[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন-এর জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭. ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) পেশ করার পর ১৬৮তম সংখ্যা থেকে-
২৮তম ফতওয়া হিসেবে
“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা, করানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।
বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
স্মরণীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা প্রচার করছে “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই”। (নাউযুবিল্লাহ) সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনার বলেছে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে বললে জেল-জরিমানা হবে, নির্বাচন কমিশনার ভোটার আই.ডি কার্ডের জন্য ছবিকে বাধ্যতামূলক করেছে এবং ছবির পক্ষে মসজিদে, মসজিদে প্রচারণা চালাবে বলেও মন্তব্য করেছে। আর উলামায়ে ‘ছূ’রা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যেই ছবি তোলা জায়িয।” (নাঊযুবিল্লাহ) শুধু তাই নয়, তারা নিজেরাও অহরহ ছবি তুলে বা তোলায়।
অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয” তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে,
استحلال المعصية كفر.
অর্থাৎ, “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী।)
অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।
অনুরূপ “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধ নেই বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সকলের জন্যে ছবি তোলা জায়িয” উলামায়ে “ছূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে ছবি তুলবে (যদিও হারাম জেনেই তুলুক না কেন) তারা আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হবে যা শক্ত আযাব বা কঠিন গুনাহের কারণ। কেননা হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مسروق فى دار يسار بن نمير فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.
অর্থঃ হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমি হযরত মাসরূক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইর-এর ঘরে ছিলাম, তিনি উনার ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)
উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীতে” উল্লেখ আছে,
وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد االتحريم وهم من الكبائر.
অর্থঃ ‘তাওদ্বীহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত উলামায়ে কিরামগণ প্রত্যেকেই বলেন, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হারাম বরং শক্ত হারাম এবং এটা কবীরা গুাহর অন্তর্ভুক্ত।
অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ছবি তুলে প্রকাশ্য হারাম কাজে মশগুল হয়ে কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
কাজেই, যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ মূর্তি বা ছবিসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক-এর রিযামন্দি হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” পুনরায় প্রকাশ করা হলো।
বাতিলপন্থীদের প্রাণীর ছবি সম্পর্কিত আপত্তিকর ও প্রতারণামূলক বক্তব্যসমূহের খন্ডনমূলক জবাব
পূর্ব প্রকাশিতের পর
বাতিলপন্থীদের আপত্তিকর ও
প্রতারণামূলক বক্তব্য-১২
প্রতারক, ধোঁকাবাজ, জালিয়াত, গোমরাহ, জাহিল ও অপব্যাখ্যাকারী এ আর শাহ আলম তার মিথ্যা ও অপব্যাখ্যায় ভরা চটি বইয়ের ৩ পৃষ্ঠায় প্রাণীর ছবি জায়িয করার ব্যর্থ প্রয়াসে প্রসঙ্গহীন আয়াত শরীফ উল্লেখ করেছে। আয়াত শরীফখানা হচ্ছে ‘সূরাতুল আ’রাফ’-এর ১১ নং আয়াত শরীফ। এ আয়াত শরীফ-এর
“ ثم صورنكم অর্থাৎ আমি আকার অবয়ব তৈরি করেছি” অংশটি দ্বারা ধোকাবাজ শাহ আলম ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে। নাঊযুবিল্লাহ।
খন্ডনমূলক জবাব:
এ আর শাহ আলম কর্তৃক উদ্ধৃত উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা কস্মিনকালেও প্রাণীর ছবি জায়িয প্রমানিত হয় না। বরং উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর সৃষ্টি রহস্য এবং তাঁর বংশধরগণকে তথা বনী আদমকে বুঝানো হয়েছে। ছবির সাথে এ আয়াত শরীফ- এর কোন সম্পর্ক নেই। নিম্নে আয়াত শরীফ খানা উল্লেখ করে তার অনুবাদসহ তাফসীরের ফয়সালা উল্লেখ করা হলো।
আল্লাহ পাক সূরাতুল আ’রাফ-এর ১১ নং আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন-
ولقد خلقنكم ثم صورنكم ثم قلنا للملئكة اسجدوا لادم فسجدوا الا ابليس لم يكن من الساجدين
অর্থঃ “আল্লাহ পাক বলেন, আমি তোমাদেরকে (হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে) তৈরি করেছি, অতঃপর তোমাদেরকে (মায়ের রেহেমে কুদরতীভাবে) আকৃতি গঠন করেছি। অতপর (হযরত আদম আলাইহিস সাল্লামকে তৈরি করার পর) ফিরিশ্তাদেরকে নির্দেশ করেছিলাম, তোমরা হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সিজদা কর। ইবলীস ছাড়া সকলেই সিজদা করলেন। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হলো না।”
মূলতঃ এ আয়াত শরীফ দ্বারা মানুষ সৃষ্টির রহস্য উৎঘাটন করা হয়েছে। এ আয়াত শরীফ ছবি জায়িয বা নাজায়িয হওয়ার দলীল নয়। নিম্নে আয়াত শরীফখানার তাফসীর বা ব্যাখ্যা উল্লেখ হলো।
(ولقد خلقنكم) من ادم وادم من تراب (ثم صورنكم) فى الارحام وصورنا ادم بين مكة والطائف.
অর্থঃ (আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি) হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে এবং হযরত আদম আলাইহিস সালামকে মাটি থেকে। (অতপর তোমাদেরকে তৈরি করেছি) মায়ের রেহেমে কুদরতীভাবে আর হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে মক্কা শরীফ ও ত্বায়িফ-এর মধ্যবর্তী মাটি দ্বারা তৈরি করেছি। (তাফসীরু ইবনি আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ১৬৩ পৃষ্ঠা)
(ولقد خلقنكم ثم صورنكم ) اختلاف اهل التاويل فى تأويل ذلك. فقال بعضهم تأويل ذلك ولقد خلقناكم فى ظهر ادم ايها الناس ثم صورناكم فى ارحام النساء.
অর্থঃ (…..) মুফাস্সিরগণ অত্র আয়াত শরীফ-এর তাফসীরের ব্যাপারে মতোবিরোধ করেছেন। কোন কোন মুফাস্সিরগণ বলেন, হে মানুষেরা আমি তোমাদেরকে হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর পৃষ্ঠ মুবারক থেকে তৈরি করেছি। এরপর তোমাদের মাগণের রেহেমে তোমাদের দেহ গঠন করেছি। (জামিউল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন (তাফসীরুত তাবারী) ৫ম খন্ড ৯৩ পৃষ্ঠা)
وقال اخرون بل معنى ذلك ولقد خلقناكم فى اصلاب ابائكم ثم صورناكم فى بطون امهاتكم.
অর্থঃ অপরাপর মুফাস্সিরগণ বলেন, বরং উক্ত আয়াতের অর্থ হলো- আমি তোমাদেরকে তোমাদের পিতাদের পৃষ্ঠ থেকে তৈরি করেছি অতঃপর তোমাদের মায়ের রেহেমে দেহ গঠন করেছি। (তাফসীরুত ত্ববারী ৫ম খন্ড ৯৪ পৃষ্ঠা)
وقال اخرون بل معنى ذلك خلقناكم يعنى ادم ثم صورناكم يعنى فى ظهره.
অর্থঃ অপরাপর মুফাসসিরগণ বলেন, বরং উক্ত আয়াত শরীফ-এর অর্থ হলো- আমি তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে তৈরি করেছি, আর তাঁর পৃষ্ঠ মুবারক থেকে তোমাদের দেহকে গঠন করেছি। (তাফসীরুত ত্ববারী ৫ম খন্ড ৯৪ পৃষ্ঠা)
وقال اخرون معنى ذلك ولقد خلقناكم فى بطون امهاتكم ثم صورناكم فيها.
অর্থ: অপরাপর মুফাসসিরগণ বলেন, উক্ত আয়াত শরীফ-এর অর্থ হলো- আমি তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের রেহেমে তৈরি করেছি। অতপর সেখানেই তোমাদের দেহকে গঠন করেছি। (তাফসীরুত ত্ববারী ৫ম খন্ড ৯৪ পৃষ্ঠা)
فيه ثمانية اقوال: احدها: ولقد خالقناكم فى ظهر ادم ثم صورناكم فى الارحام , رواه عبد الله ابن الحارث عن ابن عباس.
والثاثى: ولقد خلقناكم فى اصلاب الرجال وصورناكم فى ارحام النساء. رواه سعيد بن جبير عن ابن عباس. وبه قال عكرمة.
والثالث: (ولقد خلقنكم) يعنى ادم (ثم صورنكم) يعنى ذريته من بعده, رواه العوضى عن ابن عباس.
والرابع: (ولقد خلقنكم) يعنى ادم (ثم صورناكم) فى ظهره , قاله مجاهد
والخامس: (خلقنكم) نطفة فى اصلاب الرجال وترائب النساء ( ثم صورنكم) عند اجتماع النطفة فى الارحام, قاله ابن السائب.
السادس: (خلقنكم) فى بطون امهاتكم (ثم صورنكم) فيما بعد الخلق بشق السمع والبصر, قاله معمر.
السابع: (خلقنكم) يعنى ادم خلقناه من تراب (ثم صورنكم) اى صورناه , قاله الزجاج وابن قتيبة.
الثامن: (ولقد خلقنكم) يعنى الارواح (ثم صورنكم) يعنى الاجساد , حكاه القاضى ابو بعلى فى المعتمد.
অর্থঃ এ আয়াতাংশের ৮টি ব্যাখ্যা বা উক্তি রয়েছে। ১ম উক্তি: আমি তোমাদেরকে হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর পৃষ্ঠ মুবারক থেকে সৃষ্টি করেছি। অতপর মায়ের রেহেমে তোমাদের আকৃতি বা দেহ গঠন করেছি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হারিছ রহমতুল্লাহি আলাইহি ইহা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন।
২য় উক্তি: আমি তোমাদেরকে পুরুষদের পৃষ্ঠ থেকে সৃষ্টি করেছি। আর মহিলাদের রেহেমে দেহ গঠন করেছি। হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি ইহা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। অনুরূপ হযরত ইকরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিও বলেন।
৩য় উক্তি: (আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে। (অতঃপর তোমাদেরকে তৈরি করেছি) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর পর উনার বংশধরকে তৈরি করেছি। হযরত আউফী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইহা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন।
৪র্থ উক্তি: (আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে। (অতপর তোমাদেরকে তৈরি করেছি) হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর পৃষ্ঠ মুবারক থেকে। হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ইহা বলেন।
৫ম উক্তি: (আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি) নুৎফা যা মানুষ সৃষ্টির উপাদান তা তৈরি করেছি পুরুষদের পৃষ্ঠে আর মহিলাদের বক্ষপাজরের মধ্যে। (অতঃপর তোমাদের দেহের আকৃতি গঠন করেছি) মায়ের রেহেমে নুতফাকে একত্রিত করে। হযরত ইবনুস সায়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি ইহা বলেন।
৬ষ্ঠ উক্তি: (আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি) তোমাদের মায়ের রেহেমে। (অতপর তোমাদের আকৃতি গঠন করেছি) তৈরির পর কর্ণ ও নাসিকা ছিদ্র করে। হযরত মুয়াম্মার রহমতুল্লাহি আলাইহি ইহা বলেন।
৭ম উক্তি: (আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালামকে মাটি দ্বারা তৈরি করেছি। (অতপর তোমাদের দেহের আকৃতি গঠন করেছি) অর্থাৎ আমি তাঁর আকার আকৃতি তৈরি করেছি। হযরত যুজাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি ইহা বলেন।
৮ম উক্তি: (আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ তোমাদের রূহ বা আত্মাসমূহকে সৃষ্টি করেছি। (অতপর তোমাদের আকৃতি গঠন করেছি) অর্থাৎ তোমাদের দেহ বা শরীর তৈরি করেছি। হযরত কাযী আবূ ইয়ালা রহমতুল্লাহি আলাইহি ইহা ‘মুতামাদ’ নামক কিতাবে বর্ণনা করেন।
(যাদুল মাসীর ফী ইলমিত তাফসীর ৩য় খন্ড ১৩২ পৃষ্ঠা)
(ولقد خلقنكم) يعنى قدرناكم فى العلم فى المرتبة الاعيان الثابتة (ثم صورنكم) يعنى اباكم ادم نزل تصويره منزلة تصوير االكل وابتدأنا خلقنكم ثم تصويركم بان قدرنا ادم وصورناه وذلك ابتداء تقديركم وتصويركم.
অর্থ: (আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ যেভাবে যে মর্যাদায় তৈরি করা দরকার সেভাবে আমার ইলমে তোমরা সৃষ্টি হিসেবে নির্দিষ্ট ছিলে। (অতপর তোমাদেরকে আকৃতি গঠন করেছি) অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর আকৃতি গঠন করেছি, আর তাঁর মত অন্যান্য মানুষদের আকৃতি গঠন করি। আমি প্রথমে তোমাদেরকে সৃষ্টি করি, অতপর তোমাদের আকৃতি গঠন করি। কেননা, হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে তৈরি করার ইরাদা করি অতঃপর তাঁর অবয়ব তৈরি করি। ইহাই তোমাদের প্রথম সৃষ্টি এবং প্রথম আকৃতির রহস্য। (তাফসীরুল মাযহারী ৩য় খন্ড ৩৫৪ পৃষ্ঠা)
অনুরূপ ব্যাখ্যা উল্লেখ রয়েছে, ১. তাফসীরুল কুরতুবী, ২. আহকামুল কুরআন, ৩. তাফসীরুল মাদারিক, ৪. তাফসীরুল বাগবী, ৫. তাফসীরুল খাযিন, ৬. তাফসীরুল কবীর, ৭. রূহুল মায়ানী, ৮. রূহুল বয়ান, ৯. কাশশাফ, ১০. বাইযাবী, ১১. হাশিয়াতুল কুনাবী আলাল বাইযাবী, ১২. হাশিয়াতুশ শাইখ যাদাহ আলাল বাইযাবী, ১৩. হাশিয়াতুশ শিহাব আলাল বাইযাবী, ১৪. তাফসীরুল জালালাইন, ১৫. হাশিয়াতুছ ছাবী আলাল জালালাইন, ১৬. হাশিয়াতুল জামাল আলাল জালালাইন, ১৭. কামালাইন আলাল জালালাইন, ১৮. আদ দুররুল মানছূর, ১৯. তাফসীরুন নীসাবুরী, ২০. তাফসীরু আবিস সাঊদ, ২১. তাফসীরুল মাওয়ারাদী, ২২. তাফসীরুল আযীযী, ২৩. তাফসীরুল ক্বাবিরী, ২৪. তাফসীরু মানার, ২৫. তাফসীরুল মুনীর, ২৬. তাফসীরুল জাওয়াহির ইত্যাদী তাফসীরের কিতাব সমূহে।
উল্লেখিত আয়াত শরীফ এবং তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক মায়ের রেহেমে মানুষের আকৃতি বা দেহ গঠন করেন। অথচ এ আর শাহ আলম উক্ত আয়াত শরীফখানা ছবি জায়িযের পক্ষে দলীল হিসেবে পেশ করেছে। যা অপব্যাখ্যা, মুর্খতা ও ধোঁকাবাজী ছাড়া আর কিছুই নয়। আরো প্রমাণীত হলো যে, শাহ আলম কর্তৃক প্রদত্ত উক্ত দলীল দ্বারা প্রানীর ছবি জায়িয প্রমানীত হয়না। উল্লেখ্য প্রাণীর ছবি হারাম বা নাজায়িয হওয়ার ব্যাপারে হাজার হাজার হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। যা পূর্বে আলোচিত হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ সামনেও আলোচনা করা হবে।
বাতিলপন্থীদের আপত্তিকর ও
প্রতারণামূলক বক্তব্য-১৩
প্রতারক, ধোঁকাবাজ, গোমরাহ, জাহিল ও অপব্যাখ্যাকারী এ আর শাহ আলম তার চটি বইয়ের ৩নং পৃষ্ঠায় আরো লিখেছে, “পবিত্র কুরআনে ছবি বা প্রতিকৃতি সম্পর্কে বেশ দলিল পাওয়া যায়।” নাঊযুবিল্লাহ।
খন্ডমুলক জবাব
প্রতারক, ধোঁকাবাজ ও গোমরাহ এ আর শাহ আলম তার ভ্রান্ত বইয়ের ৩ থেকে ৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত ৬ খানা আয়াত শরীফ ছবি জায়িযের পক্ষে পেশ করেছে।
অথচ তার উল্লেখিত আয়াত শরীফগুলো দ্বারা কস্মিনকালেও প্রানীর ছবি জায়িয প্রমাণিত হয় না। বরং উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহে মহান আল্লাহ পাক মানুষ সৃষ্টির রহস্য এবং মানুষের দেহ গঠন বা আকৃতি তৈরির অতুলনীয় পদ্ধতি বর্ণনা করে নিজের মহান কুদরতকেই প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ।
স্মর্তব্য যে, জাহিল এ আর শাহ আলম তার উল্লিখিত ছয়খানা আয়াত শরীফে বর্ণিত যথাক্রমে ১. صورنكم২. صورة ৩. يصوركم ৪. صوركم ৫. صوركم এবং ৬. المصور শব্দ মুবারকগুলোর সঠিক তাফসীর বা ব্যাখ্যা না বুঝার কারনেই সে উক্ত আয়াত শরীফগুলো প্রাণীর ছবি বা প্রতিকৃতি জায়িযের পক্ষে দলীল হিসেবে পেশ করেছে। যদিও কোন কোন আয়াতের অর্থ সে আকার, আকৃতি, অবয়ব ইত্যাদি করেছে। তবে এগুলো ছবি জায়িযের পক্ষে উল্লেখ করাটাই তার এক ষড়যন্ত্র ও ধোঁকা।
উল্লেখ্য, উক্ত শব্দসমূহের মূল শব্দ صورة যার লুগাতী বা শাব্দিক অর্থ “ছবি, ফটো, প্রতিচ্ছবি, চিত্র, প্রতিকৃতি, কপি এবং আকৃতি গঠন, সৃষ্টি, সৌন্দর্য, পদ্ধতি ইত্যাদি।
আকৃতি গঠন ও ছবি প্রতিকৃতি উভয় প্রকার অর্থ শাব্দিকভাবে প্রচলিত থাকলেও কুরআন শরীফে বর্ণিত উক্ত শব্দসমূহের অর্থ ছবি, প্রতিকৃতি বা প্রতিচ্ছবি গ্রহণ করা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ, মহান আল্লাহ পাক صورة শব্দ দ্বারা ছবি বা প্রতিকৃতিকে বুঝাননি এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও বুঝাননি। তেমনিভাবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম, হযরত তাবে তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম, হযরত ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম ও মুহাক্কিক-মুদাক্কিক সকল মুফাস্সিরূন, মুহাদ্দিছূন ফুক্বাহা আছফিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ কেউই উক্ত صورة শব্দের অর্থ ছবি বা প্রতিকৃতি বলে উল্লেখ করেননি।
এককথায় উল্লিখিত আয়াত শরীফে বর্ণিত صورة জাতীয় শব্দগুলোর অর্থ ছবি বা প্রতিচ্ছবি হিসেবে করা কুফরী। বরং আকৃতি, গঠন, অবয়ব, সৃষ্টি, সৌন্দর্য্য ইত্যাদি অর্থই তাফসীরের কিতাবের ফয়সালা অনুযায়ী গ্রহন করতে হবে।
তথাকথিত বাতিলপন্থী শাহ আলম উক্ত ছয়খানা আয়াত শরীফ-এর মনগড়া ব্যাখ্যা করে প্রাণীর ছবি জায়িযের পক্ষে বলে তাফসীর বির রায় করে গুমরাহ হয়ে গেছে। কাদিয়ানীদের মূল বা বাণী গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এবং তার অনুসারীরা কুরআন শরীফ-এর একখানা আয়াত শরীফ
ولكن رسول الله وخاتم النبين
অর্থাৎ, “তিনি সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক-এর রসূল ও (নবী ও রসূল আগমনের ধারাবাহিকতা বন্ধকারী) শেষ নবী।” (সূরাতুল আহযাব-৪০)
এ অর্থ না করে خاتم (খাতাম) শব্দের অর্থ করেছে মোহর ও সীল। নাঊযুবিল্লাহ। এ অর্থ গ্রহণ করে সে নিজেই মিথ্যা নবী দাবী করেছে এবং খতমে নুবুওওয়াতকে অস্বীকার করেছে।
শাব্দিকভাবে خاتم (খাতাম) শব্দের অর্থ শেষ বা সমাপ্তকারী এবং মোহর বা সীল উভয় অর্থই সঠিক। কিন্তু আয়াত শরীফে خاتم শব্দের অর্থ মোহর বা সীল হিসেবে করার কারণে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী ও রসুল প্রমাণিত হন না এবং তা অসংখ্য মুতাওয়াতির হাদীছ শরীফ-এর খিলাফ বলেই উক্ত অর্থ ও ব্যাখ্যা পরিত্যাজ্য ও কুফরী হয়েছে।
তেমনি বাতিলপন্থী শাহ আলমও কাদিয়ানীদের মতই আয়াত শরীফের صورة (ছূরত) শব্দের অর্থ ছবি বা প্রতিকৃতি করাতে তা কুফরী হয়েছে। আর সেই সাথে সেও নব্য কাদিয়ানীদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
অতএব প্রমাণিত হলো যে, তথাকথিত আশিকে রসূল শাহ আলম বাতিলপন্থী যে বলেছে “পবিত্র কোরআনে ছবি বা প্রতিকৃতি সম্পর্কে বেশ দলীল পাওয়া যায়।” তার এ দাবী ভ্রান্ত, অবান্তর ও কুফরীমূলক। তেমনি তার পেশকৃত ৬ খানা আয়াত শরীফ-এর সঙ্গে ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি বা ভাস্কর্যের কোনই সম্পর্ক নেই।
১৪নং পয়েন্টে উক্ত ছয় খানা আয়াত শরীফ উল্লেখ করে তার সঠিক অনুবাদ ও সঠিক তাফসীর বা ব্যাখ্যা পেশ করা হবে ইনশাআল্লাহ।
বাতিলপন্থীদের আপত্তিকর ও
প্রতারণামূলক বক্তব্য-১৪
প্রতারক, ধোঁকাবাজ, গোমরাহ, জাহিল ও অপব্যাখ্যাকারী বাতিলপন্থী এ আর শাহ আলম তার মিথ্যা ও অপব্যাখ্যায় ভরা চটি বইয়ের ৩ থেকে ৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত ৬ খানা আয়াত শরীফ প্রসঙ্গহীনভাবে প্রাণীর ছবি জায়িযের পক্ষে পেশ করেছে। সেই ৬ খানা আয়াত শরীফ ও তার অনুবাদ সে যেভাবে করেছে, তা হুবহু নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
১নং আয়াত শরীফ
ولقد خلقنكم ثم صورنكم ثم قلنا للملئكة اسجدوا لادم فسجدوا الا ابليس لم يكن من الساجدين.
অনুবাদ: আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার অবয়ব তৈরি করেছি। অতঃপর আমি ফেরেশ্তাদেরকে বলেছি আদম আলাইহিস্ সালামকে সিজদা কর, তখন সবাই সিজদা করেছে, কিন্তু ইবলিস সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো না। (সূরা আল আ’রাফ- ১১)
২ নং আয়াত শরীফ
فى اى صورة ما شاء ركبك
অনুবাদ: হে মানুষ! তিনি তোমাকে তাঁর ইচ্ছামত আকৃতিতে গঠন করেছেন। (সূরা আল ইনফিতার- ৮)
৩নং আয়াত শরীফ
هو الذى يصوركم فى الارحام كيف يشاء لا اله الا هو العزيز الحكيم.
অনুবাদ: তিনিই সেই আল্লাহ পাক, যিনি তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী মায়ের গর্ভে তোমাদের আকৃতি গঠন করেন। তিনি ব্যতিত আর কোন উপাস্য নেই। তিনি প্রবল পরাক্রমশালী, বিজ্ঞানময়। (সূরা আল ইমরান-৬)
৪নং আয়াত শরীফ
وصوركم فاحسن صوركم
অনুবাদ: তিনি (আল্লাহ পাক) তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন। অতঃপর তোমাদের আকৃতি সুন্দর করেছেন। (সূরা আল মু’মিন-৬৪)
৫নং আয়াত শরীফ
خلق السموت والارض بالحق وصوركم فاحسن صوركم.
অনুবাদ: তিনি (আল্লাহ) নভোম-ল ও ভূম-লকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন। এবং তোমাদেরকে আকৃতি (প্রতিকৃতি, আকার অবয়ব) দান করেছেন অতঃপর সুন্দর করেছেন তোমাদের আকৃতি। (সূরা আত্ তাগাবুন- ৩)
৬নং আয়াত শরীফ
هوالله الخالق البارئ المصور له الاسماء الحسنى
অনুবাদ: তিনিই (আল্লাহ তায়ালা) স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা (চিত্রকর) উত্তম নামসমূহ তারই (সূরা আল হাসর- ২৪)
খণ্ডমূলক জবাব
প্রতারক, ধোঁকাবাজ, গোমরাহ, জাহিল ও অপব্যাখ্যাকারী বাতিলপন্থী এ আর শাহ আলম-উল্লিখিত আয়াত শরীফগুলো প্রাণীর ছবি জায়িযের পক্ষে উল্লেখ করে সুস্পষ্ট কুফরী করেছে। আয়াত শরীফগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ তুলে ধরলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, তার উল্লিখিত ৬ খানা আয়াত শরীফ-এর মধ্যে ১নং আয়াত শরীফ অর্থাৎ সূরা আ’রাফ-এর ১১নং আয়াত শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা ১২নং বক্তব্যের জবাবে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে বাকি ৫ খানা আয়াত শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলো-
২নং আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যা:
বাতিলপন্থী এ আর শাহ আলম কর্তৃক সূরা ‘ইনফিতার’ এর ৮নং আয়াত শরীফখানা ছবি জায়িযের পক্ষে পেশ করা সঠিক হয়নি, বরং কুফরী হয়েছে। কারণ, এ আয়াত শরীফে মানুষ সৃষ্টির পদ্ধতি ও আল্লাহ পাক-এর বিশেষ কুদরত প্রকাশ পেয়েছে। তা উক্ত সূরার ৭নং আয়াত শরীফ দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায়। যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
الذى خلقك فسوك فعدلك. فى اى صورة ماشاء ركبك.
অর্থ: (হে মানুষ) যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন। তিনি তোমাকে তাঁর ইচ্ছামত আকৃতিতে তৈরি করেছেন। (সূরাতুল ইনফিতার-৭, ৮ নং আয়াত শরীফ)
উক্ত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় হযরত ইমাম আবুল ফারাজ জামালুদ্দীন আব্দুর রহমান বিন আলী বিন মুহম্মদ জাওযী হাম্বলী ক্বাদিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৫৯৭ হিজরী) তাঁর বিশ্ব বিখ্যাত সর্বজনমান্য বিশুদ্ধ তাফসীরের কিতাব “যাদুল মাসীর ফি ইলমিত তাফসীর” ৮ম খ- ২১৫-২১৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন,
قوله تعالى: (فى اى صورة ماشاء ركبك) وفى معنى الاية اربعة اقوال:
احدها: فى اى صورة من صور القرابات ركبك, وهو معنى قول مجاهد.
والثانى: فى اى صورة, من حسن او قبح او طول او قصر او ذكر او انثى, وهو معنى قول الفراء.
والثالث: ان شاء ان يركبك فى غير صورة الانسان ركبك. قاله مقاتل, وقال عكرمة: ان شاء فى صورة قرد وان شاء فى صورة خنزير.
والرابع: ان شاء فى صورة انسان بافعال الخير. وان شاء فى صورة حمار بالبلادة والبله, وان شاء فى صورة كلب بالبخل او خنزير بالشرة, ذكره الثعلبى.
অর্থাৎ (তিনি তোমাকে তাঁর ইচ্ছামত আকৃতিতে তৈরি করেছেন) অত্র আয়াত শরীফের ৪টি ব্যাখ্যা রয়েছে।
প্রথম ব্যাখ্যা: তিনি তোমাকে তোমার নিকটাত্মীয়দের আকৃতিতে তৈরি করেছেন। ইহা হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ব্যাখ্যা।
দ্বিতীয় ব্যাখ্যা: তিনি সৃষ্টি করেন অতি সুন্দর ছূরতে অথবা স্বাভাবিক ছূরতে, লম্বা করে অথবা খাটো করে, এবং পুরুষ অথবা মহিলা হিসেবে। ইহা হযরত ফারাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ব্যাখ্যা।
তৃতীয় ব্যাখ্যা: তিনি ইচ্ছা করলে তোমাকে মানুষের আকৃতি ব্যতিত অন্য আকৃতিতেও সৃষ্টি করতে পারেন। ইহা হযরত মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্তি। হযরত ইকরামাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি ইচ্ছা করলে বানরের আকৃতিতে তৈরি করতে পারেন আবার ইচ্ছা করলে খিনযীরের আকৃতিতেও তৈরি করতে পারেন।
চতুর্থ ব্যাখ্যা: তিনি ইচ্ছা করলে উত্তম আমলের কারণে মানুষের আকৃতিতে রূপান্তরিত করতে পারেন, আবার বোকামী ও নির্বুদ্ধিতার কারণে গাধার আকৃতিতেও রূপান্তরিত করতে পারেন। তেমনিভাবে কৃপনতার দরুন কুকুরের আকৃতিতে আবার খারাবীর কারণে খিনযীরের আকৃতিতে রূপান্তরিত করতে পারেন।
উক্ত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় হযরত ইমাম হাফিযুদ্দীন আবুল বারাকাত আব্দুল্লাহ বিন আহমদ বিন মাহমুদ নাসাফী হানাফী মাতুরীদী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৭০১ হিজরী) “মাদারিকুত তানযীল ওয়া হাক্বায়িকুত তা’বীল” অর্থাৎ ‘তাফসীরুন নাসাফী বা তাফসীরুল মাদারিক’ এর ৪র্থ খ- ৩৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
فى اى صورة اقتضتها مشيئته من الصور المختلفة فى الحسن والقبح والطول
অর্থ: তিনি (আল্লাহ পাক) তাঁর ইচ্ছামত বিভিন্ন ছূরতে যেমন- সুন্দর, স্বাভাবিক, লম্বা ও খাটো ইত্যাদি আকৃতিতে মানুষকে তৈরি করনে।
হযরত শাইখ মুহ্ইস সুন্নাহ আলাউদ্দিন আলী বিন মুহম্মদ বিন ইবরাহীম বাগদাদী শাফিয়ী আশয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৭২৫ হিজরী) “লুবাতুত তাবীল ফী মায়ানিত তানযীল” অর্থাৎ, তাফসীরুল খাযিন বা তাফসীরুল লুবাব’ এর ৪র্থ খ- ৩৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
فى اى شبه من اب او ام او خال او عم
অর্থাৎ, মানুষকে ইচ্ছামত তার পিতা অথবা মাতা অথবা মামা নতুবা চাচার আকৃতিতে তৈরি করা হয়।
হযরত আল্লামা মাওলানা মুহম্মদ ছানাউল্লাহ উছমানী হানাফী মাতুরীদী মাযহারী নকশবন্দী পানীপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ১১৪৩ হিজরী) তাফসীরুল মাযহারী ১০ম খ- ২১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
قال مجاهد والكلبى ومقاتل فى اى شبيه من اب او ام او خال او عم.
অর্থাৎ, হযরত মুজাহিদ, কালবী ও মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেছেন, মানুষকে ইচ্ছামত তার পিতা অথবা মাতা অথবা মামা নতুবা চাচার আকৃতিতে তৈরি করা হয়।
উল্লেখিত ব্যাখ্যা থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, বর্ণিত আয়াত শরীফখানায় মানুষ সৃষ্টির পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে। এ আয়াত শরীফ দ্বারা ছবি, প্রতিকৃতি বা প্রতিচ্ছবি জায়িয প্রমানিত হয় না। বাতিলপন্থী অজ্ঞ শাহ আলম আয়াত শরীফ-এর অপব্যাখ্যা করে মানুষকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করেছে।
৩নং আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যা:
বাতিলপন্থী এ আর শাহ আলম সূরা আলে ইমরান-এর ৬নং আয়াত শরীফ ছবি জায়িযের পক্ষে উল্লেখ করেছে। এ আয়াত শরীফখানার সাথেও ছবির কোন সম্পর্ক নেই। বরং মায়ের রেহেমে মানুষের আকৃতি গঠন করার প্রণালী এ আয়াত শরীফের মূল আলোচ্য বিষয়। নিম্নে নির্ভরযোগ্য তাফসীরের কিতাব থেকে উক্ত আয়াত শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো-
লুবাবুত তা’বীল ফী মায়ানিত তানযীল (তাফসীরুল খাযিন বা তাফসীরুল লুবাব বা তাফসীরুল বাগদাদী) ১ম খ- ২১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
التصوير جعل الشئ على صورة والصورة هيئة يكون عليها الشئ بالتاليف والارحام جمع رحم (كيف يشاء) يعنى الصور المختلفة المتفاوثة فى الخلقة ذكرا او انثى ابيض او اسود حسنا او قبيحا كاملا او ناقصا, والمعنى انه الذى يصوركم فى ظلمات الارحام صورا مختلفة فى الشكل والطبع واللون.
অর্থাৎ, তাছবীর দ্বারা উদ্দেশ্য কোন কিছু ছূরতে বা অস্তিত্বে আসা। আর ছূরত হচ্ছে নিয়মতান্ত্রিকতার মাধ্যমে কোন কিছুর দেহ গঠন হওয়া। ارحام ‘আরহাম’ শব্দটি رحم ‘রিহমুন বা গর্ভ পেট’ শব্দের বহুবচন।
(যেভাবে চান সেভাবে মায়ের রেহেমে আকৃতি গঠন করেন) অর্থাৎ তাঁর সৃষ্টির গঠন পদ্ধতি বিভিন্ন রকম। যেমন মায়ের রেহেমে কাউকে পুরুষ কাউকে মহিলা, আবার কাউকে সাদা, কাউকে কালো, কাউকে সুন্দর, কাউকে স্বাভাবিক, তেমনি কাউকে পূর্ণ দেহধারী, কাউকে অপূর্ণ দেহধারী হিসেবে তৈরি করা হয়। অর্থাৎ মায়ের অন্ধকার রেহেমে তিনি তোমাদের আকার আকৃতি তৈরি করেন বিভিন্ন গঠনে, স্বভাবে ও রংয়ে। সুবহানাল্লাহ।
হযরত ইমাম আবুল ফিদাহ হাফিয ইবনে কাছীর দামিশক্বী শাফিয়ী আশয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৭৭৪ হিজরী) এর ‘তাফসীরুল কুরআনিল আযীম (তাফসীরে ইবনে কাছীর)’ ‘১ম খ- ৫১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(هو الذى يصوركم فى الارحام كيف يشاء) اى يخلقكم فى الارحام كما يشاء من ذكر وانثى وحسن وقبيح وشقى وسعيد.
অর্থাৎ, (তিনি মহান আল্লাহ পাক তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী মায়ের রেহেমে তোমাদের আকৃতি গঠন করেন) অর্থাৎ তিনি মায়ের রেহেমে তোমাদেরকে তার ইচ্ছামত পুরুষ, মহিলা, সুন্দর, স্বাভাবিক, দুর্ভাগ্যবান ও সৌভাগ্যবান হিসেবে সৃষ্টি করেন।
আল্লামা কাযী মুহম্মদ ছানাউল্লাহ উছমানী হানাফী মাতুরীদী মাযহারী মুজাদ্দিদী নকশবন্দী পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ১২২৫ হিজরী) এর ‘আত তাফসীরুল মাযহারী’ ২য় খ- ৬,৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(هو الذى يصوركم فى الارحام كيف يشاء) على صور والوان واشكال مختلفة ذكرا او انثى على ما اراد
অর্থাৎ, (তিনি মহান আল্লাহ পাক তাঁর ইচ্ছামতই মায়ের রেহেমে তোমাদের আকৃতি গঠণ করেন) বিভিন্ন গঠনে, রংয়ে, বিবিধ আকৃতিতে পুরুষ অথবা মহিলা হিসেবে তাঁর ইরাদা অনুযায়ী তোমাদেরকে তৈরি করেন।
উক্ত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যা দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, উক্ত আয়াত শরীফে মানুষ সৃষ্টি ও দেহ গঠনের রহস্য বর্ণনা করেছে। কাজেই, প্রাণীর ছবি জায়িয হওয়ার বিষয়ে উল্লেখিত আয়াত শরীফখানা দলীল হিসেবে পেশ করা কখনোই শুদ্ধ হয়নি। বরং প্রতারণা করা হয়েছে।
৪নং আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যা:
বাতিলপন্থী এ আর শাহ আলম কর্তৃক কুরআন শরীফ-এর ‘সূরাতুল মু’মিন (গাফির)’-এর ৬৪ নং আয়াত শরীফ ছবি জায়িযের পক্ষে উল্লেখ করা চরম জিহালতী ও প্রতারণার অন্তর্ভুক্ত। মূলতঃ এ আয়াত শরীফ দ্বারাও মানুষ সৃষ্টির রহস্য বর্ণনা করা হয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত ও সর্বজনমান্য তাফসীরের কিতাব থেকে দলীল উল্লেখ করলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। যেমন,
“মাদারিকুত তানযীল ওয়া হাক্বায়িকুত তা’বীল (তাফসীরুল মাদারিক বা তাফসীরুন নাসাফী)” – এর ৪র্থ খ- ৭৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(وصوركم فاحسن صوركم) قيل لم يخلق حيوانا احسن صورة من الانسان
অর্থাৎ, (তিনি আল্লাহ পাক) তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন এবং তোমাদের আকৃতিকে সুন্দর করেছেন) কোন কোন মুফাস্সির বলেন, তিনি তোমাদেরকে পশু করে সৃষ্টি করেননি বরং উত্তম আকৃতিতে মানুষ হিসেবে তৈরি করেছেন।
‘লুবাতুতু তা’বীল ফী মায়ানিত্ তানযীল (তাফসীরুল খাযিন বা তাফসীরুল বাগদাদী বা তাফসীরুল লুবাব)’ এর ৪র্থ খ- ৭৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(وصوركم فاحسن صوركم) اى خلقكم فاحسن خلقكم
অর্থাৎ, (তিনি আল্লাহ পাক তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন এবং তোমাদের আকৃতিকে সুন্দর করেছেন) অর্থাৎ তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন এবং তোমাদের আকার-আকৃতিকে সুন্দর করেছেন।
‘তাফসীরুল কুরআনিল আযীম (তাফসীরু ইবনিল কাছীর)’ এর ৪র্থ খ- ১৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(وصوركم فاحسن صوركم) اى خلقكم فى احسن الاشكال ومنحكم اكمل الصور فى احسن تقويم.
অর্থাৎ, (তিনি তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন এবং তোমাদের আকৃতিকে সুন্দর করেছেন) অর্থাৎ তিনি তোমাদেরকে সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যাস্তভাবে তোমাদের আকৃতিকে সুন্দরভাবে পুর্ণতা দান করেছেন।
অত্র আয়াত শরীফ ও তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দ্বারাও বুঝা গেল আয়াত শরীফখানাতে মানুষের সৃষ্টি ও দেহ গঠনের রহস্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ আয়াত শরীফ দ্বারাও ছবি, প্রতিচ্ছবি বা প্রতিকৃতি প্রমাণিত হয় না।
৫নং আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যা:
বাতিলপন্থী এ আর শাহ আলম ‘সূরাতুত তাগাবুন’-এর ৩নং আয়াত শরীফ উল্লেখ করে ছবি জায়িযের অপচেষ্টা করেছে। মুলত অত্র আয়াত দ্বারা মানুষের দেহ, আকার-আকৃতি বা গঠন পদ্ধতির কুদরত-এর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যেমন বিশ্বখ্যাত সর্বজনমান্য তাফসীরের কিতাব ‘যাদুল মাসীর ফী ইলমিত তাফসীর (তাফসীরু ইবনিল জাওযী)’ এর ৮ম খ- ৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(وصوركم فاحسن صوركم) قال الزجاج: اى خلقكم احسن الحيوان كله.
অর্থাৎ, (তিনি তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন এবং তোমাদের আকৃতিকে সুন্দর করেছেন) হযরত যুজাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, অর্থাৎ তিনি (আল্লাহ পাক) তোমাদেরকে সকল প্রাণী থেকে উত্তম ছূরতে সৃষ্টি করেছেন (অনুরূপ তাফসীরুল মাদারিক-এর ৪র্থ খ- ২৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।
তাফসীরুল কুরআনিল আযীম (তাফসীরু ইবনি কাছীর) এর ৪র্থ খ- ৫৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(وصوركم فاحسن صوركم) اى احسن اشكالكم
অর্থাৎ, (তিনি তোমাদের আকৃতি দান করেছেন এবং তোমাদের আকৃতিকে সুন্দর করেছেন) অর্থাৎ তোমার আকার আকৃতি বা দেহকে সুন্দর করে গঠন করেছেন।
‘তাফসীরুল মাযহারী’ ৯ম খ- ৩১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(وصوركم) ايهاالناس (فاحسن صوركم) من ساير الحيوانات ظاهرا وباطنا وزينكم باحسن اوصاف الكائنات صالحا للعلم والعقل والمعرفة.
অর্থাৎ, (তিনি তোমাদের আকৃতি দান করেছেন) হে মানুষেরা (এবং তোমাদের আকৃতিকে সুন্দর করেছেন) সকল প্রাণী থেকে তোমাদেরকে জাহিরী ও বাতিনীভাবে সুন্দর করেছেন এবং ইলম, আক্বল ও মা’রিফাত-মুহব্বত দ্বারা পবিত্র ও নেককার বানিয়ে কায়িনাতের উপর সৌন্দর্য্যম-িত করেছেন। সুবহানাল্লাহ।
অত্র আয়াত শরীফ ও তার ব্যাখ্যা দ্বারাও মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে। প্রাণীর ছবি বা প্রতিকৃতি জায়িযের পক্ষে এ আয়াত শরীফ পেশ করাও কুফরী।
৬নং আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যা:
বাতিলপন্থী এ আর শাহ আলম সূরাতুল হাশর-এর ২৪নং আয়াত শরীফের অর্থ করতে গিয়ে المصور ‘মুছাব্বির’ শব্দের অর্থ করেছে “তিনি (আল্লাহ তায়ালা) … (চিত্রকর)” নাঊযুবিল্লাহ।
তার এই অর্থ গ্রহন কুফরী হয়েছে। বরং উক্ত المصور শব্দ মুবারকের অর্থ হবে ‘আল্লাহ পাক ছূরত দানকারী, আকৃতি দানকারী বা দেহ গঠনকারী’ ইত্যাদি যেমনটি অনুসরনীয় মুফাস্সিরূন কিরামগণ তাঁদের তাফসীরের কিতাবসমূহে ব্যাখ্যা করেছেন। যেমন, ‘যাদুল মাসীর ফী ইলমিত তাফসীর ৮ম খ- ৩৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
(والبارئ) الخالق. يقال: برأ الله الخلق يبرؤهم. و(المصور) الذى انشأ خلقه على صور مختلفة ليتعارفوا بها.
অর্থাৎ (আল্লাহ পাক বারিউন) সৃষ্টিকর্তা। এজন্য বলা হয়- আল্লাহ পাক মাখলূক সৃজন করেছেন, তাই তিনি তাদের সৃষ্টা। (এবং মুছাব্বির) যিনি তাঁর সৃষ্টিকে বিবিধ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন যাতে তাদেরকে পরিচয় করা যায়।
‘তাফসীরুল মাদারিক (তাফসীরুন নাসাফী)’ ৪র্থ খ- ২৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(والبارئ) الموجد (المصور) فى الارحام
অর্থাৎ, (আল্লাহ পাক বারিউন) অর্থাৎ স্রষ্টা (মুছাব্বির বা আকৃতি দানকারী) মায়ের রেহেম।
‘তাফসীরুল খাযিন (লুবাবুত্ তা’বীল ফী মায়ানিত্ তানযীল)’-এর ৪র্থ খ- ২৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(المصور) اى الذى يخلق صورة الخلق على ما يريده.
অর্থাৎ, (আল্লাহ পাক দেহ গঠনকারী) অর্থাৎ যিনি তাঁর ইচ্ছামত সৃষ্টির আকৃতি গঠন করেন তিনিই মুছাব্বির তথা দেহ গঠনকারী। তাফসীরুল কুরআনিল আযীম (তাফসীরু ইবনি কাছীর)-এর ৪র্থ খ- ৫৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(الخالق البارئ المصور) اى الذى اذا اراد شيئا قال له كن فيكون على الصفة التى يريد, والصورة التى يختار كقوله تعالى “فى اى صورة ماشاء ركبك” ولهذا قال المصور اى الذى ينفذ ما يريد ايجاده على الصفة التى يريدها.
অর্থাৎ, (আল্লাহ পাক স্রষ্টা, তৈরিকারী, আকৃতিদানকারী) অর্থাৎ তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছা করেন তখন বলেন, হয়ে যাও তাই সঙ্গে সঙ্গে তা তাঁর ইচ্ছা মুবারক অনুযায়ী হয়ে যায়। এখানে ছূরত অর্থ তাঁর আকৃতি গঠন প্রনালী। যেমনটি আল্লাহ তায়ালার বানী, “হে মানুষ! তিনি তোমাকে তাঁর ইচ্ছামত আকৃতিতে তৈরি করেছেন।” (সূরাতুল ইনফিতার-৮নং আয়াত শরীফ)
উল্লেখিত ৬খানা আয়াত শরীফ-এর অনুরূপ ব্যাখ্যা নিম্নবর্ণিত তাফসীরের কিতাবসমূহেও বর্ণিত রয়েছে। ১. তাফসীরুত ত্ববারী, ২. আহকামুল্ লিত্ ত্বহাবী, ৩. আহকামুল কুরআন লিল জাছ্ছাছ, ৪. আহকামুল কুরআন লিইবনিল আরাবী, ৫. আহকামুল কুরআন লিল কুরতুবী, ৬. আত্ তাবীলাত লিআহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ, ৭. তাফসীরু বাগবী, ৮. তাফসীরুল কবীর, ৯. রুহুল মায়ানী, ১০. রূহুল বয়ান, ১১. কাশ্শাফ, ১২. বাইদ্বাবী, ১৩. হাশিয়াতুল কুনাবী আলাল বাইদ্বাবী, ১৪. হাশিয়াতুশ শাইখ যাদাহ আলাল বাইদ্বাবী, ১৫. হাশিয়াতুশ শিহাব আলাল বাইদ্ব¦াবী, ১৬. জালালাইন, হাশিয়াতুছ ছাবী আলাল জালালাঈন, ১৭. হাশিয়াতুল জামাল আলাল জালালাঈন, ১৮. কামালাঈন আলাল জালালাঈন, ১৯. আদ দুররুল মানছূর, তাফসীরুন নিসাবূরী, ২০. তাফসীরু আবিস সাঊদ, ২১. তাফসীরুল মাওয়ারাদী, ২২. তাফসীরুল আযীযী, ২৩. তাফসীরুল কাদিরী, ২৪. তাফসীরুল মাজিদী, ২৫. তাফসীরুল মানার, ২৬. তাফসীরুল মুনীর, ২৭. তাফসীরুল জাওয়াহিব, ২৮. তাফসীরু রূহিল আমীন ইত্যাদি।
উপরোক্ত ছয়খানা আয়াত শরীফ-এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক مصور মুছাব্বির তথা স্রষ্টা, আকৃতিদানকারী, দেহ গঠণকারী ইত্যাদি।
এজন্য مصور ‘মুছাব্বির’ তাঁকেই বলা হয় যিনি যা ইরাদা করেন তাই পূর্ণ করেন, সৃষ্টি করা তার একখানা ছিফত। যা তিনি তার ইচ্ছা অনুযায়ী করে থাকেন।
অতএব, বাতিলপন্থী এ আর শাহ আলমের দাবী মিথ্যা ও কুফরী বলে প্রমাণিত হলো। আর উক্ত আয়াত শরীফগুলো প্রাণীর ছবি বা অন্যান্য ছবি জায়িযের পক্ষে দলীল হিসেবে পেশ করে সে চরম জিহালতীর পরিচয় দিয়েছে।
মূলতঃ শরীয়তে প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা, তোলা, তোলানো, দেখা, দেখানো ইত্যাদি হারাম ও নাজায়িয। যার স্বপেক্ষে হাজার হাজার দলীল আদিল্লাহ সমস্ত হাদীছ শরীফ-এর কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে।
মহান আল্লাহ পাক মুছাব্বির তথা স্রষ্টা, রূপদাতা, আকৃতিদানকারী, দেহ গঠনকারী ইত্যাদি। এ ছিফতখানা আল্লাহ পাক-এর জন্য খাছ। তাই কেউ যদি স্রষ্টা, রূপদাতা আকৃতিদানকারী দাবী করে তাহলে সে শিরক করার কারণে মুশরিক ও কাফির হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন,
واعبدوا الله ولا تشركوا به شيئا
অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত কর। আর তাঁর সাথে কাউকে শরীক কর না। (সূরাতুন নিসা ৩৬ নং আয়াত শরীফ)
আল্লাহ পাক মুছাব্বির বা আকৃতিদানকারী। তাই কেউ যদি বলে বা বিশ্বাস করে যে, আমি আকৃতি দানকারী বা ছবি অঙ্কনকারী আল্লাহ তায়ালার অনুকরনেই, তাহলে সে ব্যক্তি শিরক করার কারণে মুশরিক হয়ে যাবে। কারণ, সৃষ্টি করা, আকৃতি বা দেহ তৈরি করা আল্লাহ তায়ালার تكوين তাকবীন ছিফতে আযালী। এটা মানুষের ক্ষমতার বাইরে। মহান আল্লাহ পাক একাজগুলো করতে কোথাও নির্দেশ করেননি। বরং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে এ কাজগুলোর সাদৃশ্যপূর্ণ কাজের দাবী করাকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। তাই, শরীয়তের চুড়ান্ত ফতওয়া হলো, প্রাণীর ছবি তোলা অঙ্কন করা ইত্যাদি হারাম। তবে প্রাণহীন গাছপালা ও জড় বস্তুর ছবি নিষেধ নয়।
(অসমাপ্ত)
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন