ভাষান্তরঃ- ইবনে একরাম হোসেন
দক্ষিণ আফ্রিকার “মজলিসুল উলামা” দাবী করেছে যে, কোকাকোলা এবং এ ধরনের সকল কোমল পানীয়তে (soft drinks) খুব সামান্য পরিমাণে হলেও এ্যালকোহল (Alcohol) মিশ্রিত রয়েছে। এ ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এবং এসকল পানীয় প্রস্তুতকারক কোম্পানীগুলো এ দাবী বা অভিযোগ অস্বীকার করে না এবং করতেও পারবে না। “মজলিসুল উলামা”-এর দাবীর স্বপক্ষে দলীল-প্রমাণ উপস্থাপন করেছে এবং তাদের প্রকাশিত রিপোর্টের সাথে সকল কাগজপত্র সংযুক্ত করে দিয়েছে। মানুষের দ্বীন হিফাযতের জন্য তাদের প্রকাশিত রিপোর্টটি হুবহু ‘বাংলায় অনুবাদ’ করে পাঠক সমাজে উপস্থাপন করবো ইনশাআল্লাহ।
(ধারাবাহিক)
শরাব পান এবং যে সকল বিষয় শরাব পানে উদ্বুদ্ধ করে সকল বিষয় নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে ইসলামের অবস্থান অত্যন্ত ষ্পষ্ট এবং দ্ব্যার্থহীন। আইয়ামে জাহিলিয়াতের সময় আরবগণ শরাব এবং শরাবের আসরে অভ্যস্ত ছিল। সমাজ থেকে এই ব্যাপক মন্দ বিষয়টি দূর করার জন্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের একটি পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতি মানুষের উপর নাযিল করেন। প্রথমে মানুষের কাছে স্পষ্ট করেন যে এর উপকারের চেয়ে ক্ষতিকর দিকটিই বড়। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত প্রথমে মানুষকে নিষেধ করেন শরাব পানরত অবস্থায় নামাযে না আসতে। পরিশেষে, তিনি সূরা মায়িদার-৯০ ও ৯১নং আয়াত শরীফের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে শরাব হারাম ঘোষণা করেন। সূরা মায়িদায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, “হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, লটারী, ভাগ্য নির্ধারণের তীর এগুলো শয়তানের আমল। অতএব, এগুলো পরিহার কর। অবশ্যই তোমরা কামিয়াবী লাভ করবে। নিশ্চয়ই শরাব এবং জুয়ার মাধ্যমে শয়তান তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা এবং বিদ্বেষ সৃষ্টি করে থাকে এবং আল্লাহ পাক-এর যিকির ও নামায থেকে ফিরিয়ে রাখে। তাহলে এগুলো থেকে কি তোমরা ফিরিয়ে থাকবে না?” এই আয়াত শরীফ শোনার পর মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া ছিল অসাধারণ। সে সময় কেউ কেউ পানরত অবস্থায় ছিলেন। কারো হাতে আংশিক ভরা পাত্র। যে মাত্র তারা আয়াত শরীফ শুনলেন, “মুসলমানদের জন্য শরাব হারাম” বাকী অংশটুকু তারা মাটিতে ফেলে দিলেন। এবং যে সকল মাটির পাত্রে শরাব প্রস্তুতের অপেক্ষায় ছিল তাও ভেঙ্গে ফেললেন। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে যা কিছু ভাল লাগে এবং পছন্দনীয় তাতে যদি আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টি না থাকে তা যেন আমরা পরিত্যাগ করতে পারি। আমরা সে রকম পরিত্যাগ করার শক্তি চাই যেমনটা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সে সময় শরাব পান এবং শরাবের অনুষ্ঠান বর্জন করেছিলেন। উপসংহারঃ দক্ষিন আফ্রিকার মজলিসুল উলামা, কোমল পানীয়তে এলকোহলের উপস্থিতি নিয়ে যে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল তার বাংলা অনুবাদ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। মজলিসুল উলামা পরিশেষে বলেছে, প্রকৃত সত্য হচ্ছে এতে রয়েছে কাফিরদের দেয়া বিষ।” বিষপানে মানুষদের মৃত্যু অনিবার্য। কিন্তু কোমল পানীয়তে এলকোহল দেয়ার মূল কারণ মুসলমানদের ঈমানের মৃত্যু ঘটানো। কাফির মুশরিকরা চায় মুলসামনরা ঈমান আনার পর যেন তারা পুনরায় কুফরিতে লিপ্ত হয়। শরীয়তে বলা আছে সামান্যপরিমাণ এলকোহল (শরাব) পান করলে চল্লিশ দিন ইবাদত কবুল হয় না। সুতরাং যদি মুসলমানদের হালাল বিয়ারের নামে, কোমল পানীয়র নামে শরাব পান করানো যায়, প্রিজারভেটিব এবং সুগন্ধি দেয়ার নামে বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্যে এলকোহল মিশিয়ে মুসলমানদের খাওয়ানো যায় তখন মুসলামনদের ইবাদতগুলো কবুল হবে না, ইবাদতের স্বাদ পাবে না। হারাম জিনিস গ্রহণে মুসলমানদের আত্মিক উন্নতি বাধাগ্রস্থ হবে এবং পরিশেষে আল্লাহ পাক-এর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে। এ যাবৎ বিভিন্ন মুসলিম অর্গানাইজেশন থেকে কোকাকোলা কোম্পানীকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কোকাকোলায় এলকোহল রয়েছে কি না সে ব্যাপারে মতামত চাওয়া হয়েছে। এ যাবৎ কাল ধরে কোকাকোলা কোম্পানী বিষয়টি অস্বীকার করে এসেছে। উপরন্তু আমেরিকাতে প্রকাশিত “A Hand Book Of Haial and Haram Products” বইটির প্রথমেই প্রকাশ করা হয়েছে কোকাকোলা কোম্পানী থেকে দেয়া একটি চিঠি, যাতে কোকাকোলা কোম্পানী কোকাকোলায় এলকোহলের উপস্থিতি অস্বীকার করেছে। এ ক্ষেত্রে বইটির লেখককে কোকাকোলা কোম্পানী প্রতারিত করেছে। প্রতারণার কৌশলটি অভিনব। কেননা কোকাকোলার মূল উপাদানের মধ্যে এলকোহল নেই বলে তারা প্রতারণামূলক উত্তর দিয়েছে যে কোকাকোলায় এলকোহলের উপস্থিতি নেই। কিন্তু কোকাকোলায় যে ফ্লেভার মেশানো হয় সেই ফ্লেভারিং এজেন্টে এলকোহল রয়েছে। কিন্তু মজিলসুল উলামার তদন্ত রিপোর্টকে কোকাকোলা কোম্পানী ফাঁকি দিতে পারেনি। তাদের সূক্ষè বিশ্লেষনে ধরা পড়েছে। কোকাকোলায় ফ্লেভারিং এজেন্ট এ রয়েছে এলকোহল এবং একইভাবে সকল কোমল পানীয়র ফ্লেভারিং এজেন্টেই রয়েছে এলকোহল। কিন্তু মুসলমানরা এ সকল পানীয় সেবনে হচ্ছে প্রতারিত। প্রতারণা করা কাফির মুশরিকদের একটি সাধারণ চরিত্র। মুসলমানদের সঙ্গে ইহুদিদের প্রতারণা, ষড়যন্ত্রের ইতিহাস অনেক পুরনো। কিন্তু আমরা মুসলমানরা কেন এই ষড়যন্ত্রের শিকার হব। মুসলমানদের উচিত ইহুদি ও মুশরিকদের সকল ষড়যন্ত্রের বিষ দাঁত ভেঙ্গে দেয়া। মাসিক আল বাইয়্যিনাতে কোমল পানীয়তে এলকোহলের উপস্থিতির প্রমাণ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের কাজটি হয়তো শেষ হয়েছে। কিন্তু শেষ হয়নি আমাদের এই তথ্য সর্বত্র প্রচারের কাজটি। মুসলমানগণ যাতে কোমল পানীয় পানের নামে এলকোহল সেবন থেকে দূরে থাকে সেকারণে এই তথ্য প্রচারের কাজটি আমাদের যথাসাধ্যভাবে করা উচিত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের চেষ্টাকে কবুল করুন। আমীন। (সমাপ্ত)
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫