‘আবূ দাউদ শরীফের’ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক এই উম্মতের মাঝে প্রত্যেক হিজরী শতকের শুরুতে একজন মুজাদ্দিদ পাঠাবেন। যিনি উম্মাহ্র মাঝে, দ্বীনের মাঝে অনুপ্রবেশকৃত সব বেশরা, বিদ্য়াতকে মিটিয়ে সত্যিকার ও শাশ্বত ইসলামকে তুলে ধরবেন। ইসলামকে জিন্দা করবেন।” এ হাদীছ শরীফের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, এটা আজ অনিবার্য সত্য যে, ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ্, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলীই বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ তথা মুজাদ্দিদে আ’যম। ‘প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা, রাখা, দেখা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম’- তাঁর অনবদ্য তাজদীদ।’ উল্লেখ্য, বর্তমান যামানায় তাঁর আগমন না হলে ছবি তোলার বিরূদ্ধে বলার মত অপর কোন ব্যক্তিত্ব ছিলনা। অর্থাৎ তাঁর উছীলায়ই আল্লাহ পাক বর্তমান ফিৎনা-ফাসাদের যামানায় শাশ্বত ইসলামকে অক্ষুন্ন রেখেছেন। যদিও বিরুদ্ধবাদীরা তথা ধর্মব্যবসায়ীরা তীব্র ভ্রু-কুটি করে থাকে। তারা বলে থাকে, ‘সব আলিম (?) ছবি তুলছেন আর উনি একাই ছবির বিরুদ্ধে বলছেন।’ কিন্তু প্রশ্ন হলো, সত্যিই কি ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী ছবির বিরুদ্ধে বলেছেন? মূলতঃ বিষয়টি সে রকম নয়। তিনি নিজের থেকে কিছুই বলেননি। তবে ছবি তোলা সম্পর্কে হাদীছ শরীফে যে শক্ত নির্দেশাবলী রয়েছে তা তিনি পুনঃউচ্চারণ করেছেন মাত্র। সে কথাগুলো মূলতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরই কথা। (যা কিনা সব মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, শাইখুল হাদীছ, মুফাস্সিরে কুরআন, ইসলামিক চিন্তাবিদ তথা খতীব সবাই অতি জরুরীভাবে এবং ভালভাবে, বার বার, অনেকবার পড়ে আসছেন, শিখে আসছেন এবং জেনে আসছেন। কেবলমাত্র যখন তারা ধর্ম-ব্যবসায়ীর খাতায় নাম লেখান তখনই তারা সে আমল থেকে দূরে সরে যান। যার সাক্ষাত প্রমাণও মওজুদ। ) (প্রমাণ- ১) ছবি তোলা নাজায়িয স্বীকার করেছে খারিজীদের নেতা তথাকথিত শাইখুল হাদীছও উদাহরণতঃ বলা যায়, ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ তে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় এক সাক্ষাতকারে তথাকথিত শাইখুল হাদীছ বলেছিল যে, “কেবলমাত্র হজ্ব, চাকুরী ছাড়া অন্য কোন কারণবশতঃ ছবি তোলা নাজায়িয। ” কিন্তু তারপরে বর্তমানে অবাক বিস্ময়ে মানুষ লক্ষ্য করছে যে, শাইখুল হদস গং-এর শুধু একটি দু’টি নয়; অসংখ্য হাজার হাজার ছবি এবং কেবল পত্র-পত্রিকায় নয় এমনকি পোস্টারেও মহিলা নেত্রীর বুকের মাঝে সাদা রুমাল দিয়ে পাগড়ী বাধা তথাকথিত শাইখুল হাদীছের ছবি। (প্রমাণ- ২) তথাকথিত শাইখুল হাদীছের লিখিত কিতাবেও বলা হয়েছে, প্রাণীর ছবি তোলা নাজায়িয ৪৫ বাংলাবাজার হাছানিয়া লাইব্রেরী থেকে ১৯৯৯ সালে আগষ্ট মাসে প্রকাশিত তথাকথিত শাইখুল হাদীছ মাওলানা আজিজুল হক রচিত “কোরআন হতে বিজ্ঞান” শীর্ষক কিতাবে ২৬০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, “কারো কারো একথা বলা নিশ্চয়ই ভ্রান্ত যে, ফটো চিত্র নয় বরং ছায়া ও প্রতিবিম্ব, যেমন, আয়না ও পানি ইত্যাদিতে দেখা যায়। সুতরাং আয়নাতে নিজেকে দেখা যেমন জায়েয, ফটোও ঠিক তেমনি জায়েয। এর সুস্পষ্ট জওয়াব হলো, প্রতিবিম্ব ততক্ষণ পর্যন্ত থাকে, যে কোন উপায়ে বদ্ধমূল ও স্থায়ী করে নেওয়া না হয়। যেমন পানি বা আয়নাতে যে প্রতিবিম্ব দেখা দেয়, বিপরীত দিক থেকে সরে গেলে তা আর থাকে না। কিন্তু কোন ঔষধ বা পাউডারের সাহায্যে যদি সেই প্রতিবিম্বকে স্থায়ী করে দেওয়া হয়, তবে একেই চিত্র বলা হবে, এরই নিষেধাজ্ঞা মুতাওয়াতির হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে। পাখির আকৃতি বানানো প্রকৃতপক্ষে চিত্রই এবং তা হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামের শরীয়তে জায়েয ছিল, আমাদের শরীয়তে এর বৈধতা রহিত করা হয়েছে।” অর্থাৎ তথাকথিত শাইখুল হাদীছের নিজের লেখা কিতাবের ভাষ্য অনুযায়ী ছবি তোলা সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয ও হারাম। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, তথাকথিত এই শাইখুল হাদীছের অনুবাদকৃত বুখারী শরীফেও ছবি তোলার বিরুদ্ধে অনেক শক্ত ও কঠিন পরিণতি বর্ণনা করে হাদীছ শরীফের উল্লেখ রয়েছে। (প্রমাণ- ৩) ছবি তোলা নাজায়িয স্বীকার করেছে, ওহাবী, হাটহাজারীদের নেতা আহমদ শফিও হাটহাজারীর তথাকথিত পত্রিকার সেপ্টেম্বর ’০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রকাশিত জামিয়া সমাচার শীর্ষক খবরে বলা হয়, “১লা আগস্ট/২০০৩ ঈসায়ী শুক্রবার হাটহাজারী’র পরিচালক আহমদ শফি ঢাকা সফরের এক পর্যায়ে জাতীয় মসজিদ বাইতুল মুর্কারমে …… জুমা শেষে আয়োজিত ইসলামী ঐক্যজোট বাংলাদেশ-এর মহাসচিব মুফতী ইজহারের দ্বিতীয় পুত্র মাওলানা মুহম্মদ মূসার সাথে মুহম্মদুল্লাহ্ হাফেজ্জী-এর নাতনী ও হাফেজ আতাউল্লাহ্র একমাত্র কন্যার বিবাহ্ অনুষ্ঠানের মেহমান হিসেবে উপস্থিত থেকে আক্দ পড়িয়ে খুত্বা প্রদান ও মুনাজাত পরিচালনা করেন। উল্লেখ্য, বিবাহের খুত্বা প্রদানকালে ফটো সাংবাদিকরা আহমদ শফির ছবি তোলার চেষ্টা করলে আহমদ শফি অত্যন্ত জোরালোভাবে ছবি তুলতে নিষেধ করে সাংবাদিকদেরকে মসজিদের ভিতরে ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশের জন্য তিরস্কার করেন এবং কুরআন-হাদীছের আলোকে ছবির নিষিদ্ধতা সম্পর্কে এক নাতিদীর্ঘ বক্তব্য পেশ করেন। তার এই সাহসী ও জোরালো ভাষণে উপস্থিত মুসল্লীগণ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হন।” অথচ পাঠক! আপনারা অবগত আছেন যে, এই আহমক শফি অন্যক্ষেত্রে ঠিকই হরদম ছবি তুলছেন। কিন্তু ঐদিন, ঐসময় যেহেতু তিনি সত্যিকার ইসলাম পালন করতে চেয়েছিলেন সেহেতু তাকে মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ফতওয়ার উপরই আমল করতে হয়েছিলো। (প্রমাণ- ৪) ছবি তোলা নাজায়িয স্বীকারে বাধ্য জামাতীরাও সাপ্তাহিক এখন, রবিবার, ২১-২৭ মার্চ, বর্ষ ১ সংখ্যা ৩৫, পৃষ্ঠা ১৬-এ প্রকাশিত হয়েছে, “ …. যেমন সম্প্রতি মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে সংসদে মহিলাদের আসন বৃদ্ধির সংবিধান-সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। একই সঙ্গে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের ছবি টানানোর খসড়া আইনও অনুমোদিত হয়। এ সময় জামায়াতে ইসলামীর দুই মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদী উল্লেখ করেন, স্কুলে মহিলা সরকার প্রধানের ছবি থাকতে পারে কিন্তু মাদ্রাসায় সে ছবি ঝুলানো ঠিক হবে না। কেনো? প্রশ্ন তুললেন এক সিনিয়র মন্ত্রী। মাদ্রাসাগুলো তো সরকারি অনুদান পায়, তারা মহিলা প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙ্গাবে না কেনো? জামায়াতে ইসলামীর মন্ত্রীরা কি তাদের অফিস কক্ষে মহিলা প্রধামন্ত্রীর ছবি লাগান না? মজার ব্যাপার হলো, অন্য কোনো মন্ত্রী ওই সিনিয়র মন্ত্রীকে সমর্থন দেননি। বরং প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিতর্কের অবসান ঘটান। ….” এখানে একটা জিনিস খুব পরিষ্কারভাবে প্রকাশ পায় যে, ইসলামী শরীয়তে ছবি সম্পর্কে এত শক্ত নিষেধবাণী ও কঠিন নিষেধাজ্ঞা রয়ে গেছে যে, তা সম্পর্কে মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী সবাই আসলে অবগত। ছবি তুললে যে আসলে ইসলাম বিরোধী, হারাম কাজ করা হয় তা হামেশা ছবি তুলনেওয়ালা জামায়াতের দু’মন্ত্রীও বুঝেন। তাই তারা অন্ততঃ মাদ্রাসাকে সে হারামের প্রভাব থেকে হেফাযতের জন্য দুর্বল প্রয়াস চালিয়েছিলেন। কিন্তু নিজেরাই সে হারামে মশগুল ও মত্ত থাকায় শক্তভাবে তার প্রতিবাদ জানাতে পারেনি। বরং প্রাপ্ত হালুয়া-রুটি হারানোর ভয়ে একেবারে চুপসে গেছেন। (প্রমাণ- ৫) ছবি তোলা নাজায়িয বলেছে নামধারী পীর ‘চর্মনাই’ও ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ ২৪শে নভেম্বর ২০০৪ ঈসায়ী তারিখে শেষ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে, “….. জোহরের নামাযের পর বয়ানের মাধ্যমে মাহফিলের সূচনা করেন চরমোনাইর পীর ফজলুল করিম। এ সময় তিনি ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ইসলামে ছবি তোলা জায়েয নেই। রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংবাদ কর্মীদের অনুরোধে ছবি তুলতে বাধ্য হতে হয়।” উল্লেখ্য, এটি সম্পূর্ণ ভুল, হঠকারিতা, ধোঁকা ও প্রতারণামূলক কথা। যে সম্পর্কে আগামী সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তবে এক্ষেত্রে যেটা বিবেচ্য যে, ছবি তোলা যে নাজায়িয ও হারাম, একথা তিনি এবারই প্রকাশ্যে বললেন। অর্থাৎ অবশেষে তিনিও মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামে আ’যম, গাউসুল আ’যম, ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, মুহইস্ সুন্নাহ্, ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর তাজদীদের কাছে অবনত হলেন। অতএব, একথা অনিবার্য সত্য যে, আজকের তথাকথিত শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মাওলানা, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সিরে কুরআন, ইসলামিক চিন্তাবিদ, খতীব চুপি চুপি হলেও; ঈমানের নূর, ইসলামের নূর তাদের অন্তরে নিভু নিভু করে দীপ্যমান হলেও তারা স্বীকার করবেন যে, ‘ছবি তোলা ইসলামের দৃষ্টিতে নাজায়িয।’ বুকে হাত দিয়ে তারা বলতে পারবে ননা যে, ‘ছবি তুলে শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা হারাম কাজ করছে না।’ শরীয়তের বল নিয়ে তারা উচ্চারণ করতে পারবে না যে, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, ঢাকা রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী, প্রাণীর ছবি তোলা, রাখা, আঁকা, দেখা হারাম ফতওয়া দিয়ে শরীয়তের খেলাফ বা মনগড়া কোন কথা বলেছেন। বরং বিবেক যদি নষ্ট না হয়ে থাকে, অন্তর যদি তাদের মরে গিয়ে না থাকে তাহলে একথা তারা একা একা হলেও অনুভব করতে পারেন যে, বর্তমান ফিৎনা-ফাসাদের যামানায় কিছু নামধাম, প্রতিপত্তি, হালুয়া-রুটির ভাগ অর্জনের জন্যই তারা ছবি তুলছেন। যা তাদের ধর্ম ব্যবসার প্রচার-প্রসারের জন্য আবশ্যক। পাশাপাশি আরো উল্লেখ করতে হয় যে, কোন ধর্ম-ব্যবসায়ীও যদি ধর্মের কথা পালন করতে চায়, শরীয়তের তথা ইসলামের আমল করতে চায় বা অন্তত যে সময়টুকুর জন্য তারা সত্যিকার ইসলাম পালন করতে চায় কমপক্ষে সে সময়টার জন্য হলেও তাদেরকে বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ফতওয়ার দিকেই ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় প্রত্যাবর্তন করতে হয়। (সুবহানাল্লাহ)
-মুহম্মদ মাহবুর্বু রহমান, ঢাকা।
বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা-১১