শুক্রবার সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবূ লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, জুমুয়ার দিন সকল দিনের সাইয়্যিদ এবং সকল দিন অপেক্ষা আল্লাহ পাক-এর নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও আল্লাহ পাক-এর নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, “তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে জুমুয়ার দিন।” হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে, “ হে মুসলমান সম্প্রদায়! এটি এমন একটি দিন যাকে আল্লাহ পাক ঈদ স্বরূপ নির্ধারণ করেছেন।” মূলত: ধর্মীয় দিক থেকে দিনের এতসব ফযীলতের কারণেই এদেশের মুসলমানের প্রাণের দাবী ছিলো শুক্রবারকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা। ওদিকে খ্রীষ্টানরা ঠিকই তাদের ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে রবিবার ফযীলতের কারণ হওয়ায় সেদিনকেই মূল্যায়ণ করেছে। রবিবারকে যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন হিসেবে এদিনই ছুটির দিন হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। এবং শুধু নিজেরাই নয় মুসলিম দেশেও যাতে তার প্রতিফলন ঘটে সে ব্যাপারে প্রভাব বলয় তৈরী করেছে। এক্ষেত্রে শুকরিয়ার সাথে বলতে হয় যে, বাংলাদেশী মুসলমান তাদের সে প্রভাব বলয় থেকে অনেক আগেই বেরিয়ে এসেছে। ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে তারা শুক্রবারকেই ছুটির দিন হিসেবে গ্রহণ করতে পেরেছে। উল্লেখ আবশ্যক, স্বাধীনতা উত্তর এদেশের তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনকারীরা তাদের তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এযাবত কোন ইসলামী অনুষঙ্গই বাস্তবায়িত করতে পারেনি। এমনকি শুক্রবা যে বন্ধের দিন হয়েছে, এক্ষেত্রেও তাদের কোন ভূমিকা ছিলো না। বরং এদেশের মুসলমানদের প্রগাঢ় ধর্মীয় অনুভূতির অভিব্যক্তি হিসেবে তৎকালীন সামরিক সরকার তার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছে। আর এক্ষেত্রে তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনকারীদের ভূমিকা যে কতটা নিষ্ক্রিয় বরং আশ্চর্য্য হলেও সত্যিকার অর্থে বিরোধী তা আজ পত্রিকার পাতায় প্রকাশ পেয়েছে। গত ৫ই সেপ্টেম্বর-২০০৫ ঈসায়ী সালে ‘দৈনিক সমকাল’ পত্রিকায় ১৬নং পৃষ্ঠায় ছাপা হয়, সাপ্তাহিক ছুটি রোববার হলে ইসলামী দলগুলোর আপত্তি নেই …… শুক্রবার ছুটি বাতিলের দাবির সঙ্গে ধর্মীয় অনুভূতি জড়িত থাকায় বিষয়টি বিজিএমইএ সভাপতি আনিসুল হক ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ধর্মীয় দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাদের অধিকাংশই দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বিজিএমইএ’র দাবির প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিয়ে জানিয়েছেন, সাপ্তাহিক ছুটি রোববার হলে তাদের কোন আপত্তি থাকবে না। জানা গেছে, আনিসুল হক শুক্রবারের পরিবর্তে রোববার সাপ্তাহিক ছুটির পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন গত বছরের এপ্রিল থেকে। তিনি এযাবৎ প্রায় ৩০ জন ধর্মীয় নেতার সঙ্গে এই আলোচনা করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলেন, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির ও শিল্পমন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এমপি, ইসলামী মোর্চার সভাপতি মুফতি ফজলুল হক আমিনী এমপি, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা ওবায়দুল হক, ইসলামী শাসনতন্ত্র আান্দোলনের সভাপতি চরমোনাইর পীর সৈয়দ ফজলুল করিম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সভাপতি শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, বসুন্ধরা ইসলামী গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ মাওলানা মুফতি আব্দুর রহমান, বরিশালের ছারছিনার পীর, ফূরফুরার পীর আব্দুল কাহার সিদ্দিকী, হাফেজ্জীর ছেলে আহমদুল্লাহ আশরাফ এবং ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ইজাহারুল ইসলাম।” অর্থাৎ তারা প্রায় সবাই শুক্রবারের পরিবর্তে রোববারকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হিসেবে গ্রহণ করতে রাজী আছেন। যার দ্বারা আরো একবার প্রতিভাত হয় যে, তারা মাওলানা, মুফতী খতীব, শাইখুল হাদীছ, পীর তথা ইসলামী আন্দোলনকারী দাবীর অন্তরালে সত্যিকার অর্থে কোন্ ধরণের লোক? য তারা কোন ধরনের ইসলামী আন্দোলনকারী? যারা ইসলামী আন্দোলন করে কোন ইসলামী অনুষঙ্গ বাস্তবায়ন তো দূরের কথা বরং চালু ইসলামী অনুষঙ্গকেও সামান্য দুনিয়াবী স্বার্থে বিসর্জন দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। তারা কোন ধরনের ইসলামী আন্দোলনকারী? যারা মুসলমানদের বিশেষ ধর্মীয় দিন শুক্রবারের ফযীলত সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নয়। তারা কোন ধরনের ইসলামী আন্দোলনকারী? যারা শুক্রবারের প্রতি মুসলমানদের সেন্টিমেন্ট তথা মুহব্বত বা জজ্বার প্রতি গুরুত্ব দেন না। অথচ তারাই দাবী করেন যে, মুসলমানদের চুঢ়ান্ত সেন্টিমেন্ট বা জজ্বার প্রতিফলন ঘটাতে তারা, খেলাফত কায়িম করবেন বা করার জন্য চুড়ান্ত আন্দোলন করছেন। এর চেয়ে বড় নেফাকী বা প্রতারণা আর কি হতে পারে? হাদীছ শরীফে এদের সম্পর্কেই সাবধান করে বলা হয়েছে যে, “অতি শীঘ্রই তোমাদের এক দল ইহুদী-খ্রীষ্টানরা যেভাবে বিভ্রান্ত হয়েছে তারাও সেভাবে বিভ্রান্ত হবে। তাদেরকেই অনুসরণ করবে।” এর সত্যতা হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ইহুদী-খ্রীষ্টানদের গণতন্ত্র, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, লংমার্চ, ছবি তোলা, নারী নেতৃত্ব ইত্যাদির পর এখন এরা শুক্রবারকে বাদ দিয়ে রবিবারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে। ইসলামী আন্দোলনকারীর লেবাছে এর চেয়ে বড় মুনাফিকী আর কি হতে পারে? সত্যিকার অর্থে এরা যে খ্রীষ্টান দরদী, খ্রীষ্টানদের এজেন্ট তা চিহ্নিত করতে আর কি বাকি থাকতে পারে? নচেৎ শুক্রবারের পরিবর্তে রবিবারের প্রতি কি করে তারা মুহব্বত দেখাতে পারে। যেহেতু রবিবার খ্রীষ্টানদের মুহব্বতের বিষয়। আর হাদীছ শরীফে রয়েছে, “যে যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল-মুহব্বত রাখবে তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (নাউযুবিল্লাহ)
-খন্দকার মুহম্মদ মুসলিম, ঢাকা।
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫