মাওলানা মুহম্মদ মাহমুদ বিন হাসান, ছাতক, সুনামগঞ্জ
মাওলানা মুহম্মদ আযীযুল হক জামী, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জঞ্জ
মুহম্মদ আলী হায়দার, মুহম্মদ মশিউজ্জামান,
মুহম্মদ ওহীদুল হক, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম
সুওয়ালঃ আমরা জানি ‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের’ অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ, মুহাক্কিক, মুদাক্কিক, হক্কানী উলামায়ে কিরাম এবং আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ফতওয়া মতে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিনা মুবারক চাক করা হয়েছিলো চার বার। আর এতে আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সমুন্নত মর্যাদা ও অন্তহীন পুতঃপবিত্রতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।
অথচ অতীতে ও বর্তমানে কিছু লোক ছিল ও আছে, যারা এ বিষয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্পর্কে অবমাননাকর, বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রকাশ করেছিলো এবং বর্তমানেও করছে। কিছু কিছু হাদীছ শরীফের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা নাজানার কারণেই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চরিত্র মুবারকের মধ্যে অপবিত্রতা ও কালিমা লেপনের চেষ্টা করেছে। যার কারণে মানুষের ঈমান, আক্বীদা, আমল নষ্ট হয়ে জাহান্নামী হচ্ছে। নাহক্বপন্থিদের আপত্তিকর বক্তব্যগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
(ক) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রথমবার সিনা চাকের সময়, তাঁর ভিতর থেকে ক্বল্ব বের করে তা ফেঁড়ে শয়তানের অংশ বের করে ফেলে দিয়ে ক্বলবকে পবিত্র করা হয়েছিল। (নাঊযুবিল্লাহ)
(খ) দ্বিতীয়বার সিনা চাকের সময় তাঁর ভিতর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করা হয়েছিল। (নাঊযুবিল্লাহ)
(গ) নুবুওওয়াতের পরও তাঁর এই শয়তানী ভাব দমিত না হওয়ায় আবার মি’রাজ শরীফের রাত্রে সিনা চাক করে পবিত্র করা হয়েছিল। (নাঊযুবিল্লাহ)
(ঘ) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্ম মুবারক থেকে আদৌ মা’ছুম ছিলেন না। সিনা চাক করে মা’ছুম (নিষ্পাপ) করা হয়েছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
এছাড়া আরো অনেক আপত্তিকর ও কুফরীমূলক বক্তব্য নাহক্ব ও বাতিল পন্থিরা প্রদান করে থাকে।
তাই, কুরআন শরীফ, সুন্নাহ বা হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তাদের উল্লিখিত আপত্তিকর ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলো খণ্ডিয়ে তার সঠিক ফায়সালা প্রদান করলে আমাদের এবং সকল ঈমানদারগণের ঈমাণ-আক্বীদা শুদ্ধ ও পবিত্র হতো।
জাওয়াবঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম, হুসনুল খুলুক, আতইয়াবুল্ খুলুক, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপরোক্ত বক্তব্য প্রদানকারী নাহক্ব গোমরাহ্, বাতিলপন্থি ও মুনাফিকদের সম্পর্কেই ইরশাদ করেছেন,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتو نكو من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤيكم فاياكم واياهم لايصلونكم ولايفتنونكم.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফের পূর্ণ মিছদাক বা নমুনা হচ্ছে তারাই যারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অপবিত্র প্রমাণিত করার চেষ্টা করেছে বা করছে। তারা হচ্ছে কাফির, পথভ্রষ্ট, ফিতনাবাজ, দাজ্জালের চেলা, মুনাফিক ও বেয়াদব ইত্যাদি। এই পথভ্রষ্ট, কাফির ফিতনাবাজ, দাজ্জালের চেলা, মুনাফিক এবং বেয়াদবদের আপত্তিকর, কুফরীমূলক ও বেয়াদবীসূচক দলীলবিহীন বক্তব্য সমূহের খণ্ডনমূলক জবাব নিম্নে ধারাবাহিকভাবে পেশ করা হলো-
ছহীহ ও বিশুদ্ধ মতে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিনা মুবারক চাক করা হয়েছিল চারবার। প্রথমবার যখন তিনি স্বীয় দুধ মা হযরত হালীমা সা’দিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর লালন-পালনে, তখন তাঁর বয়স মুবারক তিন থেকে পাঁচ বছর ছিল। দ্বিতীয়বার দশ থেকে চৌদ্দ বছর বয়স মুবারকে, তৃতীয়বার আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত প্রাপ্তির সময় হিরা গুহায় এবং চতুর্থবার মি’রাজ শরীফের রাতে কা’বা শরীফে।
আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে কুরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন,
الم نشرح لك صدرك.
অর্থঃ- “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি কি আপনার বক্ষ মুবারক প্রশস্ত (চাক) করিনি? অর্থাৎ আপনার বক্ষ (সিনা) মুবারক চাক করেছি। (সূরা আলাম নাশরাহ ১নং আয়াত শরীফ)
(ক)
কাফির, মুনাফিক, দাজ্জালের চেলা, পথভ্রষ্ট, ফিতনাবাজ, বেয়াদব ও বদ ফিরকার লোকেরা বলে থাকে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রথমবার সিনা মুবারক চাকের সময়, তাঁর ভিতর থেকে ক্বল্ব বের করে তা ফেঁড়ে শয়তানের অংশ বের করে ফেলে দিয়ে ক্বলবকে পবিত্র করা হয়েছিল। (নাঊযুবিল্লাহ)
তাদের এ বক্তব্য কুফরী মূলক, অজ্ঞতাসূচক এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ইনকার ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের নামান্তর।
কেননা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মতে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সমস্ত প্রকার খারাপ বিষয় এবং অপবিত্রতা থেকে সম্পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র এমনকি পবিত্র থেকে পবিত্রতম। কিন্তু গোমরাহ লোকেরা হাদীছ শরীফের সঠিক অর্থ করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই এ সম্পর্কে কুফরীমূলক বক্তব্য প্রদান করে থাকে।
ছহীহ মুসলিম শরীফের ১ম জিঃ ৯২ পৃষ্ঠায়, মিশকাত শরীফ ৫২৪ পৃষ্ঠায় এবং মুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবাহ্ ৪র্থ জিঃ ২১৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
عن انس بن مالك رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم اتاه جبريل عليه السلام وهو يلعب مع الغلمان فاخذه فصرعه فشق عن قلبه فاستخرج منه علقة فقال هذا حظ الشيطان منك ثم غسله فى طست من ذهب بماء زمزم ثم لا مه ثم اعاده فى مكانه وجاء الغلمان يسعون الى امه يعنى ظئره فقالوا ان محمدا قد قتل فاستقبلوه وهو منتقع اللونء قال انس رضى الله عنه وقد كنت ارى اثر ذلك المخيط فى صدره.
অর্থঃ- “হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হযরত জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এমতাবস্থায় আসলেন যে, তিনি বালকদের সাথে অবস্থান করছিলেন। তিনি (হযরত জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম) তাঁকে ধরলেন এবং আদবের সাথে মাটিতে চিৎ করে শোয়ালেন। অতঃপর সিনা মুবারক ফেঁরে ক্বলব মুবারক বের করে উহার মধ্য থেকে একখণ্ড পবিত্র গোস্ত মুবারক বের করলেন। অতঃপর হযরত জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম বললেন,
هذا حظ اشيطان منك اى من مثل امتك.
অর্থাৎ- এটা শয়তান ওয়াস্ওয়াসা দেয়ার স্থান, (যা আপনার জন্য নয়, কারণ আপনি শয়তানী ওয়াস্ওয়াসা থেকে সম্পূর্ণরূপে মাহফুয। আপনার উম্মতের এই স্থানে শয়তান ওয়াস্ওয়াসা দিয়ে থাকে।) এরপর হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম উহা স্বর্ণের পাত্রে যমযমের পানি দ্বারা ধুইলেন। তৎপর উহার অংশগুলো একত্রিত করে যথাস্থানে রেখে দিলেন। এ অবস্থা দেখে অন্যান্য বালকেরা তাঁর নিকট যেয়ে বললেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শহীদ করা হয়েছে। তারা সকলেই এসে তাঁকে উৎকৃষ্ট বর্ণে দেখতে পেলেন। রাবী হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি (পরবর্তীতে) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিনা মুবারকে সিলাইয়ের চিহ্ন দেখেছি।”
উক্ত হাদীছ শরীফে বর্ণিত هذا حظ الشيطان
এর সরাসরি শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করে তারা বলে থাকে যে, “হে আল্লাহ পাক-এর রসূল! এ অংশটি আপনার মধ্যে শয়তানের অংশ।” (নাঊযুবিল্লাহ)
এখানে শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করা যাবেনা বরং তা’বীলী তথা ব্যাখ্যামূলক অর্থ করতে হবে। কারণ যে সকল শব্দের সরাসরী অর্থ করলে আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শানের খেলাফ হয়; সে সকল শব্দের সরাসরি অর্থ করলে কুফরী হবে। বরং সেক্ষেত্রে তা’বীলী বা ব্যাখ্যামূলক অর্থ করতে হবে। অনুসরনীয় ইমাম মুজতাহিদগণ সকলেই এরূপ প্রতিটি ক্ষেত্রেই তা’বীলী বা ব্যাখ্যামুলক অর্থ করেছেন।
সব স্থানে শব্দের সরাসরি শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করা যাবেনা॥ করলে কুফরী হবে। বরং সেক্ষেত্রে তা’বীলী বা ব্যাখ্যামূলক অর্থ গ্রহণ ফরয
যেমন উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, মহান আল্লাহ পাক ‘সূরা বাক্বারার’ ৫৪নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
ومكروا ومكر الله والله خير المكرين.
এ আয়াত শরীফের প্রকৃত বা সরাসরী অর্থ হলো- “আর কাফিরেরা ধোকাবাজী করলো, আল্লাহ পাকও ধোকাবাজী করলেন, আর আল্লাহ পাক হচ্ছেন উত্তম ধোকাবাজ।” (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)
এরূপ অর্থ যে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত, এ ব্যাপারে কারোই কোনরূপ দ্বীমত নেই। কারণ আমাদের আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মতে মহান আল্লাহ্ পাক (مكر) “মকর” বা ধোকাবাজী হতে সম্পূর্ণই পবিত্র। অথচ দুনিয়ার সকল লুগাত বা অভিধান সমূহেই (مكر) “মকর” শব্দের অর্থ “ধোকাবাজী” বলে উল্লেখ আছে।
ইমামুল লুগাবী, আল্লামা মুহিব্বুদদ্বীন, আবুল ফাইজ সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুরতাজা আল হুসাইনী আল ওয়াসেত্বী আল যাবেদী আল হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত আরবী লুগাত “তাজুল আরুস মিন জাওয়াহিরিল কামুস”-এর ৩য় জিঃ ৫৪৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
(المكر) الخديعة والاحتيال وقال الليث احتيال فى خقية …….. وقال ابن الاثير مكرالله ايقاع بلائه باعدائه دون اوليائه.
অর্থঃ- مكر “মকর” শব্দের অর্থ হচ্ছে- ধোকাবাজী, প্রতারণা, ঠগবাজী। আবু লাইছ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, গোপন প্রতারণা। ….. হযরত ইব্নুল আছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আল্লাহ্ পাক “মকর” করেছেন, একথার অর্থ হলো, তার শত্রুদের শাস্তি প্রদাণ করেছেন, বন্ধুদেরকে নয়।”
আব্দুস্ সালাম মুহম্মদ হারুন সংকলিত “মু’জামু মাক্বানীসুল লুগাত”-এর ৫ম জিঃ ৩৪৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(مكر) الميم والكاف والراء …… الاحتيال.
অর্থঃ- “ ট্টহৃরূ॥ট্ট শব্দের অর্থ হলো- প্রতারণা, ধোকাবাজী, ঠকবাজী।”
উপরোক্ত লুগাতী আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, (مكر) “মকর” শব্দের একাধিক অর্থের মধ্যে একটি অর্থ হচ্ছে “ধোকাবাজী।”
এখন প্রশ্ন হচ্ছে- কাফিরদের ন্যায় মহান আল্লাহ্ পাক-এর শানেও (মকর) শব্দের উক্ত অর্থ গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?
মুলতঃ তা কশ্মিনকালেও জায়িয হবেনা। কারণ তা মহান আল্লাহ পাক-এর শান ও ছহীহ্ আক্বীদার সম্পূর্ণই খিলাফ। তবে মহান আল্লাহ পাক-এর শানে “মকর” শব্দের অর্থ কি হবে? এ ব্যাপারে অনুসরণীয় মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ যে অর্থ বা ব্যাখ্যা প্রধান করেছেন তাই গ্রহণীয়।
অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ তথা মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ (مكر الله)-এর যে অর্থ ও ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন, তা এখানে আলোচনা করা বা উল্লেখ করা একান্তই জরুরী। কারণ এর ফলে বিষয়টি আরো সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে। তাই তাফসীরের কিতাবসমূহ হতে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
ইমামুল মুফাস্সিরীন, ফখরুল মানতাক্বিীন, উস্তাজুল আসাতিজা আল্লামা ফখরুদ্দীন রাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে কবীর”-এর ৮ম খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(ومكروا ومكر الله والله خير المكرين) وفيه مسائل- (المسئلة الاولى) اصل المكر فى الغة السعى بالفساد فى خفية …….. (المسئلة الثانية) ما مكرهم بعيسى عليه السلام فهو انهم هموا بقتله واما مكر الله تعالى بهم …….. هو انه رفع عيسى عليه السالام الى السماء وذالك ان بهودا ملك اليهود اراد قتل عيسى عليه السلام- (المسئلة الثالثة) المكر عبارة عن الاحتيال فى ايصال الشر والاحتيال على الله تعالى محال- فصار لفظ المكر، فى حق من المتشبهات وذكروا فى تأويله وجوها: احدها- انه تعا لى سمى جازا المكر بالمكر- كقوله (وجزاء سيئة سيئة مثلها) وسمى جزاء المخادعة بالمخادعة وجزاء الاستهزاء بالاستهزاء- ………. الثالثة ان هذا اللفظ ليس من المتشابهات لانه عبارة عن التدبير المحكم الكامل- ثم اختص فى العرف بالتدبير فى ايصال الشر الى الغير وذالك فى حق اله تعالى غير ممتنع.
অর্থঃ- “(مكروا) এ আয়াত শরীফের অনেক মাসয়ালা বা ব্যাখ্যা রয়েছে।
(১ম) আরবী ভাষায় “مكر” “মকর” শব্দের অর্থ হচ্ছে- গোপনে ধ্বংসের তদবীর করা। ….
(২য়) তারা (ইহুদীরা) হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর সাথে যে “مكر” বা ধোকাবাজী করেছে তাহলো- তারা গোপনে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামকে হত্যা করার সংকল্প গ্রহণ করেছিল। আর মহান আল্লাহ পাক তাদের সাথে যে “مكر” “মকর” করেছেন, তাহলো- ইহুদীদের সর্দার যখন হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামকে হত্যা করার উদ্দ্যোগ নিয়েছিল, তখন আল্লাহ পাক হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামকে গোপনে আকাশে তুলে নেন।
(৩য়) “مكر” “মকর” শব্দটির প্রকৃত অর্থ হচ্ছে- প্রতারণা করা। আর “প্রতারণা” মহান আল্লাহ্ পাক-এর শানের সম্পূর্ণ খেলাফ। সুতরাং “مكر” “মকর” শব্দটি মহান আল্লাহ্ পাক-এর শানে “মুতাশাবেহাত”-এর অন্তর্ভূক্ত। তাই মুফাস্সিরীনে কিরামগণ “مكر” শব্দের অনেক ব্যাখ্যা করেছেন। তন্মধ্যে (১ম) ব্যাখ্যা হলো- “মহান আল্লাহ্ পাক “مكر” “মকর” বা ধোকাবাজীর বদলা “مكر” “মকর” শব্দ দ্বারাই উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি অন্যত্র سيئة এর বদলা سيئة দ্বারা উল্লেখ করেছেন।
আর مخادعةএর বদলা مخادعة বলে উল্লেখ করেছেন। তদ্রুপ استهزاء এর বদলা استهزاء বলে উল্লেখ করেছেন। ………
(৩য়)”مكر শব্দটি “মুতাশাবেহাত” এর অন্তর্ভূক্ত নয়। কারণ مكر শব্দের অর্থ সুক্ষ্ম তদবীরও হয়। مكر শব্দটি কারো শাস্তি দানে সুক্ষ্ম তদবীর করা অর্থেও প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তাই এ অর্থে مكر “মকর” শব্দটি মহান আল্লাহ্ পাক-এর শানে ব্যবহার করা নিষেধ নয়।”
সুতরাং مكر الله শব্দের ছহীহ অর্থ হলো “মহান আল্লাহ্ পাক হিকমত বা কৌশল করলেন, সুক্ষ্ম তদবীর করলেন, ধোকাবাজীর সমুচিত শাস্তি বা জাওয়াব দিলেন ইত্যাদি। এ অর্থই ইমাম-মুজতাহিদগণ গ্রহণ করেছেন। সুতরাং মহান আল্লাহ্ পাক-এর শানে ব্যবহৃত সব শব্দেরই প্রকৃত বা সরাসরী অর্থ গ্রহণ যোগ্য নয়, বরং তার মাযাযী বা তা’বীলী অর্থ গ্রহণ করাও কোন কোন ক্ষেত্রে ফরয-ওয়াজিব। যেমন উল্লিখিত ক্ষেত্রে গ্রহণ করা ফরয।
মহান আল্লাহ পাক “সূরা দুহা”-এর ৭নং আয়াত শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেন,
ووجدك ضالا فهدى.
এ আয়াত শরীফের সরাসরি বা প্রকৃত অর্থাৎ লুগাতী বা শাব্দিক অর্থ যদি করা হয় তবে এ আয়াত শরীফের অর্থ দাঁড়ায়- “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আল্লাহ্ পাক আপনাকে গোমরাহ্, পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত পেয়েছেন অতঃপর হিদায়েত দিয়েছেন।” (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)
অথচ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মোতাবেক এ অর্থ যে কূফরীর অন্তর্ভূক্ত তাতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহের অবকাশ নেই এবং এ ব্যাপারে কারো মধ্যেই কোন প্রকার দ্বিমত নেই। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
ما ضل صاحبكم وما غوى.
অর্থঃ- “তোমাদের সঙ্গী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না কখনো গোমরাহ্ হয়েছেন না বিপথগামী হয়েছেন।” (সূরা নজম্/২)
আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে আরো ইরশাদ করেন,
ليس بى ضللة ولكنى رسول من رب العلمين.
অর্থঃ- “হে আমার ক্বওম! আমার নিকট গোমরাহী বলতে কিছুই নেই বরং আমি মহান রব্বুল আলামীনের প্রেরীত রসূল।” (সূরা আ’রাফ/৬১)
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদাই হেদায়েতের উপর ছিলেন।
অথচ সমস্ত লুগাত বা আরবী অভিধান সমূহে (ضال) শব্দের অর্থ গোমরাহ্, পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত ইত্যাদি বলে উল্লেখ আছে।
যেমন বিশ্বখ্যাত আরবী লুগাত “তাজুল আরুস” এর ৭ম খণ্ডের ৪১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(والضلل محركة قد الهدى) والرشاد وضال الراغب هو العدو عن الطريق المستقيم وتضاد هذاية.
অর্থঃ- الضلل বলা হয় হিদায়েতের বিপরিত বিষয়কে অর্থাৎ গোমরাহী, পথভ্রষ্টতা ও বিভ্রান্তিকে।”
আল্লামা রাগেব বলেন, ضلل হচ্ছে- সরলপথ হতে বিচ্যুত হওয়া এবং হিদায়েতের বিপরীত বিষয়।”
উপরোক্ত লুগাতী আলোচনার পর এটাই ছাবিত হলো যে, “সূরা দুহায়” বর্ণিত ضالا শব্দের প্রকৃত বা লুগাতী অর্থ হলো- গোমরাহ্, পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত ইত্যাদি।
এখন প্রশ্ন হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শানে ضالا শব্দের প্রকৃত বা সরাসরী অর্থ গ্রহণ করা জায়িয হবে কি? মূলতঃ কশ্মিনকালেও তা জায়েয হবে না। বরং এরূপ অর্থ গ্রহণ করলে কূফরী হবে।
তাই অনুসরনীয় সকল মুফাস্সিরীনে কিরামগণ উক্ত আয়াত শরীফের সরাসরী বা প্রকৃত অর্থ না করে তা’বীলী অর্থ করেছেন। বিভিন্ন মুফাস্সিরীন বিভিন্নভাবে উক্ত আয়াত শরীফের তা’বীল করেছেন। তন্মেধ্যে-
ووجدك ضالا فهدى.
এ আয়াত শরীফের সুন্দরতম তা’বীলী অর্থ হলো,
“হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আল্লাহ্ পাক আপনাকে কিতাবহীন পেয়েছেন, অতঃপর আপনাকে কিতাব দান করেছেন।”এখানে ضالا শব্দটি কিতাবহীন অর্থে গ্রহণ করা হয়েছে।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে এরূপ অনেক আরবী শব্দ রয়েছে ক্ষেত্র ও ব্যক্তি বিশেষে উক্ত শব্দগুলোর সরাসরী বা প্রকৃত অর্থ গ্রহণ না করে তা’বীলী অর্থ গ্রহণ করা ফরয। যেমন, সূরা আলে ইমরানে বর্ণিত مكر الله সূরা তোহা-এ বর্ণিত عضى ادم ও সূরা দুহা-এ বর্ণিত ووجدك ضالا – এর ক্ষেত্রে সরাসরী বা প্রকৃত অর্থ গ্রহণ না করে তা’বীলী অর্থ গ্রহণ করা ফরয।
তাই উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহের তা’বীলী অর্থের মত আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ইমামগণের মতে هذا حظ الشيطان منك এ হাদীছ শরীফখানার সঠিক ও তা’বীলী অর্থ হলো
هذا حظ الشيطان منك اى
من مثل امتك.অর্থাৎ- “এটা শয়তান ওয়াস্ওয়াসা দেয়ার স্থান, যা আপনার জন্য নয়, কারণ আপনি শয়তানী ওয়াস্ওয়াসা থেকে সম্পূর্ণরূপে মাহফুয। আপনার উম্মতের এই স্থানে শয়তান ওয়াস্ওয়াসা দিয়ে থাকে।”
এ সঠিক অর্থের পিছনে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং তার শরাহ ও ইজমা-ক্বিয়াসের সঠিক ফায়সালা নিম্নে পেশ করা হলো-
(১) আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ অমান্য করে চরম বেয়াদবীর কারণে ইবলিস যখন কাফির, মালঊন ও শয়তান হয়ে গেল, তখন সে আল্লাহ পাককে বলেছিল, আমি আপনার বান্দাদেরকে বিভিন্নভাবে পথভ্রষ্ট করবো, কিন্তু যাঁরা আপনার মুখলিছ-একনিষ্ঠ, মাহবূব বান্দা তাঁদেরকে গোমরাহ করতে পারবোনা এবং তাঁদেরকে ওয়াসওয়াসার জন্য কাছেও যেতে পারবোনা।
যেমন, কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
الا عبادك منهم المخلصين.
অর্থঃ- “আয় আল্লাহ পাক! কিন্তু যারা আপনার মুখলিছ, একনিষ্ঠ বান্দা, তাঁদেরকে আমি পথভ্রষ্ট করতে পারবোনা।” (সূরা হির্জ/৪০)
এ আয়াত শরীফের তাফসীরে “তাফসীরুল খাযিন’ এর ৩য় জিঃ ৯৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
(الاعبادم منهم المخلصين) يعنى امؤمنين الذين اخلصوا لك التوحيد والاطاعة والعبادة.
অর্থঃ- “(কিন্তু যারা আপনার মুখলিছ বান্দা তাঁদেরকে আমি পথভ্রষ্ট করতে পারবো না) অর্থাৎ মু’মিন-মুসলমানগণের মধ্যে যারা তাওহীদ সম্পর্কে আক্বীদা শুদ্ধ করবে, সঠিকভাবে শরীয়তের ইত্তিবা করবে এবং ইবাদত-বন্দিগী ইখলাছের সাথে একমাত্র আপনার জন্য করবে আমি তাঁদেরকে ওয়াস্ওয়াসা দিয়ে পথভ্রষ্ট করতে পারবো না। অনুরূপ তাফসীরে বাগবী, মাদারিকুত তানযীল, মাযহারী, কুরতুবী, ত্ববারী, ইবনে কাছীর, জালালাইন, বাইযাবী, রূহুল মায়ানী, রূহুল বয়ান ইত্যাদি তাফসীরগুলোতে বর্ণিত রয়েছে।
(২) আল্লাহ পাক সূরা হিজরের’ ৪২নং আয়াত শরীফে শয়তানের সাথে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন,
ان عبادى ليس لك عليهم سلطن.
অর্থঃ- (শয়তান তুই জেনে রাখ) নিশ্চয়ই আমার যাঁরা খাঁটি বান্দা, তাঁদের উপর তোর কোন কর্তৃত্ব চলবেনা।”
এ আয়াত শরীফের ব্যাখায় তাফসীরে ইবনে কাছীর -এর ২য় জিঃ ৮৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
اى الذين قدرت لهم الهداية فلا سبيل لك عليه ولا وصول لك اليهم.
অর্থাৎ- “আমি যাদেরকে হিদায়াত দ্বারা শক্তিশালী করেছি, হে শয়তান! তাঁদেরকে পথভ্রষ্ট করার এবং ওয়াসওয়াসা দেয়ার তোর কোন রাস্তা নেই বা তাদের কাছে পৌঁছারও তোন কোন শক্তি নেই।” অনুরূপ তাফসীরে কবীর, তাফসীরে মুহিউদ্দীন ইবনে আরাবী, কুরতুবী, জাছছাছ, মাযহারী, খাযিন, বাগবী, মাদারিক, নাসাফী ও বাইযাবী ইত্যাদি তাফসীরের কিতাবসমূহে বর্ণনার তারতম্যসহ বর্ণিত রয়েছে।
উপরোক্ত দু’খানা আয়াত শরীফ এবং তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, যাঁরা মুখলিছ বান্দা, শয়তান তাঁদেরকে ওয়াস্ওয়াসা দিতে পারবেনা এবং গোমরাহ করতেও পারবেনা।
তাহলে যাঁরা নবী-রসূল এবং বিশেষভাবে নবী ও রসূলগণের সাইয়্যিদ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-তাঁর মধ্যে কিভাবে শয়তানের অংশ বা ওয়াসওয়াসা থাকতে পারে। কারণ তিনি তো পরিপূর্ণভাবে ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
তাই বুঝা গেল, সিনা চাকের উক্ত অংশের তাবীলী বা ব্যাখ্যামূলক অর্থ করতে হবে। সরাসরি শাব্দিক অর্থ করলে কুফরী হবে।
(৩) প্রথমবার সিনা চাক হয়েছিল ৩ থেকে ৫ বছর বয়স মুবারকের মধ্যে। আর সে সময় প্রত্যেক সন্তান হৃম্লম্বèহৃ মা’ছূম বা নিষ্পাপ থাকে। শয়তান তাদেরকে ওয়াসওয়াসা দিতে পারেনা। যেমন, বুখারী শরীফ ২য় জিঃ ৭৯৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
ان القلم رفع عن ثلاث عن المجنون حتى يفيق وعن اصبى حت يدرك وعن النائم حتى يستيقظ.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই তিন প্রকার ব্যক্তির উপর থেকে শরীয়তের বিধান উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। (১) পাগল ব্যক্তি, যতক্ষণ সে জ্ঞান ফিরে না পায়, (২) শিশু থেকে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে প্রাপ্ত বয়স্ক না হয় ও (৩) ঘুমন্ত ব্যক্তি থেকে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে জাগ্রত না হয়।
তাহলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তো ওয়াস্ওয়াসা দেয়ার প্রশ্নই আসেনা।
(৪) হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে যে,
الشيطان جاثم على قلب ابن ادم اذا ذكر خنس واذا غفل وسوس.
অর্থঃ- “শয়তান আদম সন্তানের ক্বলবের উপর বসে থাকে। যখন সে ব্যক্তি যিকির করে শয়তান পালিয়ে যায়, আর যখন গাফিল হয় তখন শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয়।” (বুখারী)
নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সর্বাবস্থায় আল্লাহ পাক-এর যিকির-ফিকির, মুহব্বত-মা’রিফতে মশগুল থাকেন। তাহলে কিভাবে বলা যেতে পারে যে, তাঁর মধ্যে শয়তানের অংশ ছিল যা অপসারণ করা হয়েছে।(নাঊযুবিল্লাহ)
(৫) هذا حظ الشيطان এর ব্যাখ্যায় যারকানী আলাল মাওয়াহিবিল্লাদুন্নিয়া নামক কিতাবের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
هذا حظ الشيطان اى الموضع الذى يتوصل منه الى وسوسة الناس منك اى من مثلك من بنى ادم.
অর্থ- “এটা শয়তানের অংশ অর্থাৎ ইহা ঐ স্থান, শয়তান যেখানে পৌঁছে বা মিলিত হয়ে মানুষকে বা আপনার উম্মতকে ধোঁকা দিয়ে থাকে। আপনার জন্য এই স্থানটি শয়তানের ওয়াস্ওয়াসার স্থান নয়। কারণ আপনি শয়তান থেকে সম্পূর্ণরূপে মাহফুয।” (হযরতের সিনা চাক ৭৭ পৃষ্ঠা মুছান্নিফ হাফিযুল হাদীছ হযরতুল আল্লামা রূহুল আমীন বশীরহাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
(৬) খাদিমুল্ ইলমিশ্ শরীফ ফিল বিলাদিল হারাম সাইয়্যিদ মুহম্মদ বিন সাইয়্যিদ আলুবী বিন সাইয়্যিদ আব্বাস মালিকী হাসানী-এর লিখিত “মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্ ইনসানুল কামিল” এর ৩১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ,
هذا معنى الحديث: ولم يكن للشيطان فيه خظ.
অর্থাৎ- “বর্ণিত হাদীছ শরীফের মর্মার্থ হলো এই যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মধ্যে শয়তানের কোনই অংশ ছিল না।”
(৭) হযরত আল্লামা নিযামুদ্দীন হাসান বিন মুহম্মদ বিন হুসাইন নীশাপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর “তাফসীর ফী গারাইবিল কুরআন ওয়ার রগাইবিল ফুরক্বান”-এর ৩০ তম জিঃ ১১৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
حتى لايرى الاالحق ولاينطق ولا ينطق الا بالحق ولايفعل الا للحق، قال المحققون ليس للشيطان الى القلب سبيل ولهذا لم يقل الم نشرح قلب.
অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য ছাড়া কিছু দেখেন না, সত্য কথা ছাড়া কিছু বলেন না এবং আল্লাহ পাক-এর জন্য ছাড়া অন্য কারো জন্য কোন ইবাদত করেন না। মুহাক্কিক ইমাম-মুজতাহিদগণ বলেন, তাঁর ক্বলবে শয়তানের কোন পথ বা স্থান নেই বা ছিল না। এ জন্যই আল্লাহ পাক এভাবে বলেননি যে, “আমি কি আপনার ক্বলব প্রশস্ত (চাক) করি নাই? বরং বলেছেন,
الم نشرح لك صدرك.
অর্থাৎ- আমি কি আপনার বক্ষকে প্রশস্ত (চাক) করি নাই?
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, هذا حظ الشيطا منك. এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, আপনি ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অতএব আপনার মধ্যে শয়তানের কোন অংশ নেই। কারণ আপনি সম্পূর্ণরূপে মাহফুয ও মা’ছূম। বরং আদম সন্তানের এই স্থান থেকেই শয়তান তাদেরকে ওয়াস্ওয়াসা দেয়।
(খ)
কাফির, মুনাফিক দাজ্জালের চেলা, পথভ্রষ্ট, ফিতনাবাজ, বেয়াদব, ওহাবী, খারেজীরা বলে থাকে যে, দ্বিতীয়বার সিনা চাকের সময় তাঁর ভিতর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করা হয়েছিল। (নাঊযুবিল্লাহ)
তাদের এ বক্তব্যও কুফরীমূলক এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি চরম অপবাদ।
দ্বিতীয়বার সিনা মুবারক
চাক করার দলীল-প্রমাণ
(১) হযরত আহমদ আব্দুর রহমান আল বান্না রহমতুল্লাহি আলাইহি “আল ফতহুর রব্বানী লি তারতীবে মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল আশশাইবানী”-কিতাবের ২০জিঃ ১৯৫ পৃষ্ঠায়
باب شق صدرة الشريف للمرة الثانية وهوا ابن عشر سنين واشهر.
নামক অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন,
عن ابى بن كعب رضى الله عنه ان ابا هريرة رضى الله عنه كان جريئا على ان يسأل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن اشياء لا يساله عنها غيره فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ما اول ما رأيت فى امر النبوة فا ستوى رسول الله صلى الله عليه وسلم جالسا وقال لقد سئالت ابا هريرة رضى الله عنه، انى لقى صحراء ابن عشر سنين واشهر واذا بكلام فوق رأسى واذا رجل يقول لرجل اهو هو؟ قال نعم فا ستقبلانى بوجوه لم ارها لخلق قط وارواح لم اجدها من خلققط، وثياب لم ارها على احد قط، فاقبلا الى يمشيان حتى اخذ كل واحد منهما بعضدى لا اجد لا حدهما مسئا، فقال احدهما لصاجبه اضجعه فضجعانى بلا قصر ولا هصر، وقال احدهما لصاحبه افلق صدره فهوى احدهما الى صدرى ففلقها فيما ارى بلا دم ولا وجح، فقال له اخرج الغل والحسد فاخرج شيئا كهيئة اعقة ثم نبذها فطرحها، فقال له اذخل الراقة والرحمة، فاذ مثل الذى اخرج يشبه الفضة ثم هز ابهام رجلى اليمنى فقال اغد واسلم فرجعت بها اغدو رقة على الصغير ورحمة للكبير.
অর্থঃ- “হযরত উবাই বিন কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মহান খিদমতে সদা সর্বদা এমন সব বিষয়ে সুওয়াল করতেন, যে সমস্ত বিষয়ে অন্য কেউ জিজ্ঞাসা করেননি। অতঃপর তিনি আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াতের প্রথম নিদর্শন কখন অবলোকন করলেন? সুওয়াল অবস্থায় হযরত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসে ছিলেন এবং বললেন, হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞাসা করায় আমি বলছি, আমি দশ বছর বয়সে ময়দানে গিয়েছিলাম, হঠাৎ আমার মাথা মুবারকের উপর আওয়াজ শুনতে পেলাম যে, একজন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বললেন, ইনি কি তিনিই? অপর ব্যক্তি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ ইনি তিনিই। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তাঁরা দু’জন আমার সামনে আসলে আমি দেখলাম, তাদের মত সুন্দর-উজ্জল চেহারা কোন দিন দেখিনি, তাদের মত উত্তম রূহ-আত্মাও কোন দিন দেখিনি। (তাঁরা হচ্ছেন হযরত জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম ও হযরত মিকাঈল আলাইহিস্ সালাম)। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাঁরা দু’জন আমার নিকট আসলেন এবং আমাকে এমন ভাবে আদবের সাথে জড়িয়ে ধরলেন, তা আমি অনুভবই করতে পারলাম না। অতঃপর একে অপরকে বললেন, তাঁকে শোয়ায়ে দিন, তাই আমাকে আদবের সাথে শোয়ানো হলো, এতে আমি কোন কষ্ট ও ব্যাথা অনুভব করলাম না। এরপর দু’জনের একজন তাঁর সঙ্গীকে বললেন, তাঁর বক্ষ মুবারক বিদীর্ণ করুন। তাই তাঁদের দু’জনের একজন আমার বক্ষ মুবারক বিদীর্ণ করলেন, তাতে আমি কোন রক্ত দেখলাম না এবং ব্যাথ্যাও অনুভব করলাম না। তৎপর একজন বললেন,
اخرج الغل والحسد اى اخرج مكان الغل والحسد من مثل امته.
হিংসা-বিদ্বেষের স্থানটি বের করুন। অর্থাৎ বণি আদমের জন্য এই স্থানটি হিংসা-বিদ্বেষের জায়গা। তবে তা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য নয়। কারণ তিনি এ সকল দোষত্রুটি থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। কেননা, তিনি আল্লাহ পাক-এর গুণে গুণান্বিত।
অতঃপর তিনি (ফেরেশ্তা) আলাক্বার মত এক খণ্ড পবিত্র গোশ্ত মুবারক বের করে আলাদা করে চিহ্নিত করলেন। তারপর একজন বললেন, তাঁর মধ্যে দয়া ও রহমত প্রবেশ করিয়ে দিন। অতঃপর তিনি রূপার মত কিছু বের করে তার উপর ছিটিয়ে দিলেন। (অতঃপর জোড়া লাগিয়ে দিয়ে) আমার ডান পা মুবারকের বৃদ্ধাঙ্গুলী ধরে তাঁরা বললেন, আপনি উঠুন এবং প্রশান্তিতে থাকুন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এরপর থেকে ছোটদের প্রতি স্নেহ এবং বড়দের প্রতি রহমত স্বরূপ প্রকাশিত হলাম।”
(২) উক্ত হাদীছ শরীফখানা আবূ নাঈম ‘দালাইলুন্ নুবুওওয়াহ’-এর ৭৩ পৃষ্ঠায় একই রাবী থেকে বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া উক্ত হাদীছ শরীফখানা হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত ‘দালাইলুন নুবুওওয়াহ’-এর ৭১, ৭২ পৃষ্ঠায় আছে।
(৩) ‘ত্ববাক্বাতে ইবনে সা’দ’ গ্রন্থে হাদীছ শরীফ খানা হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে।
মুলতঃ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিনা মুবারক চাক করে ক্বলব মুবারক বের করার সময় ফেরেশ্তা বলেছিলেন,
اخرج الغل والحسد اى اخرج مكان الغل والحسد من مثل امته.
অর্থঃ- “হিংসা-বিদ্বেষের স্থানটি বের করুন অর্থাৎ বণী আদমের জন্য এই স্থানটি হিংসা-বিদ্বেষের জায়গা। যা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্যে নয়। কারণ তিনি এ সকল দোষত্রুটি থেকে সস্পূর্ণরূপে পবিত্র। কেননা তিনি আল্লাহ পাক-এর গুণে গুণান্বিত।”
বদ মাযহাব ও বাতিল ফিরক্বার লোকেরা হাদীছ শরীফখানার সরাসরি শাব্দিক অর্থ করার কারণে কুফরী করে বসেছে। আসলে এখানে তাবীলী তথা ব্যাখ্যামূলক অর্থ গ্রহণ করতে হবে। যা আমরা তাবীল করে অর্থ করেছি।
هذا حظ الشيطان منكএর তা’বীলী অর্থ যেমনিভাবে هذا حظ ااشيطان من مثل امتكকরা হয়েছে, তেমনিভাবে اخج الغل والحسد এর অর্থ
اخرج مكان الغل واحسد من مثل امته.
এভাবে তা’বীল করে করতে হবে। তা নাহলে কাট্টা কুফরী হবে। এ বিষয়ে দলীল-আদিল্লাহ আমরা (ক)নং আপত্তিকর জবাবে প্রদান করেছি।
(গ)
কাফির, মুনাফিক, দাজ্জালের চেলা, গোমরাহ, ফিতনাবাজ, বেয়াদব, ওহাবী, খারিজী ফিরকার লোকেরা বলে থাকে যে, নুবুওওয়াতের পরও তাঁর এই শয়তানী ভাব দমিত না হওয়ায় আবার মি’রাজ শরীফের রাতে সিনা চাক করে পবিত্র করা হয়েছিল। (নাঊযুবিল্লাহ)
বাতিল ফিরক্বা, ওহাবী ও খারিজীদের এ বক্তব্য হাদীছ শরীফ ও ইসলামী শরীয়ার খিলাফ হওয়ায় কুফরীমূলক হয়েছে।
মূলতঃ সঠিক বক্তব্য হচ্ছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চারবার সিনা মুবারক চাকের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ পাক যে তাঁকে অসীম-অফুরন্ত নিয়ামত দান করেছেন সেটার প্রকাশ ঘটানো বা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা। পবিত্র করা, মা’ছূম করা, শয়তানী ভাব দূর করা বা হিংসা-বিদ্বেষ দূর করা কোনটাই উদ্দেশ্য নয়। কারণ তিনি তো পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ পাক-এর গুণে গুণান্বিত হয়েই পয়দা হয়েছেন।
যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন,
الم نشرح ك صدرك، ورفعنا لك ذكرك.
অর্থঃ- “(১) হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি কি আপনার সিনা মুবারক চাক করিনি? অর্থাৎ করেছি। (৪) আমি আপনার মর্যাদাকে (আলোচনাকে) বুলন্দ করেছি।” (সূরা আলাম নাশরাহ/১, ৪)
বাতিলপন্থি গোমরাহ লোকেরা যে বলে, ‘নুবুওওয়াতের পর তাঁর মধ্যে শয়তানীভাব দূর না হওয়ায় মি’রাজের সময় আবার সিনা চাক করে পবিত্র করা হয়েছিল।’ তাদের একথাটি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের সম্পূর্ণ খিলাফ বা কুফরীমূলক।
কেননা, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কোথাও উল্লেখ করা হয়নি যে, মিরাজ শরীফের সময় সিনা মুবারক চাক কালে শয়তানী অংশ ফেলে দেয়া হয়েছে বা পবিত্র করা হয়েছে। বরং অসংখ্য বর্ণনায় এটাই বর্ণিত আছে যে, ঈমান, হিকমত, রহমত ইত্যাদি প্রবেশ করানো হয়েছে। অর্থাৎ যদিও পূর্ব থেকেই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত নেয়ামতে পরিপূর্ণ হয়েই পয়দা হয়েছেন। তার পরেও আল্লাহ পাক দুনিয়াবী জিন্দেগীতে ক্ষেত্র বিশেষে অনুষ্ঠান করে করে সমস্ত কায়িনাতকে তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মর্যাদা ও মর্তবার কথা ঘোষণা করেছেন।
যেমন, হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বুখারী শরীফের ১ম জিঃ ৫০ ও ৪৭১ পৃষ্ঠায়, মুসলিম শরীফের ১ম জিঃ ৯২ পৃষ্ঠায় এবং নাসায়ী শরীফের ১ম জিঃ ৭৮ ও ৭৯ পৃষ্ঠায় আর হযরত মালিক বিন ছা’ছা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বুখারী শরীফের ১ম জিঃ ৪৫৫ ও ৫৪৮ পৃষ্ঠায়, মুসলিম শরীফের ১ম জিঃ ৯৩ পৃষ্ঠায়, নাসায়ী শরীফের ১ম জিঃ ৭৬ পৃষ্ঠায়, ছহীহ ইবনে হাব্বান ১ম জিঃ ১২৮ পৃষ্ঠায় এবং মিশকাত শরীফের ৫২৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে, মি’রাজ শরীফের সময় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিনা মুবারক চাক করে ফেরেশ্তাগণ যা করেছিলেন তার বর্ণনায় বর্ণিত আছে যে,
فرج صدرى ثم عسله بماء زمزم ثم جاء بطست مت ذهب ممتلئ حكمة وايمانا فافرغه فى صدرى ثم اطبقه ثم اخذ بيدى فعرج بى الى السماء.
অর্থাৎ- “অতঃপর হযরত জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার সিনা মুবারক চাক করলেন। তৎপর হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি সোনার তশতরি (পাত্র) আনলেন এবং এটা আমার সিনা মুবারকে ঢেলে দিয়ে উহা জোড়া লাগিয়ে দিলেন। অতঃপর আমার হাত মুবারক ধরে আমাকে সঙ্গে নিয়ে আসমানের দিকে মি’রাজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন।”
এছাড়াও তাফসীরে ইবনে কাছীরের ৫ম জিঃ ১৬ পৃষ্ঠায় سورة الم نشرحএর তাফসীরে অনুরূপ হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে যে,
كان ابى بن كعب يحدث ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال فرج سقف بيتى وانا بمكة فنزل جبرئيل فرج صدرى ثم غسله من ماء زمزم ثم جاء بطست من ذهب ممتلئ حكمة وايمانا فافر غها فى صدرى ثم اطبقه.
অর্থঃ- “হযরত উবাই বিন কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমি মক্কা শরীফে ছিলাম, এমন সময় আমার ঘরের ছাদ ফাঁক হয়ে গেল এবং জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম নাযিল হলেন। অতঃপর হযরত জিবরাঈল আলাাইহি ওয়া সাল্লাম আমার সিনা মুবারক চাক করলেন। তৎপর হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি সোনার তশতরি (পাত্র) আনলেন এবং এটা আমার সিনা মুবারকে ঢেলে দিয়ে এটা জোড়া লাগিয়ে দিলেন। অতঃপর আমার হাত মুবারক ধরে আমাকে সঙ্গে নিয়ে আসমানের দিকে মি’রাজ শরীফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন।”
অতএব, হাদীছ শরীফের বর্ণনা এবং তাফসীর শরীফের বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মিরাজ শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিনা মুবারক চাকের উদ্দেশ্য পবিত্র করা ছিলনা। বরং মর্যাদা-মর্তবার প্রকাশ ঘটানো যা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে করা হয়।
(ঘ)
কাফির, মুনাফিক, দাজ্জালের চেলা, গোমরা, ভন্ড, ফিতনাবাজ, বেয়াদব, ওহাবী, খারিজী ও বদ মাযহাবের লোকেরা বলে থাকেযে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্ম মুবারক থেকে আদৌ মা’ছুম ছিলেন না। সিনা চাক করে মা’ছুম বা নিষ্পাপ করা হয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ)
ওহাবী, খারিজী তথা বদ্ মাযহাব ও বাতিলপন্থিদের উপরোক্ত বক্তব্যও সম্পুর্ণ কুফরীমূলক।
মূল ফতওয়া হলো, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামিন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ তাঁদের সৃষ্টিগতভাবে মা’ছুম বা নিষ্পাপ। এছাড়াও নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ তো সর্বাবস্থায়ই মা’ছুম বা নিস্পাপ। নুবুওওয়াত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাপ্তির পূর্বে হোক বা পরে হোক না কেন, সর্বাবস্থায়ই তাঁরা নিস্পাপ তথা মা’ছুম। এর উপর বিশ্বাস করা ফরযে আইন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো নবী ও রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সাইয়্যিদ বা নবীদের নবী ও রসূলদের রসূল। তাহলে তিনি কত উত্তমভাবে মা’ছুম, তা চিন্তা-ফিকিরের বাইরে।
যেমন, আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে সূরা বাক্বারার ১২৪নং আয়াত শরীফে উল্লেখ করেছেন,
قال ابنى جاء لك للناس اماما قال ومن ذريتى قال لا ينال عهدى الظلمين.
অর্থঃ- “রব্বুল আলামীন আল্লাহ পাক (হযরত ইবরাহীম আলাইহিস্ সালামকে) বললেন, আমি আপনাকে মানবজাতির ইমাম করব। তিনি আরজ করলেন, আমার বংশধর থেকেও ! তখন আল্লাহ্ পাক বললেন, আমার অঙ্গীকার যালিমদের পর্যন্ত পৌঁছবে না।”
এই আয়াত শরীফের তাফসীরে “তাফসীরে আহমদিয়াহ’ কিতাবে উল্লেখ আছে,
انهم معصومون عن الكفر قبل الوحى وبعده باجماع.
অর্থঃ- সমস্ত মুফাস্সিরীন তথা ইমাম মুজতাহিদগনের ইজমা মতে, নিশ্চয়ই সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগন আনুষ্ঠানিক ভাবে নুবুওওয়াত প্রাপ্তির আগে ও পরে কুফরী (নাফরমানী) থেকে মা’ছুম তথা পুতঃপবিত্র ছিলেন।
‘তাফসীরে আহমদিয়া’-এর মধ্যে উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে আরো উল্লেখ করা হয়েছে,
لاخلاف لا حدفى ان نبينا عليه السلام لم يرتكب صغيرة ولا كبيرة طرفة عين قبل الوحى وبعده كما ذكره ابو حنيفة فى الفقه الاكبر.
অর্থঃ- “এ ব্যাপারে কারো ইখতিলাফ নেই যে, নিশ্চয়ই আমাদের নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নুবুওওতের আগে বা পরে এক মুহুর্তের জন্যও ছগীরা বা কবীরা কোন প্রকার গুনাহে লিপ্ত ছিলেন না। যেমনটি ইমাম আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘আল্ ফিক্বহুল্ আকবর’ কিতাবের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। ”
আল্লাহ পাক কুরআন শরীফের “সূরা শুরা”-এর ৫২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেছেন,
وكذلك اوحينا اليك روحا من امرنا ما كنت تدرى ما الكتب ولا الايمان.
অর্থঃ- “এমনিভাবে আমি আপনার কাছে কুরআন শরীফ ওহী করেছি আমার আদেশ ক্রমে। আপনি কি জানেন না? কিতাব কি ও ঈমান কি? অর্থাৎ আপনার জানা রয়েছে তাওহীদ, রিসালত, কিতাব, ঈমান, ইসলাম ও শরীয়ত ইত্যাদি সর্ববিষয় সম্পর্কে।”
অত্র আয়াত শরীফের তাফসীরে “তাফসীরে রূহুল বয়ান” এর মধ্যে বর্ণিত আছে যে,
فان اهل الوصول اجتمعوا على ان الرسول عليهم السلام كانوا مؤمنين قبل الوحى معصومين من الكبائر ومن الصغائر الموجبة لنفرة الناس عنهم قبل البعثة وبعدها فضلا عن الكفر.
অর্থঃ- “আহলে উছূল ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এ ব্যাপারে ইজমা করেছেন যে, নিশ্চয়ই নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ওহী প্রাপ্তির পূর্বেও নবী ছিলেন। তাঁরা সর্বাবস্থায় কবীরা গুনাহ এবং সাধারণ মানুষের কাছে যা অপছন্দনীয় এমন ছগীরা গুনাহ থেকেও মা’ছূম বা পূর্ণভাবে পূতঃপবিত্র এমনকি পবিত্রতম ছিলেন। আর কুফর থেকেও পুতঃপবিত্র ছিলেন।”
“তাফসীরে রূহুল বয়ান” কিতাবে উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে আরো বর্ণিত আছে যে,
يدل عليه انه عليه السلام قيل له هل عبدت وثنا قط قال لا، قيل هل شربت خمرا قط قال لا، فمازلت اعرف ان الذى هم عليه كفر.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, আতহারুল কলব ওয়াল জিসম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে আরজ করা হয়েছিলো, আপনি কি কখনো মূর্তিপুজা করেছিলেন? উত্তরে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন? আমি কখনো মুর্তি পুজা করিনি। আরো আরজ করা হয়েছিল, আপনি কি কখনো শরাব বা মদ পান করেছিলেন? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, না আমি কখানো শরাব বা মদ পান করিনি। আমি তো ভালভাবেই জানতাম যে, দুনিয়াবাসীদের এ কাজ বা আচরণ কুফরী।”
উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় “তাফসীরে আহমদিয়াহ্” কিতাবের মধ্যে উল্লেখ আছে,
انهم معصومون عن الكفر قبل الوحى وبعده بالاجماع وكذا عن تعمد الكبائر عند الجمهور.
অর্থঃ- “সমস্ত মুফাস্সিরীন তথা ইমাম-মুজতাহিদগণের ইজমা মতে, নিশ্চয়ই সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ আনুষ্ঠানিকভাবে ওহী প্রাপ্তির আগে ও পরে কুফরী (নাফরমানী) থেকে মা’ছূম তথা পুতঃ পবিত্র ছিলেন। জমহুর উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে, কবীরা অথবা ছগীরা গুনাহের ইচ্ছা করা বা খেয়াল করা থেকেও পুত পবিত্র ছিলেন।”
ফিক্বহে আকবর, তাকমীলুল ঈমান, মসনবী শরীফ, আক্বাইদে নাসাফী, শরহে আক্বাইদে নাসাফী, আক্বীদাতুত্ ত্বহাবী, আক্বাইদে হাক্কা এবং আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ-এর অন্যান্য আকাইদের কিতাব সমূহে বর্ণিত রয়েছে যে,
الانبياء عليهم السلام كلهم معصومون.
অর্থঃ- “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ মা’ছূম বা নিষ্পাপ তথা পুতঃ পবিত্র।”
আরো বর্ণিত আছে যে,
الانبياء عليهم السلام كلهم منزهون عن الصغائر والكبائر والكفر والقبائح.
অর্থঃ- “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণই ছগীরা কবীরা, কুফরী এবং অপছন্দনীয় কাজ হতেও পুতঃ পবিত্র।”
উপরোক্ত দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে প্রমাণিত হলো যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ জন্ম মুবারকের পূর্বে ও পরে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত ও রিসালাত প্রাপ্তির পূর্বে ও পরে তথা সৃষ্টির সময় থেকে সর্বাবস্থায় মা’ছূম বা পূতঃপবিত্র।
তাই যারা বলে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মের পর থেকে মা’ছূম বা পবিত্র ছিলেন না, তাদের বক্তব্য কুফরীমূলক। কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা, ক্বিয়াস এবং আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মতে তারা কাফির তথা চির জাহান্নামী।
এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া হলো, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু মা’ছূম বা নিষ্পাপ তথা পুতঃ পবিত্রই নন, বরং তিনি অপরকে মা’ছূম তথা গুনাহ থেকে নিষ্পাপ, মাহ্ফুয তথা গুনাহ থেকে সংরক্ষিত পুতঃপবিত্র তৈরী করনেওয়ালা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ফায়সালা।
পরিশেষে এতক্ষণের আলোচনা থেকে যে সমস্ত ছহীহ মাসয়ালা বের হয়েছে। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো-
(১) মু’মিন, মুসলমানগণের দলীল তথা ইসলামী শরীয়ার মূল উছূল হচ্ছে চারটি। যথা (১) কুরআন শরীফ, (২) হাদীছ শরীফ তথা সুন্নাহ শরীফ, (৩) ইজমায়ে উম্মত এবং (৪) ক্বিয়াস।
(২) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শরীর মুবারকে এমন কিছু ছিলনা, যা ফেলে দেয়ার মত।
(৩) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিনা মুবারক চাক হয়েছিল চার বার। প্রথমবারঃ তিন থেকে পাঁচ বছর বয়স মুবারকের মধ্যে, দ্বিতীয়বারঃ দশ থেকে চৌদ্দ বছর বয়স মুবারকের মধ্যে, তৃতীয়বারঃ আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত ঘোষণার পূর্বে এবং চতুর্থবারঃ মি’রাজ শরীফের রাত্রিতে মি’রাজ শরীফে গমণের পূর্বে।
(৪) هذا حظ الشيطان منك এর অর্থ হলো- هذا حظ الشيطان من مثل امتك. অর্থাৎ এটা শয়তান ওয়াস্ওয়াসা দেয়ার স্থান, যা আপনার জন্য নয়। কারণ আপনি শয়তানি ওয়াস্ওয়াসা থেকে সম্পূর্ণরূপে মাহ্ফুয। আপনার উম্মতের এই স্থানে শয়তান ওয়াস্ওয়াসা দিয়ে থাকে।
(৫) اخرج الغل والحسد এর অর্থ হলো
اخرج مكان الغل والحسد من مثل امته.
অর্থাৎ হিংসা-বিদ্বেষের স্থানটি বের করুন অর্থাৎ বণী আদমের জন্য এই স্থানটি হিংসা-বিদ্বেষের জায়গা। যা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য নয়। কারণ, তিনি এ সকল দোষত্রুটি থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। কেননা, তিনি আল্লাহ পাক-এর গুণে গুণান্বিত।
(৬) মুলকথা হলো, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভিতর থেকে শয়তানের অংশ বা হিংসা-বিদ্বেষ বের করা হয় নাই। কেননা তিনি তো আল্লাহ পাক-এর গুণে গুণান্বিত বা আল্লাহ পাক-এর চরিত্রে চরিত্রবান। কাজেই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভিতরে শয়তানের অংশ বা হিংসা-বিদ্বেষ থাকার প্রশ্নই উঠে না। অতএব, তাঁর ভিতর নাপাক কিছু কল্পনা করা কুফরী।
(৭) সিনা মুবারক চাক করে ঈমান ও হিকমত প্রবেশের অর্থ এই নয় যে, তাঁর ভিতরে অপূর্ণতা ছিল তা পূর্ণ করা হয়েছে (নাঊযুবিল্লাহ)। বরং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঈমান ও হিকমত যে পরিপূর্ণ রয়েছে তা আনুষ্ঠানিকভাবে বহিঃপ্রকাশ ঘটানো।
(৮) সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সৃষ্টিগতভাবে মা’ছূম বা নিষ্পাপ।
(৯) সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ জন্ম মুবারকের পূর্বে ও পরে এবং নুবুওওয়াত-রিসালত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়ার পূর্বে ও পরে সর্বাবস্থায় ছগীরা, কবীরা, কুফরী, শিরেকী এমনকি অপছন্দনীয় কাজ থেকেও সম্পূর্ণভাবে মা’ছূম বা নিষ্পাপ তথা পুতঃ পবিত্র, পবিত্রতম।
(১০) অতএব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভিতর থেকে সিনা চাকের সময় নাপাক কিছু বের করা হয়নি। বরং পবিত্রস্থানটি বের করে উম্মতের মহান আদর্শ হিসেবে উম্মতের শিক্ষার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিশেষভাবে স্মরণীয় যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পায়ের তলা মুবারক থেকে মাথার তালু মুবারক পর্যন্ত যা কিছু রয়েছে অর্থাৎ সমস্ত কিছুই শুধু পবিত্রতমই নয় বরং এতটুকু পবিত্র যে, যা অপবিত্রকে পবিত্র করে দেয়। এমনকি তাঁর শরীর মুবারক থেকে নিঃসৃত কোন কিছু যদি কেউ খায় বা পান করে তাহলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়‘
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্রতা
(المطهر) نقله ابن دحية عن كعب، قال السيوطى: يحتمل انه بكسر الهاء اسم فاعل، لانه طهر غيره من دنس الشرك وبفتحها اسم مفعول، لانه طهر ذاتا ومعنى ظاهرا وباطنا.
অর্থঃ- “(হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্রকারী এবং স্বয়ং পুতঃপবিত্র) যা হযরত ইবনু দাহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, المطهر শব্দখানার هاء বর্ণে যের পড়লে اسم فاعل হয়, যার অর্থ পবিত্রকারী, যেহেতু তিনি অন্যান্যদেরকে শিরকের অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতাকারী। আর هاء বর্ণে যবর যোগে পড়লে اسم مفعول হয়, যার অর্থ তিনি নিজেই পুতঃপবিত্র। কেননা নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাতগতভাবে সম্পূর্ণ পুতঃপবিত্র। এর অর্থ হলো, বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সর্বদিক থেকে পুতঃপবিত্র, পবিত্রতম। (শরহুল আল্লামাতিয্ যারক্বানী ৪র্থ জিঃ ২১৮ পৃষ্ঠা)
পেশাব মুবারক পুতঃ পবিত্র,
যা পানে বেহেশত্ নছীব হয়
عن حكيمة بنت اميمة بنت دقيقة عن امها انها قالت: كان النبى صلى الله عليه وسلم يبول فى قدح عيدان ثم يرفع تحت سريره فبال فيه ثم جاء فارادة فاذا القدح ليس فيه شيئ فقال لامرأة يقال لها بركة، كان تخدم ام حبيبة جائت بها من ارض الحبشة اين البول الذى كان فى القدح؟ قالت شربته، فقال لقد احتظرت من النار بحظار.
অর্থঃ- “হযরত হাকীমা বিনতে আমীমা বিনতে দাক্বীক্বা রহমতুল্লাহি আলাইহা তাঁর মাতা হযরত আমীমা বিনতে দাক্বীক্বা রহমতুল্লাহি আলাইহা থেকে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি বলেছেন, একদা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি পাত্রে পেশাব করলেন এবং তা খাটের নিচে রেখে দিলেন। এরপর তার একটা ব্যবস্থা করার ইচ্ছা করলে এসে দেখলেন পাত্রের মধ্যে কিছু নেই। তখন তিনি বারাকা নামের এক মহিলা, যে হাবশা হতে হযরত উম্মু হাবীবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর খাদিমা হিসেবে এসেছিলেন, তাঁকে বললেন, পাত্রের মধ্যে যে পেশাব মুবারক ছিল তা কোথায় গেল? উত্তরে তিনি বললেন, আমি উহা পান করে ফেলেছি। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অবশ্যই তুমি তোমার নিজেকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ রাখলে।” (দালাইলুন্ নুবুওওয়াহ্ ২য় জিঃ ৬৫৪, ৬৫৫ পৃষ্ঠা, আত্ ত্ববারানী ফিল্ মু’জামিল কবীর ২৪ জিঃ ১৮৯ পৃষ্ঠা, ২৫ জিঃ ৮৯ পৃষ্ঠা, আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনু হাব্বান হাদীছ নং ১৪১৩, আল্ মুসতাদরিক লিল্ হাকিম ১ম জিঃ ২৭২ পৃষ্ঠা ৫৯৩ নং হাদীছ ৪র্থ জিঃ ৭১ পৃষ্ঠা ৬৯১২ নং হাদীছ শরীফ, আদ্দারু কুতনী, আবূ ইয়ালা, মুসনাদে আর্ব্দু রাযযাক, আল খাছাইছুল কুবরা লিস্ সুয়ূতী ১ম জিঃ ১২২ পৃষ্ঠা)
রক্ত মুবারক পুতঃপবিত্র
যা পানে জান্নাত ওয়াজিব হয়
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রক্ত মুবারক পুতঃপবিত্র। যা পানে জান্নাত ওয়াজিব ও ফরয হয়ে যায়। এটাই হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের গ্রহণযোগ্য ফতওয়া। যার উপর ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ইজমা করেছেন। উহুদ যুদ্ধে হযরত মালিক বিন সিনান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রক্ত মুবারক পান করায় তিনি বলেছিলেন, তোমার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল তথা জাহান্নাম হারাম হয়ে গেল।
যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
فقال عليه الصلاة والسلام من مس دمى لم تصبه النار.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার রক্ত মুবারক যার রক্তের সাথে মিশেছে, তাঁকে জাহান্নামের আগুন কখনো স্পর্শ করবেনা।” (আল্মাওয়াহিবুল্ লাদুন্নিয়াহ্ বিল মিনাহিল মুহম্মদিয়া লিল্ আল্লামাতিল কুসত্বলানী ২য় জিঃ ৪২৬ পৃষ্ঠা)
“শরহুল্ আল্লামাতিয্ যারক্বানী আলাল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়াহ” নামক কিতাবের ২য় জিঃ ৪২৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
فقال له اتشرب الدم فقال نعم يا رسول الله صلى الله عليه وسلم (فقال عليه الصلاة والسلام من مس دمى لم تصبه وفى رواية لم تمسه (النار، وسيأتى ان شء الله تعالى حكم دمه عليه الصلاة والسلام) وهو الطهارة على الراجح.
অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মালিক বিন সিনান রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, তুমি কি আমার রক্ত মুবারক পান করে ফেলেছ? তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হ্যাঁ, আমি পান করে ফেলেছি। (তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমার রক্ত মুবারক যার রক্তের সাথে মিশেছে তাকে স্পর্শ করবেনা) অন্য বর্ণনায় আছে, তাকে স্পর্শ করতে পারবেনা (জাহান্নামের আগুন)। ইনশাআল্লাহু তায়ালা, অচিরেই আমরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রক্ত মুবারকের হুকুম আলোচনা করব) আর সে আলোচনা হচ্ছে, প্রাধান্যপ্রাপ্ত বিশুদ্ধ মতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রক্ত মুবারক পাক, পুতঃপবিত্র বা পবিত্রতম।”
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রস্রাব মুবারক, রক্ত মুবারক পান করা জাহান্নাম হারাম হওয়ার এবং জান্নাত ওয়াজিব হওয়ার কারণ। কেননা তাঁর রক্ত মুবারক পুতঃপবিত্র, পবিত্রতম। ইহাই প্রশিদ্ধ, ছহিহ ও প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত।
{দলীলসমূহঃ (১) আল কুরআনুল কারীম, (২) আহকামুল কুরআন লিইবনিল আরাবী, (৩) আহকামুল কুরআন লিল জাস্সাস, (৪) আহকামুল কুরআন লিল কুরতুবী, (৫) তাফসীরুত্ ত্ববারী, (৬) তাফসীরে ইবনে কাছীর, (৭) তাফসীরে খাযিন, (৮) তাফসীরে কবীর, (৯) তাফসীরে বাগবী, (১০) তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল, (১১) তাফসীরে মাযহারী, (১২) তাফসীরে রূহুল মায়ানী, (১৩) তাফসীরে জালালাইন, (১৪) হাশিয়াতুল্ জামাল আলাল জালালাইন, (১৫) হাশিয়াতুছ্ ছাবী আলাল জালালাইন, (১৬) তাফসীরে বাইযাবী, (১৭) মুহিউদ্দীন শাইখ যাদাহ আলাল বাইযাবী, (১৮) হাশিয়াতুশ্ শিহাব আলাল বাইযাবী, (১৯) তাফসীরে আহমদিয়া, (২০) তাফসীরে আযীযী, (২১) তাফসীরে ক্বাদিরী, (২২) তাফসীরে রিয়াউল কুরআন, (২৩) তাফসীরে আবী সাঊদ, (২৪) তাফসীরে কাসিমী, (২৫) বুখারী শরীফ, (২৬) ফতহুল বারী, (২৭) উমদাতুল ক্বারী, (২৮) ইরশাদুস্ সারী, (২৯) শরহুল্ কিরমানী, (৩০) মুসলিম শরীফ, (৩১) শরহুন্ নববী, (৩২) শরহুন্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, (৩৩) আল্ মুফহিম, (৩৪) ফতহুল মুলহিম, (৩৫) নাসায়ী শরীফ, (৩৬) যখীরাতুল উক্ববা, (৩৭) মিশকাত শরীফ, (৩৮) শরহুত্ ত্বীবী, (৩৯) আত্ তা’লীকুছ্ ছবীহ, (৪০) মিরক্বাত, (৪১) লুময়াত, (৪২) আশয়াতুল লুময়াত, (৪৩) মুযাহিরে হক্ব, (৪৪) মিরয়াতুল্ মানাজীহ,্ (৪৫) আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম, (৪৬) নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, (৪৭) দালাইলুন্ নুবুওওয়াহ, (৪৮) দাইলামী শরীফ, (৪৯) ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া, (৫০) গুনিয়াতুত্ ত্বলিবীন, (৫১) ফতহুল গাইব, (৫২) ফতহুর রব্বনী, (৫৩) ইহ্ইয়াউ উলুমিদ্দীন, (৫৪) আনীসুল আরওয়াহ, (৫৫) মাকতূবাত শরীফ, (৫৬) মসনবী শরীফ, (৫৭) শরহে আক্বাইদে নাসাফী, (৫৮) ফিক্বহে আকবর, (৫৯) তাকমীলুল্ ঈমান, (৬০) আকাঈদে হাক্কা, (৬১) আক্বীদাতুত্ ত্বহাবী, (৬২) ফাওয়াইদুল্ ফুওয়াদ, (৬৩) হাক্কীক্বতে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, (৬৪) মাওয়াহিবুল্লাদুন্নিয়া, (৬৫) শরহে যারকানী (৬৬) তাযকিয়াহ, (৬৭) হিলইয়াতুল আউলিয়া, (৬৮) সীরাতে হালাবিয়া, (৬৯) হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, (৭০) তা’রীখে মুহম্মদী, (৭১) কানযুল ইবাদ, (৭২) ফতওয়ায়ে ছুফিয়া, (৭৩) কুওয়াতুল্ কুলূব, (৭৪) ফতওয়াওয়ে খাযিনাতুর রিওয়ায়িত, (৭৫) ফতওয়ায়ে সিরাজুম্ মুনীর, (৭৬) ফতওয়ায়ে মিফতাহুল জিনান, (৭৭) তাহক্বীকুল মাকাম আলা কিফায়াতিল আওয়াম, (৭৮) মাজমুয়ায়ে ছগীর, (৭৯) আশ শিফা, (৮০) খাছাইছুল কুবরা, (৮১) মাদারিজুন্ নুবুওওয়াত, (৮২) শরফুল আলম, (৮৩) নশরুত্ ত্বীব, (৮৪) ইবনে আসাকির, (৮৫) কানযুল উম্মাল, (৮৬) আল বারাহিনুল ক্বাতইয়্যাহ ফী মাউলিদি খাইরিল বারিয়্যাহ লিল কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, (৮৭) তাহক্বকুল মাকাম আলা কিফায়াতিল আওয়াম, (৮৮) সীরাতে ইবনে হিশাম, (৮৯) যখীরায়ে কারাম আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, (৯০) শামাইলে তিরমিযী, (৯১) খাছাইলে নববী, (৯২) শামাইলে নববী, (৯৩) আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ আলাশ্ শামাইলিল মুহম্মদিয়া, (৯৪) জামউল্ ওয়াসাইল, (৯৫) শরহে মানাবী মিছরী, (৯৬) হযরতের সিনা চাক, (৯৭) ফতওয়ায়ে আমিনিয়া সুন্নত ওয়াল জামায়াত, (৯৮) মাসিক আল বাইয়্যিনাত, (৯৯) কিতাবুল আলক্বাব ইত্যাদি।}
মুহম্মদ মোতাহার হোসেন চৌধুরী
বদলগাছী, নওগাঁ
সুওয়ালঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইলমে গইবের অধিকারী ছিলেন কিনা? অনুগ্রহ করে দলীল-আদিল্লাসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, ছাহিবে কা’বা কাওসাইন, রহমতুল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবশ্যই আল্লাহ পাক প্রদত্ত ইল্মে গইবের অধিকারী ছিলেন। এ সম্পর্কে ভালভাবে বুঝতে হলে প্রথমেই ইলমে গইবকাকে বলে তা বুঝতে হবে।
ইলমে গইবের সংজ্ঞা
গইব হচ্ছে এরূপ এক অদৃশ্য বস্তু বা বিষয় যা মানুষ চোখ, নাক, কান ইত্যাদি ইন্দ্রিয়সমূহের সাহায্যে উপলব্ধি করতে পারে না এবং যা কোন দলীল-প্রমাণ ব্যতীত সুস্পষ্টভাবে ইল্মের আওতায়ও আসেনা। যেমন- জিন, ফেরেশ্তা, বেহেশ্ত, দোযখ ইত্যাদি আমাদের জন্য গইব বা অদৃশ্য। কেননা এগুলোকে ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অথবা বিনা দলীলে শুধুমাত্র বিবেক বুদ্ধির দ্বারা অনুভব করা যায়না।
ইলমে গইবের প্রকারভেদ
এ অর্থে গইব দু’প্রকার। যথা- (১) যা যুক্তি-প্রমাণ ভিত্তিক অর্থাৎ প্রমাণাদি দ্বারা অনুভব করা যায়। যেমন- বেহেশ্ত, দোযখ মাখলুকাত, মহান আল্লাহ পাক-এর জাত, গুণাবলী এবং কুরআন শরীফের আয়াতসমূহ দেখে এ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়।
(২) যা দলীলের দ্বারাও অনুভব করা যায়না। যেমন, ক্বিরামত কখন হবে, মানুষ কখন মারা যাবে ইত্যাদি। আর এ দ্বিতীয় প্রকার গইবকেই মাফাতীহুল গইববলা হয়।
যেমন, এ প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীরে রুহুল বয়ানে’ সূরা বাক্বারায় বর্ণিত রয়েছে, يؤمنون لالغيب এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে যে,
وهو ما غاب عن الحس والعقل غيبة كاملة بحيث لايدرك بواحد منها ابتداء بطريق البداهد وهو قسمان قسم لادليل عليه وهو الذى اريد يقوله عنده مفاتيح الغيب وقسم نصب عليه دليل كالصانع وصفاته وهو المراد.
অর্থঃ- “গইব তাকেই বলে যা ইন্দ্রিয় ও অনুভতি থেকে সম্পূর্ণরূপে এরূপ ভাবে গোপন থাকে যে, কোন উপায়েই প্রথম দিকে স্পষ্টরূপে উপলব্ধি করা যায় না। গইব দু’প্রকার। প্রথম প্রকার হলো, যার সম্পর্কে কোন দলীল প্রমাণ নেই। কুরআন শরীফে বর্ণিত ( الغيب عنده مفاتيح অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর নিকটেই রয়েছে গইবের চাবিকাঠি।) এ আয়াত শরীফ দ্বারা এরূপ গায়িবকেই বুঝানো হয়েছে।
দ্বিতীয় প্রকার গইব হলো, যা অবগত বা অনুভব করার জন্য দলীল-প্রমাণ রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক-এর জাত ও তাঁর ছিফাতসমূহ কুরআন শরীফে বর্ণিত يؤمنون بالغيب. এ আয়াত শরীফ দ্বারা দ্বিতীয় প্রকার গায়িবকেই বুঝানো হয়েছে।
মহান আল্লাহ পাক আলিমুল গইব
স্মর্তব্য যে, গইব যত প্রকারই হোকনা কেন মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন হচ্ছেন عالم الغيب (আলিমুল গইব) অর্থাৎ সর্ব প্রকার গইব বা অদৃশ্য বস্তু বা বিষয়ের ইল্ম আল্লাহ পাক-এর রয়েছে। আল্লাহ পাক বিনা মধ্যস্থতায় বা কারো মাধ্যম ছাড়াই ইলমে গইবের অধিকারী।
আর এরূপ ইল্মে গইব সম্পর্কেই মহান আল্লাহ পাক তাঁর কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
لايعلم من فى السموات والارض الغيب الا الله.
অর্র্থঃ- “আসমান-যমীনে আল্লাহ পাক ব্যতীত কারো ইল্মে গইব নেই।” (সূরা নমল/৫৫) অর্থাৎ বিনা মধ্যস্থতায় বা কারো মাধ্যম ব্যতীত যে ইল্মে গইব তা শুধুমাত্র আল্লাহ পাক-এরই রয়েছে।
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম হচ্ছেন মুত্তালা’ আলাল গইব
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন, مطلع على الغيب “মুত্তালা আলাল গইব।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবকে সর্ব প্রকার ইল্মে গইব দান করেছেন। এর বহু প্রমাণ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে রয়েছে।
কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ
দ্বারা ইলমে গইবের প্রমাণ
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ্ শরীফের ‘সূরা জিন’-এর ২৬, ২৭ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
علم الغيب فلايظهر على غيبه احدا الا من ارتضى من رسول.
অর্থঃ- “তিনি (আল্লাহ পাক) আলিমুল গইব, তাঁর ইল্মে গইব তাঁর মনোনীত রসূল ব্যতীত কারো নিকট প্রকাশ করেন না। অর্থাৎ রসূলগণকে তিনি ইল্মে গইব দান করেছেন।”
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে খাযিন ও বাগবী শরীফে” উল্লেখ আছে যে,
يعنى الا من يصطفيه لرسالته ونبوته فيظهره على ما يشاء من الغيب حتى يستدل على نبوته مما يخبربه من المغيبات.
অর্থঃ- “যাঁকে তাঁর নুবুওওয়াত ও রিসালতের জন্য মনোনীত করেন, তাঁকে যতটুকু ইচ্ছা ইল্মে গইব দান করেন। তাঁর ইলমে গইব তাঁর নুবুওওয়াতের প্রমাণ স্বরূপ এবং তাঁর মু’জিযাও বটে।”
শাব্দিক কিছু পার্থক্যসহ অনুরূপ ব্যাখ্যা তাফসীরে রুহল বয়ান, জালালাইন, সাবী ও আযীযীতেও উল্লেখ আছে।”
মহান আল্লাহ পাক তাঁর কালামে পাকে সূরা আলে ইমরান-এর ১৭৯নং আয়াত শরীফে আরো ইরশাদ করেন,
وما كان الله ليطلعكم على الغيب ولكن الله يجتبى من رسله من يشاء.
অর্থঃ- “এটা আল্লাহ পাক-এর দায়িত্ব নয় যে, অদৃশ্য সম্পর্কে তোমাদের (সাধারণ লোকদের) অবহিত করবেন। তবে আল্লাহ পাক তাঁর রসূলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা ইলমে গইব দান করেন।”
উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত ও মশহুর তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে জালালাইন শরীফে” উল্লেখ আছে যে,
ولكن الله يجتبى ويختار من يشاء فيطلع على غيبه كنا اطلع النبى صلى الله عليه وسلم على حال المنافقين.
অর্থঃ- “তবে আল্লাহ পাক যাকে (রসূল হিসেবে) মনোনীত করেন, তাঁকে ইল্মে গইব দান করেন। যেমন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মুনাফিকদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল।”
উক্ত আয়াত শরীফের এরূপ ব্যাখ্যা তাফসীরে বাইযাবী, খাযিন, কবীর, জুমাল, সাবীসহ আরো বহু নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ আছে।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ইল্মে গইবের অধিকারী তা সূরা তাকভীর-এর ২৪ নং আয়াত শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত হয়।
যেমন, মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
وما هو على الغيب بضنين.
অর্থাৎঃ- তিনি (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গইবের সংবাদ প্রকাশে কৃপণতা করেননা।”
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় তাফসীরে “মায়ালিমুত তানযীল”-এ উল্লেখ আছে,
يقول انه ياتيه علم الغيب فلايبخل به عليكم بل يعلمكم ولايكتمه.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক বলেন, নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট ইল্মে গইব রয়েছে।
সুতরাং তিনি তোমাদেরকে তার সংবাদ দানে কৃপণতা করেন না। বরং তোমাদেরকে তা শিক্ষা দেন এবং গায়িব-এর সংবাদ প্রদান করেন। অনুরূপ তাফসীরে খাযিন ও বাগবীতেও উল্লেখ আছে। ”
মহান আল্লাহ পাক ‘সূরা আর রহমান’-এর ১-৪নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
الرحمن علم القران خلق الانسان علمه البيان.
অর্থঃ- “দয়াময় আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবকে কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি ইনসান সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন।”
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে খাযিনে’ উল্লেখ আছে,
قيل المراد بالانسان محمدا صلى الله عليه وسلم البيان يعنى بيان ما كان ومايكون لانه ينبئ عن خبر الاولين والاخرين وعن يوم الدين.
অর্থঃ- “বলা হয়েছে যে, ইনসান দ্বারা উদ্দেশ্য হলেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর বয়ান দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, যা ঘটেছে এবং যা ঘটবে, পূর্বাপর সমস্ত কিছুর ইল্ম আল্লাহ পাক তাঁকে দান করেছেন। কেননা তাঁকে পূর্ববর্তী-পরবর্তী এবং পরকালের সম্পর্কে সকল গায়িবী বিষয়ে ইল্ম দান করেছেন।” অনুরূপ তাফসীরে মায়ালিমুত তানযীল, হুসাইনী, সাবীতেও উল্লেখ আছে।”
স্মর্তব্য যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো অবশ্যই এমনকি পূর্ববর্তী নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সকলেই যে ইলমে গইবের অধিকারী ছিলেন তার সুস্পষ্ট প্রমাণও কুরআন শরীফে রয়েছে।
যেমন, হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
وانبئكم بما تأكلون وماتدخرون فى بيوتكم.
অর্থঃ- তোমরা কি খেয়েছ আর কি ঘরে রেখে এসেছ তা সবই আমি (হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম) বলে দিতে পারি।” (সূরা আলে ইমরান/৪৯)
হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালাম হযরত ইউছুফ আলাইহিস্ সালাম-এর স্বপ্নের কথা শ্রবণ করার পর তাঁর অন্যান্য ছেলেদের ষড়যন্ত্রের কথা তিনি আগেই বলে দিলেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
يبنى لا تقصص رءياك على اخوتك فيكيدوا لك كيدا.
অর্থঃ- “হে ছেলে! আপনার ভাইদের কাছে আপনার স্বপ্নের কথা বর্ণনা করিবেন না। তাহলে তারা (আপনার ব্যাপারে) ষড়যন্ত্র করবে।” (সূরা ইউছুফ/৫)
হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালাম-এর বক্তব্যঃ
قال الم اقل لكم انى اعلم من الله ما لاتعلمون.
অর্থঃ- আমি কি তোমাদের বলিনি যে, আল্লাহ পাক-এর পক্ষ থেকে আমি এমন বিষয় জানি যা তোমরা জান না? অর্থাৎ হযরত ইউছূফ আলাইহিস্ সালাম জীবিত আছেন এবং তিনি তাঁর পিতার সাথে মিলিত হবেন।” (সূরা ইউসুফ/৯৬)
এখানে আল্লাহ পাক-এর নবী হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালাম-এর ইলমে গায়িবের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,
حتى اذا اتوا على واد النمل قالت نملة يايها النمل ادخلوا مسكنكم لا يحطمنكم سليمن وجنوده وهم لايشعرون فتبسم ضاحكا من قولها وقال رب اوزعنى ان اشكر نعمتك التى انعمت على وعلى والدى.
অর্থঃ- “যখন তারা (হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম-এর সৈন্যবাহিনী) পিপীলিকা অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌঁছলেন তখন এক পিপীলিকা বললো, হে পিপীলিকা দল! তোমরা তোমাদের ঘরে প্রবেশ কর। অন্যথায় হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম এবং তাঁর বাহিনী অজান্তেই তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবেন। তার (পিপীলিকার) কথা শুনে হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে আমার রব! আপনি আমাকে সামর্থ দান করুন যাতে আমি আপনার সেই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি যা আপনি আমাকে এবং আমার পিতা-মাতাকে দান করেছেন।” (সূরা নমল/১৮,১৯)
আয়াত শরীফের তাফসীরে রয়েছে, হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম পিপীলিকার সেই কথা তিন মাইল দূরবর্তী স্থান থেকে শুনেছিলেন যা তাঁর ইলমে গইবের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে জালালাইন, হাশিয়ায়ে শাইখযাদাহ্)
উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহ ও তার নির্ভরযোগ্য তাফসীর বা ব্যাখ্যা দ্বারা অকাট্য ও সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক পূর্ববর্তী সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণকেই ‘ইলমে গইব’ দান করেছেন। আর বিশেষ করে তাঁর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইল্মে গইবসহ সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল বিষয়ের ইলম্ই দান করেছেন। অর্থাৎ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন, ‘মুত্তালা আলাল গায়িব’। যা উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহ এবং অন্যান্য বহু আয়াত শরীফ দ্বারাই সূস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।
হাদীছ শরীফ দ্বারা ইলমে গইব-এর প্রমাণ
আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ‘ইল্মে গইবের’ অধিকারী তা বহু হাদীছ শরীফ দ্বারাও সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত রয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফের বিখ্যাত ও মশহর কিতাব ‘মিশকাত শরীফে’ উল্লেখ আছে,
عن عبد الرحمن بن عيش قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم رأيت ربى عزوجل فى احسن صورة قال فيم يختصم الملا الاعلى قلت انت اعلم قال فوضع كفه بين كتفى فوجدت بردها بين ثدى فعلمت ما فى السموت وما فى الارض.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুর রহমান বিন আইশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি আমার রবকে উত্তম ছুরতে দেখেছি। আমার রব বললেন, (হে আমার হাবীব!) মুর্কারব ফেরেশ্তাগণ কোন বিষয়ে আলোচনা করছে? আমি বললাম, আপনিই অধিক জানেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তাঁর রহমতের হাত আমার দু’কাঁধের মধ্যখানে রাখলেন। আমি তাঁর ফয়েজের শীতলতা আমার মধ্যে অনুভব করলাম। অতঃপর আসমান-যমীনের সকল বিষয় ও বস্তুর ইল্ম আমার অর্জিত হয়ে গেল।”
এ হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘মিরকাত শরীফে’ লিখেন,
قال ابن حجر اى جميع الكائنات التى فى السموات بل وما فو قها كما يستفاد من فصة المعراج والارض بمعنى الجنس اى وجميع مافى الارضين السبع بل وما تحتها …. وفتح على ابواب الغيوب.
অর্থঃ- “আল্লামা ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “সামাওয়াত” দ্বারা আসমানসমূহ এমনকি তারও উপরের সমস্ত সৃষ্টির ইল্মকে বুঝানো হয়েছে; যেমন মি’রাজ শরীফের ঘটনা দ্বারা বুঝা যায়। আর ‘আল আরদ্’ জিন্স (জাতি) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, অর্থাৎ ঐ সমূদয় বস্তু যা সমস্ত যমীনের মধ্যে বরং তারও নিচে রয়েছে তার সব বিষয়েরই ইল্ম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অর্জিত হয়ে যায়। …. (শুধু তাই নয় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন) আমার জন্যে মহান আল্লাহ পাক গায়িব-এর সকল দরজাসমূহ খুলে দিয়েছেন।”
ইমামুল মুহাদ্দিছীন আল্লামা শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আশয়াতুল লুময়াত শরহে মিশকাত’-এর ১ম খণ্ড ৩৩৩ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় লিখেন,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………….
অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘অতঃপর আমার আসমান-যমীনের সমস্ত ইল্ম অর্জিত হলো।” এর দ্বারা ক্ষুদ্র থেকে বৃহত্তর সকল বিষয় বা বস্তুর ইল্ম লাভ করা এবং তা আয়ত্ত্ব করার কথাই বুঝানো হয়েছে।”
উপরোক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় “মাদারিজুন্ নুবুওওয়াত” কিতাবে উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………….
অর্থঃ- “হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম থেকে শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া পর্যন্ত সমস্ত কিছুই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট স্পষ্ট করা হয়েছে, যাতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছুর অবস্থাদি সম্পর্কে তিনি জানতে পারেন। তিনি এ ধরণের কিছু কিছু বিষয়ের সংবাদ হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকেও দিয়েছেন।”
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن عمربن الخطاب رضى الله تعالى عنه قال قام فينا رسول الله صلى الله عليه وسلم مقاما فاخبرنا عن بدء الخلق حتى دخل اهل الجنة منازلهم واه النار منازلهم حفظ ذالك من حفظه ونسيه من نسيه.
অর্থঃ- “হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে সৃষ্টির শুরু থেকে জান্নাতবাসীদের জান্নাতে প্রবেশ এবং দোযখবাসীদের দোযখে প্রবেশ করা পর্যন্ত সলক বিষয়ের সংবাদ প্রদান করেন। এগুলো যারা স্মরণ রাখতে পেরেছেন তারা স্মরণ রেখেছেন, আর যারা স্মরণ রাখতে পারেননি তাঁরা ভুলে গেছেন।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
‘ছহীহ মুসলিম শরীফে’ আরো উল্লেখ আছে যে,
عن حجيفة قال قال فينا رسول الله صلى الله عليه وسلم مقام ماترك شيئا يكون فى مقامه ذالك الى قيام الساعة الاحدث به.
অর্থঃ- “হযরত হুযাইফা রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে তার সব কিছুই বর্ণনা করে দিলেন, কোন কিছুই বাদ দিলেন না।”
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال جاء ذنب الى راعى غنم فاخذ منها شاة فطلبه الراعى حتى انتزعها منه قال فصعد الذئب على تل فاقعى واستشفر وقال قدعمدت الى رزق رزقنيه الله اخذته ثم انتزعته منى فقال الرجل تالله ان رأيت كاليوم ذئب يتكلم فقال الذئب اعجب من هذا رجل فى النخات بين الحرتين يخبر كم بم مضى وما هو كائن بعد كم قال فكان الرحل يهود يا فجاء الى النبى صلى الله عليه وسلم فاخبره واسلم فصدقه النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা একটি নেকড়ে বাঘ এক ছাগল পালের দিকে আসলো এবং সেখান থেকে একটি ছাগল ধরে নিয়ে গেল, রাখাল তার পিছনে ছুটলো এবং ছাগলটিকে ছিনিয়ে নিয়ে আসলো। হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নেকড়ে বাঘটি তার বিশেষ ভঙ্গিতে একটি টিলার উপর গিয়ে বসলো এবং তার লেজ উভয় পায়ের মধ্যখানে রেখে বলতে লাগল, (হে রাখাল!) তুমি আমার নিকট হতে এমন রিযিক ছিনিয়ে নিতে ইচ্ছে করছ যা আল্লাহ পাক আমাকে দান করেছেন। রাখাল বললো, আল্লাহ পাক-এর কসম! আজকের মত এরূপ বিস্ময়কর অবস্থা আমি কখনো দেখিনি যে, নেকড়ে বাঘ কথা বলে। নেকড়ে বাঘ বললো, এর চেয়ে বিস্ময়কর অবস্থা সেই মহামানবের যিনি খেজুর বৃক্ষ সম্বলিত এলাকায় দু’ পাহাড়ের মধ্যখানে অর্থাৎ মদীনা শরীফে অবস্থান করেন এবং তোমাদেরকে ঐ সমস্ত বিষয়ের সংবাদ দেন যা হয়েছে এবং যা ভবিষ্যতে হবে। হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, লোকটি ছিল ইহুদী, সে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আসলো এবং তার নিকট এ ঘটনাটি বর্ণনা করলো এবং মুসলমান হয়ে গেল। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ ঘটনাটির সত্যায়ন করলেন। (শরহুস্ সুন্নাহ, মিশকাত শরীফ ৫৪১ পৃষ্ঠা।)
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
فوالله لاتسئلونى عن شيئ الا اخبرتكم به مادمت فى مقامى هذا.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর কসম! তোমরা যে কোন বস্তু বা বিষয় সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন কর। আমি এখানে দাঁড়িয়েই তার সংবাদ দিব।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
উক্ত হাদীছ শরীফে বর্ণিত ‘লা তাসআলূনী আন শাইয়িন’ বাক্য দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, কোন বিষয় বা বস্তুই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্, ছাহিবে ইলমে গইব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইলমের বাইরে ছিলনা। কারণ شيئ (শাইউন) শব্দটি হলো نكرة (নাকিরা) বা অনির্দ্দিষ্ট বিশেষ্য আর নাকিরা নফী বা নাসূচক বাক্যের অধীনে হলে ব্যাপকতার অর্থ প্রদান করে।
যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
وعن ابى موسى رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اعطيت فواتح الكلم وجوامعه وخواتمه.
অর্থঃ- “হযরত আবূ মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল বিষয়ের সমস্ত ইল্ম দান করা হয়েছে। (ত্ববারানী, ইবনে আবি শাইবা, আবু ইয়ালা, কানযুল উম্মাল ৩১৯২৬)
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন,
اعطيت جوامع العلم.
অর্থঃ- “আমাকে সমস্ত ইল্ম দান করা হয়েছে।” (ইরওয়াউল গলীল, দাইলামী শরীফ/১৬২০)
اعطيت جوامع الكلم.
অর্থঃ- “আমাকে সমস্ত ইল্ম দান করা হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ/৫১২)
بعثت بجوامع اكلم.
অর্থঃ- “আমি সমস্ত ইল্মসহ প্রেরীত হয়েছি।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ/৫১২)
اوتيت جوامع الكلم وخواتمه.
অর্থঃ- “আমি সমস্ত ইল্ম এবং তার শেষ সীমাসহ প্রেরীত হয়েছি।” (লুগাতুল হাদীছ-১/১৪)
অতএব, উপরোক্ত হাদীছ শরীফসমূহের বর্ণনা দ্বারা সূস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল বিষয় বা বস্তুর বিস্তারিত ও পরিপূর্ণ ইল্ম দান করেছেন। তাই তিনি পরিপূর্ণ ইল্মে গইবের অধিকারী।
ইলমে গইব সম্পর্কে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম ও ইমাম-মুজতাহিদগণের অভিমত
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্, নূরে মুজাস্সাম, ছাহিবে মা কানা ওমা ইয়াকূন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ইলমে গইবের পূর্ণ অধিকারী ছিলেন তা অনুসরণীয় ও বিশ্ববরেণ্য ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরামগণের পবিত্র ক্বওল মুবারক দ্বারাও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত আছে।
যেমন, এ প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত ইমাম ও বুযূর্গ হযরত ইমাম কুস্তলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘যুরকানী আলাল মাওয়াহিব’-এর ৭ম খণ্ড, ২৫৫ পৃষ্ঠায় লিখেন,
قد اشتهر وانتشر امره عليه الصلاوة السلام بين اصحابه بالاطلاع على الغيب.
অর্থঃ- “নিঃসন্দেহে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের মধ্যে এটা প্রচলিত এবং মশহুর ছিল যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইলমে গাইবের অধিকারী ছিলেন।” এর দ্বারা এটাই সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয় যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের আক্বীদা এটাই ছিল যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিপূর্ণ ‘ইলমে গইবের’ অধিকারী ছিলেন।
ক্বাইয়্যূমে আউয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব ‘মাকতুবাত শরীফ’-এর ১ম খণ্ড ৩১০ পৃষ্ঠায় লিখেন,
هر علم غيب كه مخصوص باوست سبحانه خاص رسل را اطلاع مى بخشد.
অর্থঃ- “মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তাঁর বিশেষ ইলমে গইব তাঁর খাছ নবী-রসূলগণকে দান করেছেন।”
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও মুহাক্কিক হযরত শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মাদারিজুন নুবুওয়াতে’ উল্লেখ করেন,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………….
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল বিষয় বা বস্তু সম্পর্কেই অবহিত ছিলেন। তিনি আল্লাহ পাক-এর শান তাঁর আহকাম বা বিধি-বিধান, তাঁর ছিফাত বা গুণাবলী তার আসমা’ বা নাম সমূহ তাঁর আফয়াল বা কর্মসমূহের এবং আদি-অন্ত, যাহির-বাতিন ইত্যাদি সর্ব প্রকার ইলমের অধিকারী ছিলেন।”
বাহরুল উলূম হযরত মাওলানা মুহম্মদ আব্দুল আলী লখনবী রহমতুল্লাহি আলাইহি “মীর যাহিদ” কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
علمه علوما بعضها ما احتوى عليه القلم الاعلى وما استطاع على احاطتها اللوح الا وفى لم يلد الدهر مثله من الازل ولا يلد الى الابد فليس له ممن فى السموت والاض كفوا احد.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমস্ত বিষয়েরই ইল্ম দান করেছেন যা মহান আল্লাহ পাক-এর মহান কুদরতী কলম বা কলমে আ’লার আওতায়ও আসেনি। যা লাওহে মাহফুজও আয়ত্ব করতে পারেনি। কশ্মিনকালেও সৃষ্টির শুরু থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত তাঁর মত কেউ জন্মগ্রহণ করেনি, কেউ তাঁর সমকক্ষ হবেনা। সমস্ত কায়িনাতে তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।”
“জামউন্ নিহায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,
ان الله تعالى لم يخرج النبى عليه السلام حتى اطلعه على كل شيئ.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্ব বিষয়ে অবহিত না করে ইহকাল থেকে নিয়ে যাননি।”
“ফুতুহাতে আহমদীয়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,
وسع علمه علوم العلمين الانس والجن والمملئكة لان الله تعالى اطلعه على العالم كله فعلم علم الاولين والاخرين وما كان وما يكون وحسبك علمه علم القران وقد قال اله تعالى ما فرطنا فى الكتب من شبئ.
অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জ্ঞান সমগ্র জগত তথা জিন-ইনসান এবং ফেরেশ্তাগণের ব্যাপক জ্ঞানকেও পরিবেষ্টন করে রয়েছে। কেননা মহান আল্লাহ পাক তাঁকে সমগ্র জগত সম্পর্কে অবহিত করেছেন। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল জ্ঞান তাঁকে দান করেছেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা ছিল ও যা হচ্ছে বা হবে সমস্ত বিষয় জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর এ ব্যাপক জ্ঞানের জন্য কুরআন শরীফের জ্ঞানই যথেষ্ট। আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন, “আমি কিতাবে (কুরআন শরীফে) কোন কিছুই বাদ দেইনি।”
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,
كل فى كتب مبين.
অর্থঃ- “(আল্লাহ পাক-এর কায়িনাতের) সমস্ত কিছুই প্রকাশ্য কুরআন শরীফে রয়েছে।” (সূরা হুদ/৬)
অর্থাৎ সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এমন কোন বিষয় নেই যার বর্ণনা কালামুল্লাহ শরীফে নেই। সুতরাং কালামুল্লাহ শরীফের হাক্বীক্বী জ্ঞান তথা জাহিরী ও বাতিনী সমস্ত ইল্ম যার রয়েছে তাঁর কোন কিছুর ইলম্ই অজানা থাকেনা।
“আফদ্বালুল ক্বোরা” কিতাবে উল্লেখ আছে,
لان الله تعالى اطلعه على العالم فعلم الاولين والاخرين وما كان وما يكون.
অর্থঃ- “মহান আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস্ সালামকে সমস্ত দুনিয়া সম্পর্কে অবহিত করেছেন। সুতরাং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল জ্ঞান এবং যা কিছু হয়েছে ও যা কিছু হবে, সবকিছুই জানিয়ে দেয়া হয়েছে।”
“ক্বাছীদায়ে র্বুদা” শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
وكلهم من رسول الله ملتمس غرفا من البحر او رشفا من الديم.
অর্থঃ- “সবাই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট থেকে জ্ঞান আহরণ করে থাকেন। যেমন, কেউ সমুদ্র থেকে কলসি ভরে বা প্রবল বৃষ্টি ধারার ছিটে ফোটা থেকে পানি সংগ্রহ করে।”
এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে,
ان جميع الانبياء كل واحد منهم طلبوا واخذوا العلم من علمه عليه السلام الذى كالبحر فى السعة والكرم من كرمه عليه السلام الذى هو كالديم لانه عليه السلام مفيض وهم مستفا ضون لانه تعالى خلق بتداء ورحه عيه السلام ووضع فيه علوم الانبياء وعلم ماكان وما يكون ثم خلقهم فاخذوا علومنهم منه عليه السلام.
অর্থঃ- “সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যাপক জ্ঞান ভান্ডার থেকে জ্ঞান সংগ্রহ করেছেন এবং সকলেই তাঁর সে অঝোর বারি ধারার মতো করুণা থেকে করুণাপ্রাপ্ত হয়েছেন। কেননা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন ফয়েযদাতা আর অন্যান্য নবীগণ হলেন ফয়েয গ্রহীতা। মহান আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রূহ্ মুবারক সৃষ্টি করে তাতে সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের ও পূর্বাপর প্রত্যেক বিষয়ের জ্ঞানসমূহ সঞ্চিত রাখেন। অতঃপর অন্যান্য রসূলগণকে সৃষ্টি করেন। সুতরাং তাঁরা সবাই নিজ নিজ জ্ঞান হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সংগ্রহ করেছেন।” (ক্বাছীদায়ে র্বুদা)
মূলতঃ শুব্দ‘ (নাবিয়্যুন) শব্দের অর্থই হলো গায়ব বা অদৃশ্য বিষয়ের সংবাদদাতা। এ সম্পর্কে ইমাম কুস্তলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
النبوة مأخوذة من النبأ بمعنى الخبر اى اطلعه الله على الغيب.
অর্থঃ- “ نبوة শব্দটি نبأ শব্দ থেকে উদ্ভুত। যার অর্থ হচ্ছে, খবর বা জ্ঞান। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গইব বা অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া)
অনুরূপ আরো অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম তাঁদের স্ব-স্ব কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিপূর্ণ ইল্মে গইবের অধিকারী ছিলেন।
আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম ইলমে গায়িব-এর অধিকারী হওয়ার প্রমাণ
উল্লেখ্য যে, নবী-রসুল আলাইহিমুস্ সালামগণ তো অবশ্যই বরং হক্কানী ওলীআল্লাহগণকেও আল্লাহ পাক ইল্মে গইব(অদৃশ্যের জ্ঞান) দান করেন। যেমন, হযরত খিযির আলাইহিস্ সালাম সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
وعلمنه من لدنا علما.
অর্থঃ- “আমি তাঁকে ইল্মে লাদুন্নী দান করেছি।” (সূরা কাহফ্/৬৫)
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের মতে, হযরত খিযির আলাইহিস্ সালাম একজন ওলীআল্লাহ। তাঁকে মহান আল্লাহ পাক ইলমে লাদুন্নী বা খোদায়ী ইল্ম তথা ইলমে গইব দান করেছেন। এ আয়াত শরীফের প্রেক্ষিতে ইমাম-মুজতাহিদগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, ওলী আল্লাহগণকে ইলমে গইব বা অদৃশ্যের জ্ঞান দান করা হয়েছে। এ সম্পর্কে “মিশকাত শরীফের” শরাহ্ “মিরকাত শরীফে” উল্লেখ আছে,
العبد ينقل فى الاحوال حتى يصير الى نعت الروحانية فيعلم الغيب.
অর্থঃ- “যখন বান্দার আধ্যাত্মিক অবস্থার পরিবর্তন হয় তখন বান্দা রূহানীয়তের গুণ প্রাপ্ত হন এবং গইব সম্পর্কে অবগত হন।”
يطلع العبد على حقائق الاشياء ويتجلى له الغيب و غيب الغيب.
অর্থঃ- “কামিল বান্দা সমস্ত বস্তুর হাক্বীক্বত বা নিগূঢ় তত্ত্ব ও রহস্য সম্পর্কে অবগত হন এবং তাঁর নিকট غيب الغيب অদৃশ্যের অদৃশ্য বিষয়ও প্রকাশিত হয়ে যায়।”
“কিতাবুল ই’লাম” ও “সুল্লুল হুস্সাম” কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
الخواص يجوز ان يعلم الغيب فى قضية اوقضاء كما وقع لكشير منهم واشتهر.
অর্থঃ- “বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ তথা আউলিয়ায়ে কিরাম রহ্মতুল্লাহি আলাইহিমগণ কোন ঘটনা বা সিদ্ধান্তের ব্যাপারে গইবী ইল্ম জানেন বা অর্জন করেন, এটা গ্রহণযোগ্য। যেমন, অনেক আউলিয়ায়ে কিরাম রহ্মতুল্লাহি আলাইহিমগণ কর্তৃক এমন ঘটনা সংগঠিত হয়েছে এবং তা প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।”
“শরহে মাওয়াহিব” কিতাবে উল্লেখ আছে,
قال فى لطائف المنن اطلاع العبد على غيب من غيوب الله بد ليل خبر اتقوا فراسة المؤمن فانه ينظر بنور الله لايستغرب وهو معنى كنت بصره الذى يبصربه من الحق يصره فاطلاعه على الغيب لا يستغرب.
অর্থঃ- “লাতায়িফুল মিনান” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, কোন কামিল বান্দা বা হক্কানী ওলীআল্লাহগণ আল্লাহ পাক-এর পক্ষ থেকে কোন অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান বা ইলমে গইবলাভ করা আশ্চর্যের বিষয় নয়। এটা হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। যা হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, “মু’মিনের অর্ন্তদৃষ্টিকে ভয় কর। কেননা তাঁরা আল্লাহ পাক-এর নূরের দ্বারা অবলোকন করেন।” এক হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “আমি তাঁর চোখ হয়ে যাই যদ্বারা তিনি দেখেন। সুতরাং তাঁর দেখা আল্লাহ পাক-এর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত অসাধারণ শক্তির বলেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। তাই তাঁর গইব সম্পর্কে অবগত হওয়াটা বিস্ময়কর কোন ব্যাপার নয়।”
উপরোক্ত বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক হচ্ছেন আলিমুল গইব অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক বিনা মধ্যস্থতায় ইল্মে গইবের অধিকারী।
আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন, مطلع على الغيب. “মুত্তালা’ আলাল গইব।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবকে পরিপূর্ণ ইল্মে গইব দান করেছেন।
শুধু তাই নয়, বরং পূর্ববর্তী সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ এবং হক্কানী ওলীআল্লাহগণকেও মহান আল্লাহ পাক ইলমে গইব দান করেছেন বা করেন। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা। এ আক্বীদাই সকলকে পোষণ করতে হবে। এর খিলাফ বা বিপরীত আক্বীদা পোষণ করা গোমরাহী ও কুফরীর নামান্তর।
{দলীলসমূহঃ (১) তাফসীরে খাযিন, (২) বাগবী, (৩) রুহুল বয়ান, (৪) জালালাইন, (৫) সাবী, (৬) আযীযী, (৭) কবীর, (৮) জুমাল, (৯) বাইযাবী, (১০) মায়ালিমুত্ তানযীল, (১১) হুসাইনী, (১২) বুখারী শরীফ, (১৩) মুসলিম শরীফ, (১৪) আবূ দাউদ শরীফ, (১৫) তিরমীযী শরীফ, (১৬) আহমদ, (১৭) কানযুল উম্মাল, (১৮) মিশকাত শরীফ, (১৯) ইরওয়াউল গলীল, (২০) দাইলামী, (২১) ত্ববারানী, (২২) ইবনে আবি শাইবা, (২৩) আবূ ইয়া’লা, (২৪) কানযুল উম্মাল, (২৫) ফতহুল বারী, (২৬) উমদাতুল ক্বারী, (২৭) মিরকাত, (২৮) আশয়াতুল লুময়াত, (২৯) লুময়াত, (৩০) তালীকুছ ছবীহ, (৩১) ত্বীবী, (৩২) মুযাহিরে হক্ব, (৩৩) মাকতুবাত শরীফ, (৩৪) ফুতুহাতে আহমদীয়া, (৩৫) আফদ্বালুল ক্বোরা, (৩৬) ক্বাছীদায়ে র্বুদা, (৩৭) মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, (৩৮) মাদারিজুন্ নুবুওওয়াত, (৩৯) শরহে মাওয়াহিব, (৪০) কিতাবুল ই’লাম, (৪১) সুল্লুল হুস্সাম, (৪২) জামউন্ নিহায়া, (৪৩) লুগাতুল হাদীছ ইত্যাদি }
(বিঃ দ্রঃ- ইলমে গইব সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় পরবর্তীতে বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করা হবে ইনশাআল্লাহ।)
মুছাম্মত নূরবানু বেগম
চিলমারী, কুড়িগ্রাম
সুওয়ালঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কোন সময় অথবা যে কোন স্থানে হাযির ও নাযির হতে পারেন কি-না? দয়া করে দলীল-আদিল্লাহ্সহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো, আল্লাহ পাক ইল্ম ও কুদরতের দ্বারা হাযির ও নাযির। জাত হিসেবে নন।
আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক প্রদত্ত ক্ষমতায় ছিফত হিসেবে হাযির ও নাযির এবং জাত হিসেবে যে কোন সময়, যে কোন স্থানে স্ব-শরীর বা মেছালী শরীরে হাযির ও নাযির হতে পারেন ও হয়ে থাকেন।
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাযির ও নাযির সম্পর্কে বুঝতে হলে, প্রথমেই বুঝতে হবে, আল্লাহ পাক-এর হাযির- নাযির হওয়া সম্পর্কে।
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
انه بكل شئ محيط.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ পাক) সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন।” (সূরা হা-মীম সিজদা/৫৪)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ব্যতীত যত কিছু আল্লাহ পাক-এর কায়িনাতে আছে তা সবই কুদরতী ভাবে আল্লাহ পাক-এর বেষ্টনীতে রয়েছে। আল্লাহ পাক-এর ক্ষমতা বা কুদরত এর বাইরে কোন কিছু নেই। সুতরাং আল্লাহ পাক ইল্ম ও কুদরতের দ্বারা সমগ্র কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির।”
এ প্রসঙ্গে তাজুল মুফাস্সিরীন, শাইখুল ওলামা আল্লামা ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “আহকামুল কুরআন লিল আরাবী”-এর ১ম জিঃ ৩৫ পৃষ্ঠায় লিখেন,
انه فى كل مكان بعلمه وقدرته.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ পাক) তাঁর ইল্ম ও কুদরতের দ্বারা সমস্ত স্থানে রয়েছেন।”
“তাফসীরে মাওয়াহিবুর রহমান” -এর ৮ম জিঃ ৩১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………….
অর্থঃ- “মহান আল্লাহ পাককে হাযির-নাযির জানার এটাই অর্থ যে, মহান আল্লাহ পাক তাঁর সৃষ্টি জগতের প্রত্যেক সৃষ্টির কার্যসমূহ পূর্ণরূপেই দেখেন এবং তাঁর ইল্ম সর্বত্র বিরাজমান।
আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাযির ও নাযির হওয়া সম্পর্কে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া হলো, “তিনি আল্লাহ পাক-এর প্রদত্ত্ব ক্ষমতায় ছিফত হিসেবে সর্বত্র হাযির-নাযির।”
আল্লাহ পাক বলেন,
وما ارسلنك الا رحمة للعلمين.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সমস্ত আলমের জন্য রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছি।” (সূরা আম্বিয়া/১০৭)
তিনি আরো বলেন,
ورحمتى وسعت كل شئ.
অর্থঃ- “আর আমার রহমত সবকিছুকে বেষ্টন করে আছে।” (সূরা আ’রাফ/১৫৬) অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর রহমত নেই এমন কোন স্থান তাঁর কায়িনাতের মধ্যে কোথাও নেই। সুতরাং আল্লাহ পাক প্রদত্ত ক্ষমতায় রহমত হিসেবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবকিছুতে বিরাজমান।
আর হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
اول ما خلق الله نورى وكل شىء من نورى.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আমার নূর থেকেই সমস্ত কায়িনাত সৃষ্টি করেছেন।” (দাইলামী শরীফ) অর্থাৎ নূর হিসেবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বত্র ব্যাপৃত।
আল্লাহ পাক ব্যতীত যত কায়িনাত বা মাখলুকাত আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেছেন, তা সবই নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বারা সৃষ্টি। সুতরাং নূর হিসাবেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অস্তিত্ব মুবারক সমস্ত কায়িনাতে রয়েছে।
সেজন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا دخل المسجد صلى على محمد وسلم وقال رب اغفرلى ذنوبى وافتح لى ابو اب رحمتك واذا خرج صلى على خحمد وسلم وقال رب اغفرلى ذنوبى وافتح لى ابواب فضلك.
অর্থঃ-”রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন নিজের উপর নিজে ছলাত-সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেন, হে আমার রব! আমার উম্মতের গুনাহ্সমূহ ক্ষমা করুন এবং আমার উম্মতের জন্য রহমতের দরজা খুলে দিন। আর যখন মসজিদ হতে বের হতেন তখন নিজের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করে বলতেন, হে আমার রব! আমার উম্মতের গুণাহ্সমূহ ক্ষমা করুন এবং আপনার ফযল-করমের দরজা খুলে দিন।” (তিরমিযী শরীফ)
মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ “মিরকাত শরীফে” আল্লামা হযরত ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
قال الغز الى سلم عليه اذا دخلت فى المسجد فانه عليه السلام يحضر فى المسجد.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, আপনি যখন মসজিদে প্রবেশ করবেন তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লামকে সশ্রদ্ধ সালাম দিবেন। কারণ তিনি মসজিদসমূহে হাযির আছেন।”
“আশয়াতুল লুমুয়াত” গ্রন্থের কিতাবছ্ ছালাত-এর তাশাহুদ অধ্যায়ে ও ‘মাদারিজুন্ নুবুওওয়াত” গ্রন্থের ১ম খন্ডের ১৩৫ পৃষ্ঠায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফাযায়েলের বর্ণনা প্রসঙ্গে হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………….
অর্থঃ- “কোন কোন আরিফ ব্যক্তি বলেছেন, তাশাহুদে ‘আস্সালামু আলাইকা আইয়্যূহান্ নাবিয়্যূ’ বলে হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করার রীতির এ জন্যই প্রচলন করা হয়েছে যে, ‘হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মূল সত্ত্বা সৃষ্টিকুলের অনু-পরমাণূতে এমনকি সম্ভবপর প্রত্যেক কিছুতেই ব্যাপৃত। সুতরাং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযীগণের সত্ত্বার মধ্যে বিদ্যমান ও হাযির আছেন। নামাযীর এ বিষয়ে সচেতন হওয়া বা এ বিষয়ের প্রতি অমনোযোগী না হওয়াই বাঞ্ছনীয়, যাতে নামাযী নৈকট্যের নূর লাভে ও মারিফাতের গুপ্ত রহস্যাবলী উন্মোচনে সফলকাম হতে পারে।
“ফতহুল কবীর” ১ম খন্ডের, ৩৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, হযরত ত্ববরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত নঈম ইবনে ওমর রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
ان الله قد رفع لى الدنيا فانا انظر اليها والى ما هو كانن فيها الى يوم القيامة كانما انظر الى كفى هذه.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক এই পৃথিবীকে আমার চোখের সামনে এরূপভাবে রেখেছেন যে, আমি এ সমগ্র পৃথিবীকে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার মধ্যে যা কিছু সৃজিত হবে তদসমূহকে এমনভাবে দেখি যেন তা সবই আমার হাতের মধ্যে।”
সুপ্রসিদ্ধ “মাজমাউল বারাকাত” গ্রন্থে শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,
وى عليه السلام بر احوال واعمال امت مطلع است بر مقربان وخاصان دركاه خود مفيض وحاضر و ناظر است.
অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ উম্মতের যাবতীয় অবস্থা ও আমল সম্পর্কে অবগত এবং তাঁর মহান দরবারে উপস্থিত সকলকেই ফয়েজ প্রদানকারী ও ‘হাযির ও নাযির।”
হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর স্বরচিত “মাদারিজুন নুবুওওয়াত” গ্রন্থে লিখেছেন,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………….
অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্মরণ করুন, তাঁর প্রতি দরূদ পেশ করুন, তাঁর যিকির করার সময় এমনভাবে অবস্থান করুন যেন তিনি আপনার সামনে জীবিতাবস্থায় উপস্থিত আছেন, আর আপনি তাঁকে দেখছেন। আদব, মর্যাদা ও শ্রদ্ধা অক্ষুন্ন রেখে ভীত ও লজ্জিত থাকুন এবং এ ধারণা পোষণ করবেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে দেখছেন, আপনার কথাবার্তা শুনছেন। কেননা তিনি আল্লাহ পাক-এর গুণাবলীতে গুণান্বিত। আল্লাহ পাক-এর একটি গুণ হচ্ছে, আমি (আল্লাহ পাক) আমার স্মরণকারীর সঙ্গে অবস্থান করি।”
আল্লাহ পাক স্বীয় বান্দাদেরকে আল্লাহ পাক-এর রঙ-এ রঙীন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেজন্য স্বয়ং আল্লাহ পাকই তাঁর খাছ খাছ বান্দাদেরকে তাঁর কিছু খাছ বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। যেমন, বান্দা رحيم (দয়ালু), غفور (ক্ষমাশীল), ستار (দোষ গোপনকারী) ইত্যাদি গুণের অধিকারী হয়। অনুরূপ আল্লাহ পাক-এর একটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহ পাক হাদীছে কুদসীতে বলেন,
انا معه اذا ذكرنى.
অর্থঃ- “বান্দা যখন আমাকে স্মরণ করে আমি তার সাথেই থাকি।”
আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও উক্ত খাছ বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও সেই ক্ষমতা দান করেছেন যে, তিনি তাঁর ছানা-ছিফত বর্ণনাকারীদের ও ছলাত-সালাম পাঠকারীদের মজলিসে উপস্থিত হন ও হতে পারেন।
আল্লামা হযরত ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি “শরহে শিফা” গ্রন্থে বলেছেন,
لان روح النبى صلى الله عليه وسلم حاضر فى بيوت اهل الاسلام.
অর্থঃ- “কেননা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র রূহ মুসলমানদের ঘরে ঘরে হাযির বা উপস্থিত।”
“সুলূকু আকরাবুছ্ ছুবুল বিত্ তাওয়াজ্জ্ুেহ ইলা সাইয়্যিদির রুসূল” গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………….
অর্থঃ- “উলামায়ে কিরাম উম্মতের মধ্যে বিভিন্ন মতাদর্শ ও বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য থাকা সত্বেও এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রকৃত জীবনেই (কোন রূপ রূপক ও ব্যবহারিক অর্থে যে জীবন তা নয়) স্থায়ীভাবে বিরাজমান ও বহাল তবীয়তে আছেন। তিনি উম্মতের বিশিষ্ট কর্মকান্ড সম্পর্কে জ্ঞাত ও সেগুলোর প্রত্যক্ষদর্শীরূপে বিদ্যমান তথা ‘হাযির-নাযির।’ তিনি হাক্বীক্বত অন্বেষণকারী ও মহান দরবারে নুবুওওয়াতের শরণাপন্নদের ফয়েজদাতা ও অভিভাবক হিসেবে বিদ্যমান।”
হযরতুল আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি “ইনতিবাহুল আয্কিয়া ফি হায়াতিল আউলিয়া” নামক গ্রন্থের ৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
النظر فى اعمال امته والاستغفار لهم من السيئات والدعاء بكشف البلاء عنهم والتردد فى اقطار الارض والبر كة فيها وحضور جنازة من صالحى امته فان هذه الامور من اشغاله كما وردت بذلك الحديث والاثار.
অর্থঃ- “উম্মতের বিবিধ কর্ম-কাণ্ডের প্রতি দৃষ্টি রাখা, তাদের পাপরাশি ক্ষমা করানো, তাদেরকে বালা-মুছিবত থেকে রক্ষা করার জন্য দু’আ করা, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে আনাগোনা করা ও বরকত দান করা এবং নিজ উম্মতের কোন নেক বান্দার ওফাত হলে তাঁর জানাযাতে অংশগ্রহণ করা এগুলো হচ্ছে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যস্ততার কাজ। অসংখ্য হাদীছ শরীফ থেকেও এসব কথার সমর্থন পাওয়া যায়।”
শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর স্বরচিত “মাদারিজুন নুবুওওয়াত” গ্রন্থের ২য় খন্ডের ৪৫০ পৃষ্ঠায় হায়াতে আম্বিয়া শীর্ষক পরিচ্ছদে উল্লেখ করেন,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………….
অর্থঃ- “এরপর যদি বলা হয় যে, আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র শরীর মুবারকে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করেছেন ও এমন এক শক্তি দান করেছেন যে, তিনি যেখানে ইচ্ছা করেন সেখানে স্ব-শরীরে বা অনুরূপ কোন শরীর ধারণ করে অনায়াসে গমণ করতে পারেন। কবরের মধ্যে হোক বা আসমানের উপর হোক এ ধরণের কথা সঠিক ও বাস্তব সম্মত। তবে, সর্বাবস্থায় রওযা মুবারকের সাথে বিশেষ সম্পর্ক বজায় থাকে।”
আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাত হিসেবে যে কোন সময় যে কোন স্থানে স্বশরীরে বা মেছালী শরীরে হাযির ও নাযির হতে পারেন বা হয়ে থাকেন।
“তাফসীরে রুহুল বয়ান” কিতাবে সূরা মুলূকের শেষে বর্র্ণিত আছে,
قال الامام الغزالى والرسول عليه السلام له الخيار فى طواف العالم مع ارواح الصحابة لقد راه كثير من الاولياء.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর রূহসহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জগতে পরিভ্রমণের ইখতিয়ার আছে বিধায় আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাঁকে দেখে থাকেন।”
হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,
ارباب قلوب مشاهده مى كنند دربيدارى انبياء وملائكه راو همكلام مى شوند بايشار.
অর্থঃ-”খোদায়ী নূরে আলোকিত অন্তর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ জাগ্রত অবস্থায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ফেরেশ্তাগণকে দেখতে পান, তাঁদের সাথে কথাবার্তাও বলেন।”
হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি “কাসিদায়ে নু’মান” নামক প্রশংসামূলক কাব্য গ্রন্থে বলেছেন,
واذا سمعت فعنك قولا طيا واذا نظرت ولاارى الاك.
অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে তিনি বলেছেন, “হে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যখনই আমি কিছু শুনি; শুধু আপনার প্রশংসাই শুনি আর যখন কোন দিকে তাকাই তখন আপনি ছাড়া আর কিছুই আমার দৃষ্টিগোচর হয়না।”
হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি কুফা নগরে অবস্থানকালীন সময় চতুর্দিকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখতে পেতেন।
“তবাকাত” কিতাবের ২য় খন্ডের, ১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
لى اربعون سنة ما حدبت عن رسول الله صلى الله عليه وسلم لو حجبت طرفة عين ما اعددت نفسى من جملة المسلمين.
অর্থঃ- “হযরত আবুল আব্বাস মারাসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, আজ চল্লিশ বৎসর ব্যাপী আমি রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দর্শন হতে বঞ্চিত হইনি। যদি এক নিমেষও তাঁর দর্শন হতে বঞ্চিত হতাম তাহলে আমি নিজেকে মুসলমান বলে পরিগণিত করতাম না।”
মাওলানা আব্দুল হাই রহমতুল্লাহি আলাইহি “তরবিহুল জানান তাশরীহি হুকমি শরবিদ্ দুখান” নামক রিসালায় লিখেছেন, “জনৈক ব্যক্তি নাতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠ করতো এবং হুক্কাও পান করতো। সে একদিন স্বপ্নে দেখল যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন, “যখন তুমি মীলাদ শরীফ পাঠ কর তখন আমি মাহ্ফিলে উপস্থিত হই। কিন্তু যখনই হুক্কা আনা হয় তখন আমি বিলম্ব না করে মাহ্ফিল থেকে ফিরে যাই।”
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………….
অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মীলাদ শরীফের মাহ্ফিলে হাযির জানা শর্ত নয়, তবে আল্লাহ পাক প্রদত্ত ক্ষমতায় হাযির জানা র্শিক নয়। অন্যথায় র্শিক হবে।” (ফতওয়ায়ে রশীদিয়া/ ১০৩) অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ পাক প্রদত্ত ক্ষমতায় হাযির জানা জায়িয রয়েছে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হলো যে, দুনিয়াস্থিত অনু-পরমানুর প্রতিও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সার্বক্ষণিক দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে। আর নামায, তিলাওয়াতে কুরআন শরীফ, ছলাত-সালাম, মাহ্ফিলে মীলাদ শরীফ পাঠ, না’তে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠের মাহ্ফিলে বিশেষ করে নেককারদের নামাযে জানাযায় এক কথায় যে কোন সময়, যে কোন অবস্থায়, যে কোন স্থানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ব-শরীরে বা মেছালী শরীরে তাশরীফ আনয়ন করতে পারেন এবং করেও থাকেন। তবে একথা সর্বসিদ্ধ যে, এটা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এখতিয়ারের মধ্যে। তিনি কারো অধীন নন। তিনি একমাত্র আল্লাহ পাক-এর অধীন।
আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো, আল্লাহ পাক ইল্ম ও কুদরতের দ্বারা হাযির ও নাযির। জাত হিসেবে নয়।
আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক প্রদত্ত ক্ষমতায় ছিফত হিসেবে হাযির ও নাযির এবং জাত হিসেবে যে কোন সময়, যে কোন স্থানে স্ব-শরীর বা মেছালী শরীরে হাযির ও নাযির হতে পারেন ও হয়ে থাকেন।
(এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৯৪তম সংখ্যা পাঠ করুন।)
{দলীলসমূহঃ – (১) আহকামুল কুরআন লিল আরাবী, (২) মাওয়াহিবুর রহমান, (৩) তাফসীরে আযীযী, (৪) রুহুল বয়ান, (৫) কবীর, (৬) খাযিন, (৭) কুস্তলানী শরহে বুখারী, (৮) তাবরানী, (৯) আবূ নঈম, (১০ বাইহাক্বী, (১১) হাকিম, (১২) মিরকাত, (১৩) আশয়াতুল লুময়াত, (১৪) মাদারিজুন নুবুওওয়াত, (১৫) শরহে শিফা, (১৬) ফতহুল কবীর, (১৭) মাওয়াহিব, (১৮) ইহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন, (১৯) মাজমাউল বারাকাত, (২০) ইনতেবাহুল আয্কিয়া ফি হায়াতিল আউলিয়া, (২১) সুলূকু আকরাবুছ্ ছুবুল বিত্ তাওয়াজ্জ্ুেহ ইলা সাইয়্যিদির রুসূল, (২২) নাসীমুর রিয়াদ, (২৩) আওয়ারিফুল মা’আরিফ, (২৪) মাদখাল, (২৫) শরহে ফতহুল গইব, (২৬) তরবিহুল জানান তাশরীহি হুকমি শরবিদ্ দুখান, (২৭) কাছিদায়ে নু’মান, (২৮) তাবাকাত, (২৯) শামী, (৩০) দুররুল মুখতার, (৩১) হাদিকায়ে নাদিয়া, (৩২) ইনসানে কামিল, (৩৩) মাসালিকুল হুনাফা, (৩৪) শরহে ইনায়া, (৩৫) শরহে ফিক্হে আকবর, (৩৬) ইওয়াকীত, (৩৭) শরহে ফুসূসুল হিকাম আফেন্দী, (৩৮) শরহে ছুদূর, (৩৯) তা’রীফু আহ্লিল ইসলাম ওয়াল ঈমান, (৪০) তানবীর, (৪১) শরহে ফুসুস, (৪১) তাওহীদ, (৪৩) জাওয়াহির, (৪৪) মায়ারিফে মুহম্মদী, (৪৫) আত্তাম্বিহাত ফি হাক্বীক্বাতে সাইয়্যিদুস্ সায়াদাত, (৪৬) আন্ নি’মাতুল কুবরা, (৪৭) জাওয়াহিরুল মায়ানী, (৪৮) মাওয়াক্বিফ, (৪৯) হকিকতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী, (৫০) ইমদাদুল মুস্তাক, (৫১) ফতওয়ায়ে রশীদিয়া, (৫২) ইমদাদুস্ সুলূক ইত্যাদি।}
[ বিঃ দ্রঃ- এ বিষয়ে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করা হবে ইনশাআল্লাহ।]
মুহম্মদ হাসান
শেওড়াপাড়া, মিরপুর, ঢাকা
সুওয়ালঃ মাশহুর ও হক্ব সিলসিলার একজন নাহক্ব নাতি প্রায়ই তার বক্তব্যে, হ্যান্ডবিল-পোস্টারে ও চটি রেসালার মধ্যে বলে থাকে ও লিখে থাকে, “কাফিরের বাচ্চা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম।” অর্থাৎ সে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতাকে কাফির বলে থাকে। এটা কতটুকু সঠিক ও শরীয়তের দৃষ্টিতে উক্ত ব্যক্তির হুকুম কি?
জাওয়াবঃ সুওয়ালে বর্ণিত উক্ত ব্যক্তি সত্যিই মাশহুর ও হক্ব সিলসিলার একজন নাহক্ব নাতি। সে মূলতঃ চির লা’নতগ্রস্থ, কাট্টা কাফির কাবিল ও কেনানের হাক্বীক্বী অনুসারী ও ওয়ারিছ হওয়ার কারণেই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমল বাদ দিয়ে বাতিল ফিরক্বা বা বাতিলপন্থীদের কুফরীমূলক আক্বীদা ও আমল গ্রহণ করে নিজেই নিজেকে বাতিলপন্থী হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ পাক-এর খলীল, জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতা ছিলেন পরিপূর্ণ ধার্মিক, আল্লাহ পাক-এর মতের ও পথের পরিপূর্ণ অনুসারী একজন খালিছ ঈমানদার।
আরেকদিকে তিনি ছিলেন, আল্লাহ পাক-এর রুববিয়্যত প্রকাশের ওসীলা। সমগ্র মাখলুকাত বা কায়েনাত সৃষ্টির মূল উৎস নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একজন মহাপবিত্র ধারক-বাহক।
হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম থেকে শুরু করে যে সকল নারী-পুরুষ আলাইহিমুস্ সালামগণের মাধ্যমে নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম এবং হযরত আমিনা আলাইহাস্ সালাম পর্যন্ত পৌঁছেছে তাঁরা সকলেই ছিলেন সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ সুমহান ও মহাপবিত্র ব্যক্তিত্ব। তাঁদের মধ্যে কেউই কাফির, মুশরিক বা বেদ্বীন ইত্যাদি ছিলেননা। তাঁরা সকলেই ছিলেন পরিপূর্ণ ধার্মিক ও আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত খাছ বান্দা। মূলতঃ কুরআন শরীফে বর্ণিত আযর নামক ব্যক্তি ছিল হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর চাচা, পিতা নয়। তাঁর পিতার নাম মুবারক ছিল হযরত তারিখ আলাইহিস্ সালাম।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক বলেন,
è
واذ قال ابرهيم لابيه ازر اتتخذ اصناما الهة.
অর্থঃ- “আর যখন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম তাঁর চাচা আযরকে বললেন, আপনি কি মূর্তিকে ইলাহ্ (মা’বুদ) হিসেবে গ্রহণ করছেন?” (সূরা আনআম/৭৪)
এ আয়াত শরীফে ابيه ازر -এর শাব্দিক অর্থ তাঁর পিতা আযর। কিন্তু ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়া-ই-কিরামগণের সর্বসম্মত মতে, এখানে ابيه অর্থ তাঁর চাচা। অর্থাৎ ابا (আবুন) শব্দের অর্থ পিতা না হয়ে এর অর্থ হবে চাচা। কারণ, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের অনেক স্থানেই اب (আবুন) শব্দটি পিতা ব্যতীত অন্য অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে।
আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
ام كنتم شهداء اذ حضر يعقوب الموت اذ قال لبنيه ما تعبدون من بعدى قالوا نعبد الهك واله ابائك ابرهيم واسمعيل واسحق الها واحدا.
অর্থঃ- “তোমরা কি উপস্থিত ছিলে? যখন হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালাম-এর ইন্তিকালের সময় উপস্থিত হলো তখন তিনি তাঁর সন্তানদেরকে বললেন, ‘তোমরা আমার পর কার ইবাদত করবে? তাঁরা উত্তরে বললেন, ‘আমরা আপনার রবের এবং আপনার পূর্ব-পুরুষ (আপনার দাদা) হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম এবং (আপনার চাচা) হযরত ইসমাঈল আলাইহিস্ সালাম এবং (আপনার পিতা) হযরত ইসহাক আলাইহিস্ সালাম-এর একক রব আল্লাহ পাক-এর ইবাদত করবো।” (সূরা বাক্বারা/১৩৩)
এ আয়াত শরীফে اب (আবুন) দ্বারা দাদা, চাচা ও পিতা সকলকে বুঝানো হয়েছে। যেমন, এ সম্পর্কে বিশ্বখ্যাত তাফসীর ‘তাফসীরে মাযহারী’-এর ৩য় খণ্ডের ২৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وكان ازر على الصحيح عما لابراهيم والعرب يطلقون الاب على العم كما فى قوله تعالى نعبد الهك واله ابائك ابراهيم وسماعيل واسحاق الها واحدا.
অর্থঃ- “বিশুদ্ধ মতে, আযর ছিলো হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর চাচা। আর আরবরা চাচাকেও ব্জব্দ (আবুন) শব্দে অভিহিত করে থাকে।” যেমন আল্লাহ্ পাক বলেন, আমরা আপনার প্রতিপালক ও আপনার পূর্বপুরুষ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম, হযরত ইসমাঈল আলাইহিস্ সালাম ও হযরত ইসহাক আলাইহিস্ সালাম-এর একক প্রতিপালক আল্লাহ্ পাক-এর ইবাদত করি।”
“তাফসীরে মাযহারী” কিতাবের ৩য় খণ্ডের ২৫৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে,
والعرب يطلقون الاب على العم.
অর্থঃ- “আরববাসীরা الاب (আল আবু) শব্দটি চাচার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেন।” তাফসীরে কবীর কিতাবের ১৩তম খণ্ডের ৩৮ পৃষ্ঠায়ও অনুরূপ উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং সূরা আনআম-এর ৭৪নং আয়াত শরীফে ابيه ازر এর অর্থ হলোঃ আযর, হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর চাচা। তাঁর অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতা নয়।
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে এসেছে,
عن بن عباس رضى الله تعالى عنهما ان ابا ابراهيم عليه السلام لم يكن اسمه ازر وانما كان اسمه تارخ.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতার নাম আযর নয়। বরং তাঁর পিতার নাম মুবারক হলো হযরত তারিখ আলাইহিস্ সালাম।” (ইবনে আবি হাতিম, ইবনে কাছির- ৩/২৪৮)
ان والد ابراهيم عليه السلام ما كان مشركا وثبت ان ازر كان مشركا فوجب القطع بان والد ابراهيم كان انسانا اخر غير ازر.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতা (হযরত তারিখ আলাইহিস্ সালাম) মুশরিক ছিলেননা। বরং আযর (তাঁর চাচা) মুশরিক ছিল। কেননা, অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, নিশ্চয়ই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতা আযর নয়। বরং অন্য একজন অর্থাৎ হযরত তারিখ আলাইহিস্ সালাম।”(তাফসীরে কবীর ১৩/৩৯)
এ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
ان والد ابراهيم عليه اسلام كان تارخ وازر كان عماله والعم قد يطلق عليه اسم الاب.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর সম্মানিত পিতা ছিলো হযরত তারিখ আলাইহিস্ সালাম। আর আযর ছিলো তাঁর চাচা। এবং আম্মুন (চাচা) শব্দটি কখনও ‘ইসমুল আব’ অর্থাৎ পিতা নামে ব্যবহৃত হয়।” (তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৮)
ليس ازر ابا لابراهيم انما هو ابراهيم بن تارخ.
অর্থঃ- “আযর হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতা নয়। বরং নিশ্চয়ই তিনি (হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম) হলেন হযরত তারিখ আলাইহিস্ সালাম-এর সুযোগ্য সন্তান।” (তাফসীরে মাযহারী- ৩/২৫৬)
وفى القاموس ازر اسم عم ابراهيم عليه السلام واما ابوه فانه تارخ.
অর্থঃ- “ক্বামূস অভিধানে উল্লেখ করা হয়েছে, আযর হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর চাচার নাম। আর নিশ্চয়ই তাঁর পিতার নাম হলো হযরত তারিখ আলাইহিস্ সালাম।” (তাফসীরে মাযহারী- ৩/২৫৬)
মূলতঃ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালামসহ সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ-এর পিতা-মাতা বা পূর্বপুরুষ ছিলেন পরিপূর্ণ ঈমানদার, খালিছ মু’মিন। কেউই কাফির ছিলেন না। এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
ان اباء الانبياء ماكانوا كفارا ويدل عليه وجوه منها قوله وتقلبك فى الساجدين.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর পিতা বা পূর্বপুরুষ কেউই কাফির ছিলেননা। ”
তার দলীল হচ্ছে আল্লাহ পাক-এর এ কালাম বা আয়াত শরীফ। আল্লাহ্ পাক বলেন,
وتقلبك فى السجدين.
অর্থঃ- “তিনি আপনাকে (হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিজদাকারীদের মধ্যে স্থানান্তরিত করেছেন।” (সূরা শুয়ারা/২৯, তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৮)
প্রকাশ থাকে যে, আল্লাহ্ পাক-এর জলীলুল কদর নবী ও রসূল হযরত ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম হলেন আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্বপুরুষ।
এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
ملة ابيكم ابرهيم هو سمكم المسلمين.
অর্থাৎ- “তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর দ্বীনের উপর কায়িম থাক। তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলমান।” (সূরা হজ্ব/৭৮)
কাজেই আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদের মাধ্যমে যমীনে তাশরীফ এনেছেন অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম থেকে হযরত আব্দুল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম পর্যন্ত সকলেই ছিলেন সিজদাকারী। অর্থাৎ সকলেই নামায, কালাম, যিকির, আযকার, ইবাদত, বন্দিগীতে মশগুল ছিলেন। তাঁরা সকলেই পূর্ণ পরহেযগার, মুত্তাক্বী ও ধার্মিক ছিলেন।
এ সম্পর্কে তাফসীরে আরো বর্ণিত রয়েছে,
فالاية دالة على ان جميع اباء محمد صلى الله عليه وسلم كانوا مسلمين وحينئذ يجب القطع بان والد ابراهيم عليه السلام كان مسلما.
অর্থঃ- “উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই ছাবিত হয় যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্বপুরুষ সকলেই পরিপূর্ণ মুসলমান ছিলেন। সুতরাং এর দ্বারা অকাট্যরূপে প্রমাণিত বা সাব্যস্ত হয় যে, নিশ্চয়ই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতা মুসলমান ছিলেন।” (তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৮)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات.
অর্থঃ- “আমি সর্বদা পুত-পবিত্র নারী ও পুরুষদের মাধ্যমেই স্থানান্তরিত হয়েছি।” (তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৯)
لم يلتق ابوى قط على سفاح.
অর্থঃ- “আমার পিতা-মাতা (পূর্বপুরুষ) কেউই কখনও কোন অন্যায় ও অশ্লীল কাজে জড়িত ছিলেন না।” (কানযুল উম্মাল, ইবনে আসাকীর বারাহিনে কাতিয়া)
অন্য হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
بعثت من خير قرون بنى ادم قرنا فقرنا حتى بعثت من القرن الذى كنت فيه.
অর্থঃ- “আমি আদম সন্তানদের মধ্যে সর্বোত্তম সম্প্রদায়ের মধ্যেই সর্বদা প্রেরিত হয়েছি। এমনকি আমি যে (কুরাইশ) সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিলাম সেটাই ছিলো সর্বোত্তম সম্প্রদায়।” (বুখারী শরীফ, তাফসীরে মাযহারী ৪র্থ খণ্ড ৩০৮ পৃষ্ঠা)
এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় কিতাবে বর্ণিত হয়েছে,
فلايمكن ان يكون كافرا فى سلسلة ابائه صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিতার (পূর্ব পুরুষের) সিলসিলার মধ্যে কেউই কাফির হওয়া সম্ভব নয়।” (তাফসীরে মাযহারী ৪র্থ খণ্ড ৩০৮ পৃষ্ঠা)
এ সম্পর্কে কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,
ان احدا من اجداده ما كان من المشركين.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাপ-দাদাগণ কেউই মুশরিক ছিলেননা।” (তাফসীরে কবীর- ১৩ খণ্ড ৩৯ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য, অনেকে “সূরা মরিয়ম”-এর ৪৭নং আয়াত শরীফ ও সূরা তওবা-এর ১১৪নং আয়াত শরীফের বরাত দিয়ে বলে যে, “হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম তাঁর পিতার জন্য ইস্তিগফার করেছেন কাজেই তাঁর পিতা ঈমানদার ছিলেননা।”
মূলতঃ যারা একথা বলবে তারা উক্ত আয়াত শরীফদ্বয় এর অর্থই বুঝেনি। কারণ “সূরা মরিয়ম”-এর ৪৭নং আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক বলেন,
قال سلم عليك ساستغفر لك بى.
অর্থঃ- “হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম বলেন, আপনার প্রতি (বিদায়কালীন) সালাম, অচিরেই আমি আমার প্রতিপালক-এর নিকট আপনার জন্য মাগফিরাত কামনা করবো।” এবং “সূরা তওবার” ১১৪নং আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক বলেন,
ما كان استغفار ابرهيم لابيه الا عن موعدة وعدها اياه.
অর্থঃ- “হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম কর্তৃক স্বীয় চাচার মাগফিরাত কামনা করা ছিলো কেবল মাত্র তার সাথে ওয়াদা করার কারণে।” অর্থাৎ প্রথমতঃ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম তাঁর চাচার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, তিনি তার জন্য ইস্তিগফার করবেন। তাঁর চাচা যেন তওবা করে, র্শিকী ছেড়ে ঈমান গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যান সেজন্য দোয়া করবেন।
আর পরবর্তী “সূরা তওবা”-এর ১১৪নং আয়াত শরীফে সেই ওয়াদা পালনার্থে এবং মুশরিকদের জন্য দোয়া করা নিষেধ হওয়ার পূর্বে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম তাঁর চাচার জন্য দোয়া করেছিলেন।
যেমন, এ আয়াত শরীফের তাফসীরে এসেছে,
ان ذلك كان قبل النهى عن الاستغفار للمشرك وقد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعمه ابى طالب والله لاستغفرن لك.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর এ ইস্তিগফার কামনা করাটা ছিল মুশরিকদের জন্য দোয়া করা নিষেধ হওয়ার পূর্বের। যেমন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নিষেধ হওয়ার পূর্বে) তাঁর চাচা আবূ তালিবকে বলেছিলেন, আল্লাহ্ পাক-এর কসম! অবশ্যই আমি আপনার তওবা নছীব হওয়ার জন্য দোয়া করবো।” (তাফসীরে মাযহারী ৬/১০০)
এছাড়া হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম তাঁর চাচা আযর-এর জন্য, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চাচা আবূ তালিব-এর জন্য সরাসরি দোয়া করেননি; বরং তাদের ইস্তিগফার কামনা করেছেন। অর্থাৎ আযর ও আবু তালিব-এর যেন তওবা নছীব হয়, তারা যেন ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়, ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয় সেজন্য দোয়া করেছেন। আর তাও ছিল মুশরিকদের জন্য দোয়া নিষেধ সংক্রান্ত বিধান (আয়াত) নাযিল হওয়ার পূর্বে।
আর চাচা হিসেবে আযর হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর এবং আবূ তালিব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনেক খিদমত করেছে। তার বিনিময় স্বরূপ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম ও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ইস্তিগফার (তওবা কবুল হওয়ার দোয়া) কামনা করেছেন।
এ সম্পর্কে তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে,
وما كان استغفار ابراهيم لابيه يعنى ازر وكان عما لابراهيم عليه السلام وكان ابراهيم بن تارخ.
অর্থঃ- “হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম তাঁর পিতার জন্যে ইস্তিগ্ফার করেন। অর্থাৎ আযরের জন্যে ইস্তিগফার করেন। আযর ছিল হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর চাচা। আর হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম ছিলেন হযরত তারিখ আলাইহিস্ সালাম-এর ছেলে।” (তাফসীর মাযহারী ৪ খণ্ড ৩০৮ পৃষ্ঠা)
এ কথা বিশেষভাবে স্মরনীয় ও প্রণিধানযোগ্য যে, সকল ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এ বিষয়ে ইজমা বা সর্বসম্মত ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীর মুবারকে বা পা মুবারকে রওযা শরীফের যে মাটি মুবারক এবং যমীনের যে মাটি মুবারক স্পর্শ করেছে তা আরশে মুআল্লা’র চাইতে লক্ষ-কোটি গুণ বেশী মর্যাদাবান। (সুবহানাল্লাহ)
তাহলে নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মূল অজুদ মুবারক তা যাদের মাধ্যম হয়ে পর্যায়ক্রমে স্থানান্তরিত হয়ে যমীনে আগমন করেছেন সেই সকল ব্যক্তিগণের মর্যাদা কত বেমেছাল হবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর মহান শানে এরূপ কুফরীমূলক উক্তি করার অর্থ হলোঃ আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক শানে চরম ধৃষ্ঠতা প্রদর্শণ করা। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। আরো উল্লেখ্য, যে পবিত্র নসব-নসল সূত্রে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ আনেন তাঁদের পূর্ব-পুরুষদের নসব-নসলনামায় ‘কেউ কেউ ঈমানদার ছিলেননা’ এটা কল্পনা বা ধারণা করাও কাট্টা কুফরী এবং দুনিয়া-আখিরাত উভয় জাহানে চির লা’নতগ্রস্ত হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনায় এটাই ছাবিত হল যে, আল্লাহ্ পাক-এর নবী ও রসূল হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতা হাক্বীক্বী পরহেযগার, মুত্তাক্বী, পরিপূর্ণ ঈমানদার ও মুসলমান ছিলেন। তাঁর নাম মুবারক ছিল হযরত তারিখ আলাইহিস্ সালাম। আর আযর নামক ব্যক্তি ছিল তাঁর চাচা। আরো প্রমাণিত হলো যে, পূর্ববর্তী সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের পূর্বপুরুষগণ এবং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্বপুরুষ হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম থেকে শুরু করে হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম পর্যন্ত সকলেই ছিলেন পুত-পবিত্র, পূর্ণ ধার্মিক ও পরিপূর্ণ মুসলমান।
সুতরাং যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক-এর খলীল হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর প্রতি এরূপ কুফরীমূলক বক্তব্য পেশ করবে ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী তার উপরে মুরতাদের হুকুম বর্তাবে। অর্থাৎ সে ইসলাম বা মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে যাবে। ইসলামী খিলাফত থাকলে তাকে তিনদিন সময় দেয়া হতো তওবা করার জন্য। তিনদিনের মধ্যে তওবা না করলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সে মারা গেলে তার জানাযা পড়া জায়িয হবে না। তাকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না; বরং তাকে কুকুর-শৃগালের মত মাটিতে পুতে রাখতে হবে। তার জীবনের সমস্ত নেক কাজ বাতিল হয়ে যাবে। তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে এবং সে হজ্জ করে থাকলেও তা বাতিল হয়ে যাবে।
{দলীলসমূহঃ (১) তাফসীরে মাযহারী, (২) ইবনে কাছীর, (৩) ইবনে আবী হাতিম, (৫) কবীর, (৬) আহকামুল কুরআন, (৭) আহমদী, (৮) তাফসীরে বাইযাবী, (৯) বয়ানুল হক্ব, (১০) মাআলিমুত্ তানযীল, (১১) তাফসীরে জালালাইন, (১২) বুখারী, (১৩) মুসলিম, (১৪) তিরমিযী, (১৫) বাইহাক্বী, (১৬) মিশকাত, (১৭) মুস্তাদরাকে হাকিম, (১৮) ত্ববারানী, (১৯) কামূস, (২০) ফতহুল বারী,(২১) উমদাতুল ক্বারী, (২২) মিরকাত, (২৩) আশয়াতুল লুময়াত, (২৪) লুময়াত, (২৫) তা’লীকুছ ছবীহ্,(২৬) শরহুত্ ত্বীবী, (২৭) মুযাহিরে হক্ব,(২৮) ফতহুল মুলহিম, (২৯) শরহে নববী, (৩০) আহমদ, (৩১) ইবনে আসাকির, (৩২) ইবনে মারদুয়া, (৩৩) তাক্বদীসু আবাইন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, (৩৪) দুররুল মুখতার, (৩৫) ফিকহুল আকবর, (৩৬) শরহুশ্ শিফা, (৩৭) শুমুলুল ইসলাম লি উছূলির রসূলিল কিরাম, (৩৮) আকাইদে নিজামিয়া, (৩৯) কাছাছূল আম্বিয়া, (৪০) কাছাছূল কুরআন, (৪১) কুরআন কাহিনী, (৪২) কিতাবুদ্ দারাযিল, (৪৩) মাওয়াহিব-ই-লাদুন্নিয়া, (৪৪) শাওয়াহিদুন্ নবুওওয়াহ, (৪৫) কিছাছে আম্বিয়া, (৪৬) মাআতালিউন নূর, (৪৭) আল মুসতালিদ, (৪৮) বারাহিনে ক্বাতিয়া ইত্যাদি।}
মুহম্মদ রুহুল আমীন বিশ্বাস
ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম।
সুওয়াল: মীলাদ-এর অর্থ কি? আমরা যেভাবে মজলিস করে মীলাদ শরীফ-এর মাহফিল করি তা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্বিংবা হযরত, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের যামানায় ছিল কিনা?
জাওয়াব: ‘মীলাদ’ শরীফ যার লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হলো- জন্মের সময়। আর ইসতেলাহী অর্থ হলো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আ’লামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে ছানা-ছিফত করা ও উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করা যা আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত।
অতএব, মীলাদ শব্দের অর্থ যদি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত করা ও উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করা হয়ে থাকে, তবে তা আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ সকলেই সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
আমরা যেভাবে মজলিস করে মীলাদ শরীফ-এর মাহফিল করে তাথি তা খোদ আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানাতেই ছিল।
যেমন, এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এর ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه قال حلت لكم شفاعتى.
অর্থ:- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজগৃহে সমবেত ছাহাবীগণকে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাছবীহ-তাহলীল পাঠক করছিলেন এবং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলঅইহি ওয়া সাল্লাম উনার (ছলাত-সালাম) দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন এবং (মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে) বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى درداء رضى الله ععالى عنه انه مرمع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لابنائه وعشيرته ويقول هذا، اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.
অর্থ:- “হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামসহ আবু আমের আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয় স্বজন, জ্ঞাতী-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে তাশরীফ এনেছেন)। এতদ্বশ্রবণে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা উনার রহমতের দরজা তোমার জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ তোমার মত এরূপ কাজ করবে, তোমার মত সেও নাযাত (ফযীলত) লাভ করবে।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী. মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এছাড়াও হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ স্বয় নিজের শরীফ-এর তাকীদ করেছেন ও ফযীলত বর্ণনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ “আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
قال ابو بكرن الصديق رضى الله تعالى عنه من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم كان رفيقى فى الجنة.
অর্থ:- “হযরত আবু বরক ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার মীলাদ শরীফ পাঠ (মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপলক্ষ্যে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” (সুবহানাল্লাহ)
وقال عمر رضى الله عنه من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم فقد احيا الاسلاءسلام.
অর্থ:- “হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে (বেলাদত দিবসকে) বিশেষ মর্যাদা দিল সে মূলত: ইসলামকেই পূনরুজ্জীবিত করলো।” (সুবহানাল্লাহ)
وقال عثمان رضى الله تعالى عنه من انفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم فكانما شهد غزوة بدر وحنين.
অর্থ:- “হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে এক দিরহাম খর করল সে যেন বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীফ থাকলো।” (সুবহানাল্লাহ)
وقال على رضى الله عنه وكرم الله وجهه من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم وكان سببا لقرائته لايخرج من الدنيا الا بالايمان ويد خل الجنة بغير حساب.
অর্থ:- “হযরত আলী কারমাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সুবহানাল্লাহ)
قال معروف الكرخى قدس الله سره من هيا طعاما لاجل قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم وجمع اخوانا واوقد سراجا ولبس جديدا ةتبخر وتعطر تعظيما لمولد النبى صلى الله عليه وسلم حشره الله يوم القيامة مع الفرقة الاولى من النبيين وكان فى اعلى عليين.
অর্থ:- “হযরত ইমাম মা’রুফ কারখী কাদ্দাসাল্লাহু সিররাহু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খাদ্য প্রস্তুত করবে এবং মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে মুসলমান ভাইদেরকে একত্রিত করবে, প্রদীপ বা বাতি জ্বালাবে, নতুন পোষাক পরিধান করবে, (সুগন্ধির উদ্দেশ্যে) ধুপ জ্বালাবে এবং আতর-গোলাপ মাখবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তার হাশর-নশর করবেন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের প্রথম দলের সাথে এবং সে সুউচ্চ ইল্লীনে অবস্থান করবে।”
وقال سلطان العارفين الامام جلال الدين السيوطى قدس الله سره ونور ضريحه فى كتابه المسمى بالوسائل فى شرح الشمائل ما من بيت أومسجد أومحلة قرئ فيه مولد النبى صلى الله عليه وسلم الا حفت الملائكة ذلك البيت أو المسجد أو المحلة وصلت الملائكة على أهل ذلك المكان وعمهم الله تعالى بالرحمة والرضوان وأما المطوقون بالنور يعنى جبرائيل وميكائيل واسرافيل وعزرائيل عليهم السلام فانهم يصلون على من كان سببا لقرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থ:- “সুলতানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “ওয়ায়িল ফী শরহি শামায়িল” নামক কিতাবে বলেন, যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় বা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করা হয় সেখানে অবশ্যই আল্লাহ পাক উনার ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে নেন। আর উনারা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর আল্লাহ পাক উনাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্হিত প্রধান চার ফেরেশতা, অর্থাৎ হযরত জিব্রাঈল, মীকাঈল, ইসরাফিল ও আজরাঈল আলাইহিমুস সালাম মীলাদ শরীফ পাঠককারীর উপর বা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনকারীর উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন।” (সুবহানাল্লাহ)
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফিক্বাহর কিতাবে লিখেন,
من عظم ليلة مولده بما امكنه من التعظيم والاكرام كان من الفائزين بدار اسلام.
অর্থ:- “যে ব্যক্তি তার সাধ্য ও সামর্থ অনুযায়ী ঈদ-ই মিলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্মান করলো উনাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে সম্মানিত করা হবে।
তবে বর্তমানে যেভাবে সুনির্দিষ্ট তর্জ-তরীকায় মীলাদ মাহফিল হয় তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানাতে না থাকলেও বর্তমানে মীলাদ মাহফিলে যেসব বিষয় পাঠ করা হয় সে সবগুলোই উনার যামানাতে ছিল। যেমন, দ্বীনি তা’লীম রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানাতে ছিল এবং উক্ত তা’লীম ছিল খাছ এবং সবদি থেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। কিন্তু বর্তমান কালের মত মাদরাসার ঘর, জামায়াত, ঘণ্টা, রুটিন, সিলেবাস, কিতাবভিত্তিক পড়াশুনা ইত্যাদি সে যামানাতে ছিল না। পরবর্তীতে ব্যাপকতার কারণে ইলম শিক্ষার উক্ত বিন্যস্ত তর্জ-তরীক্বার ইস্তিজাম করা হয়েছে। মূলত মাদরাসার এই নিয়ম মাফিক শিক্ষার ব্যবস্থা এর জন্য করা হয়েছে, যাতে একজন শিক্ষার্থী অল্প দিনের মধ্যে ও সহজে ইলম হাছিলের যোগ্যতা অর্জন করতে পারে।
একইভাবে মীলাদ পাঠের নিয়ম করা হয়েছে এজন্য যে, যাতে কেউ অল্প সময়ের মধ্যে ও সংক্ষিপ্তভাবে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত করতে পারে। মীলাদ মাহফিলের ব্যাপারেও ঠিক তাই।
অতএব, মীলাদ শরীফ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনার অন্তর্ভুক্ত। এর বিরোধিতা করা কাট্টা কুফরী অন্তর্ভুক্ত।
(দলীলসমূহ: (১) তাফসীরে রুহুল বয়ান, (২) মিশকাত শরীফ, (৩) মিছবাহুয্ যুজাজাহ আলা সুনানে ইবনে মাজাহ, (৪) মিরকাত শরীফ, (৫) লুময়াত, (৬) আশয়াতুল লুময়াত, (৭) ফতহুল মুবীন শরহে আরবাঈন লি ইমাম নববী, (৮) জামিউল ফতওয়া, (৯) মজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে আযীযিয়াহ, (১০) ফতওয়ায়ে বরকতীয়া, (১১) রদ্দুল মুহতার, (১২) হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ (১৩) আহকামে শরীয়ত, (১৪) সুন্নী বেহেশতী জিওর, (১৫) জায়াল হক্ব, (১৬) কিতাবুত তানবীর ফী মাওলুদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, (১৭) সুবুলুল হুদা ফী মাওলুদিল মুস্তফা, (১৮) মাক্বাছিদ, (১৯) সীরতে শামী, (২০) সীরতে নববী, (২১) যুরক্বানী, (২২) ইমদাদুল মুশতাক্ব, (২৩) মা-ছাবাতা বিসসুন্নাহ, (২৪) আদ দুররুল মুনাজ্জাম ফী বয়ানে হুকমু মাওলুদন নাবিয়্যিল আ’যম, (২৫) সাবীলুল হুদা ওয়ার বাশাদ ফী সীরাতে খাইরিল ইবাদ, (২৬) আল ইনতিবাহ ফী সালাসিলে আওলিয়াইল্লাহ, (২৭) মিয়াতে মাসায়িল, (২৮) মিরআতুয যামান, (২৯) নি’মাতুল কুবরা, (৩০) আল মাওলুদুল কবীর, (৩১) ইশবাউল কালাম ফী ইছবাতিল মাওলুদি ওয়াল ক্বিয়াম, (৩২) আশ শিফা লি ক্বাজী আয়াজ, (৩৩) আল মুলাখখাছ, (৩৪) কিতাবুস সীরাতিল মুহম্মদিয়াহ ওয়াত তরীক্বাতিল আহমদিয়া, (৩৫) আল জাওহারুল মুনাজ্জাম, (৩৬) আল ইনসানুল উয়ুন, (৩৭) ইক্বদুল জাওহার, (৩৮) আস সুলুকুল মুয়াজ্জাম, (৩৯) ক্বিয়ামুল মিল্লাহ, (৪০) নুযহাতুল মাজলিস, (৪১) মাওয়ায়েজে আশরাফিয়া, (৪২) আশরাফুল জাওয়াব, (৪৩) মাকতুবাতে মাদানী, (৪৪) হাশিয়ায়ে হায়দারী, (৪৫) মরকুমাতে ইমদাদিয়াহ ইত্যাদি কিতাব ছাড়াও আরো বহু তাফসীর, হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবে উল্লেখ আছে।}
[বি:দ্র: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিতন উনার ২৮, ৩৬, ও ৪০তম সংখ্যাগুলো পাঠ করুন।]
সাইয়্যিদ মুহম্মদ তীতুমীর, সাতক্ষীরা
মুহম্মদ ফয়জুল্লাহ, লালমনিরহাট
মুহম্মদ নুরুল্লাহ, সিরাজগঞ্জ।
সুওয়াল: আমরা আগে আলিমগণের মুখে শুনতাম যে, টি.ভি দেখা জায়িয নেই। কিন্তু বর্তমানে দেখতে পাচ্ছি অনেক মাওলানা ছাহেবরা টি.ভিতে অনুষ্ঠান করছে। বিশেষ করে মানুষ যাদেরকে বড় মাওলানা মনে করে তারাই সেটা করছে। তাদের সে অনুষ্ঠানগুলো এ.টি.এন টিভি চ্যানেলসহ আরো অনেক চ্যানেলে প্রায়ই দেখানো হয় এবং তাতে ইসলামের অনেক শিক্ষণীয় বিষয় আছে বলে অনেকেই তা দেখে থাকে।
এছাড়া মাসিক মদীনা মে/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যার ২১নং প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, “টেলিভিশন একটি যন্ত্রমাত্র। খোলা চোখে যা কিছু দেখা জায়িয বা মুবাহ টেলিভিশনের পর্দাতেও সেগুলি দেখা জায়িয বা মুবাহ। শিক্ষণীয় কিছু দেখলে বা শুনলে পূণ্য হওয়ারই কথা। অপর দিকে পাপযুক্ত যেসব দৃশ্য দেখানো হয় সেগুলি দেখা ও শোনাতে অবশ্যই গুনাহ হবে।”
এছাড়া মাসিক মদীনা মে/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যার ২১নং প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, “টেলিভিশন একটি যন্ত্রমাত্র। খোলা চোখে যা কিছু দেখা জায়িয বা মুবাহ টেলিভিশনের পর্দাতেও সেগুলি দেখা জায়িয বা মুবাহ। শিক্ষণীয় কিছু দেখলে বা শুনলে পূণ্য হওয়ারই কথা। অপর দিকে পাপযুক্ত যেসব দৃশ্য দেখানো হয় সেগুলি দেখা ও শোনাতে অবশ্যই গুনাহ হবে।”
অনুরূপ মাসিক রাহমানী পয়গাম জুলাই/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যার এক জিজ্ঞাসার জবাবে বলা হয়েছে, “টিভি. দেখার শরয়ী মূলনীতি হলো, যে সকল বস্তু বা বিষয়াবলী (টিভির পর্দা, রেডিও ইত্যাদির মাধ্যম ছাড়া) সরাসরি দেখা ও শুনা জায়িয সেগুলো টিভির পর্দা, রেডিও ইত্যাদিতেও দেখা বা শুনা জায়িয সেগুলো টিভি পর্দা, রেডিও ইত্যাদিতেও দেখা বা শুনা জায়িয। আর যে সকল বস্তু বা বিষয়াবলী সরাসরি দেখা ও শুনা জায়িয নেই সেগুলো টিভি, রেডিও ইত্যাদিতেও দেখা-শুনা জায়িয নেই।”
এখন আমার জানার যে বিষয় তাহলো-
১. মাসিক মদীনা পত্রিকার প্রশ্নের উত্তর ও মাসিক রাহমানী পয়গাম পত্রিকার জিজ্ঞাসার জবাব শরীয়ত সম্মত হয়েছে কিনা?
২. ছবি কাকে বলে ও ছবির সংজ্ঞা কি?
৩. শরীয়তে টি.ভি দেখা জায়িয কিনা?
৪. নাজায়িয পদ্ধতিতে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা অর্থাৎ ইলমে দ্বীন শিক্ষার জন্য টিভি দেখা, শোনা ও টিভি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা শরীয়তসম্মত কিনা?
৫. (ক) নাজায়িয হলে যে সকল মাওলানা ছাহেব অনুষ্ঠান করে ও দেখে তাদের সম্পর্কে শরীয়তের ফতওয়া কি?
(খ) এদেরকে আলিম বলা যাবে কিনা?
(গ) এদের পিছনে নামায পড়া যাবে কিনা?
(ঘ) এদের ফতওয়া শরীয়তে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা?
কুরআন-সুন্নাহর দলীল সহকারে জাওয়াবদিলে খুবই উপকৃত ও খুশী হব।
জাওয়াব: সুওয়ালে বর্ণিত সুওয়ালকারীর পাঁচটি সুওয়ালের জাওয়াবই ধারাবাহিকভাবে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।
(ধারাবাহিক)
(৫) (ঘ) এদের ফতওয়া শরীয়তে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা?
এর জবাবে বলতে হয় যে- না, এদের ফতওয়া শরীয়তে গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ ইলমে দ্বীন যার তার নিকট শিক্ষা করা জায়িয নেই। কেননা হাদীছ শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক উনা হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
ان هذا العلم دين فانظروا عمن تأخذون دينكم.
অর্থ:- “নিশ্চয়ই ইলমই হচ্ছে দ্বীন। অতএব, তোমরা কার নিকট হতে দ্বীন তথা ইলম গ্রহণ করছ তাকে যাচাই-বাছাই করে নাও।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অতএব, ইলমে দ্বীন শিক্ষা গ্রহণ করতে হলে যিনি হক্কানী-রব্বানী আলিম তথা আল্লাহওয়ালা উনার কিনট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক উনার কালামে পাক-এ ইরশাদ করেন,
فسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون.
অর্থ:- “তোমরা যদি না জান তাহলে যারা আহলে যিকির (আল্লাহওয়ালা) উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।” (সূরা নহল/৪৩)
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,
اطيعوا الله واطيعوا الرسول واولى الامر منكم.
অর্থ:- “তোমরা আল্লাহ পাক উনার ইতায়াত কর এবং আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইতায়াত কর এবং যারা উলীল আমর রয়েছেন তাদের ইতায়াত কর।” (সূরা নিসা/৫৯)
এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় হযরত মুফাসসিরীনে কিরামগণ বলেন, “আল্লাহ পাক উনার আনুগত্যতা করতে হবে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্যতা করতে হবে, আর উলিল আমরগণের আনুগত্যতা করতে হবে। আর উলিল আমর হচ্ছেন তিনিই যিনি আল্লাহ পাক উনার মতে মত এবং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ অর্থাৎ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা শরীয়ত অনুযায়ী চলেন।
শরীয়তের খিলাফ কারো কোন আদেশ-নির্দেশ, মত-পথ ইত্যাদি গ্রহণ করা জায়িয নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
وان جاهدك على ان تشرك بى ما ليس لك به علم فلاتطعهما.
অর্থ:- “পিতা-মাতাও যদি আল্লাহ পাক উনার সাথে অংশী স্থাপনে বাধ্য করতে চেষ্টা করে যে সম্পর্কে তোমার ইলম নেই তবে তাদের কথাও মানা যাবে না। (সূরা লুকমান/১৫)
আর আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لاطاعة لمخلوق فى معصية الخالق.
অর্থ:- “আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী করে মখলুকাতের আনুগত্যতা করা জায়িয নেই।”
আর এ হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিছীনে কিরামগণ বলেন,
ان وجوب اطاعتهم ماداموا على الحق واذا خالفوه فلا اطاعة لهم.
অর্থ:- “অনুসরণীয় ব্যক্তিগণ যতক্ষণ পর্যন্ত হক্বের উপর থাকবেন ততক্ষণ পর্যন্ত উনাদের অনুসরণ করা ওয়াজিব। আর যদি তারা কুরআন-সুন্নাহর খিলাফ চলেন, তাহলে তাদেরকে অনুসরণ করা যাবে না।” (তাফসীরে আহমদিয়াত)
তাফসীরে উছমানীতে আছে, “যারা কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট হুকুমের খিলাফ করে, কখনোই তাদের হুকুম মান্য করা যাবে না।”
উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, হযরত মুল্লা জিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যামানায় বাদশাহ শাহজাহান একবার উনার দরবারী আলিমদের নিকট এই মর্মে ফতওয়া তলব করলেন যে, আমি অসুস্থ, অসুস্থতার কারণে আমার জন্যে রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়িয হবে কি? দরবারী আলিমরা বাদশাহর মনতুষ্টির জন্যেই হোক বা দুনিয়াবী ফায়দা লাভের জন্যেই হোক তারা ফতওয়া দিল, বাদশাহ নামদার যেহেতু আপনি অসুস্থ আর আপনি অসুস্থ আর আপনি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজ্য অচল হয়ে পড়বে, কাজেই রাজ্য ও প্রজাদের বৃহত্তর স্বার্থে আপনার জন্যে এ অবস্থায় রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়িয হবে। বাদশাহ তার দরবারী আলিমদের মৌখিক ফতওয়ায় আশ্বস্ত হতে না পেরে লিখিত ফতওয়ার নির্দেশ দিলেন। দরবারী আলিমরা বাদশাহকে এ ব্যাপারে লিখিত ফতওয়া দিল। বাদশাহ তাতেও নিশ্চিন্ত হতে পারলেন না, তাই তিনি বললেন, এ ফতওয়াতে অন্যান্য আরো আলিমের দস্তখত লাগবে। দরবারী আলিমরা তখন তাদের সমগোত্রীয় তিনশত আলিমের দস্তখত সংগ্রহ করে ফতওয়াটি বাদশাহর নিকট পেশ করলো। বাদশাহ ফতওয়াটি আদ্যপান্ত ভালরূপে পাঠ করে দেখলেন এবং বললেন যে, সেখানে তার শাহী মসজিদের যিনি খতীব (নুরুল আনোয়ার ও তাফসীরে আহমদীর ন্যায় বিশ্ববিক্যাত কিতাবের মুছান্নিফ, তৎকালীন যামানার শ্রেষ্ঠতম হক্কানী আলিম) হযরতুল আল্লামা মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দস্তখত ব্যতীত এ ফতওয়া গ্রহণযোগ্য হবেনা। তখন দরবারী আলিমরা উক্ত ফতওয়াটি হযরত মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবারে নিয়ে যায় দস্তখত নেয়ার জন্য। হযরত মোল্লা যিয়ূন রহমতুল।লাহি আলাইহি বললেন, আমি আজ এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করবোনা, এবং বাদশাহ আমার মসজিদে জুমুয়ার নামায পড়তে আসেন, সেদিন আমি বাদশাহ ও মুছল্লীগণের সম্মুখে এ ব্যাপারে ফতওয়া দিব। অত:পর জুমুয়ার দিন বাদশাহ উনার উজির-নাজিরসহ জুমুয়ার নামায পড়ার জন্যে মসজিদে উপস্থিত হলেন। অনেক মুছল্লীও উপস্থিত হলেন এবং দরবারী আলিমরাও উপস্থিত। সকলেই অপেক্ষা করছেন হযরত মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতওয়া শোনার জন্যে। ইতোমধ্যে হযরত মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি মিম্বরে উঠে বসলেন এবং বললেন, আমার নিকট তিনশত আলিমের দস্তখত সম্বলিত একটি ফতওয়া এসেছে। যাতে বলা হয়েছে যে, বৃহত্তর স্বার্থে, বাদশাহর অসুস্থতার কারণে, বাদশাহর জন্যে রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়িয। এ ব্যাপারে আমার ফতওয়া হলো,
مفتى اور مستفتى هردو كافراند.
অর্থ:- “যারা ফতওয়া দিয়েছেন এবং যে ফতওয়া চেয়েছে উভয়েই কাফির হয়ে গেছে।” কারণ, শরীয়তে হারামকে হালাল আর হালালকে হারাম বলা কুফরী।’
এরপর তিনি উনার বয়ান যথারীতি শেষ করে নামায পড়িয়ে দেন। এদিকে বাদশাহ, উজির-নাজির সকলেই নামায আদায় করে বাসায় চলে গেলেন এবং বাদশাহ দরবারে গিয়েই হযরত মুল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরওয়ানা জারী করেন। বাদশাহ আলমগীর তখন হযরত মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছাত্র ছিলেন যিনি বাদশাহ বাদশাহ শাহজাহানের পুত্র। তিনি দরবারের গ্রেফতারী পরওয়ানা জারী হওয়ার খবর শুনে হযরত মুল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট দৌড়ে গেলেন এবং বললেন, হুযূর! আপনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরওয়ানা জারী করা হয়েছে এখনই পুলিশ এসে আপনাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে। একথা শুনে হযরত মুল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “আমার ওযূর বদনা ও মিসওয়াক দাও, আমি মিসওয়াক করে ওযূ করে তোমার আব্বার রাজত্বের বিরুদ্ধে বদদোয়া করে, রাজত্ব ধ্বংস করে দেব।” হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
الوضوء سلاح المؤمن.
অর্থ:- “ওযূ হলো মু’মিনের অস্ত্র।”
আর হযরত মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি মুস্তাজাবুদ দাওয়াত ছিলেন। অর্থাৎ যিনি দোয়া করলে আল্লাহ পাক তার দোয়া তৎক্ষনাত কবুল করতেন। এটা বাদশাহ আলমগীরও জানতো; বাদশাহ শাহাজাহানও জানতো।
যার কারণে বাদশাহ আলমগীর উনার পিতা বাদশাহ শাহজাহানের কাছে চলে গেলেন এবং বললেন, “আপনি যে হযরত মুল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরওয়ানা জারী করেছেন, এতে তিনি গোম্বা করেছেন এবং বলেছেন, আপনার বিরুদ্ধে বদদোয়া করে আপনার রাজত্ব ধ্বংস করে দিবেন।” তখন বাদশাহ শাহজাহান ভীত হয়ে বললো, তাহলে কি করা যেতে পারে? তখন বাদশাহ আলমগীর পরামর্শ দিলেন, আপনি হযরত মুল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট মাফ চেয়ে এই বলে চিঠি লিখেন যে, আমার ভুল হয়েছে, আমাকে ক্ষমা করে দিন। অত:পর বাদশাহ আলমগীরের পরামর্শ অনুযায়ী বাদশাহ শাহজাহান হযরত মুল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখেন এবং চিঠি পেয়ে হযরত মুল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ক্ষমা করে দেন। উপরোক্ত ঘটনা দ্বারা একথা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, একাধিক বা শতাধিক মুফতী ছাহেব ফতওয়া দিলেই তা গ্রহণযোগ্য হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে ফতওয়া কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মুতাবিক না হবে। সেই সাথে একথাও স্পষ্ট হয়ে উঠে যে যারা হক্কানী-রব্বানী আলিম বা আল্লাহওয়ালা নয় অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমলে ত্রুটি রয়েছে, যারা উলামায়ে সূ’ নামে অভিহিত তাদের থেকে দ্বীনি ইলম শিক্ষা গ্রহণ করা জায়িয নেই। বরং এ সকল উলামায়ে সূ’ (দুনিয়াদার আলিম-উলামাদের) থেকে দূরে থাকার জন্য শরীয়তে সাবধান-সতর্ক করা হয়েছে।
হাদীছ শরীফ-এ আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤيكم فاياكم واياهم لايصلونكم ولايفتنونكم.
অর্থ:- “আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে, তারা তোমাদেরকে গুমরাহ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী)
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ করেন,
ويل لامتى من علماء السوء يتخذون هذا العلم تجارة يبغونها من امراء زمانهم ربحا لانفسهم لااربح الله تجارتهم.
অর্থাৎ- “উলামায়ে সূ’দের দ্বারা আমার উম্মত মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে (যদি তারা তাদের থেকে সতর্ক না থাকে)। যারা নিজেদের অর্জিত ইলম দ্বারা তাদের যুগের সরকার হতে অর্থ ও পদ উপার্জনের প্রচেষ্টা চালাবে তারাই উলামায়ে সূ।” তাদের জন্য রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বদ দোয়া করেছেন এই বলে যে, “আয় আল্লাহ পাক! যারা নিজেদের উলম দ্বারা দুনিয়াবী সরকারের সাথে ব্যবসা করতে চায় তাদের ব্যবসায় বরকত দিবেন না।” (কানযুল উম্মাল)
অতএব, যে সকল মাওলানা ছাহেব টি.ভিতে অনুষ্ঠান করে তারা শরীয়তের ফতওয়া মতে, দু’শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। যারা জায়িয মনে করে অনুষ্ঠান করে তারা হারামকে হালাল মনে করার কারণে কাফির ও মুরতাদ। আর যারা হারাম জেনে অনুষ্ঠান করে তারা চরম ফাসিক। এ উভয় শ্রেণীর কারো ফতওয়া শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ টিভির প্রচার মাধ্যম হচ্ছে প্রথমত: প্রাণীর ছবি। দ্বিতীয়ত: বেপর্দা হওয়া।
আর মুফতী হওয়ার জন্য কামিল মু’মিন হতে হবে, হক্কানী আলিম হতে হবে, এমনকি জাহির-বাতিন উভয় ইলমের অধিকারী হতে হবে। হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘আল ইতকান’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘ফতওয়া দাতার জন্য ইলমে লাদুন্নী থাকা শর্ত।” (সমাপ্ত)
মুসাম্মাত সানজিদা আক্তার
সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়াল: অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪ ৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-
জিজ্ঞাসা: সাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি তিনি বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখূঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবে না। তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন-প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এদলের আমল যতই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে ইসলাম হতে খারিজ, দ্বীন হতে বহির্ভুত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও দ্বীনের পথে, কুরআন ও সুন্নাহর পথে ফিরে আসবে না।
আমার প্রশ্ন হল, উপরোক্ত হাদীছ ছহীহ কি-না? ছহীহ হলে এ দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? উক্ত হাদীছ শরীফ-এর সাথে তাবলীগ জামাতের কোন সম্পর্ক আছে কি-না? অনেকে এই হাদীছের সাথে তাবলীগ জামাতকে জড়াতে চান। উক্ত হাদীছ শরীফ-এর সঙ্গে তাবলীগ জামাতকে জড়ানো সঠিক কি-না?
জবাব: প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ। মুহাদ্দিছীনে কিরাম উক্ত হাদীছসহ এ জাতীয় হাদীছসমুহৈর ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এসব হাদীছ দ্বারা একটি নির্ধারিত জামাত বা খারিজী ফেরক্বা নামে পরিচিত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফত আমলে এই হাদীছসমূহের বাস্তবতা এবং খাওয়ারেজদের অবস্থার সমন্বয় ঘটেছিল। যার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বলা চলে যে, এ হাদীছসমূহ দ্বারা একমাত্র খাওয়ারেজদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণাদি ছাড়া অন্য কোন জামাতকে এই হাদীছ-এর অন্তর্ভুক্ত। করা যাবে না।
কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া তাবলীগ জামাতকে এই হাদীছসমূহের মেসদাক বা উদ্দেশ্য বানানো, তাদেরকে খাওয়ারেজ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও অপরাধ। তাবলীগের নিয়মনীতি ও কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই। বর্তমান বিশ্বে আল্লাহ তায়ালা তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে পথহারা, ঈমানহারা, হেদায়েত থেকে বঞ্চিত অসংখ্য মানুষকে হেদায়েত করেছেন, ঈমান আনার তাওফিক দান করেছেন। এছাড়া এ জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত আলিম ও ইসলামী চিন্তাবিদ।
অতএব তাবলীগ জামাতকে খারেজী জামাত বলা, মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। (ফতহুল বারী ১২:৩৫০, আল মিরকাত ৭:১০৭)
উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লেখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-
(১) উল্লেখিত হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত গুণাবলী প্রচলিত ছয় উসূলী তাবলীগীদের মধ্যে আছে কি?
(২) উলিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য?
(৩) প্রচলিত ছয় উছুলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?
(৪) প্রচলিত ছয় উছুলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?
(৫) কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ এর কোথাও প্রচলিত ছয় উছুলী তাবলীগ করা কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ-এর মতে জায়িয কিনা?
কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: প্রচলিত ছয় উছুলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কিত উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।
শুধু তাই নয়, তারা প্রচলিত ছয় উছুলী তাবলীগীদের সাফাই গাইতে গিয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এর অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছুলীদের মধ্যে কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ উনার বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে।
তাই নিম্নোক্ত সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
(ধারাবাহিক)
ছয় উছুলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারীতার খ-নমূলক জবাব-৩
প্রচলিত ছয় উছুলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো-
“(৩) প্রচলিত ছয় উছুলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”
আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছুলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন শরীফ-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নি¤েœ ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছুলীদের কুরআন শরীফ- সুন্নাহ শরীফ উনার বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ উনার দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো-
প্রচলিত ছয় উছুলীদের কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ উনার বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য-৯
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মনে করে বা প্রচার করে থাকে যে, মাওলানা ইলিয়াস ছাহেব প্রবর্তিত “তাবলীগ জামায়াতই আসল ও একমাত্র নাযাতের পথ।” যে প্রসঙ্গে মাওলানা ইলিয়াস ছাহেব ও তার “মলফুযাতের ২৪নং মলফুযে বলেছেন, “আসল কাজের তরীক্বা তাবলীগ হতে শিখতে হবে।”
(দ্বিতীয় অংশ)
তাদের এ বক্তব্য ও প্রচারণা, ধারণা বা দাবীটিও সম্পূর্ণ অমূলক, অসত্য, বিভ্রান্তিকর এবং জিহালতপূর্ণ। কারণ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত কখনোই আসল ও একমাত্র নাযাতের পথ হতে পারেনা। কেননা প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত হচ্ছে, একটি মক্তবের ন্যায়। অর্থাৎ তারা লোকদের যে তা’লীম বা শিক্ষা দেয়, তা মক্তবী শিক্ষা বা প্রাথমিক শিক্ষার চেয়ে মোটেও বেশি নয় যদি আক্বীদা বিশুদ্ধ হয়। অন্যথায় অর্থাৎ আক্বীদা বিশুদ্ধ না হলে শিক্ষা যে স্তুরেরই হোক না কেন তা কখনই শরীয়তে গ্রহণযোগ্য হবে না। অর্থাৎ বাতিল বলে গণ্য হবে। যার সত্যতা স্বীকার করেছে তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠিতা মাওলানা ইলিয়াস ছাহেব স্বয়ং তার “মলফুযাতে”।
কাজেই মক্তবী শিক্ষাকে আসল ও একমাত্র নাযাতের পথ বলে দাবী করা আহমকী ও জিহালত বৈ কিছুই নয়। কারণ মক্তবী বা প্রাথমিক শিক্ষার দ্বারা পূর্ণতা হাছিল করা বা মু’মিনে কামিল হওয়া আদৌ সম্ভব নয়। বরং মু’মিনে কামিল হওয়ার জন্য ইসলামের পূর্ণ শিক্ষা লাভ করাই বাঞ্ছনীয়। যা প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের মাধ্যমে কখনোই লাভ করা সম্ভব নয়। যেহেতু প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের শিক্ষা ইসলামী শিক্ষার তুলনায় নিতান্তই নগণ্য।
মূলত: ইসলামী শিক্ষা সম্পর্কে সঠিক ইলম না থাকার কারণেই প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাদের প্রবর্তিত তাবলীগ জামায়াতকে আসল ও একমাত্র নাযাতের পথ বলে দাবী করে থাকে।
এজন্য নিম্নোক্ত ইসলামী শিক্ষা ও তাবলীগ জামায়াতের শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
পূর্ণ ইসলামী শিক্ষা
আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
طلب العلم فريضة على كل مسلم.
অর্থ:- “প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য (দ্বীন ইসলাম সম্পর্কিত ফরয পরিমাণ) ইলম অর্জন করা ফরয।” (বাইহাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মিরআতুল মানাজীহ)
আর উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় অন্য হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
العلم علمان علم فى القلب فذاك العلم النافع علم على اللسان فذالك حجة الله عزوجل على ابن ادم.
অর্থ:- “(যে ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয সে) ইলম দু’প্রকার-১। ক্বালবী ইলম, যা উপকারী ইলম অর্থাৎ ইলমে তাছাউফ। ২। যবানী ইলম যা আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য দলীল। অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ।”
উল্লিখিত হাদীছ শরীফ-এর উপর ভিত্তি করে ইমাম, মুজতাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরামগণ ইসলামী শিক্ষাকে প্রথমত: দু’ভাগে ভাগ করেছেন- (১) ইলমে ফিক্বাহ, (২) ইলমে তাছাউফ।
ইলমে ফিক্বাহ
ইলমে ফিক্বাহকে আবার চারভাবে ভাগ করা হয়েছে, (১) আক্বাইদ, (২) ইবাদত, (৩) মুয়ামালাত, (৪) মুয়াশারাত।
আক্বাইদের বর্ণনা:
আক্বাইদ (عقائد ) শব্দটি আক্বীদাতুন (عقيدة) এর বহুবচন। যার অর্থ হচ্ছে- দৃঢ় ও বিশুদ্ধ বিশ্বাস।
মূলত: আক্বাইদের অনেক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে বিশেষ করে মৌলিক বিষয়সমূহ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করা, তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা ফরয।
কারণ আক্বীদা বা ঈমান হচ্ছে সমস্ত কিছুর মূল। যার আক্বীদার মধ্যে বিন্দুমাত্রও ত্রুটি বা ভুল থাকবে অর্থাৎ কুফরী থাকবে, তার কোন আমলই আল্লাহ পাক উনার নিকট কবুল হবে না। তাই আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-এর অসংখ্য স্থানে আমলের পূর্বে ঈমানের কথা বলেছেন।
যেমন, আল্লাহ পাক বলেন,
ان الذين امنوا وعملوا الصلحت كانت لهم حنت الفردوس نزلا.
অর্থ:- “নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তাদেরকে জান্নাতে মেহমানদারী করা হবে।” (সূরা কাহফ/১০৭)
অতএব প্রমাীনত হলো যে, জান্নাত লাভ করতে হলে বা আল্লাহ পাক উনার রিযামন্দী হাছিল করতে হলে সর্বপ্রথম ঈমান বা আক্বীদাকে বিশুদ্ধ করতে হবে। অত:পর নেক আমল করতে হবে। যার আক্বীদা বিশুদ্ধ নয় বরং কিছুমাতও কুফরী রয়েছে, তার নেক আমলের কোন মুল্যই নেই। উপরন্ত কুফরী আক্বীদা থাকার কারণে সে চিরজাহান্নামী হবে। আর যার আক্বীদা বিশুদ্ধ রয়েছে, সে যদি নেক আমল নাও করে থাকে, সে চিরজাহান্নামী হবে না। বরং পাপের শাস্তি ভোগ করে সে অবশ্যই একদিন জান্নাতে যাবে।
তাই আক্বাইদ সংক্রান্ত ফরয পরিমাণ ইলম অর্জন করাও প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরযে আইন। যা ইলমে ফিক্বাহর চারভাগের একভাগ।
কাজেই আক্বাইদ সংক্রান্ত বিষয়ে যেমন- তাওহীদ, রিসালত, নবী-রসূল আলাইহিস সালাম, আসমানী কিতাবসমূহ, ফেরেশতা, কবর, হাশর, মীযান, পুলছিলাত, পরকাল, জান্নাত, জাহান্নাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের মু’জিযা, ওলীআল্লাহগণের কারামত ইত্যাদিসহ ইসলামের সকল বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে হবে।
অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে আক্বাইদ সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য তেমন কোন শিক্ষাই দেয়া হয় না। বরং ভালরূপে ফিকির করলে দেখা যাবে যে, আক্বাইদ সংক্রান্ত পূর্ণ শিক্ষার প্রায় সম্পূর্ণটাই তাদের মধ্যে অনুপস্থিত।
(চলবে)
মুহম্মদ মুহিউদ্দীন
সভাপতি- আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত
সন্দ্বীপ শাখা, চট্টগ্রাম।
সুওয়াল: চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়াবী/২০০৩-০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে “বিতরের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম এবং বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে বলে উল্লেখ করেছে।”
আর হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “বিতির নামাযের পর দুই রাকআত নফল নামায…. দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।”
এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা হালকী নফল নামায সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে হাদীছ শরীফগুলো উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহনযোগ্য। তাদর প্রতিটি দলীরে খ-নসহ হালকী নফল সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যাকে “হালক্বী নফল” বলা হয়, তা দাঁড়িয়ে পড়া সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন শরীফ-সুন্নাহর খিলাফ হয়েছে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরীমুলক হয়েছে।
কেননা সাধারণত: নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব হলেও বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায় বসে পড়াই মুস্তাহাব-সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব এবং অধিক ফযীলতের কারণ। কেননা বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল এবং অন্যান্য নফলের ক্ষেত্রে একই হুকুম নয়। বরং বিতর নামাযের পর দুই রাকায়াত নফলের হুকুম অন্যান্য নফল থেকে সম্পূণূ আলাদা। অর্থাৎ ন্যান্য নফল দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব, বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব। আর হালক্বী নফল অর্থাৎ বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব, আর বসে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব।
কারণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায কখনও দাঁড়িয়ে আদায় করেননি। বরং বসেই আদায় করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।
(ধারাবাহিক)
উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বুখারী, ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী শরীফ ইত্যাদি কিতাব থেকে দলীল হিসেবে যে কয়েকখানা হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছে আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। কারণ তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে ইবারত কারচুপি করে “বুখারী শরীফ, ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী শরীফ ইত্যাদি কিতাব”- এর বরাত দিয়ে যেটা বলতে চেয়েছে আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। আমরা পর্যায়ক্রমে সেটা তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ।
নিম্নে ইবনে মাজাহ শরীফ-এর বক্তব্য পর্যালোচনা করা হলো:
রেযাখানীরা বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে ইবনে মাজাহ শরীফ-এর ১ম খ-ের ৮৫ পৃষ্ঠার বরাত দিয়ে যে হাদীছ শরীফ খানা উল্লেখ করেছে, নি¤েœ তা হুবহু উল্লেখ করা হলো।
যেমন রেযাখানীদের হুবহু ইবারত খানা হচ্ছে,
عن عائشة رضى الله عنها قالت كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتربوا حدة ثم ير كع ركعتين يقرأ فيها وهو جالس فاذا اراد ان ير كع قام فر كع. (ابن ماجه ج-১ص-৮৫)
অর্থাৎ “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক রাকাতের দ্বারা পূর্বের নামাযকে বিজোড় করে নিতেন। অত:পর দু’রাকাত নামায বসে আদায় করতেন। আর (এতে) যখন রুকু করতে ইচ্ছা করতেন দাঁড়িয়ে যেতেন।” (ইবনে মাজাহ, ১ম খ-, ৮৫ পৃষ্ঠা)
এখানে প্রথম: বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, “রেযাখানীরা বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে ইবনে মাজাহ শরীফ-এর ১ম খ-ের ৮৫ পৃষ্ঠার বরাত দিয়ে যে হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছে, উক্ত হাদীছ শরীফ খানার ইবরতেই উল্লেখ আছে,
وهوجالبس অর্থাৎ বিতরের পর দু’রাকায়াত নফল নামায হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লা বসেই আদায় করেছেন। অতএব, রেযাখানীদের বক্তব্য স্ববিরোধী বলেই প্রমাণিত হলো।
রেযাখানীদের কারচুপিমূলক বক্তব্য উদঘাটন ও খণ্ডন:
দ্বিতীয়ত: রেযাখানীরা ইবনে মাজাহ শরীফ-এর ১ম খ-ের ৮৫ পৃষ্ঠার প্রথম হাদীছ শরীফখানা কারচুপি করে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছে। অথচ “ইবনে মাজাহ শরীফ-এর ১ম খ-ের ৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
حدثنا محمد بن بشار حدثنا حماد بن مسعدة حدثنا ميمون بن موسى المرئى عن الحسن عن امه عن ام سلمة رضى الله عنها ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.
অর্থ:- “ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ বর্ণনা করেছেন হযরত মুহম্মদ ইবনে বাশশার রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত হাম্মাদ ইবনে মাসয়াদা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মাইমুনা ইবনে মূসা আল-মারায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি উনার মা থেকে বর্ণনা করেন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতর নামাযের পর সংক্ষিপ্তাকারে দু’রাকায়াত নফল নামায বলেই আদায় করতেন।”
“ইবনে মাজাহ” শরীফ-এর ১ম খ-ের ৮৫ পৃষ্ঠার ২নং হামিয়ায় আরো উল্লেখ আছে,
عن عائشة رضى الله عنها كان يصلى ثلث عشرة ركعة يصلى نمان ركعات ثم يوتر ثم يصلى ركعتين وهو جالس.
অর্থ:- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (রাতে) তের রাকায়াত নামায আদায় করতেন। আট রাকায়াত (তাহাজ্জুদ) পড়ে তিন রাকায়াত বিতর পড়তেন। অত:পর দু’রাকায়াত (নফল) নামায বসেই আদায় করতেন।”
তৃতীয়ত: রেযাখানীরা যে হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছে, তাতেও দাঁড়িয়ে পড়ার কথা উল্লেখ নেই, শুধুমাত্র রুকু করার সময় দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ রয়েছে। আশ্চর্যজনক কথা যে, হাদীছ শরীফ-এর বসে পড়ার কথা ব্যক্ত থাকলেও রেযাখানীরা কি করে উক্ত হাদীছ শরীফ কারচুপি করলো এবং নিজের মন মত ফতওয়া ছাবেত করার জন্য দ্বিতীয় হাদীছ শরীফ থেকে ক্বিয়ামকে ছাবিত করার অপচেষ্টা করলো? অথচ দ্বিতীয় হাদীছ শরীফ দ্বারাও বসে পড়াটাই ছাবিত হয়। কেননা যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত নামাযে ক্বিয়ামকে প্রাধান্য দিতেন, তাহলে দাঁড়িয়ে নামায শুরু করে তারপরে বসে যেতেন এবং তাতেই ক্বিয়ামের প্রাধান্য প্রমাণিত হতো। মূলত: হাদীছ শরীফ-এ বসার পক্ষেই বর্ণনা রয়েছে। যা হাদীছ শরীফ-এ উল্লিখিত وهو جالس ইবারতটি প্রমাণ করে।
চতুর্থত: আরো আশ্চর্যজনক কথা যে, রেযাখানীরা কি করে রুকুকে ক্বিয়ামের সাথে মিলিয়ে দিল। কারণ নামাযের মধ্যে ক্বিয়াম ও রুকু আলাদা দু’টি ফরয। উল্লেখ্য, প্রত্যেক নামাযেই রুকু করা ফরয তা দাঁড়িয়ে পড়–ক বা বসে পড়–ক। আর ক্বিয়াম প্রত্যেক নামাযে ফরয নয়, নামাযের হুকুম অনুসারে ক্বিয়ামের হুকুম হবে। যেমন- ফরয নামাযে ক্বিয়াম ফরয, নফল নামাযে ক্বিয়াম নফল।
পঞ্চমত: উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল আদায় করতেন এবং উক্ত দু’রাকায়াত নফল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয় ছুরতে আদায় করেছেন, তা উল্লেখ করা হয়েছে। আর প্রকৃতপক্ষে বিতর নামাযের পর উক্ত দু’রাকায়াত হালকী নফল দু’ছুরতে আদায় করেছেন। (১) বসে নামায শুরু করেছেন এবং সম্পূর্ণ নামায বসেই শেস করেছেন। (২) নামায বসেই শুরু করেছেন, তবে শুধুমাত্র রুকু করার সময় দাঁড়িয়ে রুকু করেছেন আর বাকী নামায বসেই আদায় করেছেন। যা রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরাও স্বীকার করে বলেছে যে, “অত:পর দু’রাকাত নামায বসে আদায় করতেন।”
ষষ্ঠত: রেযাখানীরা বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে ইবনে মাজাহ শরীফ-এর ১ম খ-ের ৮৫ পৃষ্ঠার বরাত দিয়ে যে হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছে, উক্ত হাদীছ শরীফ খানার باب ই (বাবেই) উল্লেখ আছে যে, এই باب এর (বাবের) হাদীছ শরীফগুলো বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে আদায় করা সম্পর্কিত।
যেমন হাদীছ শরীফ-এর ছহীহ কিতাব সুনানে ইবনে মাজাহ-এর সম্মানিত লেখক উক্ত দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই পড়া যে মুস্তাহাব- সুন্নত, তা সুস্পষ্টভাবে ফুটিযে তোলার জন্য আলাদা ‘বাব’ রচনা করেছেন যার নাম দিয়েছেন,
باب ما جاء فى الركعتين بعد الوتر جالسا.
অর্থ:- “এ باب কা অধ্যায়টি বিতরের পর দু’রাকায়াত নামায বসে আদায় করা সম্পর্কে।”
অতএব, রেযাখানীরা বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে যে ইবনে মাজাহ শরীফ-এর বরাত দিয়েছে, সেই ইবনে মাজাহ শরীফ-এর উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ইবারতের মধ্যেই,
يصلى بعد الوتر رطهنيم حفيفنيم زخز جتلس.
বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করার বর্ণনা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।
সুতরাং, রেযাখানীদের জালিয়াতি, ধোঁকাবাজী, প্রতারণা, মিথ্যা ও ইবারত কারচুপি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো।
(চলবে)
মুহম্মদ মামুনুর রহমান, চট্টগ্রাম
সরকার মুহম্মদ আল মাহমুদ চিরিরবন্দর, দিনাজপুর
সুওয়াল: হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারি/২০০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় পাগড়ীর পরিমাপ বা দৈর্ঘ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, “পাগড়ী ১৪, ৭ ও সাড়ে তিন হাত লম্বা হতে পারে। …. শামলা ছাড়াও পাগড়ী বাঁধা যায়।”
এখন আমার সুওয়াল হলো, পাগড়ীর পরিমাণ বা দৈর্ঘ্য সম্পর্কিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি পাগড়ীর পরিমাপ বা দৈর্ঘ্য চৌদ্দ হাত এবং সাড়ে তিন হাত পর্যন্ত লম্বা হতে পারে? দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: পাগড়ীর পরিমাপ বা দৈর্ঘ্য সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। নি¤েœ পাগড়ীর পরিমাপ বা দৈর্ঘ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলাচনা করা হলো-
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ী মুবারকের পরিমাপ বা দৈর্ঘ্য
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসা,, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উমামাহ বা পাগড়ী মুবারক ছিল তিন ধরনের। যথা- (১) তিন হাত, (২) সাত হাত ও (৩) বার হাত লম্বা। তিন হাত পাগড়ী সাধারণত: ঘরের ভিতরে, সাত হাত পাগড়ী পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে এবং সাধারণভাবে বার হাত পাগড়ী বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন- জুমুয়ার দিনে ও দুই ঈদে পরিধান করতেন।
আর নি¤েœ বিশ্ববিখ্যাত, বিশ্বসমাদৃত, সর্বজনমান্য কিাতবসমূহ থেকে এ সম্পর্কিত দলীল-আদিল্লাহ উল্লেখ করা হলো।
যেমন, “ফাইদুল বারী” কিতাবের ৪র্থ খ-ের ৩৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
قال الشيخ شمس الدين الجزرى: تتبعت قدر عمامة فتبين من كلام الشيخ النبى صلى الله عليه وسلم محى الدين النووى أنها كانت على أنحاء: ثلاثة أذرع، وسبعة، واثنتى عشر، من الذراع الشرع، وهو النصف من ذراعنا وتلك الأخيرة كانت للعيدين.
অর্থ:- “হযরত শায়খ শামসুদ্দীন আল জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ীর পরিমাপ সম্পর্কে অনেক অনুসন্ধান করলাম। অতঃপর তা হযরত শায়খ মুহিউদ্দীন নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অভিমত থেকে জানতে পারলাম যে, নিশ্চয়ই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ী মুবারকের পরিমাপ ছিল (১) তিন হাত, (২) সাত হাত ও (৩) বার হাত। যা শরয়ী গজ হিসেবে ছিল। আর তা হচ্ছে আমাদের প্রচলিত গজের অর্ধেক অর্থাৎ এক হাত পরিমাণ। উল্লিখিত বার হাত পাগড়ী মুবারক তিনি ঈদের নামাযে ব্যবহার করতেন।
‘তাবরানী শরীফ’ এবং ‘উরফুশ্ শাযী হাশিয়ায়ে তিরমিযী’ কিতাবের ১ম খ-ের ৩০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وكان عمامته صلى اله عليه وسلم بفى اكثر الاحيان ثلاثة اذرع شرعية وفى الصلاة الخمس ستعة اذرع.
অর্থ:- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাধারণভাবে (ঘরের মধ্যে) র্ববহৃত পাগড়ী মুবারক ছিল তিন হাত। আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ব্যবহার করতেন সাত হাত পাগড়ী।”
“আউনুল মা’বুদ” কিতাবের ৪র্থ খ-ের ৯৬ পৃষ্ঠা, ‘মিরকাত শরীফের” ৮ম খ-ের ২৫০ পৃষ্ঠা, “জামউল ওসাইল’ কিতাবের ১ম খ-ের ২০৭ পৃষ্ঠায় এবং “তাছহীহুল মাছাবীহ” কিতাবে উল্লেখ আছে,
وفى المرقاة قال الجزرى فى تصحيح المصابيح قد تتبعت الكتب وتطلبت من االسيروالتواريخ لاقف على قدر عمامة النبى صلى الله عليه وسلم فلم اقف على شيئ حتى اخبرنى من اثق به وقف على شيئ من كلام النووى ذكر فيه انه كان له صلى الله عليه وسلم عمامة قصيرة وعمامة طويلة وان القصيرة كانت سبعة اذرع والطويلة اثنى عشر ذراعا ذكره القارى وقال وظاهر كلام المدخل ان عمامته كانت سبعة اذرع مطلقا من غير تقييد بالقصير والطويل.
অর্থ:- “মিশকাত শরীফ-এর শরাহ মিরকাত শরীফ-এর আছে; হযরত ইমাম জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “তাছহীহুল মাছাবীহ” গ্রন্থে বলেছেন যে, আমি অনেক দিন পর্যন্ত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ী মুবারকের পরিমাপ বা দৈর্ঘ্য সম্পর্কে অনেক কিতাব অনুসন্ধান করেছি এবং অসংখ্য সীরত গ্রন্থ ও ইতিহাস এর কিতাব তালাশ করেছি। কিন্তু কোথাও নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ী মুবারকের পরিমাপ সম্পর্কে আলোচনা পাই নাই। পরিশেষে এক প্রখ্যাত আলিম আমাকে জানালেন যে, তিনি ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্য থেকে এ সম্পর্কিত একটি উক্তি পেয়েছেন। যাতে উলে।লখ করা হয়েছে যে, নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোট ও দীর্ঘ উভয় প্রকার পাগড়ী মুবারক ছিল। ছোট পাগড়ী মুবারক ছিল সাত হাত ও লম্বা পাগড়ী মুবারক ছিল বার হাত দীর্ঘ। হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উহা উল্লেখ করেছেন। হযরত ইমাম জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং “মাদখাল” গ্রন্থের ভাষ্য মতে: নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ী মুবারক সাধারণত সাত হাত ছিল। যা অতিরিক্ত লম্বা ও ছোট ছিল না।”
“মিশকাত শরীফ-এর ৩৭৪ পৃষ্ঠার ১২নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
كان له صلى الله عليه وسلم عمامة قصيرة هى سبعة اذرع وعمامة طويلة مقداره اثنا عشر ذراعا.
অর্থ:- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একটি ছোট পাগড়ী মুবারক ছিল। আর উহা লম্বায় ছিল সাত হাত এবং একটি লম্বা পাগড়ী মুবারক ছিল যার দৈর্ঘ্যরে পরিমাণ হলো বার হাত।”
“ আল-মাদখাল” কিতাবে উল্লেখ আছে,
ان عمامته صلى الله عيه وسلم كانت سبعة اذرع مطلقا من غير تقييد بالقصير والطويل.
অর্থ:- “নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ী মুবারক সাধারণত সাত হাত পর্যন্ত লম্বা ছিল। যা অতিরিক্ত লম্বা ও ছোট ছিল না।”
“তুহফাতুল আহওয়াযী” কিতাবের ৫ম খ-ের ৪১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
أنه كان له صلى الله عليه وسلم عمامة قصيرة وعمامة طويلة، وأن القصيرة كانت سبعة أذرع والطويلة اثنى عشر ذراعا ذكره القارى وقال وظاهر كلام المدخل أن عمامته كانت سبعة أذرع مطلقا من غير تقييد بالقصير والطويل.
অর্থ:- “নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোট ও দীর্ঘ উভয় প্রকার পাগড়ী মুবারক ছিল। ছোট পাগড়ী মুবারক ছিল সাত হাত ও লম্বা পাগড়ী মুবারক ছিল বার হাত দীর্ঘ। হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উহা উল্লেখ করেছেন। হযরত ইমাম জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং “মাদখাল” গ্রন্থের ভাষ্য মতে: নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ী মুবারক সাধারণত সাত হাত ছিল। যা অতিরিক্ত লম্বা ও ছোট ছিল না।”
“আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া আলাশ শামাইলিল মুহম্মদিয়া” কিতাবের ৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ان طولها نحو سبعة اذرع ولغيره ان طولها نحو سبعة اذرع فى عرض ذراع.
অর্থ:- “নিশ্চয় পাগড়ীর দৈর্ঘ্য হল সাত হাত। ইহা ছাড়াও অন্য বর্ণনা মতে, নিশ্চয়ই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ীর দৈর্ঘ্য ছিল সাত হাত, এক হাত প্রস্থ বিশিষ্ট কাপড়ের মধ্যে।”
“আত তা’লিকুছ ছবীহ” কিতাবের ৪র্থ খ-ের ৩৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
انه كان له صلى الله عليه وسلم عمامة قصيرة وعمامة طويلة وان القصيرة كانت سبعة اذرع والطويلة اثنى عشر ذراعا.
অর্থ:- “নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোট ও দীর্ঘ উভয় প্রকার পাগড়ী মুবারক ছিল। ছোট পাগড়ী মুবারক ছিল সাত হাত ও লম্বা পাগড়ী মুবারক ছিল বার হাত দীর্ঘ।
“শামাইল বি-শরহিল মানাবী” কিতাবের ১ম খ-ের ২০৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وما وقع للطبرانى فى طولها انه نحو سبعة اذرع ولغيره انه نقل عن عاشة انه سبعة فى عرض ذراع.
অর্থ:- “পাগড়ীর দৈর্ঘ্য সম্পর্কে হযরত ইমাম ত্ববারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যে মত বর্ণনা করা হয়েছে, তা হল “নিশ্চয়ই উহা অর্থাৎ পাগড়ীর দৈর্ঘ্য হবে সাত হাত। ইহা ছাড়াও তিনি হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল।লাহু আনহা থেকে নকল করে বলেন যে, নিশ্চয়ই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ী একগজ প্রস্থ বিশিষ্ট কাপড় সাত হাত দীর্ঘ ছিল। অর্থাঃ পাগড়ীর দৈর্ঘ্য ছিল সাত হাত, আর প্রস্থ ছিল এক হাত।”
“ফাইদ্বুল বারী” কিতাবে উল্লেখ আছে,
قال النووى رحمة الله عليه ان عمامة النبى صلى الله عليه وسلم فى اكثر الاوقات كانت ثلاثة اذرع.
অর্থ:- “হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার (ঘরের ভিতরে) অধিকাংশ সময়ের পাগড়ী মুবারক ছিল তিন হাত।
“দরসে মিশকাত” কিতাবের ৩য় খ-ের ১৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………..
অর্থ:- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ীর পরিমাপ সম্পর্কে আল্লামা ইমাম জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, …… নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দু’প্রকার পাগড়ী মুবারক ছিল। প্রথম প্রকার ছোট, যা সাত হাত ছিল। দ্বিতীয় প্রকার লম্বা, যা বার হাত ছিল।”
“খছাইলে নববী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিতাবের ৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………..
অর্থ:- “ত্ববারানী শরীফ” এর এক বর্ণনা মতে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ী মুবারক ছিল সাত হাত লম্বা।”
“শামাইলে নববী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিতাবের ৪১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
انحضرت صلى الله عليه وسلم كاعمامة تقريبا سات كزكا هوتا تها.
অর্থ:- “হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ী মুবারক সাত হাত লম্বা ছিল।”
“আনওয়ারুল মাহমুদ” কিতাবের ২য় খ-ের ৪৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وكان عمامة النبى صلى الله عليه وسلم فى عامة الاحيان ثلاثة اذرع شرعية وفى الصلوة الخمس سبعة اذرع وفى الجمع والاعياد وحين الوفود اثنى عشر ذراعا.
অর্থ:- “আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অধিকাংশ সময়ের (ঘরের ভিতরে) ব্যবহৃত পাগড়ী মুবারক ছিল তিন হাত দীর্ঘ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে ব্যবহৃত পাগড়ী মুবারক ছিল সাত হাত। আর জুমুয়া, ঈদের দিন এবং কোন দেশের প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাতের সময় ব্যবহার করতেন বার হাত পাগড়ী।”
অতএব, উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাীণত হলো যে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নপাগড়ী মুবারকের পরিমাপ বা দৈর্ঘ্য ছিল- তিন হাত, সাত হাত এবং বার হাত।
দ্বিতীয়ত: হাটহাজারীর অখ্যাত পত্রিকায় বলা হয়েছে, “….. শামলা ছাড়াও পাগড়ী বাঁধ যায়।”
এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারীর অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্যও শুদ্ধ হয়নি। কারণ শামলা ছাড়া পাগড়ী বাঁধা সুন্নতের খিলাফ।
কেননা আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন পাগড়ী মুবারক বাঁধতেন, তখন দু’কাঁধের মাঝে তথা পিছনে পিঠের উপর শামলা ঝুলাতেন।
যেমন “তিরমিযী শরীফ-এর” ১ম খণ্ডের ২০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن ابن عمر رضى الله عنهما قال كان النبى صلى الله عليه وسلم اذا اعتم سدل عمامته بين كتفيه.
অর্থ:- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন পাগড়ী মুবারক পরতেন তখন উনার পাগড়ীয় শামলা উভয় কাঁধের মাঝে ঝুলিয়ে রাখতেন।”
তাছাড়া পাগড়ীয় শামলা পিছনে ঝুলানোর ব্যাপারে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশও রয়েছে।
যেমন “মিশকাত শরীফ-এর ৩৭৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن عبادة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم عليكم بالعمائم فانها سيماء الملائكة وارخوها خلف ظهوركم.
অর্থ:- “হযরত উবাদা ইবনে সামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেছেন, তোমাদের জন্য পাগড়ী পরিধান আবশ্যক। কেননা তা ফেরশতাগণের নিদর্শণ স্বরূপ। আর উহার অর্থাৎ পাগড়ীর শামলা তোমাদের পিছনে পিঠের উপর ছেড়ে দাও।”
“মুছান্নাফু ইবনে আবী শাইবাহ” কিতাবের ৮ম খ-ের ২৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
قال عبيد الله اخبرنا اشياخنا أنهم رأوا اصحاب النبى صلى الله عليه وسلم يعتمون ويرخونها بين اكتافهم.
অর্থ:- “হযরত উবাইদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাকে আমার শায়খ বা উস্তাদগণ বলেছেন যে, নিশ্চয়ই উনারা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মধ্যে যত জনেরই সাক্ষাত লাভ করেছেন, উনাদের প্রত্যেককেই পাগড়ী পরিধান করতে দেখেছেন। আর উনারা পাগড়ীর শামলা উনাদের দু’কাঁধের মাঝামাঝি ঝুলিয়ে রাখতেন।”
“আরিদ্বাতুল আহওয়াযী” কিতাবের ৭ম খ-ের ২৪৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
سنتها ان تكون لها ذوابة يسدلها بين كتفيه.
অর্থ:- “পাগড়ী পরিধানের সুন্নত হল তার শামলা উভয় কাঁধের মাঝে ঝুলিয়ে রাখা।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে সুষ্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে, পাগড়ীর শামলা পিছনে দু’কাঁধের উপর তথা পিঠের উপর ঝুলানো খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনার অন্তর্ভুক্ত।
অতএব, উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ী মুবারকের পরিমাপ বা দৈর্ঘ্য ছিল তিন হাত যা তিনি ঘরে থাকা অবস্থায় পরিধান করতেন। সাত হাত যা তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে বা অন্যান্য সময় পরিধান করতেন এবং বারো হাত যা তিনি জুমুয়া, ঈদ ও বিশেষ বিশেষ সময় পরিধান করতেন।
অতএব, পাগড়ী তিন হাত, সাত হাত এবং বারো হাত হওয়াই খাছ সুন্নত। আর শামলাসহই তিনি পাগড়ী মুবারক পরিধান করতেন। এটাই খাছ সুন্নত।
সুতরাং হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা যে বলেছে, “পাগড়ী ১৪ হাত, সাড়ে তিন হাত, এবং শামলা ছাড়াও পাগড়ী বাঁধা যায়।” তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, মনগড়া এবং দলীলবিহীন হয়েছে বলেই প্রমাণিত হলো।
[বি: দ:- পাগড়ীর পরিমাপ বা দৈর্ঘ্য হলো- তিন হাত, সাত হাত এবং বারো হাত এবং শামলা ছাড়া পাগড়ী বাঁধা সুন্নরতের খিলাফ। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত উনার ৮৩তম সংখ্যা থেকে ৯৬তম সংখ্যার ফতওয়া বিভাগ পাঠ করুন। সেখানে ১৪৬৮টি দলীল-আদিল্লাহ দ্বারা প্রমাণ করা হয়েছে।]
{দলীলসমূহ: ১. তিরমিযী শরীফ, ২. তবারানী শরীফ, ৩. শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী, ৪. মুছান্নাফু ইবনে আবী শাইবাহ ৫. জামিউল মাসানীদি ওয়াস সুনান, ৬. মিশকাত শরীফ, ৭. ফতহুল বারী, ৮. ইরশাদুস সারী, ৯. নাইলুল আউতার, ১০. মিরকাত, ১১. শরহুত তীবী, ১২. আত-তালীকুছ ছবীহ, ১৩. আশয়াতুল লুময়াত, ১৪. মুযাহিরে হক্ব, ১৫. আল কবীর, ১৬. তানযীমুল আশতাত, ১৭. তাছহীহুল মাছাবীহ, ১৮. আল মাদখাল, ১৯. ফাইদ্বুল বারী, ২০. আউনুল মা’বূদ, ২১. তুহফাতুল আহওয়াযী, ২২. আরিদাতুল আহওয়াযী, ২৩. শামাইলুত তিরমিযী, ২৪. জামউল ওয়াসাইল, ২৫. আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া আলাশ শামাইলুল মুহম্মদিয়া, ২৬. শামাইলু বি শরহিল মানাবী, ২৭. খছাইলে নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ২৮. শামাইলে নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ২৯. আখলাকুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ৩০. হাশিয়ায়ে মিশকাত, ৩১. মিরয়াতুল মানাজীহ, ৩২. ফাইদ্বুল ক্বদীর, ৩৩. আল মু’জামুল কবীর, ৩৪. আল লিবাসু ওয়ায যীনাহ, ৩৫. মাজমাউয যাওয়াইদ, ৩৬. আল মীযান, ৩৭. আদ দ্বঈফাহ, ৩৮. কাশুল খফা ওয়া মুযীলুল ইলবাস, ৩৯. আনওয়ারুল মাহমুদাহ, (৪০) উরফুশ শাযী হাশিয়ায়ে তিরমিযী, ৪১. দরসে মিশকাত, ৪২. আরিদ্বাতুল আহওয়াযী ইত্যাদি।}
মুহম্মদ লুতফর রহমান, মুন্সীগঞ্জ।
মুছাম্মত রতনা বেগম শরীফসুন্দর, পীরগাছা, রংপুর।
সুওয়াল: জনৈক মুসলমান ব্যক্তি এক হিন্দু পীরের অনুসারী। ঐ ব্যক্তির পীর প্রায় ত্রিশ-পয়ঁত্রিশ বছর পূর্বে মারা যায়। ঐ বক্তি এখনও বিবাহ করেনি। তাকে বিবাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে সে বলে থাকে, তার পীরে জিাযত পায়নি তাই সে বিবাহ করবে না। ঐ ব্যক্তি নিজেকেও পীর/দয়াল বলে দাবী করে থাকে। তার মধ্যে সুন্নতের কোন পাবন্দি নেই। তার দাড়ি নেই। সে কোর্তা পরিধান করেনা। কিন্তু মাঝে মধ্যে টুপি পরিধান করে থাকে। সে ঠিক মত নামায, রোযা আদায় করে না। পর্দা নেই। তর ভক্তদের মধ্যে পুরুষ-মহিলা আছে। সে টেলিভিশন দেখে থাকে, তার পীরের ছবিকে সামনে রেখে নামায আদায় করে থাকে। সে নিজে ও তার ভক্তরা ছবিকে সামনে রেখে ধ্যান-মগ্ন হয়। ঐ ব্যক্তি তার ভক্তদের নিয়ে বাৎসরিক একটা অনুষ্ঠান করে থাকে। উল্লিখিত সুওয়ালের বিবরণে যে সকল প্রশ্নের উদয় হয় তা হলো-
১. হিন্দু পীরের অনুরসণ করা।
২. হিন্দু পীরের ইজাযত না পাওয়ার কারণে বিবাহ হতে বিরত থাকা।
৩. নিজেকে পীর বা দয়াল বলে দাবী করা।
৪. সুন্নতের পাবন্দি না করা।
৫. নামায-যোরা আদায় না করা।
৬. পর্দা না করা।
৭. টিভি দেখা ও ছবিকে সামেন রেখে ধ্যানমগ্ন হওয়া।
এখন আমার সুওয়াল হচ্ছে- উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে শরীয়তের ফায়সালা কি? এবং তার থেকে মসজিদের জন্য জমি নেয়া জায়িয হবে কিনা? মৃত্যুর পর তার জানাযায় শরীফ হওয়া যাবে কিনা? তার সঙ্গে সামাজিক কোন কাজে উঠা-বসা করা যাবে না? তার কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা যাবে কিনা?
কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ-এর দলীলসহ জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক করেন,
لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة.
অর্থ: “অবশ্যই তোমাদের জন্য আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (পবিত্র সূরা আহযাব/২১)
অর্থাৎ মুসলমানকে মাথার তালু থেকে পায়ের তলা; হায়াত থেকে মউত পর্যন্ত আক্বাইদ-ইবাদত, মুয়ামালাত-মুয়াশারাত ইত্যাদি প্রতিক্ষেত্রেই একমাত্র আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে।
কাজেই কোন মুসলমানের জন্য কোন বিধর্মীকে অনুসরণ ও অনুকরণ করা, তার কথা-কাজের উপর, ইস্তিকামত থাকা, তাকে অনুসরণ করে আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ-নির্দেশের খিলাফ চলা, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত তরক করা, হারাম-নাজায়িয আমল করা, বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা; টিভি দেখা ইত্যাদি সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
সুওয়ালে উল্লিখিত প্রত্যেকটি প্রশ্নেরই জাওয়াব ধারাবাহিকভাবে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।
(ধারাবাহিক)
(৬) পর্দা না করা।
পর্দা করা ফরযে আইন। পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্যই পর্দা রক্ষা করা ফরয। পর্দা তরক করা হারাম ও কবীরা গুনাহ।
আল্লাহ পাক উনার কালাম পাক-এ একাধিক আয়াত শরীফ-এ পর্দা করার ব্যাপারে কফোর তাগিদ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে তিনি ইরশাদ করেন,
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فررجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون، وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولايبدين زينتهن.
অর্থ:- “হে রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি মু’মিন পুরুষদেরকে বরুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্হত-আবরুকে হিফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তারা যা করে সে সম্পর্কে খবর রাখেন। এবং আপনি মু’মিননারীদেরকে বলুন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে এবং তাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর/৩০,৩১)
আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফ-এ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
لعن الله الناظر والمنظور اليه.
অর্থ:- “যে (পুরুষ) দেখে এবং যে (মহিলা) দেখায় উভয়ের প্রতি আল্লাহ পাক উনার লা’নত বর্ষণ করেন।” বাইহাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান, মিশকতা শরীফ, মিরকাত শরীফ)
لايخلون رجل بامراة الا كان ثالثهما الشيطن.
অর্থ:- “যখন কোন পুরুষ কোন বেগানা) মহিলার সাথে একাকী বা নিরিবিলিতে মিলিত হয় তখন তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান। অর্থাৎ তখন শয়তান তাদেরকে পাপ কাজে উদ্ধুদ্ধ করে, পাপ কাজে লিপ্তও করে দেয়।” (মিশকাত শরীফ)
এ হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বর্ণিত রয়েছে যে, একদা খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, ফারুকে আ’যম, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ উপস্থিত হলেন এমন অবস্থায় যে, উনার কপাল মুবারক থেকে রক্ত মুবারক নির্গত হচ্ছিল। তা দেখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “হে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার কপালে কে আঘাত করল?” জবাবে তিনি বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আরবের যমীনে এমন কোন সন্তান জন্মলাভ করেনি, যে হযরত উমর ইবনুল খত্তাবের কপালে আঘাত করতে পারে।” হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, “তাহলে আপনার কপাল ফাঁটল কিভাবে?” তিনি বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার একটি হাদীছ শরীফ আমার কপালে আঘাত করেছে।” এটা শুনে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশ্চর্যান্তিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমার হাদীছ শরীফ আপনার কপালে আঘাত করেছে? কিভাবে আঘাত করলো? আর কোন সে হাদীছ শরীফ? তিনি বললেন, “ইয়া রসূলাল।লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আমার মেয়ে যিনি উম্মুল মু’মিনীন, হযরত হাফসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার সাথে ঘরে বসে একাকী কথা বলছিলাম, হঠাৎ আপনার হাদীছ শরীফখানা স্মরণ হয়, স্মরণ হওয়া মাত্র আমি ঘর থেকে খুব দ্রুত বের হই, বের হওয়ার সময় চৌকাঠে মাথা লেগে আমার কপাল ফেটে যায়। হাদীছ শরীফখানা হচ্ছে,
لايخلون رجل بامراة الا كان ثالثهما الشيطن.
অর্থ:- “যখন কোন পুরুষ কোন (বেগানা) মহিলার সাথে একাকী বা নিরিবিলিতে মিলিত হয় তখন তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান।” (মিশকাত শরীফ)
এখানে উল্লেখ্য, মেয়ের সাথে পর্দা করার হুকুম শরীয়তে নেই। তারপরও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পর্দা রক্ষার ব্যাপারে কতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করেছেন তা সত্যিই চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়।
উল্লেখ্য, হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সাধারণ লোক থেকে প্রায় এক হাত লম্বা ছিলেন। যার কারণে উনার মাথা মুবারক চৌকাঠে লেগে যায়।
অন্য এক হাদীছ শরীফ-এ আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালামকে সম্বোধন করে বলেন,
لاتتبع النظرة فان لك الاولى وليست لك الاخرة.
অর্থ:- “তুমি দৃষ্টিকে অনুসরণ করনা। অর্থাৎ কোন বেগানা মহিলঅর প্রতি দৃষ্টি দিওনা। কারণ, তোমার প্রথম দৃষ্টি (যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয়) তা ক্ষমা করা হবে, কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি কষমা করা হবে না। অর্থাৎ পরবর্তী প্রতি দৃষ্টিতে একটি করে কবীরা গুনাহ লিখা হবে।” (আহমদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ)
স্মরণযোগ্য, যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আ’ইম্মাহ, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার তাজদীদী ও গবেষণাধর্মী মুবারক ক্বওল হচ্ছে যে, “প্রত্যেক মানুষ পুরুষ কিংবা মহিলা হোক, সে প্রতি দু’সেকেন্ডে পাঁচটি করে চোখের পলক বা দৃষ্টি ফেলে থাকে। সে হিসেবে প্রতি মিনিটে ১৫০টি পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। আর ঘণ্টা হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় ৯০০০ (নয় হাজার) পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। সে হিসেবে বেগানা পুরুষ ও মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দোর কারণে তাদের উভয়ের প্রতি কে মিনিটে তিনশ’টি এবং এক ঘণ্টায় আঠার হাজার কবীরাহ গুণাহ লিখা হয়। তাহলে দৈনিক তারা যে কত হাজার হাজার কবীরাহ গুণাহ করে তাকে তা আল্লাহ পাকই বেহতর জানেন।”
এটা তো শুধু চোখের গুণাহর কথা বলা হলো। এমনিভাবে প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা গুনাহ হয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
العينان زنا هما النظر والاذنان زناهما الاستماع واللسان زناه الكلام واليد زناها البطش والرجل زناها الخطى والقلب يهوى ويئمنى ويصدق ذلك الفرح او يكذبه.
অর্থ:- “চোখের গুণাহ হলো দৃষ্টি করা, কানের গুনাহ হলো শ্রবণ করা, মুখের গুনাহ হলো কথা বলা, হাতের গুনাহ হলো স্পর্শ করা, পায়ের গুনাহ হলো ধাবিত হওয়া, অন্তর চায় ও আকাঙ্খা করে এবং লজ্জাস্থান সেটাকে সত্য অথবা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।” (বুখারী, কানযুল উম্মাল)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
الديوث لايدخل الجنة.
অর্থ:- “দাইয়্যূছ বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।” দাইয়্যূছ ঐ ব্যক্তি যে নিজে পর্দা করে না এবং তার অধীনস্ত মহিলাদেরও পর্দা করায় না।” (মুসনাদে আহমদ)
যারা পর্দা করে না তাদের ব্যাপারে শরীয়তে বিধান দু’ধরনের
(১) ফাসিক: যারা স্বীকার করে যে, পর্দা করা ফরয, পর্দা করা উচিত, পর্দঅর খিলাফ করলে কবীরা গুনাহ হয় কিন্তু তারা শয়তানের ওয়াসওয়াসায়, নফসের তাড়নায়, দুনিয়ার ফেরেবে পড়ে পর্দার খিলাফ করে থাকে।
(২) মুরতাদ: যারা পর্দার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে না বা ফরয মনে করে না অথবা পর্দা রক্ষার ব্যাপারে উদাসীন হয়ে গেছে, পর্দার খিলাফ করলে কোনরূপ অসুবিধা মনে করেনা অথবা যাদের আমল-আখলাকে ফুটে উঠে যে, বর্তমানে পর্দঅ দরকার নেই বা বর্তমানে পর্দা না করলেও চলে ইত্যাতি।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো, পর্দা ফরযে আইন একটি আমল। কেউ যদি সাধারণভাবে পর্দা পালন না করে তাহলে সে ফরয তরক করার কারণে কবীরা গুনাহে গুনাহগার হবে এবং ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত হবে। খালিছ তওবা ইস্তিগফার করে পর্দা না করা পর্যন্ত সে মু’মিনে কামিল হতে পারবে না। আর যদি কেউ পর্দঅর প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার বা অবজ্ঞা করে তাহলে তা কুফরীর কারণে সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। তখন উক্ত কুফরী থেকে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার না করা পর্যন্ত সে মুসলমান থাকতে পারবে না। বরং তার উপর মুরতাদের হুকুম বর্তাবে। (চলবে)
মুছাম্মত মাকসুদা আখতার,
গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
সুওয়াল: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিসের তৈরী?
জাওয়াব: নূরের তৈরী। তিনি নূরে মুজাসসাম।
{দলীলসমূহ: তাফসীরে রুহুল মায়ানী, মাদারিজুন নুবুওওয়াহ, ফতওয়ায়ে হাদিয়িয়্যাহ, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৬০-৭৮ ফতওয়া বিভাগ, ৯৪, ৯৮তম সংখ্যা।}
মুছাম্মত ফাহিমা আখতার, চণ্ডিপুর, রাজশাহী
সুওয়াল: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মাটির তৈরী বলা কি?
জাওয়াব: কুফরী।
{দলীলসমূহ: আহকামুল কুরআন লী ইবনিল আরাবী, খাছায়িছুল কুবরা, মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫৩, ৫৫, ৫৬, ৫৭, ৫৮, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩, ৯৪, ১০০তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ সাইয়িদুজ্জামান, লালপুর, নাটোর
সুওয়াল: আখিরী নবী, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দেহ মুবারকের ছায়া ছিল কিনা?
জাওয়াব: না, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারকের ছায়া ছিল না।
{দলীলসমূহ: জামিউল ওসায়িল ফী শরহে শামায়িল, কিতাবুল ওফা, নাসিমুর রিয়ায, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫৯তম সংখ্যা}
মুহম্মদ রবিউল ইসলাম, মিরপুর, ঢাকা।
সুওয়াল: রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রসাব মুবারক ইস্তিঞ্জা মুবারক, রক্ত মুবারক ইত্যাদি নাপাক বলা কি?
জাওয়াব: কুফরী। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রসাব মুবারক, ইস্তিঞ্জা মুবারক, রক্ত মুবারক ইত্যঅদি সবকিছু পাক এবং পবিত্র থেকে পবিত্রতম। শুধু তাই নয়, এগুলো কোন একটি যিনি খেয়েছেন বা পান করেছেন তার জন্য জাহান্নাম হারাম হয়ে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে।
{দলীলসমূহ: খাছায়িছুল কুবরা, দুররুল মুখতার, মাওয়াহিবুল মাদুন্নিয়া ইত্যাদি।}
মুহম্মদ আলী হুসাইন, মারিয়ালী, গাজীপুর।
সুওয়াল: হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি খারাপ ধারণা ও সমালোচনা করা কি?
জাওয়াব: হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ ও সমালোচনা উভয়টা করাই কুফরী।
{দলীলসমূহ: বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, হাশিয়ায়ে তাহতাবী আরা দুররিল মুখতার, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫৭, ৮৩, ৯২, ১০০, ১০৩, ১১৬তম সংখ্যা}
মুহম্মদ তাজুর রহমান, ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
সুওয়াল: শরীয়তে পর্দা করা কি?
জাওয়াব: ফরযে আইন। বে-পর্দা হওয়া হারাম।
{দলীলসমূহ: ফতওয়ায়ে শামী, হাশিয়ায়ে তাহতাবী, বাহরুর রায়িক, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১১২-১২৯তম সংখ্যা।}
সুওয়াল: শরীয়তে ছবি তোলা কি?
জাওয়াব: হারাম ও নাজায়িয। জায়িয মনে করা কুফরী।
{দলীলসমূহ: বুখারী শরীফ, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, দুররুল মুখতার, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫, ৬, ৭, ১৭, ৪২, ৫৯, ৮৭, ১০০-১২৯তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ শামীম আহমদ, ডোমার, নীলফামারী
সুওয়াল: বেপর্দা মাওলানাদের পিছনে নামায পড়া কি?
জাওয়াব: যে সকল মাওলানা বেপর্দা হয় বা পর্দা করেনা তারা ফাসিক। ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। দোহরানো ওয়াজিব।
{দলীলসমূহ: দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ফতহুল ক্বাদীর, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৩৫ ও ১২৮তম সংখ্যা।}
ডা: মুহম্মদ শফিকুল ইসলাম, পাটগ্রাম, লালমনিরহাট
সুওয়াল: ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা কি?
জাওয়াব: হারাম ও কুফরী। শরীয়তে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম জানা কুফরী।
{দলীলসমূহ: তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস, আবু দাউদ, ইযালাতুল খফা, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ২৬, ৯০, ৯৭তম সংখ্যা।}
মুছাম্মত মর্জিনা খাতুন, ভদ্রা, রাজশাহী
সুওয়াল: মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া কি?
জাওয়াব: ঈদ, জুমুয়া, তারাবীহ ইত্যাদি সর্বপ্রকার নামায জামায়াতে পড়া নাজায়িয ও কুফরী।
{দলীলসমূহ: দুররুল মুখতার, শরহুল কবীর, আইনুল হিদায়া, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১১, ১৪, ১৯, ২২, ২৯, ৩৭, ৪১, ৪৪, ৪৭, ৪৮, ৬৫, ৭৯, ১০২, ১০১, ১০৪, ১০৫, ১২৮তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ মছির আলী, উপশহর, দিনাজপুর।
সুওয়াল: ইসলামের নামে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া কি?
জাওয়াব: হারাম ও কুফরী।
{দলীলসমূহ: আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ ইত্যাদি।}
মুহম্মদ ইয়াছিন আলী, শাহজাহানপুর, ঢাকা।
সুওয়াল: পীর ছাহেব ধরা কি?
জাওয়াব: ফরয। যে পীর ছাহেব গ্রহণ করবে না সে চরম ফাসিক।
{দলীলসমূহ: তাফসীরে কবীর, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন, মাকতুবাত শরীফ, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৪, ৩৮, ৪৩, ৪৫, ৫৭, ৮০, ৮৫, ৮৮, ৯৪, ১০৩তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ আহাদ হুসাইন, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।
সুওয়াল: জানাযার পর দোয়া করা কি?
জাওয়াব: সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বিদয়াত বলা কুফরী। সুন্নতকে ইহানত করা কুফরী।
{দলীলসমূহ: মিরকাত শরীফ, তুহফাতুল গাফিলীন, ফুরফুরা শরীফ-এর মত ও পথ, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ২০, ৩৬, ৪১, ৫১, ৫৯, ৬৯, ৮৪, ১০১-১১১তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ হুমায়ুন কবীর, বানারীপাড়া, বরিশাল।
সুওয়াল: পাঁচ কল্লি টুপি পড়া কি?
জাওয়াব: বিদয়াত। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ এ টুপির কোন দলীল নেই।
{দলীলসমূহ: আহমদ, আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৪৭, ৫৫, ৭৫তম সংখ্যা।}
হাফিয মুহম্মদ সফিকুস সলিহীন, মতলব, চাঁদপুর।
সুওয়াল: সেলাইবিহীন লুঙ্গি পড়া কি?
জাওয়াব: খাছ সুন্নত। সেলাইবিহীন লুঙ্গিকে ধুতি বলা কাট্টা কুফরী।
{দলীলসমূহ: বুখারী, ফতহুল বারী, শামায়িলে তিরমীযী, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১২৬তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ ইমতিয়াজ হুসাইন, চট্টগ্রাম।
সুওয়াল: কদমবুছি করা কি?
জাওয়াব: সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম। বিদয়াত বলা কুফরী।
{দলীলসমূহ: আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, মজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে আব্দুল হাই, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৬, ১২, ৪৯, ৫৫, ৬১, ৬২, ৬৫, ৬৭, ৭৮, ৯২, ৯৮তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ আব্দুল গণী, মোমেনশাহী
সুওয়াল: ইসলঅমের নামে হরতাল ও লংমার্চ করা কি?
জাওয়াব: হারাম ও কুফরী।
{দলীলসমূহ: তাফসীরে আহকামুল কুরআন, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ৩, ৯, ১৬, ৯১, ৯৩, ৯৪, ১০৭তম সংখ্যা।}
সুওয়াল: পুরুষদের জন্য লাল রুমাল পরিধান করা যাবে কিনা?
জাওয়াব: পুরুষদের জন্য লাল রুমাল, লাল কোর্তা, লাল লুঙ্গী ইত্যাদি পরিধান করা জায়িয নেই, হারাম। হালাল জানা কুফরী।
{দলীলসমূহ: তিরমিযী শরীফ, তানবীরুল আবছার, ফতওয়ায়ে শামী, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৪৭, ৭১, ১০৪তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ সিরাজুদ্দীন, নোয়াখালী
সুওয়াল: লক্বব ব্যবহার করা কি?
জাওয়াব: সুন্নত। সুন্নতকে অস্বীকার করা কুফরী।
{দলীলসমূহ: খুলাছাতুত তাফসীর, মিশকাত শরীফ, মানাকিবে আবূ হানীফা, কিতাবুল আলক্বাব প্রথম খন্ড, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৮২, ৯৪, ৯৮তম সংখা।}
মুহম্মদ আব্দুল্লাহ, টাঙ্গাইল।
সুওয়াল: হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধর বা আওলাদগণ বাংলাদেশে আছে কিনা?
জাওয়াব: হ্যাঁ, আছে। যারা সাইয়্যিদ বংশের উনারাই আওলাদে রসূল।
{দলীলসমূহ: তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, সিররুশ শাহাদাতাইন, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৯৮তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম, গাইবান্ধা।
সুওয়াল: চুলে ও দাড়িতে কলপ ব্যবহার করা যাবে কিনা?
জাওয়াব: না, চুলে ও দাড়িতে কলপ ব্যবহার করা জায়িয নেই। কারণ এতে প্রলেপ পড়ে যায়। যার কারণে ওযূ গোসল হবে না এবং নামায-কালামও শুদ্ধ হবে না কলপ লাগানো অবস্থায় মারা গেলে সে ব্যক্তির জানাযা নামায পড়াও জায়িয হবে না। চুল, দাড়ি বেঁছে গোসল করিয়ে তারপর জানাযা নামায পড়তে হবে।
{দলীলসমূহ: মুসলিম শরীফ, শামায়িলে তিরমিযী, আশয়াতুল লুমুয়াত, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১৯, ৩২, ৪২, ৬০, ৬৬, ৬৭, ৭৫, ৯৫, ১০৯, ১২৫তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ সাইদুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি
সুওয়াল: যে ইমাম ছাহেব দাড়ি কাটে তার পিছনে নামায পড়া যাবে কিনা?
জাওয়াব: যে ইমাম ছাহেব এক মুষ্ঠির নীচে দাড়ি কাটে ও ছাটে সে ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত। আর ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। উক্ত নামায দোহরানো ওয়াজিব।
{দলীলসমূহ: ফতওয়ায়ে শামী, জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ, কাওয়াহিরুল ফিক্বাহ, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ৩, ৬, ১৬, ৩০-৩৪তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ রুহুল কুদ্দুস, নওগাঁ।
সুওয়াল: মাযহাব মানা কি?
জাওয়াব: ফরয। যে ব্যক্তি মাযহাব মানবেনা সে গুমরাহ বা পথভ্রষ্ট। আর মাযহাবকে অস্বীকার করা বা বিরোধিতা করা কুফরী।
{দলীলসমূহ: তাফসীরে আহমদিয়া, জামিউল জাওয়ামি, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ- ৩, ১৬, ২৯, ৪৭, ১১৩, ১১৭তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম।
সুওয়াল: কোন ধরনের টুপি পরিধান করা খাছ সুন্নত?
জাওয়াব: গোল, সাদা, চার টুকরা বিশিষ্ট, সুতী কাপড়ের টুপি, যা সবদিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকে বা চেপে থাকে।
{দলীলসমূহ: শরহে মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, যুরকানী, ইসরারুল আউলিয়া, আনিসুল আরওয়াহ, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ২, ১৫, ৫৩-৫৯, ১১৪তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ নূরুন নবী, সন্দীপ, চট্টগ্রাম।
সুওয়াল: টঙ্গীর ইজতেমাকে গরীবের হজ্জ বলা সঠিক কিনা?
জাওয়াব: না, সঠিক নয়। বরং সম্পূর্ণরূপে কুফরী। কারণ যা হজ্জ নয় তাকে হজ্জ বলা দ্বীনের মধ্যে প্রকাশ্য ইফরাত ও তাফসীতের শামীল।
{দলীলসমূহ: মুসলিম শরীফ, শরহে আকাঈদে নছফী, তাকমীলুল ঈমান, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৩৫-৪৬, ১০৩তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন, রাঙ্গামাটি
সুওয়াল: জলি (উচ্চস্বরে) যিকির করা যাবে কিনা?
জাওয়াব: জলি যিকিরে হদ বা সীমা হচ্ছে কবুতরে আওয়াজের ন্যায় গুমগুম আওয়াজ। ইচ্ছাকৃতভাবে এর চেয়ে অধিক উচ্চ আওয়াজে যিকির করা জায়িয হবে না।
{দলীলসমূহ: তাফসীরে রহুল বয়ান, রুহুয় মায়ানী, কুরতুবী, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ২১তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ আব্দুস ছালাম, কুড়িগ্রাম
সুওয়াল: কুরআন শরীফ-সুন্নাহর শরীফ-এর দলীল বাদ দিয়ে মুরুব্বীদের বরাত দিয়ে ফতওয়া দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে কিনা?
জাওয়াব: কোন মুরুব্বী শরীয়তের দলীল নয়। মুরুব্বীকে দলীল হিসেব পেশ করা কুফরী। শরীয়তের দলীহ হচ্ছে- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস। এর বিপরীত কারো কোন দরীল গ্রহণযোগ্য নয়।
{দলীলসমূহ: তাফসীরে আহকামুল কুরআন, মুসলিম শরীফ, নূরুল আনোয়ার, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৯৬তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ সায়াদাফ জুবায়ের, পটুয়াখালী
সুওয়াল: কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী পরিধান করলে সুন্নত আদায় হবে কিনা?
জাওয়াব: না কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী সুন্নত নয় বরং বিদয়াত। অতএব সুন্নত বললে কুফরী হবে।
{দলীলসমূহ: বুখারী শরীফ, সীরাতুন নবী, গুলজারে সুন্নত, মাসিক আল বাইয়িনাত শরীফ ১১, ৪৭, ৪৯, ৮৬, ১০০, ১১৮তম সংখ্যা।)
মুছাম্মত নাদিরা নূর দিনা, মৌলভীবাজার
সুওয়াল: পবিত্র কা’বা শরীফ ও মদীনা শরীফ-এর ছবি যুক্ত জায়নামাযে নামায পড়া কি?
জাওয়াব: নাজায়িয ও হারাম। আল্লাহ পাক উনার শেয়ারসমূহের তা’যীম বা সম্মান করা, ফরয়-ওয়াযিবের অন্তর্ভুক্ত।
{দলীলসমূহ: তাফসীরে খাযেন, ক্বাযীখান, খুলাছাতুল ফতওয়া, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ- ২০, ৪৭, ৮১, ৮৯, ১১৪তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ তানবীরুদ্দীন খান, চট্টগ্রাম
সুওয়াল: মাথা মুণ্ডন করা কি সুন্নত?
জাওয়াব: শুধুমাত্র হজ্জ ও উমরাহ আদায় কালে মাথা মু-ন করা সুন্নত। অন্য সময় মাথা মু-ন করা সুন্নতের খিলাফ। হজ্জ ও উমরাহ ব্যতীত অন্য সময় বাবড়ী চুল রাখাই খাছ সুন্নত। যথা- (১) জুম্মা তথা কানের লতি বরাবর, (২) লিম্মা তথা কানের লতি ও ঘাঢ়ের মঝামাঝি এবং (৩) ওফরা তথা ঘাড়ের থেকে একটু উপরে। আরেক প্রকার হচ্ছে, কানের মাঝা মাঝি যাকে নিছফু উযুনাইনে বলা হয়।
{দলীলসমূহ: মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, সীরাতে হালবী, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ২৮, ৩৭, ৪৭, ৫২, ৫৩, ৯১, ৯৮, ১০৫তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ সাইয়্যিদুল হক, ফেনী
সুওয়াল: যে ইমাম-খতীব তামাক, সিগারেট, বিড়ি ইত্যাদি নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করে তার পিছনে নামায পড়া যাবে কি?
জাওয়াব: তামাক, বিড়ি, সিগারেট ইত্যাদি খাওয়া বা পান করা সাধারণভাবে মাকরূহ। কেউ কেউ হারাম ও ফতওয়া দিয়েছেন। সূতরাং যে ইমাম এ সকল নেশাজাতীয় দ্রবাদি পান করে বা খায় তর পিছনে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী হবে। আর নামায মাকরূহ তাহরীমী হলে দোহরানো ওয়াজিব।
{দলীলসমূহ: ফতওয়ায়ে আজিজিয়া, ফতওয়ায়ে আমিনীয়া, দুররে ছামীন, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ২৮, ২৯, ৬৮, ৮৬, ৮৮তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ মামুনূর রশীদ, কুমিল্লা
সুওয়াল: মৃত্যু ব্যক্তিকে কবররে রেখে তালকীন দেয়া কি?
জাওয়াব: খাছ সুন্নত। অস্বীকার করা কুফরী।
{দলীলসমূহ: মু’জামুল কবীর, বুবুশুল মারাম, নূরুছ ছুদূর, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৭০তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ রবিউল ইসলাম, বরিশাল
সুওয়াল: তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া যাবে কিনা?
জাওয়াব: বিদয়াত ও নাজায়িয।
{দলীলসমূহ: ফতহুল ক্বাদীর, খুলাছাতুল ফতওয়া, আইনী শরহে হিদায়া, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৭, ১৩, ৪১, ৫৩, ৮৬, ৯০, ৯৮, ৯৪, ৯৭, ৯৮, ৯৯, ১০০, ১০৬, ১০৭, ১০৮তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ শাহজালাল, মাধবদী, নরসিংদী
সুওয়াল: যে পীর ছাহেব ছবি তোলে, বেপর্দা হয় তার কাছে বাইয়াত হওয়া যাবে কিনা?
জাওয়াব: না, তার কাছে বাইয়াত হওয়া জায়িয নেই। তারা পীর নয়, বরং পীর নামের কলঙ্ক। যদি কেউ এ প্রকার পীরের হাতে বাইয়াত হয়ে থাকে তাহলে তার জন্য ওয়াজিব হলো এ পীরকে ছেড়ে অন্য হক্কানী-রব্বানী পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয।
{দলীলসমূহ: ফতহুল ক্বাদীর, বাহরুর রায়িক, ক্বাযীখান, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১০৮, ১২৮তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ নূর আলম, চাঁদপুর
সুওয়াল ক্বলবী যিকির করা কি?
জাওয়াব: ক্বলবী যিকির করা ফরয। যারা ক্বলবী যিকির করবে না তারা চরম ফাসিক।
(দলীলসমূহ: তাফসীরে খুলাছা, জামিউল ফুছুলীন, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৯৪, ১০৬তম সংখ্যা।}