“ক্ষুদ্র ধর্মব্যবসায়ী ও মুনাফিকদের সাথে আঁতাত মূলধারার বৃহৎ ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীকেই ক্ষুদ্ধ ও হতাশ করবে”

সংখ্যা: ১৬২তম সংখ্যা | বিভাগ:

“আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। এদেশের শোষিত গণমানুষের মুক্তি চাই।” বঙ্গবন্ধু শেখ ছাহেবের এ শ্লোগান সর্বজনবিদিত। বঙ্গবন্ধু তার এ উক্তির পক্ষে কতটুকু আন্তরিক ছিলেন সে বিতর্ক এ লেখার প্রতিপাদ্য নয়। তবে যেনোতেনোভাবে ক্ষমতা দখল বা লাভই যে কাঙ্খিত ও বাঞ্ছিতও নয় এবং তা যে বঙ্গবন্ধুরও পথিকৃত নয় সে বুলন্দ আওয়াজ উপরোক্ত বিবৃতিতে সার্থকভাবে প্রতিফলিত।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক দাবীদাররা আজ সে কথা ভুলেছেন। সে আদর্শ ও ন্যায়বোধ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন।

যেনোতেনোভাবে ক্ষমতা দখল করা, ধর্মের নামে স্বার্থ হাছিল করা, কুখ্যাত রাজাকার আল বদর তথা ধর্মব্যবসায়ীদের বৈশিষ্ট্য। আর ধর্মব্যবসায়ীদেরকে মুনাফিকরূপে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ ছাহেব। তার ভাষায়,

“আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে আমরা ইসলামে বিশ্বাসী নই। এ কথার জবাবে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য লেবেল সর্বহ ইসলামে আমরা বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামের। আমাদের ইসলাম

– হযরত রসূলে করীম (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইসলাম, যে ইসলাম জগৎবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের আমোঘ মন্ত্র।

– ইসলামের প্রবক্তা সেজে ……. যারা অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, বঞ্চনার  পৃষ্ঠপোষকতা করে এসেছেন, আমাদের সংগ্রাম সেই মোনাফেকদেরই বিরুদ্ধে। যে দেশের শতকরা ৯৫ জনই মুসলমান সেদেশে ইসলাম বিরোধী আইন পাসের কথা ভাবতে পারেন তাঁরাই, ইসলামকে যারা ব্যবহার করেন দুনিয়াটা ফারস্থা করে তোলার কাজে।

১৯৭০ সালের নভেম্বত্বে অর্থাৎ আজ থেকে ছত্রিশ বছর আগে সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বেতার-টেলিভিশনে আওয়ামী লীগের নীতিমালা বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন কথাগুলো।

১০ জানুয়ারী ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানে বন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে পদার্পন করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিশাল সমাবেশে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন- “বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। ইসলামের অবমাননা আমি চাই না। আমি স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিতে চাই যে, আমাদের দেশ হবে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক দেশ। এ দেশের কৃষক-শ্রেমিক, হিন্দু মুসলমান সবাই সুখে থাকবে, শান্তিতে থাকবে।”

এখানেই শেষ নয়। তার কিছুদিন পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গণপরিষদে এক ভাষণে ঘোষণা করেছিলেন- “বাংলাদেশ হবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান মুসলমানের ধর্ম পালন করবে। হিন্দু তার ধর্ম পালন করবে। খ্রীষ্টান তার ধর্ম পালন করবে। বৌদ্ধও তার নিজের ধর্ম পালন করবে। এ মাটিতে ধর্মহীনতা নাই, ধর্মনিরপেক্ষতা আছে। এর একটা মানে আছে। এখানে ধর্মের নামে

ব্যবসা চলবে না। ধর্মের নামে মানুষকে লুট করে খাওয়া চলবে না।

ধর্মের নামে রাজনীতি করে রাজাকার, আল-বদর পয়দা করা বাংলার বুকে আর চলবে না।

গণপরিষদে দেশের সংবিধানের উপর ভাষণ দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনভাবে ধর্মকর্ম পালনে জনগণের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধানে তাঁর সরকারের দৃঢ় সংকল্পের কথা ব্যক্ত করতে গিয়ে ৪ঠা অক্টোবর ১৯৭২ আবারো ঘোষণা করেন, “ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মকর্ম করার অধিকার থাকবে। আমরা আইন করে ধর্মকে বন্ধ করতে চাইনা এবং করব না। ধর্মনিরপেক্ষতার মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের বাধা দেয়ার ক্ষমতা এই রাষ্ট্রে কারো নাই। হিন্দুরা তাদের ধর্ম পালন করবে, কারো বাধা দেয়ার ক্ষমতা নেই। বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবে, খ্রীষ্টান তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের কেউ বাধা দিতে পারবে না। আমাদের শুধু আপত্তি হল এই যে, ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে না।

২৫ বছর আমরা দেখেছি, ধর্মের নামে জুয়াচুরি, ধর্মের নামে শোষণ,  ধর্মের নামে বেঈমানী, ধর্মের নামে অত্যাচার, খুন, ব্যভিচার এই বাংলাদেশের মাটিতে এসব চলছে।

ধর্ম অতি পবিত্র জিনিস। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না।  যদি কেউ বলে যে, ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা হয়েছে, আমি বলব

ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা হয়নি। সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মীয়  অধিকার রক্ষা করার ব্যবস্থা করছি।”

৮ দিন পরে ১২ অক্টোবর (১৯৭২) গণপরিষদে আবারো ভাষণদান প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যাদান প্রসঙ্গে সেই একই ভাষায় তাঁর সরকারের সদিচ্ছার কথা ঘোষণা করে বলেন- “ধর্মনিরপেক্ষতার মানে ধর্মহীনতা নয়। হিন্দু তার ধর্ম পালন করবে, মুসলমান তার ধর্ম পালন করবে, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ যে যার ধর্ম পালন করবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। বাংলার মানুষ এটা চায় না।

রাজনৈতিক কারণে ধর্মকে ব্যবহার করা যাবে না। যদি কেউ ব্যবহার করে, তাহলে বাংলার মানুষ তাকে প্রত্যাখ্যান করবে, এ বিশ্বাস  আমি করি।” বঙ্গবন্ধু শেখ ছাহেবের সে বিশ্বাসকে তার সৈনিকরা কতটুকু  রক্ষা করেছেন তা আজকে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু বিবৃত মোনাফেক, রাজাকার আল-বদর তথা ধর্মব্যবসায়ী ও জঙ্গীদের সাথে তারা যে ৫ দফা চুক্তি করেছেন তা একটি ক্ষুদ্র ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সাথে আঁতাত ছাড়া কিছুই নয়। এদেশের সাধারণ মানুষ নিজেরা নিবেদিতভাবে ধর্ম পালন না করলেও ধর্মীয় বিচারে সঠিক ধর্মের আদলেই মূল্যায়ন করতে চায়। অতীতের যে কোন সময়ের তাদের এ চাহিদাটা এখন যেমন অনেক বেশী তার পাশাপাশি সে ক্ষেত্রে তাদের পর্যবেক্ষন ক্ষমতা ও অভিজ্ঞতার ঝুলিও অনেক বেশী ভারী। সে কারণেই ধর্মব্যবসায়ীদের এবারের এ চুক্তি ছিল নিতান্তই অর্থহীন ও ভিত্তিহীন, পাশাপাশি ধর্মের নামে অধর্মও বটে।

-মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, ঢাকা।

ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২

কোকাকোলা ও অন্যান্য কোমল পানীয় সম্পর্কে উন্মোচিত সত্য-১৮

‘ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’- একটি সূক্ষ্ম ও গভীর ষড়যন্ত্রের প্রক্রিয়া অথচ নিশ্চুপ তথাকথিত খতীব, মহিউদ্দীন, আমিনী ও শাইখুল হাদীছ গং তথা তাবত ধর্মব্যবসায়ীরা- (১)

মওদুদীর নীতি থেকেও যারা পথভ্রষ্ট সেই জামাত- জামাতীদের জন্যও ভয়ঙ্কর মুনাফিক॥ আর সাধারণের জন্য তো বলারই অপেক্ষা রাখেনা

প্রসঙ্গঃ আমেরিকায় ইহুদী প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ- ২