“তোমাদের বিয়ে বিচ্ছেদে অভিনন্দন।” “মাম্মির বিয়েতে শুভেচ্ছা।” “ড্যাডির বিয়েতে শুভেচ্ছা” “হ্যাপি ক্রিস্টমাস টু মাম অ্যান্ড বয়ফ্রেন্ড।”- ইত্যাদি লেখা সমৃদ্ধ কার্ডে ছেয়ে গেছে ব্রিটেনের বাজার।
একদিকে বিয়ে বিচ্ছেদ অপর দিকে নতুন বয় বা গার্ল ফ্রেন্ড যোগানো অথবা নতুন বিয়ে, এর কিছু দিন পর আবার বিচ্ছেদ এবং আবার নতুন কাউকে যোগানোর প্রক্রিয়াকে পুঁজি করে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছেন শুভেচ্ছা কার্ডের ব্যবসায়ীরা।
ব্রিটেনের বৃহত্তম কার্ড বিক্রির প্রতিষ্ঠান ‘ক্লিনটাস’ এর চেয়ারম্যান ডন লেউইন এ প্রসঙ্গে বলেন, নতুন কার্ডে মা বা বাবার বিয়েতে শুভেচ্ছা শীর্ষক লেখা সমৃদ্ধ কার্ডটি জনপ্রিয়। কারণ অনেক শিশু এখন মা-বাবার বিয়ে বা বয়ফ্রেন্ড যোগানোর অনুষ্ঠানে যাচ্ছে। অর্থাৎ পশ্চিমা বিশ্বে শিশুরা শৈশবকাল থেকেই পারিবারিক বন্ধনহীন এবং বল্গাহারা ও নৈতিকতা বিহীন পরিবেশে ও মানসিকতায় বড় হচ্ছে।
মূলতঃ এ সামাজিক অবক্ষয়ের সূচনা যেখানে অনেক আগ থেকেই শুরু। কিন্তু এতে করে তাদের সামাজিক অবস্থানটা কি দাঁড়িয়েছে?
গত তিন দশকে ব্রিটেনে বিয়ে বিচ্ছেদের হার দ্বিগুণের বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর সেখানে এক লাখ ৫৪ হাজার দম্পতির বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে, প্রায় ২০ লাখ দম্পতি বিয়ে ছাড়া জীবন-যাপন করছে।
বিয়ে বিহীন দম্পতিদের সন্তানের সংখ্যা ১৯৮২ সালে ছিল ১৪ ভাগ। গত বছর এ সংখ্যা ৪১ ভাগে উন্নীত হয়েছে।
এদিকে নিউইয়র্ক থেকে রয়টার্স পরিবেশিত আরেক খবরে বলা হয়,
বিয়ের চেয়ে মার্কিনিদের লিভিং
টুগেদার আগ্রহ বাড়ছে
মার্কিন জীবনে বিয়ে হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি বৃদ্ধি পাচ্ছে, অবিবাহিত যুগলের এক সঙ্গে বসবাস। সম্প্রতি প্রকাশিত এক বার্ষিক সমীক্ষায় এ কথা বলা হয়।
দ্য স্টেট অব আওয়ার ইউনিয়ন স্টাডির যুগ্ম লেখক ডেভিড পোপানোয়ে বলেন, সমীক্ষায় ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও স্ক্যান্ডেনেভিয়া বিশেষ করে সুইডেনের মতো জীবনযাত্রার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সুইডেনে অবিবাহিত দম্পতি ও সন্তান ধারণ একটি স্বাভাবিক ঘটনা।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে অবিবাহিত দম্পতির সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে সমস্ত প্রথম বিয়ের অর্ধেকের বেশি লিভিং টুগেদার করে থাকে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ের হার ২০০০ সালের প্রতি হাজারে অবিবাহিত মহিলার মধ্যে ৪৬.৫ এবং ১৯৭০ সালে ৭৬.৫ ভাগের তুলনায় ২০০৪ সালে ৩৯.৯ ভাগে নেমে এসেছে। সমীক্ষায় বলা হয়, বিবাহ বিচ্ছেদের হারও হ্রাস পেয়েছে। ২০০৪ সালে প্রতি হাজার মহিলার মধ্যে ১৭ দশমিক ৭ ভাগ তালাকপ্রাপ্ত। ২০০০ সালে এ হার ছিল ১৮.৮ এবং ১৯৮০ সালে ছিল ২২.৬। এতে বলা হয়, প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন মহিলার ১১ ভাগ ও পুরুষের ৮ ভাগের বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে থাকে। তুলনামূলকভাবে বিশ্বের মধ্যে সুইডেনে বিয়ের হার সবচেয়ে কম। একই সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদের হারও বেশী। পোপনোয়ে বলেন, আমরা এখনো বিয়েপ্রবণ জাতি।
মূলতঃ ভোগবাদী মানসিকতা তথা পাশবিক চেতনাই যে এর পেছনে মূল কারণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পশুর খাদ্য গ্রহণ ও বংশবিস্তার প্রক্রিয়ায় কোন বাছ-বিচার থাকে না। এদেরও তাই। ‘একজনকে নিয়ে কতদিন এক সাথে থাকা যায়’ এ হচ্ছে এদের মানসিকতা।
অপরদিকে ইসলাম কত মহৎ। ব্যভিচারের কাছেও যেতে ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর বিয়ে নামক বন্ধনের অপপ্রয়োগও যাতে কেউ না করতে পারে সে সম্পর্কেও সাবধান করা হয়েছে। হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, যারা ফুলে ফুলে মধু আহরণ করে বেড়ায় (অর্থাৎ এক বিয়ে করে ছেড়ে দিয়ে আবার নতুন বিয়ে করে) তারা বেহেশতের গন্ধও পাবে না। অর্থাৎ তারা জাহান্নামী হবে।
তদুপরি যদি কেউ কাউকে ছেড়ে দেয়ার নিয়তে কিছু সময় ভোগ করার জন্য বিয়ে করে তবে ইসলামের ভাষায় সেটাও ব্যভিচার বলে গণ্য হবে।
মূলতঃ ইসলাম এমনই মহৎ। ইসলামে বিয়ের বন্ধন আমৃত্যু পর্যন্ত বহাল রাখতে উৎসাহিত তথা নির্দেশ দেয়। এবং ইসলামের বিয়ে বন্ধন পারিবারিক বন্ধন ও মূল্যবোধকে সমুন্নত করে। ইসলামী চেতনার প্রেক্ষিতে সন্তান মায়ের পায়ের নিচে নিজের বেহেশত খুঁজে। স্ত্রী স্বামীর সন্তুষ্টির মাঝে নিজের নাজাত অন্বেষণ করে। স্বামী-স্ত্রীর কাছে উত্তম হওয়ার প্রেক্ষিতে স্ত্রীর প্রতি দরদী ও কর্তব্যপরায়ণ হবার চেতনামণ্ডিত হয়।
কারণ, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।”
সব মিলিয়ে ইসলামী চেতনায় বিয়ে এক বেহেশতী পরিবেশ তৈরি করে সেখান থেকে তৈরি হয় সভ্য, ভদ্র, লজ্জাশীল সন্তান।
বলাবাহুল্য, মুসলমান পরিবারে লজ্জা একটা বিরাট নিয়ামত ভিত্তি। লজ্জা থাকার ফলেই সন্তান যেমন বাবা-মার সামনে অনৈতিক আচরণ করতে পারে না তেমনি লজ্জা করার কারণেই বাবা-মাও অনৈতিক আচরণে প্রবৃত্ত হতে যায় না। আর এর পেছনে মূল অনুষঙ্গ হচ্ছে ঈমান। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যার লজ্জা নাই তার ঈমান নেই।”
এই হাদীছ শরীফের ভিত্তিতে সাবেত হয় যে, যারা ঈমান হারা কাফির মুশরিক তাদের লজ্জা নেই।
তাই তারা বাবা মার সামনে বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডকে জড়িয়ে ধরতে পারে। বাবা-মাও সন্তানদের প্রতি লজ্জার কথা চিন্তা না করে নিত্য নতুন সম্পর্ক গড়তে পারে।
এর ফলে এখন তাদের মাঝে অবাধ যৌনাচার, লিভ টুগেদার, ‘বিয়ে বিচ্ছেদ, বিয়ে বহির্ভূত সন্তান জন্মদান কিরূপ বেড়েছে উপরের রিপোর্ট তার একটি প্রতীকী সূচক মাত্র।
তবে পোশাক পাল্টানোর মত স্বামী বা স্ত্রী বদল যে আসলে সত্যিকার অর্থে আদৌ সুখকর নয় বরং মর্মপীড়াদায়ক সে উপলদ্ধি এখন আমেরিকান সমাজের একটি মহলও গভীরভাবে উপলদ্ধি করছেন।
সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এরকম একটি খবর আমেরিকানদের মাঝেও ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
বয়ফ্রেন্ড আর নয় চাই স্বামী : জরিপ
এনা নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠতম বিদ্যাপীঠে অধ্যয়নরত ছাত্রীরা উচ্চ শিক্ষার চেয়ে সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন। নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এমনি একটি খবর আমেরিকানদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত যারা বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে দিনাতিপাত করতে অভ্যস্ত, যারা প্রতি বছর একজন করে বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড পাল্টানোকে ফ্যাশন মনে করে, যারা বিবাহ-বহির্ভূত সন্তানের মা হতে দ্বিধা করে না, তেমনি একটি সমাজের মেধাবী যুবতীর ৬০% বলেছেন, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে একটি সুসন্তানের মা হওয়া অনেক ভালো। তারা আরো বলেছেন, সন্তান ধারণের সময়ই লেখাপড়ার পর্ব শেষ করবেন। যারা চাকরি করছেন, তারা দীর্ঘ ছুটি নেবেন। যাদের পক্ষে চাকরি ছেড়ে দেয়া সম্ভব নয়, তারা স্বামীকে বলবেন দিনভর ঘরে থাকার জন্য। এটাও যাদের পক্ষে সম্ভব নয়, তারা খণ্ডকালীন চাকরি নেবেন।
পর্যবেক্ষণ জরিপমূলক ওই নিবন্ধে আরো বলা হয়েছে, বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে সময়ক্ষেপনের চেয়ে বিয়ে করে স্বামীর ঘর-সংসার করার মধ্যে আনন্দই আলাদা। উড়নচণ্ডি হওয়ার বিপক্ষে তারা।
তারা সুখের সংসার রচনার এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে প্রতিটি সন্তানকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং পারিবারিক বন্ধনকে সংহত করে- এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করতেও আগ্রহী। কৃতিত্বের সঙ্গে হাইস্কুল পাসকারী এসব যুবতী নিজের মা-বাবা এবং প্রতিবেশীদের জীবন থেকে এ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
অতএব, মুসলমান হয়েও যারা ইউরোপে আমেরিকার অনুকরণে পর্দাহীনতায় উল্লোসিত থাকেন উপরের লেখায় তাদের নছীহতের জন্য যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে বলে আমরা মনে করি।
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “আল্লাহ পাক ও তার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার নর ও নারীর সেই বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথ ভ্রষ্টতায় পতিত হয়।” (সূরা আহযাব-৩৬)
আল্লাহ পাক-এর আদেশ পর্দা পালন না করলে সে কিরূপ পথভ্রষ্টতা ও অশান্তিতে পড়তে হয় নিউইয়র্ক টাইমস পরিবেশিত খবরে আমেরিকান মেয়েদের উক্তিতে তার প্রতিফলন ঘটে।
-মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, ঢাকা।
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫