমাত্র আল বাইয়্যিনাতেই পত্রস্থ হয়েছিল। আর আজকে আল বাইয়্যিনাত-এর সেকথা সারাবিশ্বে খোলামেলাভাবেই প্রমাণিত হলো। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল পত্রিকা ‘সানডে মিরর’ ও ‘নিউ ইন্ডেপ্রেস জানায়, “ক্ষমতাচ্যুত ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন গত ৯ দিন ধরে ইরাকে মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে গোপন আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। সানডে মিরর পত্রিকার খবরে বলা হয়, সাদ্দাম হোসেন গণবিধ্বংসী অস্ত্র এবং তার ব্যাংক একাউন্ট সম্পর্কিত তথ্যের বিনিময়ে নিরাপদে সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র বেলারুশে চলে যেতে চান। পত্রিকায় আরো বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা কনডোলিজা রিচ ইরাকে মার্কিন বাহিনীর কমান্ডার জেনালের রিকার্ডো সানচেজের নেতৃত্বে এই আলোচনার সমন্বয় করছেন এবং তিনি এর সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে বুশকে অবহিত রাখছেন। ‘সানডে মিররে’ একজন সিনিয়র ইরাকি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, পাশ্চাত্য ধাঁচের বেসামরিক পোশাক পরিহিত সাদ্দামের একজন প্রতিনিধি গত ১২ সেপ্টেম্বর শেষ বিকেলে তিকরিতে কোয়ালিশন সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তাকে একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা অপেক্ষা করছিলেন। পত্রিকায় বলা হয়, জেনারেল সানচেজের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই আলোচনা এগিয়ে চলেছে। খবরে আরো বলা হয়, সাদ্দাম বিপর্যস্ত ও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার এবং তাকে আশ্রয় দিতে আগ্রহী লোকের সংখ্যা ক্রমশঃ কমতে থাকায় তিনি মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে সমঝোতায় আসতে চাচ্ছেন।
মূলতঃ এটা যে একটা সাজানো বাহানা মাত্র তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তবে কথা হচ্ছে দুনিয়ায় অন্য হাজারো জায়গা থাকতে সাদ্দাম কমুনিষ্ট রাশিয়ার বেলারুশ যেতে চাচ্ছে কেন? সে কথা এ লেখার প্রথমে বলা হয়েছে। প্রত্যেক জিনিস তার মূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। শেষ পরিণতিই তার হাক্বীক্বত প্রকাশ করে। সোভিয়েত বেলারুশের প্রতি সাদ্দামের ফিরে যাওয়ার টান এটাই প্রমাণ করে যে কমুনিষ্ট বাথ পার্টির প্রবক্তা সাদ্দামের নাড়ীর টান কমুনিষ্ট রাশিয়ায়ই গ্রোযিত। মূলতঃ সাদ্দাম নাস্তিক, কমুনিষ্ট। ইসলাম ও মুসলমান তার প্রাণের শত্রু। মুসলিম পরিচয়ের অন্তরালে আসলে সে মুনাফিক। তাই মুসলমানদের এই সম্ভাবনাময় দেশ ইরাককে সে আমেরিকার হাতে তুলে দিতে পারল।
-খন্দকার মুহম্মদ শাখাওয়াত হুসাইন, ঢাকা।
প্রসঙ্গঃ ছবি, অশ্লীল ছবি ইনকিলাব ও হাটহাজারীর আহমক শাফী উপাখ্যান