-মুহম্মদ সাদী
পরোপকার ও দানশীলতা
সাধারণের জন্য প্রয়োজনাতিরিক্ত অর্থ-সম্পদ মোটেই উৎকৃষ্ট নয়। বরং প্রাচুর্যের অপব্যবহারে তাদের অন্যায়ের ক্ষেত্র ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হতে থাকে। তবে তাদের জীবন নির্বাহে এবং সাংসারিক প্রয়োজনে পরিমিত সহায়-সম্পদের অনিবার্য ভূমিকা সকলেরই জানা। বিপুল বৈভবেও আল্লাহ পাক-এর প্রতি ওলীগণের আনুগত্য তুলনাহীন। এর ভুরি পরিমাণ উদাহরণ উল্লেখ করা যায়।
ইমামুন্ ফিল উলুমিশ্ শারইয়্যাতিল মারদ্বিয়্যাতি (শরীয়তের জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইমাম), আল হুজ্জাতু (শরীয়তের দলীল), ক্ববিয়্যূল বুরহানী (শক্তিশালী দলীল প্রমাণের অধিকারী), মুজাদ্দিদুল মিল্লাত ওয়াদ্ দ্বীনি (মুসলিম মিল্লাত ও দ্বীনের সংস্কারক), ইমামে আ’যম, হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিপুল অর্থ-প্রাচুর্য ছিলো। ইন্তিকাল অবধি তিনি অকাতরে তা থেকে দান করেছেন। তাঁর ইন্তিকালের সময় যে নগদ অর্থ-সম্পদ ছিলো, বর্তমানের হিসাবে তা’ প্রায় এগারো কোটি টাকা। (সুবহানাল্লাহ!)
আমাদের আলোচ্য ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দা’ওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ফখরুল আউলিয়া, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, ছাহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-এরও প্রচুর বিত্ত-বৈভব ছিলো। ইন্তিকালের সময় তিনি অঢেল ধন-সম্পদ রেখে যান। মুবারক জীবদ্দশায় তিনি অকাতরে দান করেছেন। তাঁর দেয়া অর্থ সাহায্যে অনেকের সাংসারিক খরচ নির্বাহ হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী তাঁর দরাজ হাত মুবারকের সাহায্যে ও নেক দুআ‘ গ্রহণে খালিছ আল্লাহওয়ালা হতে সক্ষম হয়েছে। মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তব ও সমাজ কল্যাণমূলক কাজের জন্য তিনি বিপুল পরিমাণ টাকা-পয়সা ও জায়গা-জমি দান করেছেন। দান-খয়রাত করলে যে আল্লাহ পাক তাঁর বান্দার প্রাচুর্য আরো বাড়িয়ে দেন, তিনিই তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قال الله تعالى انفق يا ابن ادم انفق عليك.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ পাক বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি দান করো, আমি তোমাকে দান করবো।” (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
পরোপকার ও দান-খয়রাতের মধ্যে আল্লাহ পাক ইহলৌকিক ও পারলৌকিক অশেষ কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।
আকরামুল আউয়ালীন, ওয়াল আখিরীন, সাইয়্যিদু জামিয়ীল আম্বিয়ায়ী ওয়াল মুরসলীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে অর্থ ব্যয়ে মানুষ কটুভাষী ব্যক্তির বাক্যবাণ থেকে আপন সম্মান রক্ষা করে, তা ছদক্বা বলে গণ্য হয়।” অর্থ-বিত্ত খরচ করে আপন ইজ্জত-আবরু রক্ষা করার এ প্রক্রিয়া সাধারণ বিবেচনায় পার্থিব উপকার। কিন্তু প্রকৃত বিবেচনায় অর্থ-কড়ি ব্যয় করে নিজের ইজ্জত ও ঐতিহ্য হিফাজতের মাধ্যমে মানসিক যন্ত্রণা ও আবিলতা মুক্ত হয়ে নিরুদ্বিগ্নভাবে যিকির-ফিকির ও ইবাদত-বন্দেগীতে মনোনিবেশের অনুকূল ক্ষেত্র তৈরী হয়। তাই এমন ব্যয় নির্বাহ ছদক্বা হিসাবে গণ্য হওয়ায় এর উপকার মূলতঃ পারলৌকিক।
মাদারজাদ ওলী, ফখরুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি অনুক্ষণ মনে রেখেছেন, তাঁর বিত্ত-বৈভবের মালিক আল্লাহ পাক। আল্লাহ পাক আপন অনুগ্রহে কিছুদিনের জন্য তা তাঁর যিম্মায় রেখেছেন। তাই অকাতরে তিনি দান-খয়রাতে নিমগ্ন থেকেছেন। জন কল্যাণে তিনি অঢেল অর্থ-সম্পদ ব্যয় করেছেন। কার্পণ্যের ভয়াবহ পরিণতির কথা আল্লাহ পাক-এর মাহবুব ওলীগণ ব্যতীত আর কে ভালো জানে? (অসমাপ্ত)