তার কিছুদিন পর গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এক খলীফা, তিনি এলাকায় ঘোষণা করলেন যে, “তিনি আল্লাহ পাককে প্রকাশ্যে দেখেন। যখন একথা বলা হলো, (তিনি গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খলীফা) তখন মানুষতো সন্দেহের মধ্যে পরে গেলো, কি ব্যাপার? যিনি গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, মানুষ আল্লাহ পাককে যমীনে দেখবেনা। অথচ এ লোক বলতেছেন, তিনি নাকি আল্লাহ পাককে দেখেন? এ সংবাদ পৌঁছানো হলো, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আ’যম, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কাছে। যখন পৌঁছানো হলো তিনি বললেন, তাকে ডেকে নিয়ে আস। সে খলীফাকে। অর্থাৎ উনার খলীফাকে ডেকে আনা হলো। আনার পর উনি বললেন, (উনিতো ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন) মানুষকে বোঝানোর জন্য বললেন, এক কাজ করো হে ব্যক্তি, “তুমি কি আল্লাহ পাককে দেখতে পাচ্ছ?” সে বললো, “হ্যাঁ আমি দেখতে পাচ্ছি।” তখন তিনি পুনরায় বললেন, “চক্ষু বন্ধ করতো।” সে চক্ষু বন্ধ করলো। তখন আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “এখনও কি দেখতে পাচ্ছ?” সে বললো, “হ্যাঁ, দেখতে পাচ্ছি।” তখন গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন- “দেখ, এ ব্যাপারটা এ মুরীদ সে নিজেও বুঝতে পারেনি। হাক্বীক্বত সে তার অন্তর চক্ষু দ্বারা মেছালী ছূরতে দেখতে পাচ্ছে। যার জন্য সে বলে, আমি আল্লাহ পাককে দেখতে পাচ্ছি। সে হাক্বীক্বী আল্লাহ পাককে দেখতে পাচ্ছেনা। তার চক্ষু যখন বন্ধ করানো হলো তারপরও সে দেখে। কাজেই, বুঝা গেলো, সে তার কাশ্ফের মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছে। কাজেই, যমীনে কেউ আল্লাহ পাককে হাক্বীক্বী ছূরত দেখতে পারবেনা। এটা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া। যদি কেউ বলে, আমি আল্লাহ পাককে দেখতে পাচ্ছি তবে সে কাফির হয়ে যাবে। তবে মেছালী ছূরতে দেখতে পাবে বা দেখবে। যেটা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘মাকতুবাত শরীফে’ উল্লেখ করেছেন, “সালিক যখন মুরাক্বাবা-মুশাহাদা করবে, আল্লাহ পাককে সে দেখবে মেছালী ছূরতে। দেখে যদি মনে করে উনি আল্লাহ পাক তাহলে সে কাট্টা কাফির হয়ে যাবে।” কাজেই, আল্লাহ পাক-এর প্রতি ঈমান আনতে হবে। يؤمنون بالغيب যমীনে সে অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপনকারী হিসাবে আল্লাহ পাককে মেনে নিবে। চু-চেরা, কিল-কাল সে করতে পারবে না। আল্লাহ পাককে দেখার কোন শর্ত এখানে নেই। হ্যাঁ, তবে ইবাদতের জন্য যে বলা হয়েছে,
ان تعبد الله كانك تره فان لم تكن تره فانه يرك.
আল্লাহ পাক-এর রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, “আল্লাহ পাককে তোমরা দেখতে পাচ্ছ, এ ধারণা নিয়ে ইবাদত-বন্দিগী কর। অথবা সে ধারণায় যদি পৌঁছতে না পার, তাহলে এটা ধারণা করো, আল্লাহ পাক তোমাদেরকে দেখেতেছেন।” এটা হচ্ছে মেছালী ছূরত, হাক্বীক্বী ছূরত নয়। যমীনে হাক্বীক্বী ছূরতে কেউ আল্লাহ পাককে দেখবে না। মেছালী ছূরতে দেখবে। যেমন, আল্লাহ পাক-এর রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই বলেছেন,
رأيت ربى عز وجل فى صورة شاب امرد.
আমি আল্লাহ পাককে যুবকের ছূরতে দেখেছি। আউলিয়ায়ে কিরাম বলেছেন, যুবকের ছূরতে বা অন্যান্য অনেক ছূরত মুবারকে দেখেছেন। কাজেই, যমীনে আল্লাহ পাককে কেউ দেখবে না হাক্বীক্বীভাবে। মেছালী ছূরত মুবারকে সে দেখবে এবং আল্লাহ পাককে না দেখে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে এটা ঈমানের প্রথম শর্ত। আল্লাহ পাককে না দেখেই বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বলা হয় যে, ঈমানদারগণ বা যে ব্যক্তি ঈমানদার সে আল্লাহ পাককে বিশ্বাস করে অর্থাৎ যে নিজেকে মুসলমান হিসাবে সাব্যস্ত করবে সে মুসলমান হিসাবে গণ্য হবে। হাদীছ শরীফে রয়েছে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
من صلى صلاتنا واستقبل قبلتنا واكل ذبيحتنا فذلك المسلم. الذى له ذمة الله ذمة رسوله.
“আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, من صلى صلاتنا واستقبل قبلتنا. যে আমাদের মত নামায পড়ে, আমাদের ক্বিবলাকে ক্বিবলা মেনে চলে واكل ذبيحتنا. এবং আমাদের যবাইকৃত পশু খায় فذلك المسلم. সে ব্যক্তি মুসলমান। এখানে হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, “তিনটা শর্ত দেয়া হয়েছে, আমাদের অনুরূপ নামায পড়ে আমাদের ক্বিবলাকে সে ক্বিবলা মানে, যে আমাদের যবাইকৃত পশু খায় সে হচ্ছে মুসলমান।” এখন অনেকে মনে করে থাকে বা বলে থাকে হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, “যারা আহলে ক্বিবলা তারা সকলেই মুসলমান।” (নাউযুবিল্লাহ।) আহলে ক্বিবলার মধ্যে তো তিহাত্তর ফিরক্বা রয়েছে। বাহাত্তর ফিরক্বা যারা আহলে নার বা জাহান্নামী। সকলেই এর অন্তর্ভুক্ত। আহলে ক্বিবলা হলেই যে সে মুসলমান হবে তা নয়। আহলে ক্বিবলার জন্য শর্ত দেয়া হয়েছে, আমাদের অনুরূপ নামায পড়ে, আমাদের যবাইকৃত খাদ্য খায়, ইত্যাদি কয়েকটা শর্ত দেয়া হয়েছে। এই শর্তগুলো একটা মুসলমানের মধ্যে থাকবে। এর চেয়ে আরো অতিরিক্ত শর্ত রয়েছে। এ শর্তগুলো থাকতে হবে অন্যান্য শর্তের সাথে। যেমন বলা হয়েছে,
ايات المنافق ثلاثة اذا وعد خلف واذا حدث كذب واذا اؤتمن خان.
এ হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে মুনাফিকের আলামত তিনটা। অন্য হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে চারটা। এরূপ কম-বেশী অনেক বর্ণনা করা হয়েছে। যে মুনাফিক সে ওয়াদা করলে খিলাফ করে, কথা বললে মিথ্যা কথা বলে, আমানত রাখলে সে খিয়ানত করে। চতুর্থ হচ্ছে ঝগড়া করলে গালিগালাজ করে। এটা হচ্ছে মুনাফিকের আলামত। একটা লোক মুনাফিক হলে তার মধ্যে এই আলামতগুলি থাকবে। সেজন্য সে পূর্ণ মুনাফিক কি না তা চিন্তার বিষয়। একজন লোক মুসলমান হলে তার মধ্যে তিনটা আলামত থাকবে। এ তিনটা হলে সে পরিপূর্ণ মুসলমান হয়ে যাবে তা নয়। এ তিনটাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক যা রয়েছে সবগুলোই তার মধ্যে থাকতে হবে।
যেহেতু এখানে বলা হয়েছে من صلى صلاتنا আমরা যে ভাবে নামায পড়ি সে সেভাবে নামায পড়ে। তাহলে নামাযের যত হুকুম আহকাম রয়েছে হুবহু সেটা মেনে নিবে। আমাদের যে ক্বিবলা রয়েছে সে ক্বিবলাকে সে মানে অর্থাৎ আমাদের যে ক্বিবলা রয়েছে সে ক্বিবলাকে সে মানে, এর যা শর্ত শারায়িত রয়েছে সব সে মেনে নিবে। আমাদের যবাইকৃত খাদ্য তারা খাবে।
তাহলে এর যত মাসয়ালা মাসায়িল রয়েছে, হুকুম-আহকাম সব সে মেনে নিবে। এক কথায় এই তিনটা দিয়েই, ইসলামের পরিপূর্ণতা এসে যায়, যদি তার হাক্বীক্বত অর্থ ধরা হয়। আর আমভাবে অর্থ ধরা হলে, একটা মুসলমানের এই তিনটা গুণ থাকতে হবে কমপক্ষে। এর সাথে আরো গুণ থাকতে হবে। فذالك المسلم. তাহলে সে হাক্বীক্বী মুসলমান। অর্থাৎ হাক্বীক্বী মুসলমান ঈমানদার হতে পারবে। মু’মিনে কামিল হওয়ার জন্য আরো শর্ত শারায়িত রয়েছে। এ সমস্ত অনেক হাদীছ শরীফ রয়েছে, সে সমস্ত হাদীছ শরীফের দ্বারা সে মনে করে থাকে যে, একজন লোক এ কয়েকটা শর্ত মানলেই সে ঈমানদার হবে বা মুসলমান হবে তা নয়।
কারণ, আক্বাইদের বিষয়গুলো যা রয়েছে, তা সবই সে মানে কিন্তু একটা মানলোনা। অর্থাৎ সবই সে মানলো। আল্লাহ পাককেও মেনে নিলো কিন্তু রসূল থেকে একজন রসূলকে সে মানলো না, সে ঈমানদার থাকতে পারবে না বরং সে কাফির হয়ে যাবে।
ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম-৩