আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে বলেছেন, পাঁচটা বিষয়কে গণিমত মনে করার জন্য।
شبابك قبل هرمك.
“যৌবনকালকে গণিমত মনে করো বৃদ্ধ হওয়ার পূর্বে।”
কারণ বৃদ্ধ হয়ে গেলে অনেক আমল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও করা সম্ভব হয়না। মা’জুর হয়ে যায়, মানুষ দুর্বল হয়ে যায়। এখন সে তাহাজ্জুদ নামায পড়বে, দুর্বল হয়ে যাবে, কাতর হয়ে যাবে, শীতে-গরমে তার তাহাজ্জুদ আদায় করা সম্ভব হলো না। অন্যান্য অনেক আমল রয়েছে যেটা দুর্বলতার কারণে অনেক সময় সম্ভব হয় না। কাজেই যৌবনকালকে গণিমত মনে করতে হবে। এ সময়টাকে সবচাইতে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে। এরপর বলা হয়েছে,
صحتك قبل سقمك.
“সুস্থতাকে অসুস্থ হওয়ার পূর্বে গণিমত মনে করো।”
রোগ-শোক হওয়ার পূর্বে, বীমার হওয়ার পূর্বে যে সুস্থতা রয়েছে সেটাকে গণিমত মনে করো। অসুখ হয়ে গেলে, মানুষের রোগ হয়ে গেলে অনেক কিছুই সে করতে পারেনা। কাজেই সুস্থতাকে যেন গণিমত মনে করে।
হাদীছ শরীফে রয়েছে, “কোন ব্যক্তি যদি সুস্থ অবস্থায় সে অনেক আমল করে থাকে, যখন সে অসুস্থ হয়ে যাবে, বিমারী হয়ে যাবে, তখন যে সমস্ত আমল সে করতে পারবে না সুস্থ অবস্থায় সে করেছিল, আল্লাহ পাক সে সমস্ত আমল তার আমল নামায় দিয়ে দিবেন।” (সুবহানাল্লাহ) যেহেতু সে মা’জুর।
কাজেই সুস্থতাকে গণিমত করতে হবে।
غنائك قبل فقرك.
“অভাবের পূর্বে যে স্বচ্ছলতা রয়েছে তা গণিমত মনে করতে হবে।”
মানুষ যখন স্বচ্ছল থাকে তখন তার নেক কাজ করা উচিত বেশী বেশী। দান-খয়রাত হোক এবং এ ধরনের যা কিছু রয়েছে বেশী বেশী করা উচিত। অভাব যখন আসে বা মানুষের সঙ্কীর্ণতা আসে রিযিকের তখন তার পক্ষে হয়তো অনেক কাজ করা সম্ভব হয় না। কাজেই স্বচ্ছলতাকে গণিমত মনে করতে হবে।
فراغك قبل شغلك.
ব্যস্ততার পূর্বে অবসর মুহূর্তকে গণিমত মনে করতে হবে। যে সময়টা মানুষ অবসর পায় সেই সময়টাকে গণিমত মনে করে মূল্যবান কাজে তা ব্যয় করা উচিত। তাহলে প্রত্যেকটার একই হুকুম রয়েছে। যে কেউ যদি স্বচ্ছল অবস্থায় বেশী বেশী দান-খয়রাত করে, সুস্থ অবস্থায় বেশী বেশী আল্লাহ পাক-এর রিযামন্দির কোশেশ করে, অবসর সময় বেশী বেশী রিযামন্দির কোশেশ করে, সে ব্যক্তি যদি ব্যস্ত হয়ে যায়, অসুস্থ হয়ে যায়, অভাবগ্রস্ত হয়ে যায়, ঠিক তার স্বচ্ছলতার সময়, সুস্থতার সময়, অবসর সময় যে নেকীগুলো করেছিল, তার নিয়ত যেগুলো ছিল তার অসুস্থতার কারণে, অভাবের কারণে, ব্যস্ততার কারণে সে পারতেছে না; আল্লাহ পাক সেগুলোর ছওয়াব বা নেকী তার আমলনামায় দিয়ে দিবেন। (সুবহানাল্লাহ)
যে, نية المؤمن خير من عمله.
“মু’মিনের নিয়ত তার আমল থেকে উত্তম।” (সুবহানাল্লাহ)
কাজেই, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এটা গণিমত মনে করো এবং সর্বশেষ যেটা বলেছেন, حياتك قبل موتك.
“তোমরা সম্পূর্ণ হায়াতকে (বিশ, ত্রিশ, চল্লিশ, আশি, নব্বই, একশ বৎসর যা হায়াত পেলে সেটাকে) গনিমত মনে করো।” সম্পূর্ণ হায়াতটাকে। যেহেতু যে ইন্তিকাল করেছে সে যদিও অনেক সুস্থ ছিল, স্বাস্থ্য ছিল, বয়স কম ছিল, তারপরও সে ইন্তিকাল করেছে। তারপক্ষে আমল করা সম্ভব নয়। এখন যে বেঁচে আছে সে যদি দুর্বল হয়, অনেক বয়সও হয়ে থাকে, তারপরও সে হায়াতে রয়েছে। ইচ্ছে করলে সে যত প্রকার অসুস্থ থাকুক না কেন, শুয়ে শুয়ে যিকির-ফিকির ইত্যাদি সে করতে পারে, নামায-কালাম সে পড়তে পারে। সেটারও অনেক বদলা রয়েছে এবং আল্লাহ পাক-এ সন্তুষ্টির জন্য, রিযামন্দির জন্য সে কোশেশ করতে পারে। কাজেই, সম্পূর্ণ হায়াতটাকে গণিমত মনে করতে হবে। সম্পূর্ণ হায়াতকে গণিমত করতে হবে। কাজেই শেষ অবস্থায় যদি কারো আমলে ত্রুটি এসে যায়, তাহলে তার জন্য ক্ষতি ছাড়া কিছু থাকবে না।
সে জন্য বলা হয়েছে সম্পূর্ণ হায়াতটাকে গণিমত মনে কর। বিশেষ করো যৌবনকালটাকে। এজন্য বলা হয়েছে,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
যৌবনকালে তওবা করা হচ্ছে নবীদের খাছলত। অর্থাৎ, এর অর্থ এটা যেন কেউ না বুঝে, নবীরা যৌবনকালে তওবা করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ)
নবীরা নবী- النبى نبيا ولو كان صبيا.
“নবীরা জন্ম থেকে নবী হয়ে এসেছেন।” কাজেই, ওনাদের এখানে আলোচনা আসেনা, তারপরও বলার বিষয় হচ্ছে, নবীরা তওবা করা অর্থ হচ্ছে, নুবুওওয়াতি খাছলত এটা। যৌবন বয়সে তওবা করা হচ্ছে নুবুওওয়াতি খাছলত।
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
“বৃদ্ধ বয়সে সে জালিম বাঘ ও সিংহ- পরহিযগার হয়ে যায়।” অর্থাৎ সে তো শিকার ধরতে পারে না, তখন সে বলে, আমি এগুলি আর শিকার করি না। আমি কোন পশু মারি না ইত্যাদি ইত্যাদি। সে তখন পরহিযগার হয়ে যায়। অপারগ হয়ে। কাজেই এটা বুঝানো হয়েছে, মানুষ যখন বৃদ্ধ হয়ে যাবে, অক্ষম হয়ে যাবে, অপারগ হয়ে যাবে। হয়তো অনেক কাজ তার ইচ্ছা থাকা সত্বেও সে করতে পারবে না। ভিতরে হয়তো তার পাপ কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে, সে পাপ করতে পারতেছে না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার পরহিযগারী। সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না।
কাজেই, সক্ষম থাকা অবস্থায় তওবা- ইস্তিগ্ফারঞ্জকরা সেটা হচ্ছে বেশী ফযীলতের কারণ। হ্যাঁ, এর পর, বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর যদি কেউ ইস্তিগ্ফার করে খালিছ, সেটা গ্রহণযোগ্য। মৃত্যুর পূর্বেও ইস্তিগ্ফার করলে, মৃত্যুর গড়গড়া উঠার পূর্বে কেউ যদি ইস্তিগ্ফার করে, সেটাও গ্রহণযোগ্য হবে। তবে শর্ত হচ্ছে, অন্তর থেকে ইস্তিগ্ফার করতে হবে। কাজেই, প্রতিটি সময়কে গণিমত মনে করতে হবে। এক সেকেন্ডকেও গণিমতের বাইরে মনে করা যাবে না। সেটা জন্মের শুরুতে হোক, আর জন্মের শেষ অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বেই হোক না কেন, সেটাকে গণিমত করতে হবে। একটা সেকেন্ড একটা মানুষকে ঈমানদার করে দিতে পারে, আবার তাকে ঈমানহারাও করে দিতে পারে।
যেমন, হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, ওনার যখন মৃত্যুর সময় এসে গেল। ইবলিস এসে ওনাকে ধোঁকা দিল- হে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, আপনিতো সারা জীবন আল্লাহ পাক-এর রিযামন্দি, আল্লাহ পাক-এর রসূলের রিযামন্দির উদ্দেশ্যে আপনার যিন্দিগীটা কাটিয়ে দিয়েছেন এবং সেই মকছূদ আপনার পুরা হয়েছে। এখন কোন চিন্তার কারণ নেই। যখন ইবলিস এ কথা বললো, তখন হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, ‘হে ইবলিস! তুমি কি আমাকে শেষ মুহূর্তে ধোঁকা দিয়ে আমার ঈমানটা নিয়ে যেতে চাও। আমার সম্পূর্ণ জিন্দিগী আমি নেক কাজে অতিবাহিত করেছি, আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টি অর্জনে, আল্লাহ পাক-এর রসূলের সন্তুষ্টি অর্জনে আমি ব্যয় করেছি সত্যিই। আল্লাহ পাক যদি আমার প্রতি রহমত করেন, দয়া করেন, অবশ্যই আমি কামিয়াবী হাছিল করবো এবং করেছি। তবে শেষ মুহূর্তে তোমার কথায় যদি আমি গাফিল হয়ে যাই, তবে তুমি আমার ঈমানটা নিয়ে যাবে। কাজেই, ঈমান নিয়ে ইন্তিকাল করার পর আমি ইত্মিনান হবো এর পূর্বে ইত্মিনান হবো না।’ যখন তিনি সুস্থ হলেন তখন এ কথাটা বললেন, ওনার যারা মুরীদ-ম’ুতাক্বিদ ছিলেন তাদের কাছে। এরপর তিনি ঈমান নিয়ে যমীন থেকে বিদায় নিলেন এবং কামিয়াবী হাছিল করলেন।
কাজেই মানুষের জন্য একটা সেকেন্ড তার ঈমান আনার জন্য যথেষ্ট। আবার আল্লাহ পাক না করুন ঈমান হারা হয়ে যাওয়ার জন্যও যথেষ্ট। (অসমাপ্ত)
ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম-৪