-মুহম্মদ সাদী
পূর্ব প্রকাশিতের পর
আশিকে ইলাহী, আশিকে রসূল, লিসানুল হক্ব, কুতুবুযযামান, ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি বেশ কিছুদিন মাযার শরীফে থাকলেন। সবকিছু দেখলেন। জাহির-বাতিন সকল বিষয় উপলব্ধি করলেন। দেশে থাকতে দীর্ঘকাল অন্তরে আঁকা ছবি ও বাতিনী অবলোকন-এর হুবহু সাদৃশ্য প্রত্যক্ষ করলেন। মাযার শরীফে অবস্থানকালে অনেক খাদিমের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, কথা হয়েছে। কিন্তু, দেশে যাবার পথ থেকে পুনরায় মাযার শরীফে ফিরে যেতে অনুরোধকারী ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলাতো দূরের কথা, তিনি কখনো তাকে দেখেনোনি। একেবারেই অচেনা-অজানা। নিমিষেই বোঝা গেলো তিনি এমন কেউ হবেন, যিনি আদিষ্ট হয়ে এসেছেন।
আল্লাহ পাক এবং তাঁর প্রিয়তম হাবীব, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, রউফুর রহীম, ছাহিবুল ইহ্্সান, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উদ্দিষ্ট ব্যবস্থায় জগৎ-সংসারে এমন সব ঘটনা ঘটে, যা’ সূক্ষ্মদর্শী মাহবুব ওলীআল্লাহগণ ছাড়া অন্য কারো অবগতিতে থাকেনা। ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি আত্মিক অনুসন্ধানে জেনে গেলেন, প্রকৃতই সুলতানুল আরিফীন, কুতুবুল আলম, সুলতানুল হিন্দ, হাবীবুল্লাহ, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশ্তি রহমতুল্লাহি আলাইহি বিশেষ এক উপলক্ষে তাঁর ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। তাই ঐদিন দেশে ফেরার ইচ্ছে তিনি তৎক্ষনাৎ বাতিল করলেন। বিনা চিন্তা ও বিনা বাক্য ব্যয়ে তিনি মাযার শরীফের দিকে ফিরে চললেন।
তিনি মাযার শরীফে ফিরে এলেন। আল্লাহ পাক এবং তাঁর প্রিয়তম হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, আকরামুল আওয়ালীন ওয়াল আখিরীন, মাশুকে মাওলা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরিপূর্ণ সন্তুষ্টির জন্যইতো সুল্্তানুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদে যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল হযরত খাজা সাইয়্যিদ মুঈনুদ্দীন হাসান চীশ্তি রহমতুল্লাহি আলাইহি সহ সকল আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের সঙ্গে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এতো গভীর সংযোগ স্থাপন। আল্লাহ পাক-এর মুহব্বত ও মা’রিফতের অতলান্ত নিমজ্জনে দেশে ফেরার কথা এখন আর মনে নেই। দুনিয়া ও আখিরাত এখন একাকার হয়ে গেছে। অনুভব, উপলব্ধি ও মাক্বামের আরো উচ্চতর সোপানে অধিষ্ঠানের জন্য মাহবুব ওলীগণ এমন অনুপম মুহূর্তের অপেক্ষায় থাকেন। বিশেষ উপলক্ষে মাযার শরীফে ফিরে এসে কখন সে মধুর সংযোগ স্থাপিত হয়, অধীর আগ্রহে এখন কেবল তারই অপেক্ষা।
এখন দিনের বেলায় মানুষের কোলাহল। প্রতিদিনের মতো আজো মাযার শরীফে অসংখ্য মানুষের সমাগত। এমন পরিবেশে মুখে কথা বলা যায়, নিবিড় মনঃসংযোগ হয় না। তাই শান্ত-স্নিগ্ধ রাতের নিরিবিলি মুহূর্তের প্রতীক্ষা। সহজাত ধ্যান-নিমগ্নতায় নৈকট্য সংযোগের প্রহর গুণছেন হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি। দিন শেষে এক সময় সন্ধ্যা হয়। রাতের প্রহর ক্রমশঃ বাড়তে থাকে। পূর্ব অভিজ্ঞতায় তাঁর জানা, রাতের গভীরতায় মানুষের সমাগম হ্রাস পেয়ে যায়। উপযুক্ত বিবেচনায় উপস্থিত একজন খাদিমের নিকট পুনরায় মাযার শরীফে ফিরে আসার বিষয় সংক্ষেপে তিনি বললেন এবং জানতে চাইলেনঃ “মাযার শরীফের একান্ত সন্নিকটে যাবার অনুকুল সময় কখন?” খাদিম জানালেনঃ “গভীর রাতের নির্জনতায়। এখনো সময় হয়নি। অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। সময় হলে আমি সব ব্যবস্থা করে দেবো।” এ ব্যবস্থা এজন্য যে, গভীর রাতে মাযার শরীফের নিকটবর্তী হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা-নিষেধ রয়েছে।
প্রতীক্ষায় প্রহর কেবলই দীর্ঘ হয়। ছোট হয়না কখনোই। অবশেষে রাত ক্রমান্বয়ে গভীর হতে থাকে। প্রত্যাশিত সময় সমাগত প্রায়। মূল মাযার শরীফের আশেপাশে এখন লোকজন নেই। এমন নির্জন পারিপার্শিকতায় শুধুই প্রশান্তির আমেজ। বেদনা-বিমুগ্ধ মননের গভীরতর আবেশে খাদিম-এর সবিনয় নিবেদনঃ “হুযূর অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনি আমার সঙ্গে প্রত্যাশিত গন্তব্যে যাবেন। দয়া করে আপনি প্রস্তুত থাকুন।” পূর্ব সিদ্ধান্তমতেই ওলীয়ে মাদারজাদ, ফখরুল আওলিয়া, আফযালুল ইবাদ, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি দেশে ফিরছিলেন। রেল স্টেশনের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছেও ছিলেন। সেখান থেকে কেন মাযার শরীফে ফিরে আসতে হলো, সুল্্তানুল হিন্দ, কুতুবুল আলম, গরীবে নেওয়াজ, ইমামুল আইম্মাহ্, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ্, হযরত খাজা সাইয়্যিদ মুঈনুদ্দীন হাসান চীশ্তি রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও সংযোগের পূর্বে সে ভাবনার অবসান হবে না। (চলবে)