কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১

সংখ্যা: ১৬৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ

 [সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যায়) এবং  ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭. এবং ১৬১তম সংখ্যা থেকে ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া পেশ করার পাশাপাশি ১৬৮ তম সংখ্যা থেকে-

২৮তম ফতওয়া হিসেবে

          “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্ট প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে বেশুমার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা, করানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ

          সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন-এর দরবারে, যিনি অসংখ্য মাখ্্লুকাতের মধ্যে একমাত্র মানব জাতিকে তথা মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দান করেছেন, অর্থাৎ “আশরাফুল মাখ্্লুকাত” করেছেন। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ্্ পাক রাব্বুল আ’লামীন তাঁর পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,

لقد كرمنا بنى ادم.

অর্থঃ- “আমি বনী আদম তথা মানব জাতিকে সম্মানিত করেছি।” (সূরা বনী ইসরাঈল-৭০)

          কিন্তু কথা হলো- শুধু মানুষ বা “আশরাফুল মাখলূক্বাত” হিসাবে সৃষ্টি হওয়াই কি কামিয়াবী বা সফলতা? কখনো নয়। কারণ, যদি তাই হতো তবে আবু জাহিল, আবু লাহাব জাহান্নামী হতোনা, কেননা তারাও মানুষ ছিল।

          মূলতঃ মানব জাতির “আশরাফিয়াত” তখনই বজায় থাকবে, যখন সে আল্লাহ্্ পাক-এর বিধানের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও আনুগত্যতা প্রকাশ করবে। আর যদি এর বিপরীত হয়, তবে সে হবে মাখলুক্বাতের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। আর তাই এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

لقد خلقنا الانسان فى احسن تقويم، ثم رددنه اسفل سفلين. الاالذين امنوا وعملوا الصلحت.

অর্থঃ- “নিশ্চয় আমি মানব জাতিকে সর্বোত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদেরকে জাহান্নামের অতল তলে পৌঁছে দিব, একমাত্র তাদেরকে ব্যতীত, যারা ঈমান আনবে এবং নেক আমল করবে।” (সূরা ত্বীন)

          উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, মানব জাতির মধ্যে যারা আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং দ্বীন ইসলামের ব্যাপারে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদা মোতাবিক আক্বীদাহ পোষণ করবে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবিক আমল করবে, একমাত্র তারাই আশরাফিয়াত বা শ্রেষ্ঠত্ব তথা পূর্ণ সফলতা লাভ করতে পারবে। এছাড়া শুধুমাত্র আকল-বুদ্ধি, ধন-দৌলত, বংশ মর্যাদা দ্বারা কখনোই কামিয়াবী বা শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করা সম্ভব নয়। আর তাই আল্লাহ পাক কালামে পাকে ইরশাদ করেন,

انا خلقنكم من ذكر وانثى وجعلنكم شعوبا وقبائل لتعارفوا ان اكرمكم عند اله اتقكم.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা হতে সৃষ্টি করেছি এবং আরেক জনের পরিচয় লাভের জন্যেবিভিন্ন গোত্রে ও বংশে বিভক্ত করেছি। (তবে) নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর নিকট সবচেয়ে বেশী সম্মানিত, যে ব্যক্তি অধিক মুত্তাক্বী বা পরহিজগার।” ৯ষূরা হজ্জ- ১৩)

         উপরোক্ত আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার শানে নুযূল সম্পর্কে বলা হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কা শরীফ কাফিরদের কবল হতে মুক্ত করলেন, তখন নির্দেশ দিলেন। ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন, হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কা’বা শরীফে আযান দিলে কেউ কেউ বলতে লাগলো যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন হাবশী গোলাম হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আযান দিতে বললেন? উনার চেয়েও তো সুন্দর আকৃতির, উত্তম বংশীয় লোক ছিল। ঠিক তখনই আল্লাহ পাক উপরোক্ত আয়াত শরীফ নাযিল করে জানিয়ে দিলেন যে, আল্লাহ পাক-এর নিকট উত্তম আকৃতি,উত্তম বংশ ইত্যাদির কোনই মূল্য নেই, যদি তার মধ্যে তাক্বওয়া বা পরহিজগারী না থাকে।

          উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও শানে নুযূলের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, যদি কেউ কামিয়াবী তথা আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই ‘তাক্বওয়া’ অর্জন করতে হবে।

          এখন প্রশ্ন হচ্ছে- “তাক্বওয়া” কি? মুত্তাক্বী কাকে বলে এবং কি করে মুত্তাক্বী হওয়া যাবে?

মূলতঃ হাক্বীক্বী ‘তাক্বওয়া’ হলো- সর্বাবস্থায় আল্লাহ পাক-এর মতে মত ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পথে পথ হওয়া অর্থাৎ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্্মা ও ক্বিয়াসকে পরিপূর্ণ অনুসরণ-অনুকরণ করা। আর যে ব্যক্তি তা করবে, সে ব্যক্তিই হাক্বীক্বী মুত্তাক্বী বা পরহিজগার।

          এখানে উল্লেখ্য যে, মহান রব্বুল আ’লামীন, উম্মতে মুহম্মদীর জন্য দ্বীন ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে,

اليوم اكملت لكم دينكم واتممت عليكم نعمتى ورضيت لكم الاسلام دينا.

অর্থঃ- “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম তোমাদের উপর আমার নি’য়ামত সমাপ্ত করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকেই দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম।” (সূরা মায়িদা-৩)

          আর তাই আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন ঈমানদারগণকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করছেন,

يايها الذين امنوا ادخلوا فى السلم كافة ولا تتبعوا خطوت الشيطن انه لكم عدو مبين.

অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ, “দ্বীন ইসলামে” পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর শয়তানের পদানঙ্ক অনুসরণ করোনা, নিশ্চয় শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শুত্রু।” (সূরা বাক্বারা-২০৮)

          প্রমাণিত হলো যে, হাক্বীক্বী মুত্তাক্বী বা ঈমানদার হতে হলে- কুরআন শরীফ, হদীছ শরীফ, ইজ্্মা ও ক্বিয়াস তথা দ্বীন ইসলামকে বা শরীয়তকে পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। কেননা আল্লাহ্্ পাক তো বলেই দিয়েছেন,

وما اتكم الرسول فخذوه وما نهكم عنه فانتهوا واتقوا الله ان الله شديد العقاب.

অর্থঃ- “রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা আদেশ করেছেন, তা আঁকড়িয়ে ধর, আর যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহ পাককে ভয় কর নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর-৭)

          সুতরাং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা তথা উনার পরিপূর্ণ ইত্তেবা বা অনসরণ করাই হচ্ছে হাক্বীক্বী তাক্বওয়া। কেননা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছে ‘আতক্বা’ অর্থাৎ ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ মুত্তাক্বী।’ অতএব যারা তাঁর পুঙ্খানুুপুঙ্খ ইত্তেবা বা অনুসরণ করবে,একমাত্র তারাই মুত্তাক্বী হিসাবে গণ্য হবে। আর এর বিপরীত যারা করবে, তাদের পক্ষে হাক্বীক্বী মুত্তাক্বী বা ঈমানদার হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن انس بن مالك رضى الله عنه قال جاء ثلثة رهط الى ازواج النبى صلى الله عليه وسلم يسألون عن عبادة النبى صلى اله عليه وسلم فلما اخبروابها كانهم تقالوها فقالوا اين نحن من النبى صلى الله عليه وسلم وقد غفر الله ما تقدم من ذنبه وما تأخر فقال احدهم اما انا فاصلى الليل ابدا وقال الاخر انا اصوم النهار ابدا ولا افطر وقال الاخر انا اعتزل النساء فلااتزوج ابدا فجاء النبى صلى الله عليه وسلم اليهم فقال انتم الذين قلتم كذا وكذا اما والله انى لا خشاكم لله واتقاكم له لكنى اصوم وافطر واصلى وارقد واتزوج النساء فمن رغب عن سنتى فليس منى.

অর্থঃ- “হযরত আনাস ইব্নে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, (একবার) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইবাদত সম্পর্কে জানার জন্য উম্মুল মু’মিনীনগণের নিকট তিনজন ছাহাবী আসলেন। যখন তাঁদেরকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইবাদত সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া হলো, তখন তাঁরা ধারণা করলেন যে, উনার ইবাদতগুলো পরিমাণে কম। পরক্ষণে চিন্তা করে বললেন, আমরা উনার তুলনায় কোথায়? আল্লাহ্্ পাক তো উনার পূর্বের ও পরের সকল গুণাহ্্খাতা ক্ষমা করেছেন, অর্থাৎ উনি মাছূম বা নিষ্পাপ। (কাজেই উনার অল্প ইবাদত করলেও চলবে, কিন্তু আমরা তো মাছুম নই, তাই আমাদের আরো বেশী ইবাদত করতে হবে।” সুতরাং তাঁদের মধ্যহতে একজন বললেন, আমি (আজ থেকে) সারা রাত্র নামাজ পড়বো, ঘুমাবো না। দ্বিতীয়জন বললেন, আমি সারা বৎসর রোজা রাখবো, ভঙ্গ করবোনা। তৃতীয়জন বললেন, আমি আহলিয়ার নিকট থেকে দূরে থাকবো। (এমন সময়) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নিকট এসে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, তোমরা কি এরূপ কথা বলেছ? সাবধান! আল্লাহ্্র কসম, তোমাদের চেয়েও আমি আল্লাহ্্ পাককে অধিক ভয় করি এবংআমি তোমাদের চেয়েও অধিক মুত্তাক্বী। (তারপরও) আমি রাত্রে নামায পড়ি ও ঘুমাই, রোযা রাখি আবার বিরত থাকি এবং আমি আহ্লিয়া গ্রহণ করেছি। সুতরাং এগুলো আমার সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত, যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে ফিরে যাবে, সে আমার উম্মত নয়।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)

          উপরোক্ত হাদীছ শরীফের ভিত্তিতে দু’টো বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেল যে,

          ১। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাুহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন, “আত্্ক্বা” অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ মুত্তাক্বী।

          ২। কেউ যদি হাক্বীক্বী মুত্তাক্বী হতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই প্রতি ক্ষেত্রে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরিপূর্ণ অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। অর্থাৎ উনি যে দ্বীন তথা শরীয়ত নিয়ে এসেছেন, উক্ত দ্বীন বা শরীয়ত মোতাবেক চলতে হবে।

          আর তাই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كل امتى يد خلون الجنة الا من ابى قيل ومن ابى يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من اطاعنى دخل النة ومن عصانى فقد ابى.

অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে যাবে একমাত্র ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যে আমাকে অস্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসা করা হলো- কোন ব্যক্তি আপনাকে অস্বীকার করলো ইয়া রাসুলাল্লাহ্্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে অনুসরণ- অনুকরণ করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে। আর যে ব্যক্তি নাফরমানী করেছে অর্থাৎ আমাকে অনুসরণ-অনুকরণ করেনি এবং সে ব্যক্তিই মুলতঃ আমাকে অস্বীকার করেছে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)

          অতএব, স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, ইহ্্কালীন ও পরকালীন সফলতা তথা আল্লাহ্্ পাক ও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভ করতে হলে, দ্বীন ইসলাম অর্থাৎ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্্মা ও ক্বিয়াসকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। কারণ, কুরআন শরীফ, হদীছ শরীফ, ইজ্্মা ও ক্বিয়াসকে অনুসরণ-অনুকরণ করার অর্থই হচ্ছে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ-অনুকরণ করা, যা আল্লাহ্্ পাক-এর সন্তুষ্টি লাভের পূর্ব শর্ত। আর তাই মহান আল্লাহ্্ পাক রাব্বুল আ’লামীন, তাঁর পবিত্র কালামুল্লাহ্্ শরীফে ইরশাদ ফরমান,

قل ان كنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم والله غفور رحيم.

অর্থঃ- “হে হাবীব! আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহ্্ পাককে ভালবাসতে চাও, আমার ইত্তেবা কর। তবেই আল্লাহ্্ পাক তোমাদেরকে মহব্বত করবেন এবং তোমাদের গুণাহ্্সমূহ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ্্ পাক ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান-৩১)

          উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, মানুষ ‘আশরাফুল মাখ্্লূকাত’ সত্য কথাই, তবে এই আশ্রাফিয়তই নাযাত পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়, বরং নাযাত পেতে হলে সর্ব প্রথম আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদা মুতাবেক আক্বীদা পোষণ করতে হবে। অতঃপর তাক্বওয়া অর্জন করতে হবে। আর তাক্বওয়া অর্জন করার একটাই পথ, তা হলো- সর্বক্ষেত্রে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুলমুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্্মা ও ক্বিয়াসকে অনুসরণ ও অনুকরণ করা। কাজেই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, মূর্তি বা প্রাণীর ছবির ব্যাপারেও কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্্মা ও ক্বিয়াসকেই অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ নূরে মুজাস্্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রাণীর মূর্তি বা ছবি সম্পর্কে যে ফায়ছালা দিয়েছেন বা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে প্রাণীর মূর্তি বা ছবি সম্পর্কে যে ফায়ছালা রয়েছে সকলকে হুবহু তাই বিশ্বাস করতে হবে ও মেনে চলতে হবে। তবেই ঈমান আমল হিফাযত করা সম্ভব হবে এবং হাক্বীক্বী মুত্তাক্বী হওয়া যাবে।

          স্মর্তব্য যে, সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্্য়াতের মুলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয় যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

          তদ্রƒপ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাতে’ “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা ও ছবি আাঁকা, তোলা,তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার মাকছুদ এবং উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। অর্থাৎ ঈমান-আমল হিফাযতে সহায়তা করাই এ ফতওয়া দেয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

          উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ‘সূরা মায়িদা’র’ ৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,

لتجدن اشد الناس عذاوة للذين امنوا اليهود والذين اشركوا.

অর্থঃ- “তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।”

          মূলতঃ এই ইহুদীরাই মুনাফিক সেজে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দিয়েছিল, তাঁকে শহীদ করার চক্রান্ত করেছিল। এই ইহুদীরাই মুনাফিকী করে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পরস্পরের মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল। আর মূলতঃ এই ইহুদীরাই মুসলমানের ঈমান-আমল বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল ফিরকার উদ্ভব ঘটিয়েছে। অর্থাৎ শিয়া, খারিজী, মু’তাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী ও ওহাবী ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো ইহুদীদেরই সৃষ্টি এবং এদেরই এজেন্ট।

          বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো- ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে যেমন, তারা প্রচার করছে- ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা বিদ্্য়াত ও হারাম।নিয়ত করে রওযা শরীফ ও মাযার শরীফ যিয়ারত করা শিরক, কদমবুছী করা নাজায়িয ও শিরক, মাযহাব মানার কোন প্রয়োজন নেই, পীর-মুরীদীশরীয়ত বিরোধী প্রথা, মীলাদ ক্বিয়াম করা র্শ্কণ্ডিবিদ্য়াত, শবে বরাত পালন করা বিদ্্য়াত, তারাবীহ নামায জরুরী কোন নামায নয়, আট রাকায়াত তারাবীহ পড়লেই চলে ইত্যাদি ইত্যাদি। (নাউজুবিল্লাহ)। অথচ উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ই কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ তথা শরীয়তসম্মত এবং তন্মধ্যে কোনটা সুন্নত আবার কোনটা ফরয।

          পক্ষান্তরে উলামায়ে ‘ছূ’ তথা দুনিয়াদার মাওলানারা টেলিভিশন, সিনেমা, নাটক, নোবেল, বেপর্দা হওয়া, নারী নেতৃত্ব মানা, ভোট দেয়া, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়া, মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া, মহিলাদের বাইরে বের হওয়ার সময় হাত ও মুখ খোলা রাখা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, গণতন্ত্র করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, মৌলবাদী দাবী করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি নাজায়িয কাজগুলোকে জায়িয প্রচা করছে। (নাউযুবিল্লাহ)

          অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুসলমানদেরকে ইসলাম থেকে সরিয়ে, ইবাদত থেকে সরিয়ে অনৈসলামিক ও হারাম কাজে মশগুল করে দিয়ে বেঈমান করে দেয়া।

          মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ‘ছূ’রা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে। যেমন, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলািিহ-এর যামানায় উলামায়ে ‘ছূ’ আবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল।

          বর্তমান যামানার উলামায়ে ‘ছূ’ তথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক তথা নমুনা।

          দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা নাজায়িয ও হারাম কাজগুলো নির্দ্বীধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে নাজায়িয ও হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা।

          যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذا بون يأتونكم من الا حاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم وايا هم لا يضلونكم ولا يفتنو نكم.

অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ্্ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

          স্মরণীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা উল্লিখিত বিষয়গুলোর ন্যায় ‘প্রাণীর ছবি’ সম্পর্কেও সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনার বলেছে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে বললে, জেল-জরিমানা হবে, নির্বাচন কমিশনার ভোটার আই. ডি কার্ডের জন্য ছবিকে বাধ্যতামূলক করেছে এবং ছবির পক্ষে মসজিদে মসজিদে প্রচারণা চালাবে বলেও মন্তব্য করেছে। আর উলামায়ে ‘ছূ’রা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যই ছবি তোলা জায়িয।” (নাউযুবিল্লাহ) শুধু তাই নয় তারা নিজেরাও অহরহ ছবি তুলে বা তোলায়।

          অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তেক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষীণ হচ্ছে।

ই’তেক্বাদী বা আক্বীদাগত ক্ষতি

          তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে সাধারণ মুসরমানগণ এটাই মনে করবে যে, সত্যিই বুঝি রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয। (নাউযুবিল্লাহ)

          কাজেই তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয” তারা ঈমান হারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী।

          অতএব বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে ‘ছূ’দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকীস্বরূপ। অথচ বান্দার ইবাদত-বন্দেগী বা নেক আমল কবুলযোগ্য হওয়ার জন্য প্রধানতম শর্ত হচ্ছে- আক্বীদা শুদ্ধ থাকা অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা। কারণ বিশুদ্ধ আক্বীদা আমল কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত। তাই মহান আল্লাহ পাক, পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,

والعصر. ان الا نسان لفى خسر. الا الدين امنوا وعملوا الصلحت.

অর্থঃ “আছরের কছম বা সময়ের কছম! সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে, একমাত্র তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে।” (সূরা আছর)

উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক মানব জাতির ধ্বংস হতে নাযাত পাওয়ার প্রথম উপায় হিসাবে ঈমান (আক্বীদা)কে আখ্যায়িত করেছেন। অতঃপর আমলের প্রশ্ন। কারণ ঈমানহীন ব্যক্তির নেক আমলের কোন মূল্যই আল্লাহ পাক-এর নিকটা নেই। কাজেই বান্দার জন্যে প্রধানতম ফরজ এই যে, সে সর্ব প্রথম তার ঈমান বা আক্বীদাকে বিশুদ্ধ করবে অর্থাৎ ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে, আহলে সুান্নত ওয়াল জামায়াতের ন্যায় আক্বীদা পোষণ করবে। অর্থাৎ ইসলামে যা হারাম তা হারাম জানবে ও মানবে এবং যা হালাল তা হালাল জানবে ও মানবে।

কেননা আক্বীদাগত কারণেই ইসলামে ৭২টি বাতিল ফেরক্বার আবির্ভাব হয়েছে। যদিও তাদের কথাবার্তা, চাল-চলন, ছুরত-সীরত ইত্যাদি বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনেক ক্ষেত্রেই মুসলমানের ন্যায় বা ইসলামসম্মত, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইসলামের মৌলিক বিষয়ে ইসলাম তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অর্থাৎ আহরে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার সম্পূর্ণ বিপরীত আক্বীদা পোষণ করে থাকে, যা সুস্পষ্ট কুফরী। যেমন- ক্বদরিয়া সম্প্রদায়- তারা তক্বদীরকে অবিশ্বাস করে, অথচ তক্বদীরের উপর ঈমান আনা ফরজ।

খারেজী সম্প্রদায়- তাদের আক্বীদা হলো- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ কাফির (নাউযুবিল্লাহ), অথচ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি সুধারণা পোষণ করা ঈমানের অঙ্গ বা ফরজ।

রাফেজী বা শিয়া সম্প্রদায়- তাদের আক্বীদা মতে শিয়াদের ইমামের মর্যাদা নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালামগণের চেয়েও বেশী, বর্তমান কুরআন শরীফ পরিবর্তীত, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ব্যতীত খুলাফায়ে রাশেদীনের সকলেই মুরতাদ, ছবি আঁকা হারাম তোলা জায়িয। (নাউযুবিল্লাহ)

অনুরূপ বর্তমান যামানার ভয়ঙ্কর ফিৎনা-কাদিয়ানী সম্প্রদায়, তাদের আক্বীদা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামূল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী নন, তাঁর পর আরো নবী পৃথিবীতে আসবে, তাই তারা গোলাম কাদিয়ানীকে নবী বলে বিশ্বাস করে, যা অকাট্য কুফরী।

অথচ তারা প্রত্যেকেই বাহ্যিক দৃষ্টিতে নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাতের কথা বলে, টুপি, কোর্তা, পাগড়ী পরিধান করে। এতকিছুর পরও তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মোতাবেক কাফির বা অমুসলিম। কারণ তাদের উপরোক্ত আক্বীদাসমূহ সম্পূর্ণই কুফরী।

আর এদের প্রসঙ্গেই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن عبد الله بن عمرو رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ستفترق امتى على ثلث وسبعين فر قة كلهم فى النار الا ملة واحدة قيل من هى يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ما انا عليه واصحا بى.

অর্থঃ “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, অতি শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিবক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত সকল দল জাহান্নামে যাবে। জিজ্ঞাসা করা হলো- যে দলটি (নাযাত পাবে) সেটা কোন দল? ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সাইয়্যিদুল মুরসাকলীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে (মত-পথের) উপর আমি আমার সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ রয়েছি, তার উপর যারা থাকবে, তারাই সেই নাযাত প্রাপ্ত দল।” (আহমদ, আবু দাউদ, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মোযাহিরে হক্ব)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইসলামের যেকোন আমলই করা হোক না কেন এবং যে কেউই করুক না কেন, তা যদি আক্বীদা শুদ্ধ রেখে শরীয়ত সম্মতভাবে করা হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য। আর যদি আক্বীদার মধ্যে কোন ত্রুটি থাকে, তবে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। যেমন-খারেজী, রাফেজী, কাদিয়ানী ইত্যাদি সম্প্রদায় পরিত্যাজ্য ও বাতিল। সুতরাং ইসলামে হারামকৃত প্রাণীর মূর্তি বা ছবিকে যারা জায়িয বলবে তারাও কুফরী আক্বীদার কারণে বাতিল ও পরিত্যাজ্য বলে গণ্য হবে।

আ’মালী বা আমলগত ক্ষতি

“রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সকলের জন্য ছবি তোলা জায়িয” উলামায়ে “ছূ”দের এ বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে ছবি তুলবে তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হবে যা শক্ত আযাব বা কঠিন গুণাহের কারণ্ যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

قال حدثنا الا عمش عن مسلم قال كنا مع مشروف فى دار يسار بن نمير فراى فى ضفته تماثيل فقال صمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند اله امصورون.

অর্থঃ হযরত আ’মাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুসলিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইরের ঘরে ছিলাম, তিনি তাঁর ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ্র নিকট শুনেছি, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ্ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ৮৮০)

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى زرعة قال دخلت مع ابى هريرة دار بالدينة فايها اعلاها مصورا يصور قال سمعت رسول الله صلى الله عيه وسلم يقول ومن اظلم ممن ذهب يخلق كخلقى فيخلقوا حبة وليخلقوا ذرة.

অর্থঃ হযরত আবু যুরয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সঙ্গে মদীনার এক ঘরে প্রবেশ করলাম, অতঃপর তিনি ঘরের উপরে এক ছবি অঙ্কণকারীকে ছবি অঙ্কণ করতে দেখতে পেলেন এবং বললেন, আমি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তি অধিক অত্যাচারী, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছুরত সৃষ্টি করে। তাকে বলা হবে, একটি দানা সৃষ্টি কর অথবা একটি কণা সৃষ্টি কর। (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০, মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০২)

এধরনের আরো অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে, যাতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা, ছবি আঁকা, আঁকানো, তোলা, তোলানো ও রাখা, রাখানোর ব্যাপারে কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ যারা এগুলো করবে তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীবের কঠিন অসন্তুষ্টির পাত্র হবে।

অতএব নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলমায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ছবি তুলে প্রকাশ্য হারাম কাজে মশগুল হয়ে কঠিন আযাবের পাত্র হবে যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

কাজেই যারা এ ধরণের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী, তারা ও হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে। অর্থাৎ মূর্তি বা ছবিসহ সকল বিষয়ে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজাম, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ্ পাক-এর রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যই “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্ট প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” পুণরায় প্রকাশ করা হলো।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বাতিলের আতঙ্ক, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম সংখ্যায় ছবি সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক ফতওয়া প্রদান করা হয়েছিল। যাতে প্রায় ৩৫৩টিরও অধিক নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে মূর্তি বা প্রাণীর ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া দেয়া হয়েছিল।

মূর্তি বা প্রাণীর ছবির উক্ত ফতওয়াটি সত্বান্বেষী মুসলমানগণের নিকট এতই সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য হয় যে, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই মূর্তি বা প্রাণীর ছবির ফতওয়া সম্বলিত কপিখানার মজুদ সংখ্যাগুলিও ফুরিয়ে যায়। যার ফলে মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগণিত পাঠক, মূর্তি বা প্রাণীর ছবি সম্পর্কিত মুল্যবান ফতওয়াটি সংগ্রহে রাখতে ব্যর্থ হয়। তাই তারা মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অন্যতম বিভাগ- “ফতওয়া বিভাগে” মূর্তি বা প্রাণীর ছবি সম্পর্কিত ফতওয়াটি পুণরায় প্রকাশ করার জন্য পুনঃ পুনঃ আবেদন জানায়।

এতদ্বপ্রেক্ষিতে অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগনিত পাঠকের পুনঃ পুনঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে এবং হক্ব তালাশী মুসলমানগণের ঈমান ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে সর্বপোরি মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রিযামন্দী হাছিলের উদ্যেশ্যে মূর্তি বা প্রাণীর ছবি সম্পর্কিত ফতওয়াটি আরো বর্ধিত ও বিস্তারিত আকারে এবং আরো অধিক দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে প্রকাশ করা হলো।

কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফে এরশাদ করেন,

فسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون.

অর্থঃ- “যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা হক্কানী আলেমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (সূরা নহল-৪৩ ও আম্বিয়া-৭) অর্থাৎ তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা যাঁরা জানেন, তাঁদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।

অতএব, যাঁরা জানেন, তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى هريرة رضى اله تعالى عنه قال قال انبى صلى الله عليه وسلم من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من نار.

অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যাকে দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়,  জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা গোপন করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুণের বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, আহ্মদ, মিশকাত, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারিফুস্ সুনান, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)

          অন্য হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ¡া আগুণের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।”

          কাজেই উপরোক্ত হাদীছ শরীফে যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে বাঁচার জন্যে অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে “মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার” অগণিত পাঠক, গ্রাহক ও হক্ব তালাশী বা সত্যান্বেষী সমঝদার মুসলমানগণের পুনঃ পুনঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে “মূর্তি বা প্রাণীর ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে” শরীয়তসম্মত তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে আরো বর্ধিত ও বিস্তারিত আকারে ফতওয়া দেয়া হলো।

এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খিলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয়-এর জন্যেই হতে হবে।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسم من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.

অর্থঃ- ““হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয়-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মুহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারিফুস্ সুনান, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, লুময়াত, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)

          বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।

কাজেই “মূর্তি বা প্রাণীর ছবি সম্পর্কে”  সঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়ছালা প্রদান করার মুল মাকছুদ হলো- সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যেন  প্রত্যেকেই মূর্তি বা ছবি সম্পর্কে সঠিক ফায়ছালা অবগত হতে পারে এবং শরীয়ত মোতাবেক আমল করে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক এত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।

মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المؤمن مرأة المؤمن اذا رأى فيه عيبا اصلحه.

অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্যে আয়না। যখন সে তার মধ্যে কোন দোষত্রুটি দেখবে তখন সে তাকে সংশোধন করে দিবে।” (বুখারী, আবূ দাউদ, মিশকাত)

এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সমবেত আনছার এবং মোহাজির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি দ্বীনের হুকুম-আহ্কামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ দান করি, তবে তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল। হযরত উমর ইব্নুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইব্নে সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “যদি আপনি এরূপ করেন, তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো, যেরূপ তীরকে সোজা করা হয়।” এ কথা শুনে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “তোমরাই আমার প্রকৃত বন্ধু, দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারিফুল মা’আরিফ)

অতএব, মুর্তি বা প্রাণীর ছবি সম্পর্কে যারা ফিৎনা বা বিভ্রান্তিতে রয়েছে, তাদের সে ফিৎনা ও বিভ্রান্তি নিরসন করা ও উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মিছদাক হওয়াই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে “মুর্তি বা প্রাণীর ছবি সম্পর্কিত ফতওয়াটি” পুণরায় প্রকাশ করার মূল কারণ।

অসমাপ্ত

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া – (১৪)

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া – (১৫)

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ: হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া – (১৬) 

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া – (১৭)