প্রশ্নঃ এ কোন ঈদ?
জবাবঃ এ ঈদ হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত ঈদের সেরা বা শ্রেষ্ঠ ঈদ।
অর্থাৎ ‘ঈদে মীলাদুন নবী’ হচ্ছে সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম বা ঈদে আকবর!” কারণ হাদীছ শরীফে রয়েছে, “হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম জুমুয়ার দিনে সৃষ্টি হওয়ায়, পৃথিবীতে আমগন করায় এবং পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার কারণে জুমুয়ার দিনকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ঈদের দিন বলা হয়েছে।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরীফ) তাহলে যে দিন আল্লাহ পাক-এর হাবীব পৃথিবীতে আগমন করলেন ও বিদায় নিলেন সেদিন কেন ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা ও জুমুয়ার ঈদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ঈদ হবেনা? বস্তুতঃ সে দিনটি হচ্ছে সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম অর্থাৎ সকল ঈদের সেরা বা শ্রেষ্ঠ ঈদ। ঈদে মীলাদুন্ নবী যে শ্রেষ্ঠ ঈদ নয় জাহিল ইবনে জলীল কি তা প্রমাণ করতে পারবে?
প্রশ্নঃ এ ঈদ কি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহ্তে আছে?
জবাবঃ এ ঈদ অবশ্যই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহ্তে রয়েছে।
আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন, “হে আমার হাবীব আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহ পাক-এর ‘ফযল ও রহমত’ লাভ করার কারণে ঈদ বা খুশি প্রকাশ কর।” (সূরা ইউনুস/৫৮) আয়াত শরীফে বর্ণিত ‘রহমত’ হচ্ছেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুতরাং তিনি যে দিন পৃথিবীতে আগমন করেছেন সে দিন ঈদ বা খুশি প্রকাশ করা আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ তথা ফরয। (তাফসীরে দূররে মানছূর, খাযিন, বাগবী) আর হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহ্র কিতাবে রয়েছে, “প্রত্যেক মুসলমানের জন্য প্রতি মাসে কমপক্ষে চারটি ঈদ রয়েছে। আর তা হলো, প্রতি ‘সোমবার।’ (হেদায়া শরীফ) অর্থাৎ যে দিন আল্লাহ পাক-এর হাবীব আগমন করেছেন সে দিনকে তিনি ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, ‘ঈদে মীলাদুন্ নবী’ কুরআর শরীফ, হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহ্তে রয়েছে। গণ্ড মুর্খ ইবনে জলীল কি প্রামাণ করতে পারবে যে, কুরাআন শরীফ, হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহ্তে এ ঈদ নেই।
প্রশ্নঃ এ ঈদ কি রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন বা পালন করতে বলেছেন?
জবাবঃ হ্যাঁ, অবশ্যই আল্লাহ পাক-এর হাবীব এ ঈদ পালন করার জন্য উৎসাহিত করেছেন বা পালন করতে বলেছেন
হাদীছ শরীফে রয়েছে, “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সোমবার দিন রোযা রাখবে। কারণ এ দিন আমি আগমন করেছি এবং বিদায় নিব। ….।” (তিরমিযী) এ হাদীছ শরীফের দ্বারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব তাঁর আগমনের দিন বা তারিখে উম্মতদেরকে ঈদ পালন করার উৎসাহ দিয়েছেন। পক্ষান্তরে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ‘মীলাদুন্ নবী’ পালন করেন নাই বা পালন করতে নিষেধ করেছেন এরূপ একটি প্রমাণও কি ওহাবী ইবনে জলীল দিতে পারবে? উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মীলাদুন নবী উপলক্ষে একত্রি করে পবিত্র মীলাদুন্ নবী পালন করেন।
প্রশ্নঃ এ ঈদ কি ছাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ী ও ইমাম-মুজতাহিদগণ পালন করেছেন?
জবাবঃ এ ঈদ অবশ্যই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ী ও ইমাম-মুজতাহিদগণ পালন করেছেন।
হযরত জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা’ নামক কিতাবে হাদীছ শরীফের বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন যে, “হযরত আবূ আমের আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁর ঘরে ‘মীলাদুন্ নবী’ উপলক্ষে লোকদেরকে একত্রিত করে বলেন, এই দিন অর্থাৎ ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার দিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথিবীতে আগমণ করেন।” এতে সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ ‘মীলাদুন্ নবী’ পালন করেছেন। অনুরূপ তাবেয়ী ও ইমাম-মুজতাহিদ সকলেই মীলাদুন্ নবী’ পালন করেছেন। যার বহু দলীল বিখ্যাত ইমাম ও মুজতাহিদ হযরত ইবনে হাজার হায়ছামী লিখিত “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” নামক কিতাবে বিদ্যমান রয়েছে। ইবনে জলীলকে উক্ত কিতাবখানা পড়ার জন্য উপদেশ দেয়া গেল। পক্ষান্তরে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম ও ইমাম-মুজতাহিদ ‘মীলাদুন্ নবী’ পালন করেন নাই বা পালন করতে নিষেধ করেছেন এরূপ নির্ভরযোগ্য কোন দলীল কি গোমরাহ ইবনে জলীল দিতে পারবে?
প্রশ্নঃ ইসলামে ঈদ হলো দু’টি তৃতীয় ঈদ কোথায় পেল?
জবাবঃ ইসলামে ঈদ দু’টি নয় বরং ইসলামে শতাধিক ঈদ রয়েছে।
ইবনে জলীলের উক্ত বক্তব্যে প্রমাণিত হলো যে, সে এক ‘ভূয়া মুফতী’। হাক্বীক্বত সে একটা ‘গণ্ড মূর্খ’। কারণ যুগ যুগ ধরে সাধারণ মুসলমানরাও জানে যে ,জুমুয়ার দিন মুসলমানদের জন্যে ‘ঈদের দিন’। বুখারী শরীফের হাদীছ শরীফেও জুমুয়ার দিনকে ঈদের দিন বলা হয়েছে। তাহলে ইসলামে ঈদ দু’টি হলো কি করে? হাদীছ শরীফে আরাফার দিন ও সোমবার দিনকে ঈদের দিন বলা হয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে মুসলমানদের জন্যে দু’টি ঈদ ছাড়াও বছরে ৫২টি শুক্রবার ৫২টি ঈদ, ৫২টি সোমবার ৫২টি ঈদের দিন। অর্থাৎ বছরে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা ও আরাফার ঈদসহ প্রায় শতাধিক ঈদ রয়েছে। তন্মধ্যে সকল ঈদের সেরা বা শ্রেষ্ঠ ‘ঈদে মীলাদুন্ নবী’ যা ইসলামের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে মুসলমানদের মধ্যে পালিত হয়ে আসছে। অতএব, ‘ঈদে মীলাদুন নবী’ নতুন কোন ঈদ নয়। নতুন গজে উঠা নবীজির দুশমন ইবনে জলীল ও তার গংদের কাছেই এটা নতুন ঈদ। (বুখারী, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী শরীফ)
তৃতীয় ঈদ যে পালন করা যাবেনা এরূপ কোন দলীল কি ভূয়া মুফতী ইবনে জলীল দিতে পারবে?
শরীয়তের দৃষ্টিতে ইবনে জলীল ও তার গংদের ফায়সালা-
ওহাবী ইবনে জলীল “দুটি ঈদ ছাড়া শরীয়তে আর কোন ঈদ নেই এবং ঈদে মীলাদুন্ নবী পালন করা শিরক” এ কথা বলে কাদিয়ানীর ন্যায় নতুন শরীয়তের জন্ম দিয়েছে। কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ ও অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফকে অস্বীকার করেছে। জুমুয়ার দিন, আরাফার দিন ও সোমবার দিনকে ঈদ হিসেবে অস্বীকার করে শরীয়তে ইফরাত-তাফরীত করার কারণে কাট্টা কাফির বা মুরতাদ হয়ে গেছে। তাই তার ব্যাপারে শরীয়তের ফায়সালা হলো- তার জিন্দিগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে গেছে, বিবাহ করে থাকলে স্ত্রী তালাক হয়ে গেছে, হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হয়েছে। ইসলামী খিলাফত থাকলে তাকে তওবার জন্যে তিনদিন সময় দেয়া হতো। তিন দিনের মধ্যে তওবা না করলে তার একমাত্র শাস্তি হতো মৃত্যুদণ্ড। ইবনে জলীলের অনুরূপ বক্তব্য যারা পেশ করবে তাদের জন্যেও ঠিক একই ফায়সালা। (আক্বাইদে নসফী, শরহে আক্বাইদে নসফী, ফিক্বহুল আকবার)
মুরতাদ ইবনে জলীলের প্রতি উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত-এর পক্ষ থেকে প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ
ইবনে জলীল প্রমাণ করেছে সে শুধু মুরতাদই নয় সে অবৈধ সন্তানও। কারণ তার কোন পরিচয় বা ঠিকানা সে দিতে পারেনি। একটি মোবাইল নম্বর সে দিয়েছে। তবে সেটি অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকে। কোন সময় যদি পাওয়াও যায় কিন্তু সে কথা বলতে চায়না বা কোন সদুত্তর দেয়না।
তাই উলামায়ে আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত-এর পক্ষ থেকে তাকে প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ দেয়া হচ্ছে, যদি সে সত্যবাদী ও বৈধ সন্তান হয়ে থাকে তবে যেন প্রকাশ্য ময়দানে বাহাছে অবতীর্ণ হয়ে “ঈদে মীলাদুন্ নবী” পালন করাকে বিদয়াত বা শিরক প্রমাণ করে। নচেৎ প্রমাণিত হবে যে, সে আসলেই ধোকাবাজ, প্রতারক, মিথ্যাবাদী, মুনাফিক ও কাট্টা মুরতাদ ও কাফির।
{বিঃ দ্রঃ- ঈদে মীলাদুন্ নবী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত -এর ৯৮-১০৫, ১১৭, ১২০, ১২৯তম সংখ্যা পাঠ করুন।}
প্রচারে- উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত
রাজারবাগ, ঢাকা-১২১৭, মোবাইলঃ ০১৭১২৬৪৬৯৪, ০১৭১২৩৮৪৪৭।
প্রসঙ্গঃ কমনওয়েলথ ও সি.পি.এ সম্মেলন