যখন একথা বললেন, যারা কুরাইশবাসী ছিল কেউ স্তব্ধ, চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো, কেউ হেঁটে চলে গেল, কেউ চু-চেরা করলো। তারমধ্যে সবচাইতে বেশি দুষ্ট ছিল, যে দুষ্টামি করেছে আবূ লাহাব। সেতো এলোমেলো কথা বলেছে। ইট পাটকেলও মেরেছে এবং বলেছে
تب لكى
(নাউযুবিল্লাহ) আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর ধ্বংসের জন্য সে বদ দুয়াও করেছে। সে যে বদ দুয়া করেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক সূরা নাযিল করে দিলেন ‘সূরা লাহাব’। আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর তো কোন ক্ষতি হবে না বরং আবূ লাহাব ধ্বংস হয়ে যাবে। সেটাই আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন,
تبت يدا ابى لهب وتب.
আবূ লাহাব তার দুই হাত ধ্বংস হয়ে গেল।
ما اغنى عنه ماله وما كسب.
সে যে ধন-সম্পদ উপার্জন করেছে এবং তার যে আল-আওলাদ রয়েছে সেটা তার কোন কাজে আসবে না।
سسصلى نارا ذات لهب وامراته.
অতিশীঘ্রই সে ও তার স্ত্রী উম্মে জামিলা যে রাস্তায় রাস্তায় কাটা দিয়ে রাখতো সে সহ প্রজ্জলিত অগ্নিকূ-ে প্রবেশ করবে।
আল্লাহ পাক এটা নাযিল করে দিলেন। অতিশীঘ্রই তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তারা জাহান্নামী। আল্লাহ পাক-এর হাবীব ঘোষণা করে দিলেন।
এই আবূ লাহাব আজীবন আল্লাহ পাক-এর হাবীব, আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরোধিতা করেছে, সে, তার স্ত্রী, তার ছেলে, তার যারা আল-আওলাদ ছিল, তার গোষ্ঠীর যারা ছিল সকলেই মিলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব, আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দিয়েছে।
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামিলা একবার অসুস্থ হয়ে যায়। আল্লাহ পাক-এর হাবীব, আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন রাস্তায় কাটা দেখতে পেতেন। একদিন দেখলেন, কোন কাটা নেই। লোকদের জিজ্ঞাস করলেন, সেই উম্মে জামিলা, যে রাস্তায় কাটা দিত তার কি হয়েছে? আজকে তো সে কাটা দেয়নি। লোকজন বলল, সে অসুস্থ হয়েছে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব তাকে দেখতে গেলেন। তার আরোগ্যের জন্য আল্লাহ পাক-এর হাবীব দুয়া করলেন। সে সুস্থতা লাভ করলো। আবার পরের দিন থেকে সে কাটা দেয়া শুরু করল। নাউযুবিল্লাহ।
কাট্টা কাফির এবং চিরজাহান্নামী আবূ লাহাব যখন মারা গেল। সে মারা যাওয়ার কিছুদিন পরে হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একটা স্বপ্ন দেখলেন। এই আবু লাহাব স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেনি। সে বদরের জিহাদে অংশগ্রহণ করেনি। কারণ আল্লাহ পাক-এর হাবীব আগেই বলেছিলেন, বদরের জিহাদে কুরাইশদের ১৪জন নেতা থেকে ১১জন মারা যাবে। আবু লাহাব নিশ্চিত ছিল যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর কথা কখনও ভুল হতে পারে না। সেজন্য আবূ লাহাব কি করল? সে জিহাদে অংশ গ্রহন করল না। সে পালিয়ে রইল। নানান ছুতা-নাতা দিয়ে সে পালিয়ে রইল। জিহাদ শেষ হয়ে গেলো। সাত দিন পর আবূ লাহাবের বাড়ীতে একটা ফিৎনা সৃষ্টি হয়। মারামারি সৃষ্টি হয়। সে মারামারিতে তার এক আত্মীয় আঘাত করে তার মাথায়। সেই আঘাতটা শেষ পর্যন্ত তার কঠিন কুষ্ট রোগে রুপান্তরিত হয়ে যায়। সেই কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়ে তার সমস্ত শরীর পঁচে- গলে দুর্গন্ধ হয়ে গেল। তার ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী-পুত্র সকলে মিলে এবং তার যারা খাদিম-খুদ্দাম ছিলো তারা সকলে মিলে তাকে ধরে জঙ্গলে দূরে ফেলে আসলো। যাতে তার পঁচা-গলা, দুর্গন্ধ যেন বাড়িতে আসতে না পারে। সেখানে সে পঁচে-গলে মারা গেলো। কুকুর-শৃগাল তাকে খেল। তাকে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হলো। (নাউযুবিল্লাহ)
এই কাট্টা কাফির আবু লাহাব সে যখন ইন্তিকাল করল, ইন্তিকাল করার পর আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর চাচা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বপ্নে দেখলেন আবু লাহাবকে। দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কেমন আছে। আবু লাহাব স্পষ্ট বলল, হে ভাই আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আল্লাহ পাক-এর যমীনে আবূ লাহাবের চাইতে বদ নছীব, বদ বখ্ত আর কেউ জন্মগ্রহণ করেনি। কম বখ্ত কেউ জন্ম গ্রহণ করেনি। কেন? সে নিজেই স্বীকার করল, এইজন্য যে, আল্লাহ পাক-এর যিনি হাবীব, যিনি আখিরী নবী, যিনি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, যিনি ইমামুল মুরসালীন, তিনি আগমন করলেন। আবূ লাহাব বলল, আমার গোত্রে, আমার বংশে, আমার ভ্রাতুষ্পুত্রের অন্তর্ভূক্ত তিনি। কিন্তু আবূ লাহাবের ঈমান নছীব হলো না। এর চাইতে বদ নছীব কি হতে পারে?
এরপরে আবূ লাহাব বলল, এরপরও আবূ লাহাবের জন্য একটা সুসংবাদ রয়েছে। হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, কি সুসংবাদ রয়েছে? আবূ লাহাব বলল, সে সুসংবাদ হচ্ছে, প্রতি সোমবার দিন তার দু’ আঙ্গুল থেকে ঠা-া শীতল পানি প্রবাহিত হয়। হাদীছ শরীফে রয়েছে, জাহান্নামীদের জন্য জান্নাতের নিয়ামত হারাম। তাকে তো জান্নাতের নিয়ামত দেয়া যেতে পারেনা। দু’ আঙ্গুল থেকে ঠা-া শীতল পানি প্রবাহিত হয়। সে বলল, সে সেটা চুষে চুষে পান করলে তার এক সপ্তাহের আযাব-গযব শরীরে, জিস্মে, রূহে যা কিছু হয়ে থাকে সেটা সম্পূর্ণ দূরীভূত হয়ে যায়। (সুবহানাল্লাহ) এতটুকু বরকত সে লাভ করল, এতটুকু ফযীলত সে লাভ করল।
তখন হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জিজ্ঞাস করলেন, তুমি কি করে এটা লাভ করলে? সে বলল, হে হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন যমীনে আগমন করলেন। তখন তার এক বাঁদী ছিল সুয়াইবা। সে এসে বলেছিল, হে আমার আঁকা, মাওলা! আপনার মৃত ভাই হযরত খাজা আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম, উনার ঘরে একজন সুন্দর, ফুটফুটে ছেলে সন্তান আগমন করেছেন। এ সুসংবাদ দেয়ার কারণে আবূ লাহাব বলল, আমি তখন বলেছিলাম, হে সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, আপনাকে আমি আমার ভ্রাতুষ্পুত্রের খিদমতের জন্য অনুমতি প্রদান করলাম। তাকে আমি এ দু’ আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করেছিলাম যে, আপনাকে আযাদ করে দিলাম, স্বাধীন করে দিলাম, খিদমতে মশগুল হওয়ার জন্য অনুমতি দিলাম।
সে যেহেতু দু’ আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করেছিল সেজন্য দু’ আঙ্গুল থেকে প্রতি সোমবারে ঠা-া শীতল পানি প্রবাহিত হয়ে থাকে। এক সপ্তাহের আযাব-গযব তার শরীর থেকে, জিস্ম থেকে, অন্তর থেকে দূর হয়ে যায়।
এখন এখানে ফিকিরের বিষয়, আবূ লাহাব কিন্তু আল্লাহ পাক-এর হাবীব হিসেবে নয়, রসূল হিসেবে নয়, নবী হিসেবে নয়, আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর আগমন উপলক্ষ্যে উনার মর্যাদা-মর্তবার কারণে নয়, সে শুধু তার ভ্রাতুষ্পুত্র হিসেবে সে এই আদেশটা করেছিল।
এখন এখানে যে ইবরত নছীহত রয়েছে, তাহলো আবূ লাহাবের মত কাট্টা কাফির, আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর জন্য খুশি প্রকাশ করে এতো ফযীলত লাভ করল। অথচ পরবর্তী জীবনে সে আজীবন কুফরী করেছে। তার জন্য সূরা নাযিল হয়েছে, আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে, এরপরও সে যে পূর্বে খুশি প্রকাশ করেছিল সেই খুশির জন্য আল্লাহ পাক তাকে একটা নিয়ামত দিয়ে দিলেন। শুধুমাত্র সে আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর সাথে তায়াল্লুক রাখার কারণে, নিসবত রাখার কারণে, সম্পর্ক রাখার কারণে, সামন্যতম খুশি হওয়ার কারণে আল্লাহ পাক এতো বড় নিয়ামত দিয়ে দিলেন। অর্থাৎ জাহান্নামী হওয়ার পরও প্রতি সপ্তাহে একদিনের জন্য সে একটা সুযোগ পেয়ে গেল।
এখন এটা থেকে যে কোন উম্মত, যে কোন বান্দা ফিকির করতে পারে যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর বিলাদত শরীফ উপলক্ষ্যে কেউ যদি খুশি প্রকাশ করে, সে যেই শ্রেণীর লোকই হোক না কেন, কাফিরও যদি হয় তারপরও অবশ্যই সে কিছু ফায়দা লাভ করবেই করবে। আর ঈমানদার হলে তো কোন প্রশ্নই আসে না। সেখানে সে যে কতটুকু ফায়দা লাভ করবে তার জন্য যে জান্নাত ওয়াজিব হবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন এখান থেকে তো আমরা ইবরত ও নছীহত হাছিল করছি, করি এবং করতে পারি।
যারা কাফির শ্রেণীর লোক রয়েছে, যারা ছূরতে মুসলমান হাক্বীক্বতে মুনাফিক, কাফির তারা কিন্তু বলে থাকে, ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লাহাবী উৎসব। (নাউযুবিল্লাহ)। এরা কাফির হয়ে গেছে। এরা কাট্টা কাফির হয়ে গেছে। এরা বলে থাকে, আবূ লাহাব খুশি প্রকাশ করেছে তাহলে আমরা কেন করব? (নাউযুবিল্লাহ)
তাহলে তাদেরকে বলতে হবে তারা চরম লা’নতগ্রস্থ, মিথ্যাবাদী। আবু লাহাব কিন্তু সে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হিসেবে খুশি প্রকাশ করেনি, নবী-রসূল হিসেবে নয়, হাবীবুল্লাহ হিসেবে নয়। সে খুশি প্রকাশ করেছিল তার ভ্রাতুষ্পুত্র হিসেবে। যেহেতু উনার আব্বা তিনি আগেই চলে গেছেন। উনাকে কে দেখবেন, সেজন্য দেখা-শুনার জন্য সে তার বাঁদীকে বলেছিল। হাক্বীক্বত সে কিন্তু আমরা যেভাবে খুশি প্রকাশ করে থাকি সে সেভাবে ও সে হিসেবে করেনি? তারপরেও এখন যদি কোন কাফির কোন ইসলামের কাজ করে তাহলে মুসলমান কি সেটা করতে পারবে না? এখন তো কাফিরেরা দাড়ি রেখে থাকে তাহলে মুসলমানরা কি দাড়ি ফেলে দিবে? গিরিশ চন্দ্র কুরআন শরীফ অনুবাদ করেছে তাহলে মুসলমানরা কি কুরআন শরীফ অনুবাদ করবে না? ইহুদী-নাছারারা কুরআন শরীফ পড়ে থাকে তাহলে মুসলমানরা কি পড়া বন্ধ করে দিবে? এরা তো হচ্ছে, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল। যারা বলে থাকে, আবূ লাহাব করলে আমরা করব কেন? নাউযুবিল্লাহ। অসমাপ্ত॥