আজমীর শরীফে চীশ্তিয়া তরীক্বার ইমাম, কুতুবুল আক্তাব, সুল্তানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ, হযরত খাজা সাইয়্যিদ মুঈনুদ্দীন হাসান চীশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপন/
অনুপম কারামত-এর বহিঃপ্রকাশ
পূর্ব প্রকাশিতের পর
এখন বিদায়ের সময়। সালাম বিনিময় শেষে উভয়ে উভয়ের কাছ থেকে বিদায় নিলেন। এতোদিন মাযার শরীফে অবস্থানের স্মৃতি কাতরতায় অন্তর আচ্ছন্ন। বিদায় মুহূর্তে মনে হচ্ছে, কতো স্মৃতি তিনি রেখে গেলেন আর কতো স্মৃতি তিনি নিয়ে গেলেন। জীবনে কামিয়াবীর গন্তব্য সোপান বহুধা বিভক্ত। কামিয়াবীর আপেক্ষিক শীর্ষ ধাপ কেবল অনুভূতি ও প্রত্যাশায় থাকে। পরিণত ধাপে অধিষ্ঠিত না হয়ে এর স্বরূপ জানা যায় না। কিন্তু ওলীয়ে মাদারজাদ ফখ্রুল আওলিয়া, কুতুবুয্যামান, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মুজাদ্দিদে আ’যম পুত্রের কামিয়াবীর অবস্থান জেনে পরম আনন্দে বিভোর। আল্লাহ পাক এবং তাঁর প্রিয়তম হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক মনোনীত মুজাদ্দিদে আ’যম পুত্রের আলীশান মর্যাদা-মর্তবা অবহিত হয়ে তিনি শুকরানা সিজদা করেন এবং বিনম্র মমতায় ছালাত ও সালাম পেশ করেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন,ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে।
দেশে ফেরার সময় সমাগত। রেল স্টেশনের দিকে রওয়ানা হবেন তিনি। অন্তর ছুঁয়ে যাওয়া স্নিগ্ধতা এবং অপার রহমত, বারাকাত ও ছাকিনা পরিবেষ্টিত মাযার শরীফ থেকে পরম শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি বেরিয়ে আসছেন। আশে পাশে কতো মানুষের ভিড়। সকলেই আপন আপন গন্তব্যে ধাবমান, নিজ প্রয়োজন পূরণের প্রয়াসে ব্যাপৃত। কেউ জানছেনা হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মনের গভীরে আনন্দ- বেদনার কী তোলপাড়! আসলে আত্মীয়-স্বজন এবং অনেক দিনের পরিচিত জনেরাতো দূরের কথা, আপন পরিবার-পরিজনেরও কেউই কাউকে নিবিড় করে জানতে চায় না, জানতে পারেও না। বিশেষ ব্যতিক্রম না হলে মা-বাবা, বিশেষতঃ আপন মুর্শিদ ছাড়া কেউই কাউকে বোঝে না। এরূপ একাকীত্বে মানুষ কতো অসহায়, কতো একা! এ একাকীত্ব ও অসহায়ত্বের তাৎপর্যের মর্ম জানলে মানুষ আত্মজ্ঞ হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে আরিফ হতে পারে।
আফ্যালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি বিদায় বেলায় মাযার শরীফের দিকে বার বার চোখ ফেরান। জানা অভিজ্ঞতায় মন আচ্ছন্ন হয়, ওলী আল্লাহগণ মুবারক জীবদ্দশায় যমীনে বেমেছাল, ইন্তিকালে কবরেও বেমেছাল। কবরবাসী ওলীগণকে দিয়েও আল্লাহ পাক তাঁর উদ্দিষ্ট কাজ সমাধা করেন। জগৎ-সংসার পরিচালনায় নিরন্তর নেপথ্য আঞ্জাম দিয়ে থাকেন। মুজাদ্দিদে আ’যম পুত্রের জন্য প্রাপ্ত মুবারক হাদিয়া তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
ধীর গতিতে চলতে চলতে তিনি রেল স্টেশনে পৌঁছে গেলেন। এক সময় ট্রেনে উঠে বসলেন। মুজাদ্দিদে আ’যম পুত্রের চেহারা মুবারক, মাযার শরীফের নানা স্মৃতি এখন দৃষ্টির সীমানায়। ট্রেন চলছে। কিন্তু এ মুহূর্তে দেশে ফেরার একটুও যেনো তাড়া নেই। আজমীর শরীফে থেকে যাবার ইচ্ছেও এখন নেই। চেনা পথ, গাছপালা, আঁকা বাঁকা মাঠ, বাড়ীঘর, প্রসারিত দিগন্ত কোন কিছুই এখন আর ভালো লাগছে না। মনে হয় পৃথিবীর অস্তিত্ব নেই। এখন আখিরাতেরও ভাবনা নেই। নিজের গভীরে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে পরওয়ারদিগার আল্লাহ পাক এবং তাঁরই প্রিয়তম হাবীব, মাশুকে মাওলা, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দিকে কখন সমর্পিত হয়ে গেছেন তিনি নিজের অজান্তেই। অটুট এ সমর্পণের নিমগ্নতায় এখন কেবলই নিজেকে খুঁজে না পাওয়া।
ট্রেন এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে কতো পথ পাড়ি দিয়েছেন, তা জানা নেই। পথ চলা শেষে একসময় তিনি বাড়ী পৌঁছবেন। পরম মমতায় ছাহিবে লাওলাক, মাশুকে মাওলা, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক পরশমাখা পাগড়ী মুজাদ্দিদে আ’যম পুত্রকে উপহার দিবেন। পিতা-পুত্রের সে অনুপম মহামিলন কতো মধুময় ও বরকতপূর্ণ হবে, এ মুহূর্তে তাই তাঁর মনে ভিড় করছে। আল্লাহ পাক এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ লক্ষ্যস্থল মহীয়ান মুজাদ্দিদে আ’যম পুত্র আলোক বর্তিকা হয়ে জগৎ-সংসারের অন্ধকার দূর করবেন, এ মধুর ভাবনায় হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি পরম প্রশান্তিতে ইত্মিনান। (চলবে)