তাহারা কোন প্রতিবাদ করিলেন না। অথচ উহাদের আক্বীদা বিশ্বাস অনুযায়ী জোরদার প্রতিবাদ করার মত গুরুতর বিষয় ছিল (যাহা একটু পরে বর্ণিত হইবে)।
ইসলামের নাম দিয়া রাজনীতির ভাগ বাটোয়ারায় ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র হইয়া সাইনবোর্ড সর্বস্ব দল উপদলে পরিণত হইলেও তাহাদের বিদয়াতী ও গোমরাহী তথা দেওবন্দী আক্বীদা ধারণায় কিন্তু তাহারা এখনও বদ্ধমূল। এই ক্ষেত্রে তাহারা রসুনের মত। রসুন কোয়া কোয়া হইলেও সব রসুনের গোড়া যেমন এক তেমনি উহারা স্বার্থ-সংঘাতে বহুধাবিভক্ত হইলেও আক্বীদা-বিশ্বাসে সব এক বিন্দুতে রসুনের গোড়ার মত।
এইক্ষেত্রেই তথাকথিত শাইখুল হাদীছ বনাম মুফতে আমিনী বনাম জাহিল খতীবের বড়ই মিল। উহাদের দৃষ্টিতে ছবি তোলা, নারী নেতৃত্ব গ্রহণ করা জায়েয আর আল্লাহ পাক এর হাবীবের শানে মীলাদ শরীফ পড়া বিদয়াত ও শিরক। (নাঊযুবিল্লাহ)
উহাদের দৃষ্টিতে ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত আর পহেলা বৈশাখ বড় নিয়ামত। (নাউযুবিল্লাহ)
ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনে উহাদের বড় বড় ফতওয়া জাহির হয় কিন্তু সারা দেশে থার্টি ফার্স্ট নাইট, ভালবাসা দিবস, বন্ধু দিবস, বাবা দিবস, মা দিবসের নামে যে বিজাতীয় সংস্কৃতি ও বেহায়াপনার বিস্তার ঘটিয়াছে সেই ব্যাপারে উহারা রীতিমত অন্ধ, …. ও বধির। সেই ব্যাপারে উহাদের কোন আওয়াজ নাই, প্রতিকার নাই, ফতওয়া নাই।
দূর্গাপুজা এই দেশে যত ঘনঘটা সরকারী সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতায় পালিত হয় খোদ ভারত বা নেপালেও তাহা হয়না। অথচ সেই দূর্গাপুজা, জন্মাষ্টমী, বুদ্ধ পূর্ণিমার সরকারী বন্ধে উহাদের কোন প্রতিবাদ নাই কিন্তু ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত শবে বরাত বন্ধে উহাদের খুব প্রতিক্রিয়া। উহাদের দেহ-মনে খুব জ্বালজ্বালা। তাই উহারা এখন শবে বরাতের সরকারী বন্ধ পর্যন্ত তুলিয়া দিবার জন্য উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছে।
এইদিকে যেই মুবারক রাত্রি শবে মেরাজে নামায ফরয হইল সে রাত্রির মর্যাদা দানেও তথা তার জন্য সরকারী বন্ধের দাবীতে উহাদের কোনই আরজু নাই। উহারা এমনি মুসলমান বটে। উহারা কেমন মুসলমান তাহা বিশেষভাবে প্রমাণিত হয় ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনে উহাদের মন-মানসিকতায়, আক্বীদা ফতওয়ায়।
যাঁহার উসীলায় উহারা মুসলমান হইল, ঈমান পাইল, এমনকি নিজেরাও সৃষ্ট হইল, যাঁহাকে সৃষ্টি না করিলে আল্লাহ পাক কিছুই সৃষ্টি করিতেন না, সেই সৃষ্টির মূল, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত দিবসকে তথা ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করাকে উহারা তুলনা করে জন্মাষ্টমীর সাথে, খ্রীস্টমাস ডে’র সাথে।
এই ফতওয়ায় হদছ, কমিনী, মাহিউদ্দিন, খবীছ কারোই কোন মতানৈক্য নাই। দেওবন্দী আক্বীদায় এই যুগেও উহারা সব ভাই ভাই। আরেকটি ব্যাপারে উহাদের মধ্যে দারুন সমঝোতা ও একান্ত মতৈক্য রহিয়াছে। তাহা হইল জোট সরকারের নেক নজর ফাড়া। যে কারণে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত ঘোষণা দিলেও প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন তারা ঠিকই আনন্দে স্বগর্বে ও জাকজমকপূর্ণভাবে পালন করিয়াছেন। সংবাদভাষ্যঃ
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দিন দিন উজ্জ্বল হচ্ছে
– মুফতি আমিনী, এমপি
স্টাফ রিপোর্টারঃ প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতী ফজলুল হক আমিনী এমপি তার সাথে সাক্ষাৎ করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
পরে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে লালবাগ মাদ্রাসায় এক দুআর মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মোনাজাতের প্রাক্কালে মুফতী আমিনী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বলিষ্ঠ পরিচালনায় বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দিন দিন উজ্জ্বল হচ্ছে।
এদিকে প্রাপ্ত খবরে আরো জানা যায় ম্যাডামের জন্মদিন উপলক্ষে আমিনী সাহেব গরু জবাই করে ভূরি ভোজনের ব্যবস্থাও করেছিলেন। অনেককেই আপ্যায়নও করেছেন।” (দৈনিক ইনকিলাব ১৬ই আগস্ট, ০৬)
উল্লেখ্য এই খবর হদছ, মাহিউদ্দীন, খতীব, শফি, ইজহার গং সবাই জানিয়াছেন। ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি পালন করা বিদয়াত ফতওয়া দিলেও মহিলা প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে তাহার সাথে বেপর্দা সাক্ষাত, জন্মদিনে তাহাকে অভিনন্দন জানানো, মাদ্রাসায় তাহার জন্য গরু জবাই করিয়া খাওয়ানো ইত্যাদি কোনো কাজেই কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাইলেননা, কোন প্রতিবাদ জানালেন না। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় তারা সব প্রতিবাদ জানাইয়া রাখিয়াছেন আগামী ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনে বাধা দেওয়ার জন্য, বিরোধিতা করিবার জন্য। তখন জন্মাষ্টমী ও খ্রীস্টমাস ডের সাথে তুলনা করিবার জন্য। আর এখন জোট সরকারের নেক নজর লাভ ও বিরাগভাজন হইবার ভয় তাহাদেরকে তাহাদের মনগড়া ফতওয়া উচ্চারণে বিরত রেখেছেন।
মূলতঃ তাহাদের অন্তরে যতটা না আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বত তাহার চাইতে অনেক বেশী তাহাদের ম্যাডামের মুহব্বত। ম্যাডামের সাক্ষাত, তাহার হাতের নমিনেশনের কদর ইত্যাদি ইত্যাদি। বস্তুত আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি এহেন বেয়াদবি ও মুহব্বতহীনতার কারনেই তাহারা এতটা নিকৃষ্ট ধর্মব্যবসায়ী হইয়াছে। হাদীছ শরীফে উহাদের সৃষ্টির সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট বলা হইয়াছে।
-মুহম্মদ তারিফুর রহমান, ঢাকা।
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫