ওয়াজ শরীফ কুরআন  শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম-৪

সংখ্যা: ১৪৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

কাজেই প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি সময়কে গনিমত মনে করে, ঈমানদার থাকার জন্য কোশেশ করতে হবে। আর আক্বীদা বিশুদ্ধ রাখার জন্য কোশেশ করতে হবে। তাহলে তার জন্য কামিয়াবী। তাহলে তার জন্য কামিয়াবী। এজন্য বলা হয়েছে, ঈমান কি জিনিষ?

الايمان التصديق بالجنان بما جاء به النبى صلى الله عليه وسلم من عند الله والاقرار باللسان والعمل بالاركان.

ঈমান হচ্ছে,

تصديق بالجنان “অন্তরে বিশ্বাস করা”

اقرار باللسان “মুখে স্বীকার করা”

عمل بالاركان “আমলে বাস্তবায়িত করা।” কিসের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে?

بما جاء به النبى صلى الله عليه وسلم من عند الله.

“আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে যা কিছু নিয়ে এসেছেন, তিনি যা কিছু বলছেন, আদেশ-নির্দেশ করেছেন, হুকুম দিয়েছেন, নিষেধ করেছেন, সবগুলো যথাযথভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা হচ্ছে ঈমানদার হওয়ার কারণ।”

আমাদের হানাফী মাযহাবে, تصديق بالجنان অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করলে সে ঈমানদার হয়ে যায়।

   আর اقرار باللسان “মুখে স্বীকার করা।” এটা একটা শর্ত দেয়া হয়েছে।

যদি কোন ব্যক্তি অন্তরে স্বীকার করল, কিন্তু মুখে কারো কাছে সে প্রকাশ করল না, তাহলে দুনিয়াবী যে ফায়দা সেটা সে পাবে না। দুনিয়াবী ফায়দা হাছিল করার জন্য তাকে মুখে স্বীকৃতি দিতে হবে। তাহলে সে দুনিয়াবী ফায়দা হাছিল করতে পারবে।

যদি খিলাফত কায়িম থাকে বা মুসলমানদের জন্য বিশেষ কিছু করা হয় তাহলে সেটার মধ্যে সে শরীক হবে।

আর অন্যান্য মাযহাবে যেটা বলা হয়েছে তা হলো- “অন্তরে বিশ্বাস করতে হবে, মুখে স্বীকার করতে হবে, সাথে সাথে সেটা আমলেও বাস্তবায়িত করতে হবে। “কিন্তু আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক- আমলে বাস্তবায়িত করা সেটা হচ্ছে ঈমানে কামিল হওয়ার জন্য শর্ত, ঈমানদার হওয়ার জন্য শর্ত নয়।”

বর্ণিত রয়েছে, الايمان لايزيد ولاينقض.

“ঈমান বাড়েও না, কমেও না।” কিন্তু ঈমানের কুওওয়াত বাড়ে। আমাদের হানাফী মাযহাবে, মাতুরুদি আক্বীদা সেটা হচ্ছে- ঈমান বাড়েও না এবং কমেও না। ঈমানের কুওওয়াত বাড়ে এবং কমে। আর শাফিয়ী মাযহাব, আশায়েরা আক্বাইদ মুতাবিক- ঈমান বাড়ে এবং কমে। কিন্তু হাক্বীক্বতান আমাদের হানাফী মাযহাব মতে, ঈমান বাড়েও না, কমেও না।

এটার মেছাল হচ্ছে- যেমন, একজন মানুষ সে সুস্থ, শক্তিশালী লোক, তার রূহ যতটুকু রয়েছে, একটা হাসপাতালের স্যালাইনের রোগী তার রূহটাও সমান। রূহের মধ্যে বাড়তি- কমতি নেই। কিন্তু একজনের শক্তি বেশি, আরেকজনের শক্তি কম। এখন তাকে খাওয়ালে, সুস্থ করলে স্যালাইনের রোগী সেও শক্তিশালী হতে পারবে। অর্থাৎ কুওওয়াত বাড়তে পারে কিন্তু তার রুহ বাড়বে না।

আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক ঈমান যার যা রয়েছে ঠিক তাই থাকবে। কিন্তু ঈমানের কুওওয়াত বাড়বে, ঈমানের শক্তি বাড়বে। কিন্তু ঈমান বৃদ্ধি হবে না। অন্যান্য মাযহাবে- তাঁরা বলেছেন ওনাদের ফতওয়া মুতাবিক- ঈমান বৃদ্ধিও পেয়ে থাকে এবং কমেও থাকে।  কিন্তু আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক ঈমান বাড়েও না কমেও না। কিন্তু ঈমানের কুওওয়াত বাড়ে এবং কমে। যার জন্য দেখা যায়, এ প্রসঙ্গে অনেক হাদীছ শরীফও রয়েছে,

عن ابى سعيدن الخدرى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من را منكم منكرا فليغيره بيده.

“হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা যদি কোন কাজ দেখ শরীয়তের খিলাফ তাহলে বাধা দিও হাত দিয়ে।”

فان لم يستطع فبلسانه.

“যদি হাতে বাধা দিতে না পার তাহলে জবানে বাধা দিও।”

فان لم يستطع فبقلبه وذالك اضعف الايمان.

“যদি জবানে বাধা দিতে না পার, তাহলে সেটা অন্তরে খারাপ জেন, সেখান থেকে সরে যেও সেটা দুর্বল ঈমানের পরিচয়।”

অর্থাৎ, ঈমানী কুওওয়াত যদি কারো থাকে তাহলে হাতে বাধা দিতে পারবে, প্রথম স্তর। দ্বিতীয় স্তরের কুওওয়াত হচ্ছে জবানে বাধা দিবে। আর তৃতীয় স্তর হচ্ছে দুর্বল ঈমানের পরিচয়। সেটা হচ্ছে, সে অন্তরে খারাপ জেনে সেখান থেকে সরে যাবে। বাধা দেয়ার ক্ষমতা তার নেই। ঈমান তার ঠিকই রয়েছে, সে ঈমানদার, মুসলমান, কুওওয়াত তার কম রয়েছে।

 এজন্য যাদের ঈমানী কুওওয়াত বেশি থাকে তাদের পক্ষে নেক কাজ করা বেশি সম্ভব। আর যাদের ঈমানী কুওওয়াত কম থেকে থাকে তারা অনেক সময় লোক লজ্জায়, লোক ভয়ে, নামাযের জামায়াতে কি করে পড়ব, ভয় করে, লজ্জা করে।

টুপি মাথায় দিয়ে কি করে হাটব, মানুষ দেখলে কি বলবে। দাড়িটা কি করে রাখব, মানুষ কি বলবে, এ নানা রকম চু-চেরা একমাত্র ঈমানী কুওওয়াতের অভাবে হয়ে থাকে। ঈমান তার ঠিকই রয়েছে। কিন্তু ঈমানী কুওওয়াত তার কম রয়েছে। যার জন্য এই সমস্ত আমলগুলো করতে লজ্জা বোধ করে থাকে, ভয় পেয়ে থাকে। সে চু-চেরা কিল ও কাল করে থাকে। কাজেই, ঈমান প্রত্যেকের যা রয়েছে তাই থাকবে। কিন্তু কুওওয়াত বাড়বে এবং কমবে।

যেমন হাদীছ শরীফে রয়েছে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, দেখ, প্রত্যেক মানুষের সাথে একটা জিন এবং একটা ফেরেশ্তা রয়েছে, ফেরেশ্তা মানুষকে নেক কাজে ধাবিত করে। আর জিনটা মানুষকে পাপ কাজের দিকে ধাবিত করে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনার সাথেও কি একজন ফেরেশ্তা, একজন জিন শয়তান রয়েছে?

  আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, আমার সাথে ফেরেশ্তা এবং জিন রয়েছে। তবে জিনটাকে আল্লাহ পাক ঈমানদার করে দিয়েছেন (সুবহানাল্লাহ)। সে কুফরী অবস্থায় নেই, ঈমানদার অবস্থায় আমার সাথে রয়েছে।

কাজেই, সে নেক কাজই করবে এবং নেক কথাই বলবে। খারাপ কাজ করবে না এবং খারাপ কথা বলবে না। কাজেই মানুষ পাপ কাজে ধাবিত হয় কখন, যখন জিনটা তাকে ওয়াস্ওয়াসা দেয়, নফসের মধ্যে এসে জিন ওয়াসওয়াসা দিতে থাকে, তখন পাপ কাজে সে সহজে চলে যায়।

আর যখন তার ফেরেশ্তা তাকে উৎসাহিত করতে থাকে নেক কাজে, তখন সে নেক কাজে ধাবিত হয়। এজন্য যে নেক কাজ বেশি করে, আস্তে আস্তে ফেরেশ্তা শক্তিশালী হয়ে যায়। তার জিন শয়তানটা দুর্বল হয়ে যায়। তার পক্ষে নেক কাজ করা সম্ভব হয়।  আর যখন সে পাপ কাজ বেশি করতে থাকে তখন শয়তান শক্তিশালী হয়ে যায়। ফেরেশ্তা দুর্বল হয়ে যায়। তারপক্ষে নেক কাজ করা কঠিন হয়ে যায়। (অসমাপ্ত)

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত  ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, সুলত্বানুল ওয়ায়িজীন, গাউছূল আ’যম, ছাহিবু সুলত্বানিন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওয়াজ শরীফ কুরআন  শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-আহ্কাম-৪৩

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত  ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, সুলত্বানুল ওয়ায়িজীন, গাউছূল আ’যম, ছাহিবু সুলত্বানিন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-আহ্কাম-৪৫

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত  ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, সুলত্বানুল ওয়ায়িজীন, গউছে আ’যম,ছাহিবু সুলত্বানিন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওয়াজ শরীফ কুরআন  শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম-১

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, সুলত্বানুল ওয়ায়িজীন, গউছে আ’যম,ছাহিবু সুলত্বানিন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম-২

ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম-৩