-মুহম্মদ সাদী
পূর্ব প্রকাশিতের পর
আজমীর শরীফে চিশ্তিয়া তরীক্বার ইমাম, কতুবুল আক্তাব, সুল্তানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ, হযরত খাজা সাইয়্যিদ মুঈনুদ্দীন হাসান চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপন/ অনুপম কারামত-এর বহিঃপ্রকাশ
আজমীর শরীফ পৌছেই তিনি ইমামুশ্ শরীয়ত, ওয়াত্ তরীক্বত, ইমামুল আইম্মা, মুজাদ্দিদে যামান, সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল আলম, হাবীবুল্লাহ, হযরত খাজা সাইয়্যিদ মুঈনুদ্দীন হাসান চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাযার শরীফ যিয়ারতে গেলেন। প্রত্যক্ষ যোগাযোগের অনুপম ক্ষণে কতো কথা বলার ও শোনার! ভাব বিনিময়ের কতো আয়োজন! তবু বেদনা-বিমুগ্ধ মননে কেবলই নির্বাক হয়ে থাকা। অন্তর স্পর্শ করা অনুভূতির তীব্র দহন। অপার স্নিগ্ধতায় হৃদয় ছুঁয়ে যাবার মুহূর্তেও বেদনার তোলপাড়। পর্দার উন্মীলনে শোনা ও বলার অবাধ সুযোগেও সযতেœ গুছিয়ে রাখা এতোদিনের ইচ্ছেগুলো বাঙ্ময় হতে পারে না। হয়তো প্রত্যক্ষ সাক্ষাতের এমন মুহূর্তে কথা বলার চেয়ে না বলার মুগ্ধতায় ইত্মিনান বেশী। তাই নির্বাক হয়ে থাকা। মহা মিলনের এরূপ অব্যাহত ধারায় মন চায় মুখের কথার মৃত্যু ঘটুক, জগৎ-সংসার লয় পাক, মিলন-বিরহ একাকার হয়ে যাক। মন চায়, এমন অন্তর্গূঢ় মধুর আবেশ কখনো ফুরিয়ে না যাক।
অব্যক্ত বেদনার আরো ব্যাপ্তি, গোপন আলাপন, ভাব বিনিময় ও আনন্দ-বেদনার লেনদেন শেষে দু’জনের অভিন্ন ইচ্ছে ব্যতিরেকে আজমীর শরীফ থেকে আসা যাবে না। তাই মাযার শরীফ-সংলগ্ন একটি হোটেলে কিছুদিন থাকা। ওলীয়ে মাদারজাদ, ফখ্রুল আওলিয়া, লিসানুল হক্ব, ছাহিবে ইসমে আ’যম, ছাহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি ক’দিন থাকার জন্য ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, ছাহিবে কুন ফাইয়াকুন, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ, হযরত খাজা সাইয়্যিদ মুঈনুদ্দীন হাসান চিশ্তী সানজারী ছুম্মা আজমিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাযার শরীফের একান্ত অদূরে এমন একটি হোটেলে উঠেছেন, যেখান থেকে যখন তখন মাযার শরীফে যাওয়া আসা করা যায়। সব সময় তিনি মাযার শরীফই থাকেন। বিশেষ প্রয়োজন না হলে হোটেলে যান না, যেতে মন চায় না।
নিগূঢ় নৈকট্যের শীর্ষ সোপানে উপনীত হয়েও আরো নৈকট্য বাকী থাকে। কাঙ্খিত গন্তব্যের অথৈ নাগাল পর্যন্ত শুধু যেতে চাওয়া হয়, যাওয়া হয় না। তাই কোশেশের শেষ থাকে না। কামিয়াবীর মন্জিলে উপনীত হয়েও আরো পাবার অগ্রযাত্রায় অবিরত দগ্ধ হওয়াকে সূক্ষ্মদর্শী ওলীআল্লাহগণ আল্লাহ পাক এবং তাঁর প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মা’রিফাত ও মুহব্বত হাছিলের “চূড়ান্ত ধাপ” হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। এমন অব্যক্ত যন্ত্রণাকাতরতা সকল মাহবুব ওলীগণের জন্যই আল্লাহ পাক বরাদ্দ করে রেখেছেন। আল্লাহ পাক অসীম। আল্লাহ পাক-এর মুহব্বত-মা’রিফাতও অসীম। আল্লাহ পাক-এর কায়মক্বাম, রউফুর রহীম, খইরুল আলামীন, ছাহিবুল ওসীলাহ, রহমতুল্লিল আলামীন, মাশুকে মাওলা, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বতও সীমাহীন। প্রেক্ষিত অবস্থায় পাবার আনন্দ ও না পাবার বেদনায় ভিন্ন মাত্রায় অনুক্ষণ আবর্তিত হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।
ওলীয়ে মাদারজাদ, মুস্তাজাবুদ দা’ওয়াত, আফজালুল ইবাদ, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এমন যন্ত্রণাকাতরতা শৈশবকাল থেকেই। মাজার শরীফে কুতুবুল আক্তাব, সুলতানুল মাশায়িখ, হাবীবুল্লাহ, হযরত খাজা সাইয়্যিদ মুঈনুদ্দীন হাসান চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সঙ্গে তাই কখনো তাঁর নৈকট্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় না, যোগাযোগ ও ভাব বিনিময় শেষ হয় না এবং আলাপচারিতা এবং লেনদেনও ফুরায় না।
এদিকে মাযার শরীফ সংলগ্ন এলাকায় শায়িত রয়েছেন সাতশত হিজরীর নায়েবে মুজাদ্দিদ, ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদুর রসূল, হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আবূবকর মুজাদ্দিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাধ্যমে হিদায়েতের যে আঞ্জাম বাস্তবায়িত হয়েছে এবং তাঁর মুবারক সন্তান আশিকে সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, কুতুবুল আলম, হুজ্জাতুল ইসলাম, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামে আ’যম, ছাহিবে সুলতানিন্ নাছীর, ওলীয়ে মাদারজাদ, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ দিল্লুর রহমান মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর মাধ্যমে জগৎ জুড়ে আল্লাহ পাক এবং তাঁর প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বত ও মা’রিফাত-সমৃদ্ধ হিদায়েতের যে অমিয় ধারা প্রবহমান, হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আবূ বকর মুজাদ্দিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রাণ পুরুষ।
(চলবে)