মাওলানা আমীনুল ইসলামও সদ্য গত হলেন। সাধারণ মাওলানাদের থেকে নিজেকে তিনি আলাদা করেছিলেন। তাকে নিয়ে রম্যরচনাও লেখা হয়েছে। রেডিও, টিভি’র ভাষ্যকার হিসেবে সরকারি অনুষ্ঠানে তার যাতায়াত ছিল। সব সরকারের সাথেই তার দহরম মহরমের কথাও শোনা যায়।
জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ে সরকার তার অকুণ্ঠ সহযোগিতা পেয়েছিলেন। সেখান থেকেই তার সরকারি আশীর্বাদ প্রাপ্তি শুরু।
যদিও হক্বানী-রব্বানী আলিমগণ তার জন্মনিয়ন্ত্রণ জায়িয করণের ফতওয়াকে সম্পূর্ণ কুফরীই বলেছেন। মাসিক আল বাইয়্যিনাতেও এ বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর অকাট্ট প্রমাণসহ বিস্তর দলীল দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে মাও. আমীনুল ইসলামের সরকারি আশীর্বাদ বিপরীতে তার খোদায়ী সম্পর্ক, সম্পর্কে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন। তার পরিণতি সম্পর্কে অনেকেই শঙ্কাগ্রস্ত ছিলেন। তবে মাও. আমীনুল ইসলাম বরাবরই আলোচিত ছিলেন। বলা চলে টেলিভিশনে প্রথম যারা প্রোগ্রাম করা শুরু করেছিল তাদের মধ্যে তিনিও একজন। টেলিভিশনে ইসলামী প্রোগ্রাম করার সুবাদে তিনি নিজেকে যেমন খ্যাতিমান মনে করতেন পাশাপাশি সমালোচনারও মুখোমুখি হতেন। ‘টিভি দেখা রাখা হারাম’- এ ধর্মীয় অনুভূতি তখন মানুষের মধ্যে জোরদার ছিল।
কিন্তু মাও. আমীনুল ইসলাম সে জোরকে দুর্বল করার কারণ হয়েছিলেন। নফসের তাড়নায় টিভি’র অনুষ্ঠান দেখার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ অজুহাত তুলত- ‘এত বড় মাওলানা এইটার (টিভি’র) মধ্যে ঢুকে থাকে, আর আমরা বাইরে থেকে দেখলে দোষ কোথায়?’
প্রশ্নটা মাও. আমীনুল ইসলামকে উপলক্ষ্য করেই হত। এদিকে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে, ‘কেউ একটা বদ কাজের সূচনা করল, যতজন লোক সে বদ কাজের সাথে জড়িত তাদের সবার বদ কাজের বদী বা গুণাহ উক্ত বদকাজের প্রবর্তকের উপরই পড়বে।’
চট্টগ্রামের বাশখালীর নুরুল কবির চৌধুরী জানান, এসব কথা মাও. আমীনুল ইসলামের জীবিতকালে তার সাথে আলাপ করে কোন সাড়া না পেয়ে তখন থেকেই তার শেষ পরিণতি সম্পর্কে তিনি চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন।
বরিশালের মাওলানা মুহম্মদ রুহুল আমীন তানভীর জানান, তিনি তামীরুল মিল্লাত মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। তখন মাও. আমীনুল ইসলামকে খুব বড় মাওলানা মনে করতেন। তার লিখিত তাফসীরে নুরুল কুরআনও খুব আগ্রহ ভরে পড়েছেন। এরপর ঘটনাক্রমে তিনি এক কপি আল বাইয়্যিনাত পান। এক আল বাইয়্যিনাত তাকে আরেক কপি আল বাইয়্যিনাত-এর অন্বেষায় অনুপ্রাণিত করে। এরপর একের পর এক। আর ততদিনে তার ভেতরে গভীরভাবে জন্মে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ, আউলিায়ে কিরামগণ সম্পর্কে সহীহ্ আক্বীদা ও সূক্ষ্ম আদব-কায়দা সম্পর্কে সহীহ্ সমঝ। তাতে তার উপলব্ধি আসে বড় মাওলানা হিসেবে প্রচারিত ও পরিচিত মাও. আমীনুল ইসলাম তার তাফসীরে কত মারাত্মক বড় বড় বেয়াদবি করেছেন। ভুল কথা লিখেছেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ ‘ওহুদের জিহাদে গনীমতের মাল লুটতরাজ করেছেন’ এ জাতীয় মারাত্মক কুফরী মন্তব্য করেছেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ-এর মানহানিমূলক কথা লিখেছেন। এ বিষয়ে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর প্রতি দোষারোপ করল সে যেন আমার প্রতি দোষারোপ করল। আর যে আমার প্রতি দোষারোপ করল তাকে আল্লাহ পাক পাকড়াও করবেন।” (নাঊজুবিল্লাহ)
পাবনার শরীফ রহমান জানান, মাও. আমীনুল ইসলাম যে পাকড়াও হতে পারেন- এ বিশ্বাস তার অনেকটাই ছিল। কারণ কিতাব পড়ে তিনি জেনেছেন নাজাতের জন্য আক্বীদা শর্ত। আর মাও. আমীনুল ইসলামের আমল-আক্বীদার প্রেক্ষিতে তার শেষ পরিণতি সম্পর্কে জানতে তিনি গভীর আগ্রহী ছিলেন।
কুদরতীভাবে গত ১৯ নভেম্বর, ২০০৭ ঈসায়ী তিনি ঢাকায়ই ছিলেন। ফলে মাও. আমীনুলের মৃত্যুর খবর শুনে চলে যান মুহম্মদপুর শাহশুরী রোডে তার বাসায়। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলেন মাও. আমীনুলের চেহারা অসম্ভব কালো হয়ে গিয়েছে। বরফ দিয়ে রাখা হয়েছে। ঠোটের দুই কোন দিয়ে রক্ত পড়ছে, যা এক ব্যক্তি কিছুক্ষণ পর পর তুলা দিয়ে মুছে দিচ্ছে। পরদিন জানাযার স্থল জাতীয় ঈদগাহে গিয়ে শুনতে পেলেন মাও. আমীনুল ইসলামের আত্মীয়রা জেনে গেছেন যে, সেখানে দৈনিক আল ইহসানের রিপোর্টাররা এসেছেন। তাই তারা লাশের নিকট ভিড়তে খুব কড়াকড়ি আরোপ করছেন। চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। কিন্তু এর ফাঁকে একবার নিজেদের টানাটানিতে কাপড়টা সরতেই তারা দেখতে পেলেন, চেহারা অসম্ভব কালো হয়ে গিয়েছে। নাক ও ঠোট দিয়ে রক্ত ঝরছে। বরফ আর ফরমালিন দিয়ে আবৃত করার পরও একটু কাছে যেতেই ভয়ানক দুর্গন্ধে তাদের দম বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম। মনে হল এ রকম দুর্গন্ধ তারা পৃথিবীতে আর কখনো পাননি। এ দুর্গন্ধ যেন পৃথিবীর নিকৃষ্ট পুতিময় গন্ধের চেয়ে ঢের নিকৃষ্ট।
উল্লেখ্য, হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, ‘যার শেষ ভালো তার সব ভালো।’ এ হাদীছ শরীফে মূলতঃ মৃত্যুকালীন অবস্থার কথাই বলা হয়েছে। সবারই জানা রয়েছে যে, নেককারের মৃত্যু হলে কতগুলো রহমতী নিদর্শন ফুটে উঠে। চেহারা ডানকাত ও নূরানী হওয়া, সুগন্ধী ছড়ানো এমনকি অনেকের মৃত্যুর দীর্ঘদিন পড়েও কবর খুড়লে লাশ না পঁচা ইত্যাদি।
পক্ষান্তরে বদকারের লক্ষণ- চেহারা কালো ও বিকৃত হয়ে যাওয়া, শরীর অল্পতে পচে যাওয়া, দুর্গন্ধ বের হওয়া, আকৃতি নষ্ট হয়ে যাওয়া, ফুলে ফেপে উঠা ইত্যাদি। আর এসব বদলক্ষণই প্রকটভাবে প্রকাশ পেয়েছে মাও. আমীনুল ইসলামের ক্ষেত্রে।
প্রকাশ পেল রেডিও, টিভি’তে বহু বছর তাফসীরকারক, তাফসীরে নূরুল কুরআনের লেখক মাও. আমীনুল ইসলামের ক্ষেত্রে। দৈনিক আল ইহসানের রিপোর্টার মুহম্মদ সোহেলুর রহমান ও মুহম্মদ সাইফুল হাবীবের কাছ থেকেও জানা গেল একই তথ্য।
মূলতঃ এসব তথ্য আমাদের সাধারণ মানুষকে ভীষণভাবে শঙ্কাগ্রস্ত করে। এত বড় মাওলানার যদি এই অবস্থা হয় তবে সাধারণ মানুষ কি করবে? সাধারণ মানুষ তাফসীর করেও না, লিখেও না। কিন্তু এত বছর তাফসীর করার পর এত বড় তাফসীর লেখার পরও মাও. আমীনুল ইসলামের এই পরিণতি হল কেন?
তবে কি তার তাফসীর করার মধ্যেই, লেখার মধ্যেই ছিল ভুল, আক্বীদা ও আমলগত মারাত্মক ত্রুটি?
তবে কি মাসিক আল বাইয়্যিনাতের কথাই ঠিক? ছবি তোলা, টিভি’তে প্রোগ্রাম করা নিকৃষ্ট মাওলানাদের কাজ। জন্মনিয়ন্ত্রণ করা হারাম। হারামকে হালাল বলা কুফরী। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ও আউলিয়ায়ে কিরাম সম্পর্কে বদআক্বীদা রাখা ও তাদের বিরোধিতা করা কুফরী ও আকৃতি-বিকৃতির কারণ। লাশ পঁচার কারণ। এসব কুফরী করার কারণে তথা মুজাদ্দিদে আ’যমের বিরোধিতার কারণেই কি তাহলে এত বড় মাও. আমীনুল ইসলামের এই ভয়ঙ্কর পরিণতি? (নাঊজুবিল্লাহ মিন জালিক)
-মুহম্মদ তারিফুর রহমান, ঢাকা।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২