ওয়াজ শরীফ কুরআন  শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-আহ্কাম-৩৩

সংখ্যা: ১২৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

হাদীছ শরীফে এসেছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, لعن الله الناظر والمنظور اليه. যে দেখে এবং যে দেখায় উভয়ের প্রতি আল্লাহ পাক-এর লা’নত। ওটা একজন শুধু লা’নতগ্রস্ত হবে তা নয়, যে দেখবে এবং যে দেখাবে উভয়ের প্রতিই লা’নত। এখন যদি এমন কোন অবস্থায় যে কোন মহিলা নিরিবিলি হেঁটে যাচ্ছে, দেখানো তার উদ্দেশ্য নয় কিন্তু কোন পুরুষ যদি তাকে দেখার কোশেশ করে, তাহলে শুধু পুরুষের প্রতিই লা’নত বর্ষিত হবে ঐ মহিলার উপর হবেনা। আবার যদি এমন হয় যে, কোন পুরুষ নিরিবিলি চলে যাচ্ছে, কোন বেগানা মহিলা তার প্রতি খারাপ দৃষ্টি দিচ্ছে, তাহলে পুরুষের উপর লা’নত হবেনা। শুধু মহিলার উপরই লা’নত হবে। কাজেই যে দেখবে এবং দেখাবে, যে দেখবে এবং দেখাবে উভয়ের প্রতিই আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে লা’নত বর্ষিত হবে। খুব সর্তক, সাবধান থাকতে হবে এ ব্যাপারে।  সেটাই বলা হয়েছে যেটা হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, النساء حبائل الشيطان.

 অর্থাৎ শয়তানের রুজ্জু মহিলার মাধ্যম দিয়ে মানুষকে ইবলিস ওয়াসওয়াসা দিয়ে থাকে। এরপর বলা হয়েছে,

حب الدنيا رأس كل خطيئة ترك الدنيا رأس ك اطاعة.

 “দুনিয়ার মুহব্বত সমস্ত গুনাহর মূল। আর দুনিয়ার মুহব্বত তরক করা হচ্ছে সমস্ত ইবাদতের মূল।” (সুবহানাল্লাহ)  কাজেই দুনিয়ার মুহব্বতে যদি কেউ গরক হয়ে যায় অর্থাৎ সেদিকে আকৃষ্ট হয়ে যায়, সে আপসেআপ দুনিয়ার মুহব্বতে গরক হবে এবং সমস্ত গুনাহ্র মূল সেটা তার মধ্যে প্রবেশ করে যাবে। তার দ্বারা গুনাহ্ কাজই সংঘটিত হবে। আর যদি সেটা সে ছেড়ে দিতে পারে, তাহলে দুনিয়ার সমস্ত গুনাহ্র মূল যে দুনিয়ার মুহব্বত, সেটা তার মধ্যে প্রবেশ করতে পারবেনা। যার কারণে সে সমস্ত হারাম, অবৈধ, অশ্লীল, অশালীন, অপছন্দনীয় কাজ থেকে হিফাযত থাকবে। আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টি আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি তার জন্য হাছিল করা সহজ এবং সম্ভব হবে। খুব ফিকির চিন্তার বিষয় যে, পর্দা বা হিজাব মহিলাদের জন্য ফরয করা হয়েছে। যেমন, পুরুষের জন্য হালাল কামাই করা ফরয করা হয়েছে। মহিলাদের জন্য পর্দা করা ফরয। এটা সোজা কথা নয়। এক এক দৃষ্টিতে এক একটা কবীরাহ গুনাহ। আর যে, সেসমস্ত গুনাহ থেকে বাঁচবে তার জন্য আলাদা ফযীলত রয়েছে। অর্থাৎ পর্দার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে এবং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরফ থেকে পর্দা ফরয করে দেয়া হয়েছে। তার হুকুম-আহকাম, তার গুরুত্ব, তার তাৎপর্য জানা প্রত্যেকের জন্যই জরুরী এবং ফরযের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান,

ولا يضربن بارحهن ليعلم ما يخفين من زينتهن وتوبوا الى الله جميعا ايه امؤمنون لعلكم تفحون.

এ আয়াত শরীফের মধ্যে আল্লাহ পাক মেয়েদের চাল-চলন সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। কিভাবে তারা চলবে, হাঁটবে ইত্যাদি সম্পর্কে।  আল্লাহ পাক বলেন, ولا يضربن بارحلهن.  তোমরা এমনভাবে হেঁটনা, এমনভাবে তোমরা পা ফেলনা, ليعلم مايخفين من زينتهن.

তোমাদের পদাঘাতের কারণে, হাঁটার কারণে তোমাদের যে সৌন্দর্য রয়েছে, যেটা গোপন সৌন্দর্য, যেটা প্রকাশ করা নিষিদ্ধ, সে সৌন্দর্য প্রকাশ হয়ে পড়ে, এমন ভাবে তোমরা হেঁটনা।

وتوبوا الى اله جميعا ايه المؤمنون.

এরপর আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন যে, ‘হে মু’মীন বান্দা যারা রয়েছ! তোমরা প্রত্যেকেই ইস্তিগফার-তওবা কর আল্লাহ পাক-এর কাছে। অবশ্যই তোমরা কামিয়াবী হাছিল করবে।’ এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রথমে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন যে, তোমরা এমনভাবে হেঁটনা, পা ফেলনা, বিচরণ করনা যার কারণে

يعم مايخفين من زينتهن.

প্রকাশ হয়ে যায় তোমাদের যে গুপ্ত সৌন্দর্য রয়েছে, সেটা এ আয়াত শরীফের তাফসীরে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

قد اذن الله لكن ان تخرجن لحوائجكن.

আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে দেখ, আল্লাহ পাক তোমাদেরকে, তোমাদের জরুরতে, খুব প্রয়োজন হলে, কোথাও যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন, তবে সে অনুমতি শর্ত সাপেক্ষে দেয়া হয়েছে। কোন মহিলা বা কোন মেয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার, কোথাও যাওয়ার, সে অনুমতি আল্লাহ পাক দিয়েছেন, তবে কিছু শর্ত-শারায়েত করেছেন।  যেমন অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ করা  হয়েছে,

عن بتنة رحمة الله عليها كانت عند عائشة رضى الله تعالى عنها اذا دخلت عيها بجارية وعليها جلاجيل يسوطن فقالت عائشة رضى الله تعالى عنها لا تدخلن على الا ان تقطعن حلاجها سمعت رسول الله صى اله عليه وسلم يقول لاتدخل الملائكة بيتا فيه الجرس.

হযরত বুনানা রহমতুল্লাহি আলাইহা উনি বর্ণনা করেন যে, একবার আমরা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, যিনি উম্মুল মু’মিনীন, উনার হুজরা শরীফে বসা ছিলাম। এমন সময় অন্য একজন মহিলা এসে সংবাদ দিল যে, হে হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! একটা মেয়ে এসেছে আপনার সাক্ষাতে। আপনার সাথে দেখা করতে চায়। এটা বলে,

اذا دخلت عليها بجارية وعليها جاجي يسوطن.

দেখা করার কথা বলে একটা মহিলা বা একটা বাঁদী প্রবেশ করেছিল, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর ঘরে বা হুজরা শরীফে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে। তার পায়ে ছিল, جلاجيل এটার বাংলা হচ্ছে এমন কিছু অলংকার রয়েছে যেটা পায়ে পরিধান করলে আওয়াজ হয়। সেটাকে ঘুঙ্গুর বলা হয়। অর্থাৎ ঘুঙ্গুর জাতীয়, সে অলংকার সে পড়েছিল, তার সে ঘুঙ্গুর আওয়াজ হচ্ছিল, ঘড়ির ঘন্টার যেমন আওয়াজ ঠিক তদ্রুপ আওয়াজ হচ্ছিল। সেটা শুনে হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন,

لاتدخلن على الا ان تقطعن.

‘তাকে আমার এখানে প্রবেশ করতে দিওনা, প্রবেশ করিওনা।

’ على الا ان تقطعن

 যতক্ষণ পর্যন্ত সেই ঘুঙ্গুর বা অলংকার যেটা তার পায়ের মধ্যে আওয়াজ হচ্ছে, ঘন্টার মত, সেটা কেটে না ফেলা হয়

سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول.

আমি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে শুনেছি উনি বলেছেন,

لاتدخل الملائكة بيتا فيه الجرس.

‘ঐ ঘরে রহমতের ফেরেশ্তা প্রবেশ করেননা, যেই ঘরে এই ঘন্টা রয়েছে, ঘুঙ্গুর রয়েছে। কাজেই এই ধরণের অলংকার বা নুপূর যেটা মানুষ পায়ে পরে থাকে বা ঘুঙ্গুর’ সেটা পরে মানুষ যখন হাঁটে। তার আওয়াজ হয়, হাদীছ শরীফে রয়েছে, আওয়াজের কারণে ফেরেশ্তারা তার প্রতি লা’নত বর্ষণ করতে থাকে। (নাউযুবিল্লাহ) হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, যেহেতু সে এটা পরে এসেছে তার আওয়াজ হচ্ছে ঘণ্টার মত। এর কারণে তার উপর লা’নত বর্ষিত হচ্ছে, রহমতের ফেরেশ্তা তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, কাজেই সে আমার হুজরা শরীফে প্রবেশ করলে, এখানে যে রহমতের ফেরেশ্তা রয়েছেন, তারাও চলে যাবেন। তার কারণে লা’নত বর্ষিত হবে।  কাজেই তাকে প্রবেশ করতে দিওনা। যতক্ষণ পর্যন্ত তার সেই অলঙ্কারটা কেটে ফেলা না হয়। ওটা কেটে ফেলে তারপর আমার কাছে তাকে প্রবেশ করতে দিও। এখানে বলা হয়েছে, এমনভাবে তোমরা পদাচরণ করনা অর্থাৎ হেঁটনা তোমাদের সৌন্দর্য প্রকাশ পেয়ে যায় অথবা এমন কিছু ব্যবহার করনা যেটার কারণে এমন আওয়াজ হয়, বেগানা পুরুষ তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং যেটার কারণে তোমাদের প্রতি আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে লা’নত বর্ষিত হয়। সেটাই হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা স্পষ্ট বলে দিলেন যে, “এমন কোন অলঙ্কার মেয়েদের পরা উচিৎ নয়, যেটা পরে হাঁটলে পায়ের মধ্যে অথবা শরীরে অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যেটার কারণে আওয়াজ হবে। আওয়াজের কারণে বেগানা পুরুষ তার দিকে আকৃষ্ট হতে পারে সেটার কারণে তার প্রতি আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে লা’নত বর্ষিত হবে এরং তার নিকট থেকে রহমতের ফেরেশ্তারা সরে যাবে, সে যে স্থানে অবস্থান করবে সেখানেও লা’নত বর্ষিত হবে।” (নাঊযুবিল্লাহ) এ আয়াত শরীফের মধ্যে

ولايضربن بارجلهن.

এ আয়াত শরীফের মধ্যে আল্লাহ পাক মেয়েদের চলাচলের হুকুম-আহ্কাম, নিয়ম-কানুন, তার তরতীব, সব কিছু বলে দিয়েছেন। সেটা আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যাখ্যা করেছেন। এরপর আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

قال النبى صلى الله عليه وسلم ان المراة اذا استعطرت فمرت عى قوم ليجدوا ريحها وهى زانية.

আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যাখ্যায় বলেন, যে দেখ, যদি কোন মেয়ে লোক, তার জরুরত হলে সে তো রাস্তায় চলবে, কোথাও যাবে, কিন্তু যদি কোন মহিলা সে তার শরীরে আতর-গোলাপ মেখে, যে আতর-গোলাপের ঘ্রাণ, রাস্তা দিয়ে চলার সময় মানুষ পেয়ে থাকে। যে কোন মহিলা যদি এ উদ্দেশ্যে আতর-গোলাপ মাখে তার শরীরে, সেটা মেখে সে পথ চলে তার উদ্দেশ্য হল,

فمرت على قوم ليجدوا ريحها.

যে, তার শরীরের সুঘ্রাণ মানুষ যেন পায়। সে উদ্দ্যেশ্য যদি কেউ, কোন মহিলা আতর-গোলাপ মেখে রাস্তা দিয়ে পথ চলে فهى زانية আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ইরশাদ করেন, তাহলে সে বাভিচারিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। ব্যভিচারিনী হিসাবে সে সাব্যস্ত হয়ে যাবে। যদি কেউ আতর-গোলাপ মেখে, সুঘ্রাণ মেখে, কোন বেগানা পুরুষের সামনে দিয়ে চলে, সম্প্রদায়ের সামনে দিয়ে চলে, তার উদ্দেশ্য তার শরীরের সুঘ্রাণ যেন মানুষ পায়, তাহলে সে ব্যভিচারিনী হিসাবে সাব্যস্ত হবে আল্লাহ পাক-এর দরবারে। এরপর ইরশাদ করেছেন, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে,

قال النبى صلى اله عيه وسم ان المراة اذا استعطرت فمرت بالمجلس فهى كذا وكذا يعنى زانية.

 আর যদি এমন  কোন মহিলা থাকে, তার উদ্দেশ্য এটা নয় যে, তার শরীরের সুঘ্রাণ কোন বেগানা পুরুষ নেক। এরপরেও যদি সে আতর গোলাপ মেখে পথ চলে, তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোন বেগানা পুরুষ তার শরীরের ঘ্রাণ লাভ করে, তথাপিও وهى كذا وكذاএটা বলে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, তাহলে সে এরূপ, এরূপ হবে। অর্থাৎ وهى زانية ‘সে ব্যভিচারিনী হিসাবে সাব্যস্ত হবে।’ (নাউযুবিল্লাহ) এখন তার নিয়ত থাকুক, চাই নিয়ত না থাকুক উভয় অবস্থাতেই সে আল্লাহ পাক-এর কাছে ব্যভিচারিনী হিসাবে সাব্যস্ত হবে। এজন্য ফতওয়া দেয়া হয়েছে, সাধারণভাবে পুরুষের জন্য কোন রং ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। আর সাধারণভাবে মেয়েদের জন্য সুঘ্রাণ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। অর্থাৎ, যেমন মেহেদী রয়েছে, যেটা আমরা মেন্দী বলে থাকি। যেটাতে রং হয় এমন কোন দ্রব্য যেটার কারণে মানুষের হাতে রং হয় সেটা পুরুষদের জন্য ব্যবহার নিষিদ্ধ, নাজায়িয, হারাম। অনেকেই মনে করে থাকে, বিয়ে-শাদীতে মেন্দী দেয়া এটা তো জায়িয রয়েছে। অথবা শুধু হাতের আঙ্গুলের মাথায় সে দিল, সেটা বোধ হয় জায়িয রয়েছে। কিন্তু না, পুরুষের জন্য এই মেহেদী বা মেন্দী ব্যবহার করা সম্পূর্ণই নিষিদ্ধ, নাজায়িয ও হারাম। যদিও সেটা তার হাতের কোন এক আঙ্গুলির এক করের মধ্যেও সে দেয় কিংম্বা নখের মধ্যেও যদি দেয়, সেটাও পুরুষের জন্য হারাম। যেহেতু এটা মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে।  তবে পুরুষেরা ইচ্ছা করলে শুধুমাত্র তাদের দাড়ি ও চুলে ব্যবহার করতে পারবে। অন্য কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যবহার করতে পারবেনা।  আর মেয়েদের জন্য আতর-গোলাপ যেটা সুঘ্রাণময় রয়েছে সেটা ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং নাজায়িয।  এটা পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। হ্যাঁ, এরপর বলা হয়েছে যে, মেয়েদের জন্য সুঘ্রাণ ব্যবহার করতে পারবে কখন? এবং কতটুকু? ঠিক ততটুকু সে ব্যবহার করতে পারবে, যতটুকু ব্যবহার করে তার ঘরের ভিতর অবস্থান করবে। সে বেগানা পুরুষ তার নিকটবর্তী হবেনা, সুঘ্রাণ পাবেনা এবং সে তার স্বামীর নিকটবর্তী হওয়ার সময় সে সুঘ্রাণ ব্যবহার করতে পারবে ঠিক ততটুকু, যতটুকু তার ঘরের মধ্যে থাকে। এর চাইতে বেশী নয়। যদি বেশী হয়ে যায় তাহলে সেটার কারণে সে

كذا وكذا زانية

ব্যভিচারিনী হিসাবে সাব্যস্ত হবে। অনেকে মনে করে থাকে, বাচ্চা ছেলে তাকে একটু মেন্দী বা মেহেদী দিয়ে দেয়া হোক, তাতে অসুবিধার কি রয়েছে? তারা এখনও বালেগ হয়নি। কিন্তু না, বুখারী শরীফের হাদীছ শরীফে রয়েছে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর হুজরা শরীফে তাশরীফ নিলেন। সেখানে যেয়ে দেখতে পেলেন, হযরত ইমাম হাসান এবং হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা, উনাদের উভয়ের গলা মুবারকে দু’টা স্বর্ণের চেইন রয়েছে, স্বর্ণের চেইন দেখে আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কি? বলা হলো, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটা স্বর্ণের চেইন। তাঁরা তো পুরুষ ছেলে, তাদেরকে কেন পরানো হয়েছে? জবাবে বলা হলো, তাঁরা তো বাচ্চা শিশু। পুরুষের জন্য স্বর্ণের চেইন নিষিদ্ধ। তাঁরা তো বাচ্চা শিশু। তাঁদের জন্যও কি নিষিদ্ধ? আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, যে দেখ, পুরুষদের জন্য যেটা নিষিদ্ধ, বাচ্চা শিশুর জন্যও সেটা নিষিদ্ধ। কাজেই চেইন তোমরা খুলে ফেল। খুলে ফেলা হলো, নিষিদ্ধ করে দেয়া হলো। ঠিক মেন্দী যেটা পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ রয়েছে বাচ্চাদের জন্যও যারা ছেলে তাদের জন্যও অনুরূপ নিষিদ্ধ। আর মেয়েদের জন্য সুঘ্রাণ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। যে সুঘ্রাণ ব্যবহার করে সে রাস্তায় চলবে, ঘর থেকে বের হবে সেটা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও সে পর্দা করে, বোরকা পরে বের হয়, এরপরও তাঁর শরীরে সুঘ্রাণ মেখে যদি বের হয়, তাহলে সে ব্যভিচারিনী হিসাবে সাব্যস্ত হবে। খুব কঠিন, শক্ত কথা।  এজন্য অন্য হাদীছ শরীফে এসেছে,

عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ليس للنساء نصيب فى الخروج الا مضطرة وقا النبى صلى الله عليه وسلم ليس لهن نصيب فى الطريق الا الحواسش.

মেয়েরা রাস্তায় বের হবে, যখন তার বের না হয়ে উপায় থাকবে না, নেহায়েত জরুরত রয়েছে। বের না হলে তার চলবে না, তখন সে বের হবে। তবে শর্ত হচ্ছে যখন সে ঘর থেকে বের হবে,

ليس لهن نصيب فى الطريق الا الحواشى.

যখন রাস্তা দিয়ে চলবে তখন মেয়েদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য হল, রাস্তার এক পাশ দিয়ে এক কিনার দিয়ে যেন তারা চলে। রাস্তার মধ্য দিয়ে যেন তারা না চলে। যদি মধ্য দিয়ে চলে তাহলে সেটা তার গুণাহ্র কারণ হবে। অতিরিক্ত গুণাহ্র কারণ। তার দায়িত্ব হচ্ছে, সে রাস্তার এক পাশ দিয়ে, কিনারা দিয়ে হাঁটবে।  সে প্রসঙ্গে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষদের জন্য বলে দিয়েছেন,

نهى انبى صلى الله عليه وسم ان يمشى الرجل بين المر اتين.

আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কোন পুরুষের জন্য জায়িয নেই, দু’জন মহিলার মধ্যে দিয়ে সে হাঁটে।’ কোন পুরুষের জন্য সেটা জায়িয হবে না। বরং সম্পূর্ণ হারাম হবে দু’জন মহিলার মধ্য দিয়ে হাঁটা।’      (অসমাপ্ত)

ওয়াজ শরীফ কুরআন  শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-আহ্কাম-২৯

ইমামুল আ’ইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ্, ক্বাইয়্যূমুযযামান, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদুয্ যামান, সুলতানুল ওয়ায়েজীন, গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আফযালুল আউলিয়া, ছহিবু সুলতানিন্ নাছির, গরীবে নেওয়াজ,  হাবীবুল্লাহ্, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর  ওয়াজ শরীফ কুরআন  শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে-   পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-আহ্কাম-৩০

ইমামুল আ’ইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ্, ক্বাইয়্যূমুয ্যামান, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদুয্ যামান, সুলতানুল ওয়ায়েজীন, গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আফযালুল আউলিয়া, ছহিবু সুলতানিন্ নাছির, গরীবে নেওয়াজ,  হাবীবুল্লাহ্, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর  ওয়াজ শরীফ কুরআন  শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-আহ্কাম-৩১

ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস সুন্নাহ্, ক্বাইয়্যূমুয্যামান, কুতুবুল আরম, মুজাদ্দিদুয্ যামান, সুলতানুল ওয়ায়েজীন, গাউছূল আযম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আফযালুল আউলিয়া, ছহিবু সুলতানিন্ নাছির, গরীবে নেওয়াজ হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসুল, রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-আহকাম-৩২

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, ছাহিবে নেয়ামত, আল মালিক, আল মাখদূম, কুতুবুল আলম, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদে আ’যম, মুহইউস সুন্নাহ, মাহিউল বিদয়াত, আযীযুয যামান, ক্বইউমুয যামান, ইমামুল আইম্মাহ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হজ্জ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উমরা উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত, হুকুম-আহকাম সম্পর্কে (২৯)