একবার নয়, বারবার মদের প্রতি আসক্তিই প্রমাণ করল তারা মদ্যপ ॥ তথাকথিত ইসলামী রাজনীতির তল্পী বাহকরা নয়, সাধারণ ধর্মপ্রাণদের তীব্র প্রতিক্রিয়ায়ই কাজ হয়েছে

সংখ্যা: ১১৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ‘পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে যদি কোন নেক কাজ সম্পন্ন হয় আর পশ্চিম প্রান্ত থেকে কেউ তা সমর্থন করে তবে সে তার সমান ছওয়াব পাবে। আবার পশ্চিম প্রান্তে যদি কোন পাপ কাজ সমাধা হয় এবং পূর্ব প্রান্ত থেকে কেউ তা সমর্থন করে তবে সমর্থনকারী উক্ত পাপ কাজ সম্পন্নকারীর সমান গুনাহে গুনাহ্গার বলে গণ্য হবে।” পাশাপাশি কেউ যদি প্রকাশ্যে পাপকে সমর্থন না করে কিন্তু কোন প্রতিবাদ না করে চুপ থাকে; আত্মরক্ষা বা কৌশলজনক অবস্থানে থেকে সুবিধা হাছিল করতে চায় তার অবস্থানটিও ইসলামের দৃষ্টিতে অচিহ্নিত বা অনির্নীত নয়। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যে কোন অন্যায় দেখে চুপ থাকে সে বোবা শয়তান।”

বলাবাহুল্য, বর্ণিত এসব হাদীছ শরীফের কথা তথা ইসলামের কথা আমাদের দেশের নামধারী ইসলামী রাজনীতিকদের অজানা নয়। আবার নামধারী অনেক আলিম থাকবে যারা মানুষকে হারাম থেকে বেঁচে থাকার জন্য বলবে কিন্তু নিজেরাই তাতে মশগুল হবে। এ তথ্যটি বোধকরি এখন সাধারণেরও অজানা নয়।

যেমন, হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে, মি’রাজ শরীফের ঘটনায় আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “একদল মাওলানা আগুনের হালকায় নিজ নাড়ি-ভুড়িকে কেন্দ্র করে চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। অথচ তাদেরই ওয়াজ- আমল করে অনেক লোক তাদেরই পাশ দিয়ে জান্নাতে চলে যাচ্ছে। আর জান্নাতে যাওয়ার সময় যখন তাদেরকে প্রশ্ন করা হচ্ছে,‘ হুযূর! আপনাদের ওয়াজের উছীলায় আজকে আমরা জান্নাতে যাচ্ছি, তাহলে আপনারা এভাবে জাহান্নামের আগুনে জ্বলছেন কেন?’ তখন তারা কুণ্ঠিতভাবে জবাব দিবে, ‘আমরা তোমাদেরকে হারাম থেকে বেঁচে থাকতে বলেছিলাম কিন্তু নিজেরা হারামকে সমর্থন করেছিলাম। আমরা তোমাদেরকে আমল করতে বলেছিলাম কিন্তু নিজেরা আমল থেকে বিরত ছিলাম।’

প্রসঙ্গতঃ অজপাড়াগায়ের সবচাইতে মূর্খ লোকটিকেও যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে, ‘মদ খাওয়া কি?’ বলার অপেক্ষা রাখেনা, এ প্রশ্নটির প্রেক্ষিতে তৎক্ষণাতই তার মুখে ফুটে উঠবে, ঘৃণা-শ্লেষ আর আতঙ্কের এক তীব্র প্রতিচ্ছবি। মদ সম্পর্কে এখনও সাধারণের অনুভূতি এতই প্রবল যে; তারা মদ শব্দ উচ্চারণেও এক অব্যক্ত শ্লেষ পোষণ করে থাকে। অনেকে এও মনে করে থাকে, মদ উচ্চারণ করলেও মুখ অপবিত্র হয়, ওযূ ভেঙ্গে যায়।

কারণ, এদেশের প্রেক্ষাপটে মদের বিরুদ্ধে না বলে কেউ মাওলানা ওয়ায়েজ হিসেবে নিজের নাম প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনা। খোদ কুরআন শরীফে স্পষ্ট ভাষায় মদের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহ্ পাক বলেছেন, “হে মু’মিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক তীর এসব শয়তানের অপবিত্র কাজগুলো থেকে বেঁেচ থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।” (সূরা মায়িদা/৯০)

আল্লাহ্ পাক আরো বলেছেন, “শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহ্ পাক-এর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখনও কি নিবৃত্ত হবে?” (সূরা মায়িদা/৯১)

আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আতিয়া সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদ সংশ্লিষ্ট দশজনের প্রতি লা’নত করেছেন, (১) যে মদ তৈরী করে, (২) যে মদ তৈরীর ফরমায়েশ দেয়, (৩) যে মদ পান করে, (৪) যে মদ বহন করে, (৫) যার জন্য মদ বহন করা হয়, (৬) যে মদ পান করায়, (৭) যে মদ বিক্রি করে, (৮) যে এর মূল্য ভোগ করে, (৯) যে মদ ক্রয় করে, (১০) যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্)

হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আল্লাহ্ পাক-এর লা’নত মদের উপর, মদ পানকারীর উপর, যে মদ পান করায় তার উপর, মদের ফরমায়েশ দাতার উপর মদ বহনকারীর উপর এবং যার জন্য বহন করা হয় তার উপর।” (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ্)

এতদ্বপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের মনে এখনও মদের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদী মানসিকতা দীপ্তমান। কিন্তু সাধারণ মানুষ অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলো যে, বিগত নির্বাচনে যারা ইসলামের নামে তাদের কাছে ভোট চেয়েছিল শুধু মন্ত্রী, এম.পি হবার জন্য নয় বরং নির্বাচিত হলে দেশকে তারা ইসলামীকরণ করবেন, দেশ থেকে মদ, জুয়া, সুদ, বেপর্দা, বেশরা তিরোহিত করবেন। এই ওয়াদা যারা দিয়েছিলেন তারা যেন আজ কোন এক অব্যক্ত রহস্যময় কারণে সে ওয়াদার কথা বেমালুম চেপে যাচ্ছেন। মদ বন্ধ করা তো দূরের কথা বরং মদের প্রবাহ আরো সহজতর ও সুলভ করার ব্যাপারে বর্তমান সরকারের একের পর এক গৃহীত পদক্ষেপগুলোর বিরুদ্ধে তাদের কোন ভূমিকাই নেই।

স্মরণ করা যেতে পারে, গত ৪ঠা মে ২০০২ যখন সরকার যমুনা ডিস্টিলারি কোম্পানীকে দেশের দ্বিতীয় মদ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানরূপে লাইসেন্স দেয় তখন এসব ক্ষমতাসীন নামধারী ইসলামী সাংসদ তথা ইসলামী দলের লোকেরা কেউই টু শব্দ করেনি।

কিন্তু ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিলো জনগণের মাঝে। তাদের সেই প্রতিক্রিয়া পত্রিকার পাতায় পত্রস্থ হয়েছিলো। কিন্তু কোন মাওলানা মন্ত্রী, মুফাস্সিরে কুরআন বা মুফতী সাংসদ অথবা তথাকথিত শাইখুল হাদীস বা খতীবের জোরালো প্রতিবাদ লিপি পত্রিকার পাতায় পত্রস্থ হয়নি। এমনকি কোন মঞ্চ হতেও তাদের আওয়াজ উঠেনি। সাধারণ মানুষ তাতেও হতবাক হয়েছিলো! তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তাই ক্রমশঃই চাপা বিস্ফোরণের পর্যায়ে পৌঁছেছিল। বেকায়দাটা সরকার সম্যক উপলব্ধি করতে পেরেছিলো।

অবশেষে ১৩ই জুন সরকারী বিজ্ঞাপনে সরকার মদ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করে দেয়। এরপরে ইসলামী নামধারী দলগুলোর শুরু হয় স্বভাবজাত মুনাফিকী। ১৫ই জুন কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে খতীব ও জনৈক মুফতী সাংসদের অভিনন্দন পত্রস্থ হয়। অথচ এর আগে তাদের কোন প্রতিবাদ পত্রস্থ হয়নি। অর্থাৎ এর আগে তারা কোন প্রতিবাদ করেননি।  কিন্তু যখন অবস্থার প্রেক্ষিতে সরকার মদের লাইসেন্স বাতিল করল তখন সরকারকে অভিনন্দনের নামে তারা ধর্মপ্রাণ দেশবাসীকে বুঝাতে চাইল যে, মদ বন্ধের আন্দোলনে তারাও সম্পৃক্ত। মূলতঃ তারা ইসলামী দাবী করলেও যখন যেমন তখন তেমন সাজতে বা নিজের রং বার বার পাল্টাতে গিরগিটির চেয়েও বেশী পারদর্শী।

বলাবাহুল্য, এবারেও তারা সেই পারদর্শীতা আরো বেশী করে প্রমাণ করেছেন। প্রস্তাবিত বাজেটে (২০০৩) সরকার যখন মদের দাম কমালো তখন সারাদেশের মুসলমানদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া তৈরী হলেও দেশের সব সংবাদপত্রে এমনকি ইসলাম বৈরী বলে প্রচারিত সংবাদপত্রগুলোতেও যখন মন্তব্য তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হল তখনও তথাকথিত ইসলামী রাজনীতির তল্পীবাহক কোন মন্ত্রী, এম.পি অথবা চারদলীয় ঐক্যজোটের শরীকদার তথাকথিত শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মাওলানা কেউই কোন টু-শব্দ মাত্র করলোনা। এমনকি জাতীয় মসজিদের খতীব বলে যিনি নিজেকে জাতীয় ধর্মের জিম্মাদার বলে মনে করেন তিনিও কোন বিবৃতি দিলেননা। দিলে জোট সরকারের বিরাগভাজন হয়ে পড়েন কিনা, জোট সরকারের বেনিফিসিয়ারী হওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হয় কিনা এটাই ছিল তাদের অন্তরে অজানা ভয়।

এ ভয় নিখাঁদ স্বার্থবাদিতার, স্বার্থ রক্ষার; যা খোদাভীতিকে পর্যন্ত দিব্যি অতিক্রম করেছিল। এতে আবারো প্রমাণিত হয় যে, এরা শাইখুল হাদীছ, মাওলানা, মুফতী ডিগ্রীধারী হলেই যে তাকে খুব বড় আলিম বলে প্রচার করে আসলে আলিমের পরিচয় তা নয়। বরং আলিমের পরিচয় হলো খোদাভীতি। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমান, “নিশ্চয়ই আলিমরাই আল্লাহ্ পাককে অধিক ভয় করে।”

অর্থাৎ এরা আলিম দাবী করলেও আসলে তারা আলিম নয়। সে খোদাভীতি তাদের অন্তরে জাগরুক ছিলনা। তাই তারা এভাবে বারবার মদের প্রবাহ অবাধ করার ব্যাপারে সরকারের গ্রহীত পদক্ষেপের ক্ষেত্রে নিশ্চুপ থাকতে পারল। যা কিনা তাদেরকে এ লিখার প্রথমে হাদীছ শরীফে উল্লিখিত সরকারের মদ নীতিমালা সমর্থনকারীর গুনায় গুনাহ্গার ও প্রকাশ্য বোবা শয়তানে পর্যবসিত করেছে।

পাশাপাশি উল্লেখ্য যে, বর্তমান সরকার ও নিজেকে মদ্যপ সরকার হিসেবে আখ্যায়িত হওয়ার একটা সুযোগ করে দিয়েছে।  কারণ, প্রথমবার মদের কারখানার অনুমতি প্রদান সাপেক্ষে সারাদেশে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়েছিল তাতেই তাদের আঁচ করা উচিত ছিল যে, কথিত মাওলানা, মন্ত্রী, তথাকথিত শাইখুল হাদীছ, মুফতী, এম.পি, মাওলানা সম্পাদক আর তথাকথিত খতীবই এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করেনা। ধর্মপ্রাণ মানুষ তাদেরকে ধর্মের আলোকে মূল্যায়ণ করতে পারেনা।

কাজেই তাদের বক্তব্য, বিবৃতি আর কর্মকাণ্ডের বাইরে সারাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের একটা সত্যিকার ধর্মীয় চেতনা আছে। সে চেতনা রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত না হলেও ধর্মের বলে বলীয়ান। সে বলিষ্ঠ চেতনাকে ভয় পেয়েই সরকারকে প্রথমবারও যেমন মদের প্রবাহ বন্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল এবারও তাই নিতে হল।

অথচ প্রথমবার থেকে শিক্ষা নিলেই সরকারকে মদ্যপ সরকার হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার মত আরেকটি সুযোগের অবতারণা হতনা। কারণ হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, ‘মু’মিন কখনও এক ফাঁদে দু’বার পড়েনা।

-মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ্, বাসাবো, ঢাকা।

আকবরের আমলের উলামায়ে ‘ছূ’দের উত্তরাধিকারী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দ্বীন-ই-ইলাহীর আদলে দ্বীন-ই-জুমহুরী প্রচলনে তারা এক হয়েছে-৪

প্রসঙ্গঃ গণতন্ত্র; এখনই চরম সময়, বিষয়টি ভাবিবার- ১০

একটি অভূতপূর্ব ওয়াজ শরীফ এবং কম্পিউটারে কুরআন শরীফ, মাজার শরীফের উপরে ভাসমান দৃশ্য ও তাঞ্জানিয়ার সেই ছেলের কথা

প্রসঙ্গঃ দরসে বুখারীর পঞ্চদশ বছর পূর্তি নামধারী জাহিরী আলিমদের ডামাডোলের বিপরীতে মুজাদ্দিদুয্ যামানের পরিচয়

আকবরের আমলের উলামায়ে ‘ছূ’দের উত্তরাধিকারী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দ্বীন-ই-ইলাহীর আদলে দ্বীন-ই-জুমহুরী প্রচলনে তারা এক হয়েছে-৫