ইমামুল আ’ইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ্, ক্বাইয়্যুমুয্ যামান, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদুয্ যামান, সুলতানুল ওয়ায়েজীন, গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আফযালুল আউলিয়া, সুলতানুন্ নাছির, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ্, আওলার্দু রসূল, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর
যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ام سلمة رضى الله تعالى عنها انها كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وميمونة رضى الله تعالى عنها اذ اقبل ابن ام مكتوم رضى الله تعالى عنه فدخل عليه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجبا منه فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم أليس هو اعمى لايبصرنا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم افعمياوان انتما ألستما تبصرانه.
“হযরত উম্মে সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করতেছেন যে, ‘একদিন আমরা বসেছিলাম আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে। আমি বসেছিলাম, আমার সাথে ছিলেন হযরত মাইমুনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (উভয় ছিলেন উম্মুল মু’মিনীনগণের অন্তর্ভুক্ত)। তাঁরা বসেছিলেন, আলোচনা করতেছিলেন, ঠিক সেই সময় একজন অন্ধ ছাহাবী হযরত ইবনে উম্মে মাকতুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উনি এসে সেখানে প্রবেশ করতেছিলেন; আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাক্ষাতের জন্য। সেই মুহূর্তে আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجبا منه.
হযরত উম্মে সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং হযরত মাইমুনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তাঁদের উভয়কে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন , ‘তোমরা পর্দা কর।’ যখন একথা বলা হলো, তখন হযরত উম্মে সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, আমি তখন বললাম,
فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم أليس هو اعمى لايبصرنا.
‘ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনি কি অন্ধ নন? এই ছাহাবী তো অন্ধ। উনি তো আমাদেরকে দেখবেন না; তাহলে পর্দা করার কি জরুরত রয়েছে?’ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم এর জবাবে আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, أفعمياوان ‘তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি দেখবেনা?’ افعمياوان انتما ألستما تبصرانه. ‘তোমরা কি অন্ধ হয়েছো? তোমরা কি দেখবে না?’ একথা যখন বলা হলো, হযরত উম্মে সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং হযরত মাইমুনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উভয়ে সেখান থেকে সরে হুজরা শরীফের ভিতরে চলে আসলেন, যাতে হযরত ইবনে উম্মে মাকতুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাথে সাক্ষাৎ না হয়, দেখা না হয়। এখন এই হাদীছ শরীফে আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছেন? যদিও মুফাস্সিরীনে কিরাম, মুহাদ্দিসীনে কিরামগণ এ হাদীছ শরীফ নিয়ে অনেকে অনেক কিছু বর্ণনা করেছেন। বিশেষ করে উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না তাঁদের জন্য আলাদা হুকুম-আহ্কাম। এরপরেও যারা মুত্তাক্বী-পরহিযগার হবে, তাক্বওয়া অবলম্বন করবে, তাঁদের জন্য সে একই হুকুম রয়েছে। সতর্ক থাকতে হবে যেন পরপুরুষকে সে দেখবেনা ঠিক পরপুরুষও তাকে যেন না দেখে। অনুরূপ একই হুকুম তার উপর বর্তাবে। সে অবস্থার থেকে সে সতর্কতা অবলম্বন করবে।
কারণ, হাদীছ শরীফে এসেছে,
قال النبى صلى الله عليه وسلم زنا العين النظر زنا اللسان المنطق.
চোখের যে যিনা সেটা দৃষ্টি আর জবানের যে যিনা সেটা হচ্ছে কথা বলা। অর্থাৎ উভয়টা থেকে সতর্ক থাকতে হবে। দৃষ্টির কারণে মানুষ পাপে গ্রেফতার হয়ে যায়। বড় বড় পাপ সংঘটিত হয়, একমাত্র তার সূচনা হয় দৃষ্টি দিয়ে।
যেটা অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان المرأة تقبل فى صورة شيطان وتدبر فى صورة شيطان.
আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে, নিশ্চয়ই মহিলারা এসে থাকে এবং চলে গিয়ে থাকে। অর্থাৎ এখানে যদিও সরাসরি অর্থ বলা হয়েছে শয়তানের ছূরতে এসে থাকে এবং শয়তানের ছূরতে চলে যায়, এর অর্থ কি মহিলারা শয়তান? মূলতঃ তা নয়, এর অর্থ বলা হচ্ছে- শয়তান তাদের মধ্যে ক্রিয়া করে, ওয়াস্ওয়াসা নিয়ে তারা এসে থাকে, ওয়াস্ওয়াসা নিয়ে বিদায় হয়ে থাকে। অর্থাৎ মহিলারা যখন আসে তখন ইবলিস মহিলাদের সাথে এসে পুরুষের মনের মধ্যে ওয়াস্ওয়াসার সৃষ্টি করে দেয়। এই ওয়াস্ওয়াসা পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি ও বৃদ্ধি করতেই থাকে, সেই ওয়াস্ওয়াসা নিয়েই সে মহিলা বিদায় নিয়ে যায়।
একজন মহিলা যখন কোন বেগানা পুরুষের সামনে আসে তখন শয়তান বেগানা পুরুষের অন্তরে ওয়াস্ওয়াসা সৃষ্টি করে। যে অবস্থায় সে আগমন করে ঠিক সে অবস্থায় সে বিদায় নেয় এবং ঠিক এর সাথে সাথে সে মহিলার অন্তরের মধ্যেও শয়তান ওয়াস্ওয়াসা সৃষ্টি করে। শয়তান তার মধ্যে ক্রিয়া করে। সে শয়তানী ওয়াস্ওয়াসা নিয়ে সে আসে এবং বিদায় নেয়। মহিলার মধ্যে কোন খারাবী রয়েছে তা নয় বরং শয়তান ওয়াস্ওয়াসা দেয়ার কারণে পুরুষ এবং মহিলার মধ্যে শয়তানী ওয়াস্ওয়াসা ক্রিয়া করে সেটাই বলা হয়েছে।
যেমন, হাদীছ শরীফে রয়েছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الشوم فى المرأة والدار والفرس.
এই হাদীছ শরীফে স্পষ্ট বলা হয়েছে কি? খারাবী রয়েছে মহিলাদের মধ্যে, বাড়ী-ঘরের মধ্যে এবং বাহনের মধ্যে। এর ব্যাখ্যায় যারা মুহাদ্দিসীনে কিরাম তাঁরা অনেক কিছু বর্ণনা করেছেন। মূল বিষয় হলো যে, মহিলাদের মধ্যে খারাবী রয়েছে কখন? যদি মহিলা বেশরা, বিদ্য়াত, বেপর্দা, বেহায়া হয়, স্বামীর অবাধ্য হয় তখন তার মধ্যে খারাবী রয়েছে। তার মধ্যে কোন বরকত-খায়ের থাকবেনা। রহমত সাকীনাহ্ তার জন্য নাযিল হবেনা। তখন তার জন্য খারাবী রয়েছে। আর ঐ ঘর-বাড়ীতে খারাবী রয়েছে যে ঘর-বাড়ী স্বাস্থ্যের অনুপযুক্ত। যেখানে মানুষ বসবাস করলে নানা রকম ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, ওয়াস্ওয়াসার সৃষ্টি হয়, জ্বীন-পরীর তাছীর রয়েছে, ক্রিয়া রয়েছে, যার পরিবেশ খারাপ।
যেটা হাদীছ শরীফে এসেছে, جار قبل الدار ঘর করার পূর্বে প্রতিবেশী দেখতে হবে। প্রতিবেশী যদি তার খারাপ হয়ে থাকে, আজে বাজে লোক হয়ে থাকে, দুশ্চরিত্র, দুষ্ট প্রকৃতির হয়, তাহলে সে ঘরটা বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যায়। والفرس বাহনকে খারাপ বলা হয়েছে। বাহন যখন উপযুক্ততা হারিয়ে ফেলে, তার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে, বহন করার ব্যাপারে অবাধ্য হয়ে যায় তখন সেটা খারাপ। এছাড়া এমনিতে কোন খারাবী নেই।
সেটাই আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য হাদীছ শরীফে বলেছেন,
وان تكون طيرة فى شيئ ففى الدار والفرس والمرأة.
“যদি কোন খারাবী থাকতো তাহলে মহিলাদের মধ্যে, বাড়ী-ঘরের মধ্যে, বাহনের মধ্যে থাকতো।’ প্রকৃত পক্ষে সেটা নেই। এই তিনটা ব্যতীত কোন মানুষের পক্ষেই দুনিয়াবী যিন্দেগীতে জীবন যাপন করা সম্ভব নয়। মহিলা ব্যতীত মানুষ থাকতে পারবেনা। হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম যখন যমীনে আসলেন, তাঁর অবস্থা লক্ষ্য করে আল্লাহ্ পাক হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালামকে তৈরী করে দিলেন। সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ বিয়ে-শাদী করেছেন, স্ত্রী গ্রহণ করেছেন। যদি কোন খারাবী থাকতো তাহলে তাঁরা স্ত্রী গ্রহণ করতেন না। সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ঘর-বাড়ী করেছেন। যদি তাতে কোন খারাবী থাকত তাহলে তাঁরা সেটা করতেন না।
সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম বাহনে চড়েছেন। যদি তাতে প্রকৃতপক্ষে কোন খারাবী থাকতো তাহলে সেটাতে তাঁরা সওয়ার হতেননা। প্রকৃতপক্ষে সেখানে কোন খারাবী নেই। যখন এসব শরীয়তের হুকুমের খিলাফ হয়ে যাবে তখন তার মধ্যে খারাবী রয়েছে। এছাড়া তার মধ্যে কোন খারাবী নেই।
কাজেই মহিলারা যখন বেগানা পুরুষের সামনে আসে তখন তার সাথে শয়তান এসে থাকে এবং ওয়াস্ওয়াসা দিয়ে থাকে সেটাই উল্লেখ করা হয়েছে। (অসমাপ্ত)
ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-আহ্কাম