সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।
২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। ২৫শে মার্চ ভয়াল রাত পার হয়ে বিগত ৪৩ বছর পূর্বে এই দিনে বাংলার আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার সূর্য।
২৫ মার্চের রাত বাঙালি মুসলিমদের জাতীয় জীবনের স্মৃতিতে এক ভয়াল রাত। ১৯৭১ সালের এই রাতের ঘটনা আজো প্রত্যেক বাঙালি মুসলিমকে ভয়ার্ত ও আতঙ্কিত করে তোলে। বাঙালি মুসলমানরা রক্তে-আগুনে-কামানের গোলায় বিভীষিকাময় এই এক রাতের কথা কোনোদিন ভুলতে পারবে না। সেই ভয়াল রাতে পাকিস্তানি সেনারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালি মুসলমানদের উপর। এটা অবশ্যই কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না, ছিল পরিকল্পিত আক্রমণÑ অপারেশন সার্চলাইট। আমরা বাঙালি মুসলিম জাতির সেইসব আত্মত্যাগী বীরদের রূহে ছওয়াব বখশাই এবং ধিক্কার জানাই সে সব পাষ-দের, যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছে।
ইতিহাসের জঘন্যতম এই গণহত্যার মধ্য দিয়ে ঘাতকরা বাঙালি মুসলিম জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল।
সমগ্র বাঙালি মুসলমানরা সেদিন একদেহ একপ্রাণ হয়ে জেগে উঠেছিল। একটা জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্খা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিল কামানের মুখে। সমস্ত জাতির ভাষা যে বজ্রকণ্ঠ ধারণ করেছিল সেদিন, সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সারা দেশে নির্বিচারে গণহত্যা, আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় চালিয়ে পাকী শাসকরা চেয়েছিল বাঙালি মুসলিম জাতিকে চিরদিনের মতো স্তব্ধ করে দিতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এরই মধ্যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণা পরবর্তী সময়ে ছড়িয়ে দেয়া হয় সর্বত্র।
২৫ মার্চের অন্ধকার চিরে আসে ২৬ মার্চের ভোর, জন্ম নেয় একটি স্বাধীন দেশ।
বলাবাহুল্য, আজো আমাদের দেশে স্বাধীনতার ঘোষক কে? তা নিয়ে বিতর্ক হয়। কিš‘ এ বিতর্ক অহেতুক, অমূলক। কারণ স্বাধীনতার ঘোষণার প্রেক্ষাপট একদিনেই তৈরি হয়নি। এটা তৈরি হয়েছে ’৬৬-এর ৬ দফা থেকে। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান থেকে। ’৭০-এর নির্বাচন না মেনে নেয়ার প্রেক্ষিত থেকে। আর এসব পটভূমিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই সব কিছুর অবিসংবাদিত নেতা তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের মহানায়ক প্রতীয়মান হয়।
পাশাপাশি বিখ্যাত ৭ মার্চের ভাষণেও উল্লেখ ছিলো- ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম… এদেশকে স্বাধীন করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ’- এ ভাষণেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিষয় ও ঘটনার তাৎপর্য এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে আত্মঘাতী প্রবণতাই এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিলম্বিত করেছিলো এবং জামাত ও তাবৎ ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা কথিত রাজাকার, আল-বাদর, আস্-শামস নামধারী কলঙ্কিত কাহিনীর সূচনা করেছিলো।
বলাবাহুল্য, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে হলেই যে তা ইসলামী নয়- এ ফতওয়ার গুরুত্ব যেমন এখনও আছে তেমনি তখনও ছিলো। পাকিস্তান হয়েছিলো পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে। কিš‘ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার কিছুই হয়নি। সম্মানিত ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ও মূল্যবোধ কিছুই প্রচার হয়নি, প্রতিষ্ঠা পায়নি। যা কিছু হয়েছে তা তাদের রাজদ- রক্ষার্থে।
যা কিছু হয়ে থাকে তা আমাদের রাজদ- রক্ষার্থে। কিš‘ এ শাসকরা খোদ পাকিস্তান আমলেই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনার খিলাফ করে দাদার সম্পত্তিতে নাতিকে ওয়ারিছ করেছিলো। তিন তালাক দিলে নব্বই দিন পার না হলে তালাক কার্যকর হবে না এবং এর মধ্যে স্বামী-স্ত্রী মিলেমিশে গেলেও তালাক কার্যকর হবে না বলে অনৈসলামী আইন করেছিলো। নাঊযুবিল্লাহ!
পাকিস্তান সৃষ্টির পরদিনই ভাষণে তথাকথিত কায়েদে আযম জিন্নাহ ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে ভাষণ দিয়েছিলো। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট সে বলেছিলো আজকে থেকে পাকিস্তানে কোনো মুসলমান আর মুসলমান থাকবে না। কোনো হিন্দু আর হিন্দু থাকবে না। সবাই হয়ে যাবে পাকিস্তানী।’ একই সাথে সে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ঝা-া উড়িয়েছিলো। নাঊযুবিল্লাহ!
কিš‘ লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান আন্দোলনের লাখ লাখ মালানারা সেদিন তথাকথিত কায়েদে আযমের এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও জাতীয়তাবাদী ভাষণের কোনো প্রতিবাদ জানায়নি, প্রতিকার করেনি। এমনকি সত্যি বলতে কিছুই বুঝেনি।
প্রসঙ্গত, বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের উচিত ছিলো সব যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় একদিনে ঘোষণা করে তারপর দিন রায় কার্যকর করা। তাহলে চুনোপুটি জামাতীরা আর চোরাগোপ্তা হামলার সাহস ও সুযোগ পেতো না।
বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজে যে অনাকাঙ্খিত বিলম্ব করছে তা শুধু অযৌক্তিকই নয়, বরং খুবই অশুভ। পাশাপাশি সরকার ধর্মভিত্তিক রাজনীতির যে অনুমোদন দিচ্ছে তা শুধু অনাকাঙ্খিতই নয়, বরং বিশেষ আত্মঘাতী।
কাজেই এসব অশুভ ও আত্মঘাতী প্রবণতা ও তৎপরতা থেকে সরকার যতো তাড়াতাড়ি সরে আসবে ততই দেশ ও জনগণের জন্য কল্যাণ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমানে একটি কথা প্রায়ই প্রচার করা হয়েছিলো যে, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনার ভিত্তিতে। কিš‘ একথা সর্বৈব মিথ্যা। কারণ ১৯৭০-এর নির্বাচনের বিজয়ী ফলাফল অস্বীকার করাই ছিলো মুক্তিযুদ্ধের কারণ। আর ’৭০-এর বিজয়ের মূলে মূল নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিই ছিলো ‘পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী কোনো আইন পাস হবে না।’ এছাড়া ’৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র কোথাও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা ছিলো না। কাজেই ‘মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে’- একথা প্রত্যাহার করতে হবে এবং সংবিধান থেকে তা প্রত্যাখ্যাত করতে হবে।
বলাবাহুল্য, এবারেও সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিলো ‘পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী আইন পাস হবে না।’ যে কারণে সরকার অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। কিন্তু সরকার তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। যে কারণে এদেশের জনগোষ্ঠীর ৯৭ ভাগ মুসলমান অধিবাসী উনারা সংক্ষুব্ধ। প্রসঙ্গত, আমরা মনে করি- সরকার এখনও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রতিফলন ঘটাতে পারে। দেশবাসীকে স্বাধীনতার সত্যিকার সুফল দিতে পারে।
মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা মুবারক ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০