কুরআন শরীফে অনেক অনেক আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক প্রথমে ঈমান আনার কথা ও পরে আমলের কথা বলেছেন। ইসলাম বিদ্বেষী কাফির মুশরিকরা তাই মুসলমানগণের ঈমানী চেতনায় বিভেদ তৈরির জন্য সদা সক্রিয়। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “তারা পূর্ব থেকেই বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ সন্ধানে ছিলো এবং আপনার কার্যসমূহ উলট-পালট করে দিচ্ছিলো।” (সূরা তওবাহ-৪৮)
এক্ষেত্রে ইসলাম বিদ্বেষী কাফির-মুশরিকরা মূলত: মুসলমানগণের থেকেই এজেন্ট তৈরি করে। যারা মুসলমানগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইসলামী আক্বীদার মধ্যে ফিৎনা তৈরি করে।
আব্দুল ওহাব নজদী এ ধারার বিশেষ উদাহরণ। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান ও মানের খেলাফসহ হাজারো কুফরী আক্বীদার বিস্তার করেছে সে।
এরপর পাক ভারত উপমহাদেশে এ ধারায় অগ্রগামী হয়েছে তথাকথিত জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী। বিষাক্ত বীজ থেকে যেমন সুমিষ্ট আম আশা করা যায় না তেমনি ইসলামী আন্দোলন ইত্যাদি মিষ্টি মিষ্টি কথা বললেও মওদুদী নিজেই যে কত বিষাক্ত বীজ ছিলো তা তার অনুসারীদের হাজারো কুফরী আক্বীদা থেকেই প্রতিভাত হয়।
স্বয়ং আল্লাহ পাক, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, মোদ্দাকথা ইসলামের সব অনুষঙ্গেই মিথ্যা, কুফরী ও জঘন্য সমালোচনার জাল বিস্তার করে ঐ ষড়যন্ত্রকারী মৌলভী মওদুদী। যদিও তার ষড়যন্ত্র বহু পূর্বেই ফাঁস হয়েছে। মুসলমানগণের সাথে তার বিশ্বাসঘাতকতা উদঘাটিত হয়েছে। আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান, “…আল্লাহ পাক পছন্দ করেন না তাকে যে বিশ্বাসঘাতক, পাপী হয়। তারা মানুষের কাছে লজ্জিত হয়….।” (সূরা আন্ নিসা-১০৮)
মানুষের কাছে আরো লজ্জিত হবার জন্যই যেন আল্লাহ পাক-এর কুদরতে সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে সাবেক সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি’র কর্মকর্তা ভাসিলি মিত্রোখিনের তথ্যের ভিত্তিতে ব্রিটিশ প্রফেসর ক্রিস্টোফার এন্ড্রু’রচনাঃ
“…. ইন্টারনেটে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ভাসিলি নিকোতিচ মিত্রোখিন ১৯২২ সালে মধ্য রাশিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। কাজাখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক মিত্রোখিন ইউক্রেনের মিলিটারি প্রসিকিউটর পদে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন রুশ গোয়েন্দা সংস্থা এমজিবি’র ফরেন ইন্টিলিজেন্স অফিসার হিসেবে যোগদান করেন তিনি। কয়েকটি অপারেশনে ব্যর্থতার পর তাকে কেজিবি’র নবগঠিত আর্কাইভ শাখার প্রধান পদে সরিয়ে নেয়া হয়।
১৯৮৫ সালে অবসর নেন মিত্রোখিন। কিন্তু ১৯৭২ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে তার তত্ত্বাবধানেই কেজিবি আর্কাইভের সব গোপন নথিপত্র লুবিয়াংকের কার্যালয় থেকে ইয়াসেনেভোস্থ কেজিবি’র প্রধান কার্যালয়ে সরিয়ে নেয়া হয়। এই সময়ের ভেতর জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তিনি বিভিন্ন গোপন দলিলের কপি সংগ্রহ করেন।
১৯৯২ সালে সদ্য স্বাধীন বাল্টিক রাষ্ট্র লাটভিয়ার মার্কিন দূতাবাসে দলিলের কপিসহ হাজির হন সত্তর বছরের বৃদ্ধ মিত্রোখিন। কিন্তু সিআইএ তার উপর ভরসা রাখতে পারেনি। এরপর তিনি ব্রিটিশ দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। সে বছরই মিত্রোখিন ও তার পরিবারের সাথে ৬ ট্রাংক ভর্তি ২৫ হাজার পৃষ্ঠার নথিপত্র যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসা হয়।
১৯৯৯ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয় ভ্যাসিলি মিত্রোখিন ও অধ্যাপক ক্রিস্টোফার এন্ড্রু’র লেখা ‘দ্য মিত্রোখিন আর্কাইভ’ দ্য অ্যাজিবি এন ইউরোপ অ্যান্ড দ্য ওয়েস্ট। একই বছর নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত হয় ‘দ্য সোর্ড অব দ্য শিল্ড’, ‘দ্য মিত্রোখিন আর্কাইভ অ্যান্ড দ্য সিক্রেট হিস্ট্রি অব দ্য কেজিবি।’
২০০৪ সালের ২৩ জানুয়ারি মিত্রোখিন মারা যান। মৃত্যুর দেড় বছরের মাথায় মিত্রোখিন আর্কাইভের দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হওয়ার মাধ্যমে আবারো আলোচনায় ফিরে এসেছেন তিনি। মিত্রোখিনের এসব তথ্যের ভিত্তিতে লেখা বই নিয়ে প্রথমে তোলপাড় শুরু হয় ভারতে। মিত্রোখিনের সংগ্রহ করা তথ্যমতে, ৭০-এর দশকে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী সরকারকে ঘুষ দিয়ে হাতের মুঠোয় নিয়েছিলো সোভিয়েত ইউনিয়ন। ক্রেমলিন থেকে পাঠানো হতো স্যুটকেস ভর্তি রুবল। বইয়ে এ-ও বলা হয়েছে, অনেক সময়ই প্রধানমন্ত্রী নিজে এই টাকার উৎস সম্পর্কে জানতেন না। কিন্তু ইন্দিরার দলীয় তহবিলের জন্য টাকা তোলার প্রধান দায়িত্ব ছিল যার, সেই ললিত নারায়ণ মিশ্র কিন্তু আগাগোড়াই জানতেন ওই স্যুটকেসগুলোর আসল ঠিকানা।
এই টাকার একটা বড় অংশ ইন্দিরাপুত্র সঞ্জয় গান্ধীর কাছেও পৌঁছতো বলে ওই বইয়ের দাবী। বলা হয়েছে, শুধু ১৯৭৫ সালের প্রথমার্ধ্বেই কংগ্রেসের দলীয় তহবিলে কেজিবি’র পাঠানো টাকার পরিমাণ ছিল ২৫ লাখ। বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনেক আগেই অবশ্য রাশিয়ার নজরে পড়ে গিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। …
…. কেজিবি’র ফাইলের তথ্য বলে দাবি করে এন্ড্রু’র বই জানাচ্ছে, ১৯৭৩ সালের মধ্যে অন্তত ১০টি ভারতীয় সংবাদপত্র ও ১টি সংবাদ সংস্থাকে নিয়মিত টাকা যুগিয়েছে তারা।
শুধু ’৭২ সালেই ওই সংবাদপত্রগুলোতে কেজিবি’র ফরমায়েশ অনুযায়ী ৩ হাজার ৭৮৯টি প্রবন্ধ ছাপা হয়। সত্তরের দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমেরিকা-চীন ও রাশিয়া-ভারত স্পষ্টত দু’টি শিবিরে ভাগ হয়ে গিয়েছিলো। ’৭১-এর আগস্টে ভারত রাশিয়ার সাথে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে। তারপরই দুই দেশ যৌথ বিবৃতিতে ভিয়েতনাম থেকে মার্কিন সেনা সরানোর দাবি তোলে। …
… পাকিস্তানের রাজনীতিতে কেজিবি’র ভূমিকা নিয়ে আছে নানা তথ্য। ১৯৭৭ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে জেনারেল জিয়াউল হক। মিত্রোখিনের তথ্য অনুযায়ী এ সময় থেকেই কেজিবি তাদের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেয় ভুট্টোর ছেলে মুর্তাজাকে। আফগান গোয়েন্দা সংস্থা ‘খাদ’-এর প্রধান মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠতা ছিল মুর্তাজার। ‘খাদ’-এর মাধ্যমেই মুর্তাজার সাথে যোগাযোগ করে কেজিবি। ….
… ১৯৮২ সালে নাজিবুল্লাহ্র সহায়তায় জিয়াকে হত্যার দু’টি ষড়যন্ত্র করেন মুর্তাজা। কিন্তু দু’টিই ব্যর্থ হয় পাক জঙ্গীদের, সোভিয়েত অস্ত্র ব্যবহারে অনভিজ্ঞতার কারণে। ….
এরপর এন্ড্রু ও ভাসিলি মিত্রোখিনের লেখা এবং ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত ‘দ্য মিত্রোখিন আর্কাইভ’ নামক ঐ বইয়ের ভলিয়্যুম-২ তে যে বোমা বিস্ফোরণ করা হয়েছে তাহলো, “ধর্মীয় দল জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদী ছিলেন সিআইএ’র এজেন্ট।”
-খন্দকার মুহম্মদ মুসলিম, ঢাকা।
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫