মুহম্মদ সাদী
মানুষের বয়স বাড়ে, অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। আশা-নিরাশার দোদুল্যমানতা, পাওয়া-না পাওয়ার উদ্বেগ এবং সুখ-দুঃখের অভিঘাতে সে প্রতিক্ষণ আন্দোলিত হয়। পরিবর্তন-পরিমার্জন, প্রাপ্তি-বঞ্চনা, আনন্দ-বেদনার ভিত্ রচিত হয় মন ও মননের গভীরেই। বাহ্যিক জীবনাচারনে যা প্রতিভাত হয়, তা’ অভ্যন্তরীণ চিত্রের নগণ্য আভাস মাত্র। এতে কারো সফলতা, ব্যর্থতা অথবা সামগ্রিকতার মাত্রা উপলব্ধির উপায় নেই। তাই অতি স্বাভাবিক আচরণ ও বিচরণের দৃশ্যমানতায় কামিয়াবীর শীর্ষ ধাপে অধিষ্ঠিত ওলীআল্লাহ ও অন্য মানুষের পার্থক্য সাধারণের দৃষ্টিতে সূচিত হয়না। যদিও উভয়ের ব্যবধান সীমাহীন।
একই কারণে পবিত্র হজ্ব থেকে দেশে ফেরার পর ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মূল পরিচয় অনেকের কাছেই অজ্ঞাত। লব্ধ নিয়ামতের সমৃদ্ধিতে তাঁর উত্তরণ এবং উত্তরণের অনুষঙ্গগুলো এতো সূক্ষ্ম যে, প্রাজ্ঞজনের কাছেও তা’ প্রায় দুর্বোধ্য। এ মর্মে ‘ছূফীয়ে বাতিন’ ও ছহিবে ‘ইসমে আ’যম’ লক্বব দু’টি তাঁর অনেক লক্ববের মধ্যে অন্যতম।
আপন নিবাসে দিন যাপনে তাঁর অতি স্বাভাবিক ও সহজ-সরল অথচ সূক্ষ্ম আচরণ ও মিতভাষিতায় অনুসৃত স্বতন্ত্র ধারা নিকটজনদের অন্তর ছুঁয়ে গেলেও অনেকের কাছে তিনি অজ্ঞাতই রয়ে গেলেন। প্রয়াস, প্রচেষ্টা, অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি এবং অর্জিত মাকাম ও মর্যাদা সমপর্যায়ের না হলে একজনের পক্ষে অন্যজনকে চেনা ও জানা সম্ভব হয়না। গভীর অনুসন্ধিৎসা ব্যতিরেকে অবয়ব ও আবরণের বহির্ভাগ দেখে অনুমান নির্ভর বর্ণনা কেবল বাস্তবতা বিবর্জিত ও অর্থহীন অতিকথন হয়ে দাঁড়ায়। হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ পাক বলেনঃ
ان اوليائى تحت قبائى لايعرفهم غيرى الا اوليائى.
অর্থঃ- “আমার মাহবুব ওলীগণ আমার কুদরতী জুব্বা দ্বারা আবৃত। আমি এবং আমার খাছ ওলীগণ ছাড়া কেউ তাঁদেরকে চিন্তে পারেনা।
অতি সূক্ষ্ম বিষয়, যা বাইরে থেকে খুব সহজ ও স্বাভাবিক মনে হয়, তাৎপর্য উপলব্ধির অযোগ্যতায় সাধারণ মানুষের কাছে তা’ গুরুত্বহীন। আবার অন্তর্গূঢ় এসব বিষয়কে কেউ কেউ আপন অনুভূতি ও বুদ্ধির পরিমাপে বিশ্বাস করে গুরুত্বপূর্ণ বলে মেনে নিলেও তাদের সংশয় পুরোপুরি কাটেনা। মূলতঃ অনুপলব্ধ বিষয়গুলো তাদের কাছে ‘অলৌকিক’ হিসাবে সাব্যস্ত হয়। এ কারণেই রহমাতুল্লিল আলামীন, ছহিবুল মু’জিযাত, ছহিবুল মাক্বামিল মাহমূদ, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যাবতীয় বিষয়-কর্ম সহজ ও স্বাভাবিকভাবে তাঁর মুবারক স্বভাব-সঞ্জাত হওয়া সত্ত্বেও উপলব্ধির অযোগ্যতায় মানুষের কাছে তা’ মু’জিযা নামে অভিহিত হয়েছে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সূক্ষ্মতা, সরলতা, দৃশ্যমানতা, গোপনীয়তা এবং একীভূত ইহকাল ও পরকালের সামগ্রিকতা এতো সহজভাবে বাহ্যিকভাবে প্রতিভাত হয়েছে যে, কাফির-মুশরিকদের পক্ষে তা’ বুঝে উঠা সম্ভব হয়নি। তারা অবাক বিস্ময়ে উচ্চারণ করেছেঃ
مال هذا الرسول ياكل الطعام ويمشى فى الاسواق.
অর্থঃ- “তিনি আবার কেমন রসূল! যিনি বাজারে যান এবং খাদ্যও খান?” (সূরা ফুরক্বান/৭)