ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনার আলোকে- ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম-৬

সংখ্যা: ১৪৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

তিনি জিজ্ঞেস করলেন যে, ‘তোমার কি মাসয়ালা রয়েছে, তা বলো?’  সে বললো, এক নম্বর হচ্ছে, “আল্লাহ পাককে দেখা যায়না কিন্তু কি করে বিশ্বাস করবো? এটা আমার মনে সন্দেহ ও সংশয় রয়েছে।”  তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বাকি মাসয়ালাগুলো কি? সেগুলো একসাথে বলো। সে বললো, দুই নম্বর হচ্ছে, “আমরা কিতাবে পড়েছি, শুনেছি, জাহান্নামে আগুনের দ্বারা মানুষকে শাস্তি দেয়া হবে, সেখানে জিন-ইনসান উভয় যাবে। আগুনের দ্বারা শাস্তি দেয়া হবে। তাহলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আগুন দিয়ে যদি জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হয় তাহলে আগুনের দ্বারা যারা তৈরি অর্থাৎ জিন সম্প্রদায় আগুন দ্বারা তৈরি; তাদেরকে কি করে আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়া হবে?” আর তিন নম্বর হচ্ছে, “আল্লাহ পাক তো পরকালে বিচার করবেনই তাহলে যমীনে বিচারের কি দরকার রয়েছে? আল্লাহ পাক বিচার করবেন এবং আল্লাহ পাক-এর আদেশ, নির্দেশে সব কাজ সংঘটিত হয়ে থাকে। তাহলে যমীনে বিচারের কি দরকার রয়েছে?” যখন সে লোকটা এ প্রশ্ন করলো, প্রশ্ন শেষ হওয়া মাত্রই হযরত রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহা একটা মাটির টুকরা তুলে তা তার গায়ে নিক্ষেপ করলেন। মোটামুটি সেটা মাঝারি জোড়ে ছিলো, সে ব্যাথা পেয়েছে। সে ব্যাথা পেয়ে সেখান থেকে উহ্ উহ্ করতে করতে সরে গেলো, পালিয়ে গেলো।  সে মনে মনে ফিকির করলো, হযরত রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহা গোস্সা করেছেন, তাকে মেরেছেন, হয়ত থাকলে আরো বেশী মারবেন, সেজন্য সে পালিয়ে গেলো। সে মনে মনে চিন্তা করলো, আমাকে মানুষ বললো, আমিও শুনেছি, উনি আল্লাহ পাক-এর ওলী। উনার কাছে মাসয়ালা জিজ্ঞেস করলাম, উনি আমাকে আঘাত করলেন এটা কেমন হলো, উনি আল্লাহ পাক-এর ওলী। সে অনেক ফিকির-চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত কাজী ছাহেবের কাছে গেলো। সে যামানায় কাজীর নিয়ম ছিলো, তরতীব ছিলো। কাজী ছাহেবের কাছে বলা হলো, হে কাজী ছাহেব! আপনাদের এলাকায় হযরত রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহা নামে একজন বিশিষ্ট আল্লাহ পাক-এর ওলী, বুযূর্গ রয়েছেন। কাজী ছাহেব জানতো, চিন্তো। উনি বললেন, হ্যাঁ। তখন সে ঘটনা খুলে বললো যে, উনি আল্লাহ পাক-এর ওলী, উনার কাছে গিয়েছিলাম মাসয়ালার জন্য অথচ উনি জাওয়াব তো দিলেনই না বরং আমাকে মাটি দিয়ে আঘাত করলেন। যার জন্য আমি ব্যাথাও পেলাম। তার যে জায়গায় ব্যাথা পেয়েছে সে জায়গা দেখালো কাজী ছাহেবকে।  কাজী ছাহেব বললেন, নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোন ব্যাপার রয়েছে। আচ্ছা ঠিক আছে, আমার সাথে চলুন। আমি জিজ্ঞাসা করবো, কেন তিনি আপনাকে আঘাত দিয়েছেন। কাজী ছাহেব আসলেন হযরত রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহা-এর কাছে। এসে বললেন, আপনার কাছে একটা লোক এসেছিলো কিছুক্ষণ পূর্বে, সে তিনটি মাসয়ালা জিজ্ঞেস করেছিলো, আপনি জাওয়াব দেয়ার পরিবর্তে তাকে মাটি দিয়ে আঘাত করেছেন। সে ভয়ে এখান থেকে পালিয়ে গেছে। এখন প্রশ্ন হলো, এর কি কারণ? যদি আপনার জাওয়াব না দেয়ার মত হতো তাহলে আপনি জাওয়াব না হয় না দিতেন। কিন্তু আঘাত কেন করেছেন? সেজন্য সে আমার কাছে বিচারের জন্য গিয়েছে। এখন আমি এসেছি আপনাকে জিজ্ঞাসা করার জন্য, তার সঠিক জাওয়াবটা কি? হযরত রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহা বললেন, তুমি এক কাজ করো, সে লোকটাকে জিজ্ঞাসা করো, সে আমাকে কি প্রশ্ন করেছিলো?  প্রকৃতপক্ষে তাকে আমি আঘাত করিনি, তার প্রশ্নের জাওয়াব দিয়েছি, সে হয়ত বুঝতে পারেনি। এটা শুনে কাজী ছাহেব এবং সেই লোক উভয়ে তায়াজ্জুব হয়ে গেলো। আপনি বলেন কি! আপনাকে প্রশ্ন করা হলো, আপনি আমাকে মাটি দিয়ে আঘাত করে জাওয়াব দিলেন, এটা কোন্ ধরনের জাওয়াব। তাদের আক্বলে, তাদের সমঝে সে বিষয়টা আসেনি। কিন্তু সুক্ষ্ম মাসয়ালার সুক্ষ্ম জাওয়াব। তখন হযরত রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহা বললেন, তুমি কি জিজ্ঞেস করেছিলে, তুমি সেটা বলো। এবং তার জাওয়াব কি করে দেয়া হলো, সেটা আমি বলে দিবো।  সে বললো, আমি বলেছিলাম, “আল্লাহ পাককে দেখা যায় না, তাহলে কি করে বিশ্বাস করবো?” এটা প্রথম প্রশ্ন ছিলো। হযরত রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহা বললেন, “যদি তাই সত্য হয়ে থাকে তাহলে তোমাকে যে আঘাত করেছি, তুমি যে ব্যাথা পেয়েছো, কোথায়?”  সে দেখাল শরীরের অমুক স্থানে। তুমি যে ব্যাথা পেয়েছো, এটা কি দেখা যায়? সে বললো, ব্যাথা দেখা যায়না, সেটা অনুভব করতে হয়। আমার অনুভূতির মধ্যে এসেছে, আমি ব্যাথা পাচ্ছি।  হযরত রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহা বললেন, “হ্যাঁ, ঠিক আল্লাহ পাককে তো দেখা যায়না, অনুভব করতে হয় আল্লাহ পাক-এর কায়িনাত রয়েছে, সৃষ্টিজগত রয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি রয়েছে। এ থেকে অনুভব করতে হয়। আল্লাহ পাক একজন আছেন, খালিক-মালিক একজন রয়েছেন। আমি সে জন্য তোমাকে আঘাত করেছি। ব্যাথা যেমন দেখা যায় না, অনুভব করতে হয়, ঠিক আল্লাহ পাককেও দেখা যায়না, অনুভব করতে হয়।” এক নম্বর।  দু’নম্বর তুমি কি প্রশ্ন করেছ? “জাহান্নামে আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়া হবে অথচ জিনেরা আগুনের তৈরি। তাহলে জিনকে কি করে আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়া সম্ভব হবে?”  হযরত রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহা বললেন, “তুমি তো মাটির তৈরি, আমি তোমাকে মাটি দিয়ে আঘাত করলাম, তুমি কেন ব্যাথা পেলে? তুমি যদি মাটির তৈরি হওয়া সত্বেও মাটি দিয়ে আঘাত করলে ব্যাথা পেতে পার তাহলে জিনেরা যারা আগুনের দ্বারা তৈরি, তাদেরকে আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়া হলে, তারা কেন ব্যাথা পাবে না বা শাস্তি ভোগ করবে না অথবা কেন কষ্ট পাবে না।” আর তিন নম্বর তুমি বলেছ, “আল্লাহ পাক-এর আদেশ-নির্দেশে সব হয়, আল্লাহ পাকই বিচার করবেন, তাহলে আর যমীনে বিচারের কি দরকার ছিল?” যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে তুমি কেন কাজী ছাহেবের কাছে গেলে। যদি তোমার যমীনে বিচারের দরকার না হতো তাহলে তুমি কেন কাজী ছাহেবের কাছে গেলে। কাজেই, আল্লাহ পাককে না দেখে বিশ্বাস করতে হবে, অনুভব করতে হবে। এটাই মূল বিষয় যে, আল্লাহ পাককে না দেখে বিশ্বাস করতে হবে। আল্লাহ পাককে দেখে কেউ বিশ্বাস করবে এটা সম্ভব নয়।  আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া হচ্ছে, কোন ব্যক্তি যদি বলে, আমি আল্লাহ পাককে দেখেছি, সে কাট্টা কাফির। কারণ আল্লাহ পাককে যমীনে কেউ দেখবে না। পরকালে দেখবে। এবং যমীনে মেছালী সূরত দেখতে পারে। মেছালী সূরত। যেটা হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি দেখেছেন। হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি দেখেছেন। গাউসুল আ’যম হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি দেখেছেন। সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীব নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি দেখেছেন। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি দেখেছেন। আউলিয়ায়ে কিরামগণ দেখেছেন মেছালী ছূরত। হাক্বীক্বী ছূরত যমীনে কেউ দেখবে না। যদি কেউ বলে, সত্যি আমি আল্লাহ পাককে দেখলাম, তাহলে সে কাট্টা কাফির।  এ প্রসঙ্গে বলা হয়, গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি এক এলাকায় গেলেন ওয়াজ করতে। উনাকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে, লোকজন জমা হয়েছে, তিনি নছীহত করবেন, তারা ঈমান আনবে, তওবা করবে, ইস্তিগফার করবে। তিনি ওয়াজ-নছীহত করলেন, লোকেরা তওবা করলো, ঈমান আনলো। প্রত্যেকটা লোকেই ঈমান আনলো।  তিনি ওয়াজে বলেছিলেন এই মাসয়ালা যে, আল্লাহ পাককে কেউ যমীনে দেখবে না। যদি দেখে, তাহলে মেছালী ছূরতে দেখবে। কিন্তু কেউ যদি দাবী করে, সে হাক্বীক্বী ছূরতে দেখেছে তাহলে সে কাট্টা কাফির হয়ে যাবে। তিনি মানুষকে তাওহীদ, রিসালত বুঝিয়েছিলেন। মানুষ বুঝেছে, ঈমান এনেছে, উনি চলে আসলেন। (অসমাপ্ত)

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত  ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, সুলত্বানুল ওয়ায়িজীন, গাউছূল আ’যম, ছাহিবু সুলত্বানিন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওয়াজ শরীফ কুরআন  শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-আহ্কাম-৪৩

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত  ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, সুলত্বানুল ওয়ায়িজীন, গাউছূল আ’যম, ছাহিবু সুলত্বানিন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-আহ্কাম-৪৫

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত  ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, সুলত্বানুল ওয়ায়িজীন, গউছে আ’যম,ছাহিবু সুলত্বানিন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওয়াজ শরীফ কুরআন  শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম-১

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, সুলত্বানুল ওয়ায়িজীন, গউছে আ’যম,ছাহিবু সুলত্বানিন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম-২

ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম-৩