দক্ষিণ আফ্রিকার “মজলিসুল উলামা” সন্দেহাতীতভাবে দাবী করেছে যে, কোকাকোলা এবং এ ধরনের সকল কোমল পানীয়তে (soft drinks) খুব সামান্য পরিমাণে হলেও এ্যালকোহল (Alcohol) মিশ্রিত রয়েছে। এ ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এবং এ সকল পানীয় প্রস্তুতকারক কোম্পানীগুলো এ দাবী বা অভিযোগ অস্বীকার করে না এবং করতেও পারবে না। “মজলিসুল উলামা”-এর দাবীর স্বপক্ষে দলীল-প্রমাণ উপস্থাপন করেছে এবং তাদের প্রকাশিত রিপোর্টের সাথে সকল কাগজপত্র সংযুক্ত করে দিয়েছে। মানুষের দ্বীন হিফাযতের জন্য তাদের প্রকাশিত রিপোর্টটি হুবহু ‘বাংলায় অনুবাদ’ করে পাঠক সমাজে উপস্থাপন করবো ইনশাআল্লাহ।
(ধারাবাহিক)
চতুর্থতঃ যারা যুক্তি প্রদর্শন করে যে, কোমল পানীয়তে ব্যবহৃত এ্যালকোহল গায়রু খমর বা অ-খমর বিধায়, তা পান করা জায়িয হবে। তাদের এ সূত্র ধরে আমরা যদি আরেকটু অগ্রসর হই, তবে ভয়াবহ এক ভবিষ্যৎ ফিতনার চিত্র আমাদের সামনে ধরা পড়ে। যেমন লেজার বিয়ার (Laager Beer) এবং ক্যাসেল বিয়ার (Castle Beer) সর্বসম্মতিক্রমে সকল উলামায়ে কিরাম কর্তৃক, এমনকি নামধারী উলামাদের কাছেও হারাম হিসেবে বিবেচিত হয়। অথচ এ সকল বিয়ারও অ-খমর ইথানল ধারণ করে। যেখানে লেজার বিয়ারে এর পরিমাণ ৩.৬% ইথানল, সেখানে কোমল পানীয়তে এর পরিমাণ .০৫৮ ইথানল। অর্থাৎ পার্থক্য কেবল মাত্র মাত্রা বা পরিমাণগত। কিন্তু মূলগত কোন পার্থক্য নেই, অর্থাৎ উভয়টিতেই অ-খমর ইথানল রয়েছে। কোমল পানীয় বৈধকারীদের ব্যবহৃত, হালালকরণ মূলনীতির ভিত্তিতে, লেজার ও ক্যাসেল বিয়ারও হালাল ঘোষিত হওয়ার দাবী রাখে। যেহেতু এগুলোতেও অ-খমর ইথানল ব্যবহার করা হয়। তাই লেজার, ক্যাসেল এবং এধরনের সকল বিয়ারই, কোমল পানীয়তে প্রয়োগকৃত উছূল অনুসারে বৈধতার আওতায় চলে এসেছে এবং এভাবে ফিতনার পথ প্রশস্ত থেকে প্রশস্ততর হয়েছে।
পঞ্চমতঃ এ যুক্তি নিয়ে আরো এক ধাপ অগ্রসর হওয়া যাক। জিন (Gin) এবং হুইস্কী (Whiskey) সকল উলামা কর্তৃক হারাম সাব্যস্তকৃত। আজ অবধি কোন আলিমই একথা বলেনি যে, জিন এবং হুইসকী সামান্য পরিমাণও হালাল। যদিও এ সকল কড়া মদগুলো সে, একই অ-খমর ইথানল ধারণ করে, যে ইথানল কোমল পানীয়সমূহতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সামান্য পরিমাণ জিন এবং হুইস্কী খেলে কোন বিষক্রিয়া ও নেশা হয় না। অতএব যারা বলে থাকে সামান্য পরিমাণ থাকলে এবং অ-খমর ইথানল ব্যবহৃত হলে কোমল পানীয় পান বৈধ হবে, তাদের প্রয়োগকৃত এ মূলনীতি অনুসারে জিন এবং হুইস্কীও হালাল হওয়া উচিত। এ ভাবে ফিতনার দ্বারা জিন এবং হুইস্কীর মত মদকেও বৈধতা দানের জন্য আরো চওড়া করে উম্মুক্ত করা হলো। উপরন্তু একই যুক্তি প্রযুক্ত হবে ভদকাসহ অন্যান্য সকল অ-খমর ইথানল ব্যবহারকারী কড়া মদের ক্ষেত্রে যেগুলো সামান্য পরিমাণ খেলে বিষক্রিয়া ও নেশা হয়না এবং এভাবে এ সকল মদও হালাল হয়ে যাবে। ষষ্ঠতঃ এ কথা বুঝতে হবে যে, ‘মদ হালাল করা’ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন তা রাতারাতি বা হঠাৎ করে একরাতের মধ্যে সংঘটিত হবে না, বরং এটি একটি পর্যায়ক্রমিক দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। যে প্রক্রিয়ার সূচনা ইতিমধ্যে কোমল পানীয় হালালকারী গোষ্ঠী কর্তৃক শুরু হয়ে গেছে। আজ হোক অথবা কাল হোক, কথিত প্রগতিবাদি এবং উলামায়ে ‘ছূ’ গং মদ হালাল করবার জন্য ইলমে ফিক্বাহের পরিভাষাগত খুঁটিনাটি এবং কলাকৌশলগত যুক্তিপ্রমাণ সংযুক্ত করে দলীল প্রদান করবে। যেখানে তারা এ কথা প্রমাণ করবার চেষ্টা করবে যে, অ-খমর এ্যালকোহল ব্যবহৃত হলে এবং এমন মাত্রায় প্রয়োগ করা হলে যাতে নেশা ও বিষক্রিয়া হবেনা সেক্ষেত্রে তা পানে কোন সমস্যা নেই। এরা হচ্ছে সে সকল অদূরদর্শী, ক্ষীণ দৃষ্টি সম্পন্ন লোক যারা মুসলিম উম্মাহর নৈতিকতা, মূল্যবোধ সম্পর্কে মোটেই উদ্বিগ্ন নয় এবং এ ব্যাপারে তাদের কোন সচেতনতা নেই, এ বিপদসঙ্কুল ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে তারা এতটাই অসতর্কভাবে এবং উদাসীনতার সাথে পদচারণা করছে যে, যথোচিত সঙ্গতার সাথে, সত্যিকারভাবে তদন্ত, অনুসন্ধান ও অন্বেষণ করে নিশ্চিত না হয়েই কোমল পানীয়সমূহকে ইসলামী আইনের আওতাধীন ও অনুমতিযোগ্য ঘোষণা দিচ্ছে এবং দূরের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পাওয়ার অক্ষমতাহেতু ও চিন্তা শক্তির স্বল্পতার কারণে রসুলুল্লাহু ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভবিষ্যদ্বানী এবং ভবিষ্যৎ ফিতনা অনুধাবন করতে ব্যার্থ হয়ে জনগণকে কোমল পানীয় পানে উৎসাহিত করছে। (চলবে)
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫