আখিরী যামানার অবস্থা সম্পর্কে হাদীছ শরীফে সবই বলা হয়েছে। তন্মধ্যে গান-বাজনার ব্যাপক প্রসারের কথা বিশেষভাবে এসেছে।
গানের উৎস সম্পর্কে কাহিনীটি প্রায় সবারই জানা। ছয় লক্ষ বৎসরের ইবাদতের পর মালউন বা অভিশপ্ত হবার পর ইবলিছ তার শয়তানী শক্তিগুলো একের পর এক চেয়ে নিচ্ছিল।
প্রসঙ্গতঃ আযান-ইক্বামতের পরিবর্তে সে নিয়েছিল গান-বাজনার অনুষঙ্গ।
গানের ইতিহাস তাই অনেক অতীতের। গানের একটা শক্তি আছে। মাদকতা আছে। এটা অন্তরের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
এ কারণে অন্তর শুদ্ধকারী ওলীআল্লাহ ব্যতীত কেউই এর তাছির থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।
“তাযকিরাতুল আউলিয়ায়” বর্ণিত আছে, এক ওলীআল্লাহ পথ চলতে গিয়ে দূর থেকে গানের সুক্ষ ও সামান্য আওয়াজ অনুভব করলেন। তিনি সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে ভিন্ন পথে অনেক বেশী দূর অতিক্রম করে গন্তব্যে পৌছলেন।
গান সম্পর্কে এই ছিল আগেকার আলিমদের প্রতিক্রিয়া।
সূরা লোকমানের ৬নং আয়াতে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, লোকদের মধ্যে এমনও কেউ আছে যে, মন ভুলানো কথা খরিদ করে থাকে, যেন লোকদের মনের অগোচরে আল্লাহ পাক-এর পথ হতে বিপদগামী করতে পারে।
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করা হলো আয়াতে বর্ণিত লাহওয়াল হাদীছ বা আল্লাহ পাক-এর পথ হতে গাফিলকারীর কথা বলতে কি বুঝানো হয়েছে। তিনি তিনবার জোর দিয়ে বললেন, খোদার কসম এর অর্থ গান বা সঙ্গীত।
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমি বাদ্যযন্ত্র ধ্বংস করার জন্য প্রেরিত হয়েছি।”
অন্যত্র ইরশাদ করেন, গান-বাদ্য শয়তানের মন্ত্র। এ মন্ত্রের সাহায্যে শয়তান মানুষের মনে নিকাফ, কপটতা তথা অনৈতিকতা সৃষ্টি করে।
উল্লেখ করা যায়, গান-বাজনার ব্যাপক সয়লাবের ফলেই আজ সমাজ মহামারীর মত সৃষ্ট দেহজ-কামজ, মানসিকতা, দুর্নীতির দুষ্টচক্র, পরকীয়া তথা ধর্ষনের অব্যক্ত অভিশাপ।
(২)
সম্প্রতি রয়টার্স পরিবেশিত এক সমীক্ষায় জানা যায়, ভারতে প্রতি আধা ঘণ্টায় একজন মহিলা ধর্ষিত হচ্ছে এবং প্রতি ৭৫ মিনিটে একজন মহিলা খুন হচ্ছে। এছাড়া গত একবছরে শিশু নির্যাতনের হার এক চতুর্থাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর এন.সি.আর.বি এক রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ২০০৪ সালের তথ্যের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট তৈরী করা হয়েছে। এন সি আর বির একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান ২০০৪ সালের এই পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলেও পরবর্তী সময়ে এবং বর্তমানে এই হার আরও অনেক বেড়েছে।
প্রধান পরিসংখ্যান কর্মকর্তা সি এস মিশ্র রয়টার্সকে বলেন এন.সি. আর.বি স্থাপিত ‘ক্রাইম ক্লক’ অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে প্রতি ২৯ মিনিটে একটি করে ধর্ষনের ঘটনা ঘটছে। ভারতে নারী নির্যাতনের বিষয় তদারককারী সংস্থা জাতীয় মহিলা কমিশন মনে করে এই পরিসংখ্যান মোটেও অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়। কমিশনের সদস্য ইয়াসমিন আবরার বলেন, ভারতে নারীর অবস্থা খুবই খারাপ। শিশুর ক্ষেত্রে ভ্রুন হত্যার হার ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রতি ১৬ মিনিটে একটি করে খুনের ঘটনা ঘটছে। প্রতি ১৯ মিনিটে এক একটি হত্যার চেষ্টা বা এটেম্প টু মার্ডার, প্রতি ৯ মিনিটে একটি করে দাঙ্গা এবং প্রতি ২৩ মিনিটে একটি করে অপহরনের ঘটনা ঘটছে।
(৩)
এদিকে ভারতে এ বছরের ২২ এপ্রিলে হয়ে গেল এবারের ইন্ডিয়ান আইডল-২ প্রতিযোগীতা। প্রায় ১০ লাখ থেকে ১৭২ জন নির্বাচিত হয় প্রতিযোগীতার জন্য। থিয়েটার রাউন্ডের জন্য নির্বাচিত হয় ২৮ জন। পিয়ানো রাউন্ডে ২৮ থেকে ১২ জন নির্বাচিত হয় সুপার ফাইনালিস্ট হিসেবে। আর ১১ জন থেকে নানা ঘটন অঘটনের মধ্য দিয়ে ইন্ডিয়ান আইডল-২ খ্যাত হন সন্দ্বীপ আচার্য। পুরুস্কার হিসেবে তিনি পান মারুতি বেলুনি গাড়ী, ১ কোটি রুপি, সনি থেকে এলবাম করার চুক্তি, একটি গিটার ও ৩ লাখ রুপির ভিসা কার্ড।
উল্লেখ্য, ইন্ডিয়ান সনি অ্যান্টারটেনমেন্ট টেলিভিশন মূলত দেশ ব্যাপী সবচেয়ে ভাল গায়ক খোঁজার নামে বিচারকের রায় ও দর্শকের টেলিফোন এবং এস এম এস এর সমন্বিত রায়ের মাধ্যমে এ প্রতিযোগীতার প্রচলন করে। এর ফরম্যাট স্রষ্টা ছিল সিমন ফুলার। ২৮ শে অক্টোবর ২০০৪ এর প্রথম প্রচার শুরু হয়। সেবারে ৩০ হাজার প্রতিযোগীতার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ৫ই মার্চ ২০০৫ তা সমাপ্ত হয়। চূড়ান্ত পর্বে ভোট আসে ৪ কোটি ৩০ লাখ। যার ফলাফল পর্ব দেখে ৫ কোটি ২৫ লাখ দর্শক।
অর্থাৎ গান-বাজনা ইন্ডিয়ায় কী ব্যাপক মত্ততা তৈরী করেছে তার চিত্র এক্ষেত্রে ফুটে উঠে। তবে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি এর পরিপ্রেক্ষিতে খুন ধর্ষণসহ সামাজিক অনাচারের পরিমাণ কোন পর্যায়ে পৌছেছে এন,সি,আর,বি দেয়া তথ্যে তার প্রতিফলন ঘটেছে।
(৪)
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, হালে ভারতীয় পণ্যে বাংলাদেশী বাজার কি পরিমাণ ছেয়ে গেছে। চাল, গম, ডাল, চিনি, পেয়াজ, মশলা, তেল, মাছ, গরু থেকে আরম্ভ করে শাড়ি, গহনা, ওষুধ, কসমেটিক্স ইত্যাদি সব ভারতীয় পণ্যে এদেশীয় বাজার সয়লাব।
এছাড়া স্বাস্থ্যসেবায় ভারতীয় চিকিৎসক শিল্প প্রতিষ্ঠানে ভারতীয় উপদেষ্টা, সেবাক্ষাতে ভারতীয় পেশাজীবি, বিজ্ঞাপন চিত্রে ভারতীয় মডেলের রমরমা উপস্থিতি। অর্থাৎ ভারতের আর্থ, বাণিজ্যিক, সামরিক আগ্রাসনের পর, সাংস্কৃতিক অগ্রাসনেও বাংলাদেশ এখন খুবই বিপর্যস্থ ও বিভ্রান্ত।
(৫)
এর পিছনে মূলতঃ আমাদের স্বকীয়তাবোধ, দেশপ্রেম ও নিজস্ব সংস্কৃতির মূল্যায়ন তথা ঈমানী চেতনা হারিয়ে আজ বিজাতীয় বিধর্মীয় সংস্কৃতি তথা হুজুগে আত্মহারা হওয়াই মূল কারণ।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের মার্চে ইন্ডিয়ান আইডল সমাপনীর পরপরই হয় বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান আইডলদের কনসার্ট। আর এ কানসার্ট এদেশে যে ব্যাপক মাদকতা মত্ততা ও ক্রেজ তৈরী করেছিল তাতে ইন্ডিয়ানরাও লজ্জা পেয়েছিলো। পত্রিকার রিপোর্টেও তার খানিকটা এসেছিল-
পত্রিকার রিপোর্টঃ “সত্যি সত্যি ঢাকার দর্শকদের মাতিয়ে দিলেন ইন্ডিয়ান আইডলরা। দর্শকরা যেভাবে মেতে উঠেছিল তাতে বোঝা গেছে সনি টেলিভিশন আয়োজিত ইন্ডিয়ান আইডল প্রতিযোগীতা শুধু ভারত নয় নাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশকেও। অনেক দেশে গান গেয়েছেন তবে এত সাড়া কোথাও পাননি বলে ঢাকার দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন ইন্ডিয়ান আইডলরা। (প্রথম আলো ১৯/০৭/০৬)
জুলাই/০৫ এ ঢাকায় হয় ইডিয়ান আইডলদের কনসার্ট। শেরাটনে টিকেটের মূল্য ছিল ৫,০০০ টাকা। দু হাজার দর্শকের পরও হাজার খানেক ছিলেন টিকেট বঞ্চিত বা প্রত্যাশী। তাদের গানগাওয়ার সময় পুরো হলে নাচ-গান শুরু হয়ে যায়। উপস্থিত তরুন তরুনীরা এক সাথে নাচ-গান শুরু করে দেয়। … … …
বাংলাদেশ সফর করে গেলেন তিন ইন্ডিয়ান আইডল অভিজিৎ সাওয়ান্ত রাহুল বৈদ্য ও প্রযুক্তা শুক্রে। এদের বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে এদেশের মিডিয়া সরগরম হয়ে উঠেছিল। বাংলাদেশী ফ্যানরা ভিড় জমিয়েছিল এদের অনুষ্ঠান দেখার জন্য। এই তিন ভারতীয় তরুন-তরুনী এখন পর্যন্ত ভারতের সাংস্কৃতিক জগতের তারকায় পরিণত হতে পারেননি। এখনো সনি টিভি নেটওয়ার্ক তাদের কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। অথচ তারপরেও এদের সফরকে কেন্দ্র করে এদেশের তরুন তরুনীদের উন্মাদনা একেবারে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল। ১৫-১৮ জুলাই এদের অনুষ্ঠানগুলোতে এদেশীয় তরুনীদের আচরণ শালীনতার সীমানা অতিক্রম করেছিলো। ফ্যানদের উচ্ছাসের বাড়াবাড়িকে অতি বড় ভারত প্রেমিকও সহজভাবে নিতে পারেনি। (সাপ্তাহিক রোববার ২৪ শে জুলাই ০৫)
(ক)
“কানসাট অনুষ্ঠান শেষে প্রতিবেদকের কাছে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে রাহুল বেদ্য বলেন, গত দু’দিনে আপনাদের দেশের দর্শক শ্রোতাদের কাছ থেকে যে ভালবাসা পেয়েছি তা আমার দেশেও পাইনি।” (সমকাল ১৯-০৭-০৬ঈঃ)
(খ)
“অভিজিত যখন জানান যে, এই মুহুর্তে তার হাজার খানেক ভক্ত। বিয়ের বয়স হলে এদের একজনকেই বিয়ে করবেন। একথা শোনার সাথে সাথেই এদেশীয় এক ভক্ত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
(গ)
প্রযুক্তাকে জড়িয়ে আরেক ভার্সিটি পুড়ণ্ডয়া তরুনী চিৎকার করে কাদঁতে থাকেন। রাহুলের হাতে এক তরুনী চুম্বন করতে গিয়ে আর ছাড়তেই চান না।” (প্রথম আলো ২১-০৭-০৫)
উপরের রিপোর্টে এবং এ তিনটি খণ্ড চিত্রে এ প্রজন্মকে ভারতীয় সংস্কৃতি কি নিদারুন প্রভাবিত করেছে তার নমুনা উপলদ্ধি করা যায়।
উল্লেখ্য, ইন্ডিয়ান আইডল খ্যাতরা এভাবে বাংলাদেশ তরুন তরুনীদের মাঝে মাতামাতি চালু করে দেবার পর সে পটভূমির সুযোগ গ্রহণ করলেন বাংলাদেশ ইউনিলিভারের চেয়ারম্যান সঞ্জীব মেহতা।
সংগীতের প্রতিভা অন্বেষণের নামে ১১ই জুন ২০০৫. রংপুর থেকে শুরু হয় তাদের ‘ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ নামের গায়কী প্রতিযোগীতা কার্যক্রম। ৬টি বিভাগীয় শহরের ১১টি ভেন্যূতে এর কার্যক্রম চলে। পুরো অনুষ্ঠানটি দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। আয়োজন এবং প্রতিযোগী। অনুষ্ঠানটির ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে থাকে মার্কেট অ্যাকসেস। সার্বিক দায়িত্বে এশিয়াটিক। প্রতিযোগীরা প্রথমে অডিশন দেয়। যেখান থেকে বিচারক প্যানেলে তাদের ইয়েস কার্ড দেয়া হয়। তারা প্রাথমিক বাছাইয়ের কাজটা করেন। এরপর বাছাইকৃতদের নির্বাচন করা হয়। সেখানে ভিসা টু ঢাকা অর্থাৎ ঢাকার মূল পর্বে নেয়ার জন্য বাছাই করা হয়।
এ প্রক্রিয়ায় প্রথম পর্বে সারাদেশের ৪০ হাজার প্রতিযোগী অংশ নেয়। সেখান থেকে যাচাই বাছাই করে ঢাকায় আসার সুযোগ পায় ১১০ জন। ঢাকার বাইরে এসব প্রতিযোগিতামূলক যাচাই বাছাই প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকাতে ১১০ জন প্রতিযোগী থেকে নির্বাচন করা হয় সেরা ৪০ জনকে।
এরপর থেকে ক্লোজ আপ ওয়ান তোমাকে খুঁজছে বাংলাদেশ প্রতিভা অন্বেষণের জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন টান টান উত্তেজনায় পৌছে। ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে এনটিভিতে প্রতি শুক্রবার রাত ৯টা ১৫ মিনিটে দর্শক-শ্রোতারা এই উত্তেজনার মুখোমুখি হতে থাকেন। প্রতিযোগিতায় ৪০ জন প্রতিযোগী দর্শক-শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে তাদের ভোট দেয়ার জন্য আকুল আবেদন জানান। শুরু হয় দর্শক-শ্রোতাদের বিচারের পালা। তারা পছন্দের প্রতিযোগীকে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ভোট দেন। যে কোন মোবাইল থেকে এক, দুই, তিন, চার নম্বরে এসএমএস পাঠাতে পারবেন।
শুক্রবার অনুষ্ঠান দেখার পর এসএমএস পাঠাতে দর্শক- শ্রোতারা ১২ ঘণ্টা সময় পান। তাদের ফলাফল ঘোষিত হয় রেজাল্ট রাউন্ডে। গ্রুপ ভিত্তিতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। সেপ্টেম্বরের ‘২৩ থেকে ২৫’ তারিখের মধ্যে গ্রুপ ‘এ’র, সেপ্টেম্বরের ৩০ থেকে ২ অক্টোবরের মধ্যে গ্রুপ ‘বি’, এভাবে পর্যায়ক্রমে গ্রুপ সি ডি এবং ই গ্রুপের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। প্রতি শুক্রবার একটি গ্রুপের অনুষ্ঠান দেখানো হয়। ফলাফল হয় রবিবার। ভোট গণনা শুরু হয় অনুষ্ঠানটি টিভিতে যাওয়ার পর। পাঁচ গ্রুপ থেকে ২ জন করে ১০ জন প্রতিযোগী চূড়ান্ত পর্বে প্রতিযোগিতা করে। এরপর শুরু হয় ক্লোজআপ ওয়ান নির্বাচনের পালা।
পুরো অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হচ্ছে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে। বিচারক থেকে শুরু করে আয়োজনের সবাই নিবেদিতপ্রাণ। এর মাঝে চলছে হাসি-ঠাট্টা, মজা করা। (সাপ্তাহিক ২০০০, ২৪ মে’ ০৫)
৭ লাখ ৮৫ হাজার ৩৯১ ভোট পেয়ে প্রথম ক্লোজআপ ওয়ান হয়েছেন নোলক। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছেন যথাক্রমে রাজিব ও বিউটি।
দর্শকদের ভালোবাসায় সব বাধা অতিক্রম করে বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে নিলেও নোলক বিচারকদের কাছে পেয়েছেন মাত্র ৩৯ নম্বর। আর দর্শকদের ভোটের গড় হিসেবে পেয়েছেন ৯১ নম্বর। অন্যদিকে প্রথমে রানারআপ মিজান মাহমুদ রাজিব দর্শক ভোট পেয়েছেন ৩ লাখ ১৩ হাজার ৯৪৬টি। বিচারকদের কাছে তিনি পেয়েছেন সর্বোচ্চ ৪৯ নম্বর। কিন্তু দর্শকদের ভোটের গড় হিসেবে পেয়েছেন ৬৭ নম্বর। দ্বিতীয় রানারআপ নাসরিন আক্তার বিউটি দর্শকদের কাছ থেকে ভোট পেয়েছেন ৩ লাখ ২০ হাজার ৩২৮ ভোট। বিচারকরা তাদের দিকে ৩৯ নম্বর। দর্শকদের ভোটের গড় হিসেবে পেয়েছেন ৬৩ নম্বর। দর্শকদের ভোটে রাজিবের চেয়ে বিউটি এগিয়ে থাকলেও বিচারকদের নম্বরের কারণে তাকে টপকে যান রাজিব। (ভোরের কাগজ ২৩ ডিসেম্বর ০৫)
উল্লেখ্য পুরো প্রক্রিয়াটি চলে প্রায় ৭ মাস যাবত। এতে শুধু ৪০ হাজার প্রতিযোগীই নয় বরং তাদের পরিবার শুভাকাঙ্খী এবং দর্শক শ্রোতাসহ এর সার্থে সম্পৃক্ত হয় লক্ষ লক্ষ লোক। এবং শেষ দিকে এসে এই গণসম্পৃক্ততা আরো ব্যাপক ও নতুন মাত্রা পায়। পত্রিকার ভাষায় উল্লিখিত রিপের্ট থেকে যা প্রতিভাত হয় যে, গানের পক্ষে ৭ লাখ ৮৫ হাজার + ৩ লাখ ১৩ হাজার + ৩ লাখ ২০ হাজার অর্থাৎ সর্বমোট ১৪ লাখেরও বেশি ভোট আসে ক্লোজআপ ওয়ান শীর্ষক প্রতিযোগিতার জন্য।
এখানে উল্লেখ্য, একই সাথে কয়েক কোটি দর্শক গানের অনুষ্ঠান দেখছেন এবং লক্ষ লক্ষ লোক ভোট দিচ্ছেন, এসএমএস করছেন বাংলাদেশে এরূপ ঘটনা এই প্রথম।
অর্থাৎ এ প্রক্রিয়ার দ্বারা পুরো জনগোষ্ঠীকে সাত মাস যাবত অনেক গভীরভাবে ও ক্রমাগতভাবে গান-বাজনার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
আসলে শুধু গান-বাজনা নয় বরং গান-বাজনার প্রতিযোগীতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়ানো হয়েছে।
কারণ শুধু গান-বাজনা তো এমনিতেই বহু আগ থেকেই অনেকই হয়ে আসছে।
কিন্তু এই ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ এই প্রতিযোগিতা এক্ষেত্রে এটা একটা সুক্ষ্ম ও গভীর বিশেষ যড়যন্ত্র। কারণ এই প্রতিযোগীতার ফলে কৃষককন্যা বিউটি থেকে আরম্ভ করে গ্রাম্য গৃহবধু রেহানা সবাই রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছেন। গানের মাতামাতির নামে তারা ধর্ম পরিবার সব কিছুর শৃঙ্খল ভেঙ্গেছেন। ইসলামের আলোকে মুসলমানের মাঝে গান-বাজনার প্রতি যে অনীহা, বীতশ্রদ্ধভাব বা ধর্মভীতি কাজ করত এ প্রতিযোগীতা তা চরমভাবে উপরে ফেলে উল্টো গানের গনজোয়ার তৈরি করেছে। হাজার হাজার প্রখ্যাত (?) শিল্পী দিয়ে হাজার হাজার স্থানে গান করিয়ে সবগুলো মিডিয়াতে সারাক্ষন গান প্রচার করেও জনমনে তেমন প্রভাব ব্যাপক অংশগ্রহণ, চর্চার আমেজ, চেতনা বা সম্পৃক্ততা তৈরি করা যেতনা
যতটা হয়েছে তথাকথিত এই ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগীতা তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা দ্বারা। এর দ্বারা পুরো বাংলাদেশকেই যেন একটা রঙ্গমঞ্চ বানিয়ে ফেলা হয়েছে। তাও শুধু একদিনের জন্য নয় পুরো সাত মাসের জন্য। অথচ এদেশের প্রায় ৮৭ ভাগ লোক মুসলমান। যাদের ধর্ম ইসলাম। আর ইসলামের শত্রু ইবলিস। যার আযান হচ্ছে গান।
গান মুসলমানের অন্তরে তেমন নেফাকী তৈরি করে যেমন পানি ফসলের মধ্যে সজীবতা আনে।
উল্লেখ্য ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ এই ঘৃন্য প্রতিযোগিতা শুধু একবারের জন্যই হয়নি। এবারও আগস্টে হয়েছে তাদের একই প্রক্রিয়া।
মূলতঃ এটা একটা গভীর ইহুদী ষড়যন্ত্র। প্রথমে পাশ্ববর্তী ইন্ডিয়ায় ইন্ডিয়ান আইডল করে গানের প্রতিযোগীতার একটা বিশেষ প্রবণতা ও প্লট তৈরি হলো।
এরপর তাদের দ্বারা বাংলাদেশে কনসার্ট করিয়ে ইন্ডিয়ানদের চেয়ে ঢের বেশি মাতামাতি করানো হল। অর্থাৎ বাংলাদেশের একটা পটভূমিকা তৈরি করানো হলো।
এরপর একই আঙ্গিকে দেয়া হলো “ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ” প্রতিযোগিতা। আর এতে যে শুধু কোটি কোটি দর্শক এই প্রতিযোগীতা উপভোগ করেছে লক্ষ লক্ষ দর্শক এসএমএস করেছে তাই নয়
বরং এর দ্বারা ইহুদীদের তথা বিধর্মীদের সবচেয়ে বড় যে অর্জন গান-বাজনার প্রতি সাধারন ধর্মপ্রাণদের যে জড়তা ছিল সেটা তারা কাটিয়ে উঠতে বিশেষ সফল হয়েছে।
শুধু তাই নয়, এ ব্যাপারে প্রতিযোগীতায় নামতে জনগণকে বিশেষ উৎসাহিত করেছে যার কারণে জনগণ এখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ প্রতিযোগিতায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয় অনাগত কালের জন্য নামতে ব্রতী হয়েছে।
এখন ঘরে ঘরে হারমোনিয়াম উঠবে সুরের ঢেউ ছড়াবে এমনকি সে ঢেউয়ে পারিবারিক, সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙ্গে অনাচার আর পাপাচারের বন্যা বইয়ে যাবে। ইন্ডিয়ান আইডলের জন্মভূমি ইন্ডিয়ায় খুন-ধর্ষণ রাহাজানির চিত্রটা এক্ষেত্রে বিবেচনা করা অনিবার্য ও প্রাসঙ্গিক বটে।
প্রসঙ্গতঃ ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতা তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ যে আসলে সে পাপাচারে আর অনাচারের উম্মুক্ত জোয়ারে পথ খুঁজছে এবং বাংলাদেশকে যে সেদিকেই ধাবিত করছে তা না বললেও চলে।
আর এক্ষেত্রে তাদের পূর্ণমাত্রায় মদদ দিচ্ছে ইবলিস। কারণ, গান ইবলিসের আযান, গায়কী ইবলিসের কণ্ঠ। আর তার মাধ্যম হচ্ছে ইহুদী প্রটোকল। যার বাস্তবতা দানকারী হিন্দুরা।
প্রসঙ্গতঃ এদেশে ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগীতার প্রবর্তনকারী ইউনিলিভারের চেয়ারম্যান সঞ্জীব মেহতা চৌধুরী যে একজন হিন্দু সেটাও এখানে উল্লেখ্য।
(ইনশআল্লাহ চলবে)
-মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, ঢাকা।
বিৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বিৃটিশ ভূমিকা-১৫