ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম-৫

সংখ্যা: ১৪৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

 এ প্রসঙ্গে বলা হয়, আল্লাহ পাক-এর এক ওলী, তিনি তাঁর খাদিমসহ ইস্তিঞ্জাখানায় গেলেন। খাদিম বাইরে দাঁড়িয়েছিল। সে বুযুর্গ ব্যক্তি ইস্তিঞ্জাখানায় প্রবেশ করে (ইস্তিঞ্জাখানার উপর দিয়ে খোলা ছিল) ইস্তিঞ্জাখানার ভিতর থেকে উনার জামাটা খুলে খাদিমের প্রতি নিক্ষেপ করে বললেন, ‘তুমি এটা এখনই ওমুক ব্যক্তিকে দান করে দাও।’ সে খাদিম ওনার আদেশ পালন করলো। তিনি ইস্তিঞ্জা সেরে যখন বের হয়ে আসলেন, তখন খাদিম অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বললেন যে, “হুযূর বেয়াদবী মাফ করবেন, ইস্তিঞ্জাখানায় বসে এটা দান করার কি জরুরত ছিল, আপনি তো বের হয়ে দান করতে পারতেন।” আল্লাহ পাক-এর ওলী বললেন, “দেখ বাবা! যখন কোন নেক কাজ করার ইচ্ছা হয় তখন সেটা সাথে সাথে করে ফেলতে হয়। অন্যথায় পরবর্তী সময় হয়তো শয়তান ওয়াস্ওয়াসা দিয়ে আমাকে নেক কাজ থেকে মাহরূম করে দিতে পারে। ঈমানী কুওওয়াত এখন বৃদ্ধি পেয়েছে, এখন দান করার জন্য ইচ্ছা হয়েছে, তাই আমি এখন দান করে দিলাম। যদি এখন দান না করি, হয়তো আমার ঈমানী কুওওয়াত দুর্বল হয়ে যাবে আর শয়তানের ওয়াস্ওয়াসা প্রবল হয়ে যাবে, তখন আমার পক্ষে নেক কাজ করা হয়তো সম্ভব হবে না।” অবশ্যই এটা ইতিহাসে, কিতাবে, আমলে দেখা গিয়েছে যে, মানুষের ঈমানী কুওওয়াত যখন বৃদ্ধি পায় তখন সে নেক কাজ করার জন্য আগ্রহী হয়। সেটা দান-খয়রাতই হোক বা অন্যান্য নেক কাজের জন্যই হোক না কেন। তখন যদি সে সেটা করে ফেলে তখন তার জন্য তা সহজ হয়ে যায়। কিন্তু যদি সে সেটা জমিয়ে রাখে, পরে করবে, হয়তো অনেক সময় আর সেটা করা হয় না। ওয়াস্ওয়াসার কারণে বা নানা চু-চেরা, কিল ও কালের কারণে অর্থাৎ শয়তান প্রবল হয়ে যাওয়ার কারণে ফেরেশ্তা দুর্বল হয়ে যায়। ঈমানী কুওওয়াত কমে যায়। যার জন্য তার পক্ষে নেক কাজ করাটা কঠিন হয়ে যায়।  কাজেই, আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক- ঈমান বৃদ্ধি পায়না বা কমেওনা বরং ঈমানের কুওওয়াত বাড়ে এবং কমে। ঈমানের কুওওয়াত বৃদ্ধি করার জন্য আক্বাইদ শাস্ত্রের যতগুলি বিষয় রয়েছে সবগুলির উপর যথাযথ ঈমান আনতে হবে ও বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে এবং সে অনুযায়ী যদি আমল করে তাহলে তার ঈমানী কুওওয়াত পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সুতরাং ঈমান হচ্ছে, অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করা এবং মুখে তা স্বীকার করে নেয়া। এটা হচ্ছে আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবেক। আর আমল করা হচ্ছে ঈমানদার ব্যক্তির জন্য মু’মিনে কামিল হওয়ার মাধমে। যেমন ঈমানদার হচ্ছে দু’ প্রকার। মু’মিনে ফাসিক, মু’মিনে কামিল। মুসলমানে ফাসিক এবং কামিল। কামিল হবে কখন? হাক্বীক্বী ঈমান অর্থাৎ ঈমানী কুওওয়াত যখন তার পরিপূর্ণ হবে তখন সে মু’মিনে কামিল হবে। এর আগে সে মু’মিনে কামিল থাকতে পারবে না। যেমন কালামুল্লাহ শরীফে আল্লাহ পাক উল্লেখ করেছেন, হাদীছ শরীফে অনেক হাদীছ রয়েছে যে, ঈমানদারকে বলা হয়েছে ঈমানদার হওয়ার জন্য।  যেমন, يايها الذين امنوا امنوا.

“হে ঈমানদারেরা! ঈমান আন।’  এবং কুরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, “যারা মুসলমান হয়েছে, ঈমান এনেছে।’ একবার কিছু সম্প্রদায়ের লোক আসলেন। আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন যে, ‘তোমরা কি ঈমান এনেছো, মুসলমান হয়েছো?’ উনারা বললেন যে, ‘হ্যা, আমরা মুসলমান হয়েছি, ঈমান এনেছি।’  আল্লাহ পাক নাযিল করলেন,

قل لم تؤمن ولكن قولوا اسلمنا.

আল্লাহ পাক বলেন, ‘আপনি বলে দিন যে তোমরা ঈমান আননি, মুসলমান হয়েছো।’ তাহলে মুসলমান হলে কি ঈমান বাকি থাকে? না, সেও ঈমান এনেছে, মুসলমান হয়েছে। আল্লাহ পাক যা বলেন শুদ্ধই বলেন, তবে সেটা বুঝতে হবে। অন্যথায় ঈমান থাকবে না। ঈমান সে এনেছে সত্য, মুসলমানও সে হয়েছে এটাও সত্য। তবে এখানে বলা হচ্ছে, মু’মিনে কামিল হওনি এখন পর্যন্ত। ইসলাম মাত্র গ্রহণ করলে, এখনও মু’মিনে কামিল হওনি। আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোহবত ইখতিয়ার করে, আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এসে তুমি মু’মিনে কামিল হবে। এখন মু’মিনে কামিল হওয়ার জন্য তোমরা এসেছো। এখনও মু’মিনে কামিল হওনি। আল্লাহ পাক সেটাই ঘোষণা করেন। কাজেই, মু’মিনে কামিল হওয়ার জন্য আল্লাহ পাক আদেশ করেছেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আদেশ করেছেন। প্রত্যেক মানুষ ঈমানদার হবে, ঈমানী কুওওয়াত বৃদ্ধি করবে, সে মু’মিনে কামিল হবে, খালিছ ঈমানদার হবে। সেটাই তার জন্য ইহকাল এবং পরকালে কামিয়াবী। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, যেমন আল্লাহ পাক-এর প্রতি ঈমান। অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর প্রতি যে ঈমান আনবে তা সাধারণত: দু’প্রকার।  ১. ঈমানে মুজমাল, ২. মুফাসসাল যা আমরা সাধারণত: সমস্ত কিতাবাদিতে দেখে থাকি। ঈমানে মুজমাল হলো-

امنت بالله كما هو باسمائه وصفاته. وقبلت جميع احكامه واركانه.

امنت بالله আল্লাহ পাক-এর প্রতি ঈমান আনলাম, কেমন كما هو তিনি যেমন, باسمائه وصفاته. আল্লাহ পাক আসমা ও ছিফাত, নাম এবং গুণসহ আল্লাহ পাক যেমন রয়েছেন, সেই আল্লাহ পাক-এর প্রতি আমি ঈমান আনলাম। এটা হচ্ছে ঈমান। আল্লাহ পাক-এর প্রতি ঈমান আনা হল। যখন একটা বান্দা আল্লাহ পাক-এর প্রতি ঈমান আনবে তখন আনুষঙ্গিক যা কিছু রয়েছে সবকিছু বা বিষয়ের উপর ঈমান আনতে হবে। এরপর সে স্বীকৃতি দিবে-

قبلت جميع احكامه واركانه.

আমি কবুল করে নিলাম সমস্ত হুকুম-আহকাম এবং রোকন-আরকান যা রয়েছে তার উপর। অর্থাৎ সমস্ত আদেশ নিষেধ যা কিছু রয়েছে সব কিছু মেনে নিলাম। অর্থাৎ সেই আল্লাহ পাক-এর প্রতি ঈমান আনলাম যিনি আসমা ও ছিফত, নাম এবং গুণাবলিসহ আল্লাহ পাক তাঁর প্রতি ঈমান আনলাম। এরপর আল্লাহ পাক-এর সমস্ত আদেশ-নিষেধ যা কিছু রয়েছে সবকিছুর উপর ঈমান আনলাম। এক কথায় বান্দা এখানেই ঈমানদার হয়ে যায় বা মুসলমান হয়ে যায়। এখন সেটা বাস্তবায়িত করলে মু’মিনে কামিল হবে। কাজেই আল্লাহ পাককে বিশ্বাস করতে হবে। যেটা আল্লাহ পাক বলেন, يؤمنون بالغيب. “অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপনকারী যারা তারা হচ্ছে ঈমানদার।” অদৃশ্যে কেমন বিশ্বাস স্থাপন করবে এ প্রসঙ্গে বলা হয়, আল্লাহ পাককে তো বিশ্বাস করতে হবে। আল্লাহ পাককে তো দেখা যায় না। তাহলে কি করে অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপন করবে?  এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনা উল্লেখ করা হয়। হযরত রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহা যিনি বিশিষ্ট বুযূর্গ, আল্লাহ পাক-এর ওলী। ইলমে লাদুন্নীপ্রাপ্তা আল্লাহ পাক-এর ওলী। এক লোক তার তিনটা মাসয়ালা ছিলো। সে অনেকের কাছে ঘুরেছে তার জাওয়াবের জন্য, কোথাও সে জাওয়াব পায়নি। তাকে মানুষ বললো, তুমি এক কাজ কর, হযরত রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহা-এর কাছে যাও। যিনি আল্লাহ পাক-এর ওলী। ইলমে লাদুন্নী ওনার রয়েছে। ওনার পক্ষে সেটার জাওয়াব দেয়া সম্ভব হবে। যেটা অন্যান্য আলিমের পক্ষে জবাব দেয়া সম্ভব হবে না। সেটা শুনে সে হযরত রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহা-এর কাছে এসে বললো, আমি আমার তিনটি মাসয়ালা নিয়ে এসেছি। আপনি যদি দয়া করে আমার জবাব দিতেন তাহলে আমার ঈমানী ফায়দা হতো। (অসমাপ্ত)

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত  ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, সুলত্বানুল ওয়ায়িজীন, গাউছূল আ’যম, ছাহিবু সুলত্বানিন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওয়াজ শরীফ কুরআন  শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-আহ্কাম-৪৩

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত  ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, সুলত্বানুল ওয়ায়িজীন, গাউছূল আ’যম, ছাহিবু সুলত্বানিন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-আহ্কাম-৪৫

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত  ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, সুলত্বানুল ওয়ায়িজীন, গউছে আ’যম,ছাহিবু সুলত্বানিন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওয়াজ শরীফ কুরআন  শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম-১

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, সুলত্বানুল ওয়ায়িজীন, গউছে আ’যম,ছাহিবু সুলত্বানিন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম-২

ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- ইসলামী আক্বীদা এবং তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আহকাম-৩