খতীবুল আম্বিয়া, খতীবুল উমাম, খতীবুল ওয়াফিদীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক আদেশ রাস্তার হক আদায় প্রসঙ্গে

সংখ্যা: ১২৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة.

অর্থঃ- “উত্তম আদর্শ স্বরূপ, তোমাদের জন্য তোমাদের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।”(সূরা আহযাব/২১)

 প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে, প্রতি পদক্ষেপে অনুসরণীয়-অনুকরণীয় হলেন আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের কার্যাবলী সম্পাদন করতে হলে রাস্তায় চলাচল করা একটি অপরিহার্য বিষয়। রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রেও আল্লাহ্ পাক এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে দিয়েছেন সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা।

এ প্রসঙ্গে হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা রাস্তায় বসে থাকার ব্যাপারে সর্তক থাক! তখন হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আল্লাহ পাক -এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আরজু করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের কথার্বাতা বলার জন্য রাস্তায় না বসে উপায় নেই। তখন আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন- একান্তই যদি তোমাদেরকে রাস্তায় বসতেই হয়, তাহলে তোমরা রাস্তার হক্ব আদায় করে বসবে। উপস্থিত ছাহাবায়ে কিরাম রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পুনরায় আরজ করলেন- রাস্তার হক্ব কি? আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন; হারাম বিষয় বস্তুর প্রতি দৃষ্টি দান থেকে চক্ষুকে অবনত রাখা, কষ্টদান থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব প্রদান করা, নেক আমলের আদেশ দেয়া এবং বদ আমল থেকে বিরত রাখা। (মুসলিম শরীফ)

এছাড়া রাস্তায় বিদ্যমান বিভিন্ন কষ্টকর বস্তু সরিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “এমন এক ব্যক্তি যে একটি রাস্তা দিয়ে গমন করছিলো। এমন সময় সে রাস্তার উপর একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখতে পেয়ে তা সরিয়ে দিয়েছিলো। তখন আল্লাহ্ পাক তাকে পুরস্কৃত করলেন এবং ক্ষমা করে দিলেন।” (সুবহানাল্লাহ) (বুখারী শরীফ)

হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে অন্য হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন! ঈমানের সত্তরেরও অধিক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করাও ঈমানের একটি ক্ষুদ্রতম শাখা।”(বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ)

অন্য হাদীছ শরীফে হযরত আবুযর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন; আমার নিকট আমার উম্মতের ভাল এবং মন্দ সমুদয় আমলের ফিরিস্তি পেশ করা হয়েছিল। আমি ভাল কাজ সমূহের তালিকার মধ্যে রাস্তা থেকে অপসারিত কষ্টকর বস্তুকেও দেখতে পেয়েছি।”  (মুসলিম শরীফ, ইবনে মাযাহ শরীফ)

এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘আদাবুল মুফরাদ’ কিতাবে বর্ণনা করেন, মুসতানীর ইবনে আখদার ইবনে মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি একদিন মাকাল ইবনে ইয়াসারের সাথে পথ চলছিলাম। আমরা একটি কষ্ট দায়ক বস্তুর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি তা সরিয়ে দেন। অতঃপর আমিও তাঁর মত অন্য একটি কষ্টদায়ক বস্তু দেখতে পেয়ে তা উঠিয়ে নিয়ে সরিয়ে দিলাম। তখন তিনি আমার হাত ধরে বললেনঃ হে আখদারের পুত্র! তুমি কেন এ কাজ করতে যাচ্ছ? আমি বললাম! ওহে পিতৃব্য! আমি আপনাকে এ কাজ করতে দেখে আমিও অনুরূপ কাজ করেছি। তখন তিনি বললেন, আমি আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মুসলমানদের চলার পথ থেকে একটি কষ্টকর বস্তু সরিয়ে নিবে, তার জন্য লিখিত হবে একটি সওয়াব। আর যে ব্যক্তির একটি সওয়াবও গৃহিত হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অনুরূপ বর্ণনা হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকেও বর্ণিত রয়েছে।” (তিবরানী শরীফ, আল কাবীর)

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “কোন এক স্থানে রাস্তায় একটি বৃক্ষ ছিলো এতে মানুষের চলাচলের অসুবিধা হতো। তখন এক ব্যক্তি রাস্তা থেকে তা উপড়িয়ে সরিয়ে নিল। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি দেখতে পেলাম যে, ঐ ব্যক্তি জান্নাতে সেই বৃক্ষের ছায়াতলে পায়চারী করছে।” (সুবহানাল্লাহ) (মুসনাদে আহমদ, আবু ইয়ালা)

        উপরোক্ত হাদীছ শরীফ ছাড়াও আরো বহু বর্ণনায় আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চলাচলের রাস্তার প্রতি বিশেষ হক্বের কথা ব্যক্ত করেছেন এবং এ হক্ব পালনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। জীবনের সর্বক্ষেত্রে সুন্নতের আমল করতে হলে চলাচলের রাস্তার ক্ষেত্রেও আমাদেরকে আলোচ্য নিবন্ধে প্রদত্ত সুন্নতানুযায়ী আমল করার কোশেশ করতে হবে।

আল্লাহ্ পাক যেন মুহ্ইস্ সুন্নাহ্ মামদুহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর মুবারক ফায়েজ-তাওয়াজ্জুহ্র বরকতে আমাদের সকলকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে সুন্নত অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করেন। (আমীন)

-ছূফী মুনযির মুহম্মদ গিয়াসুদ্দীন

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া – (১৮) প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ

আউয়ালু শাফি’, আউয়ালু মুশাফ্ফা’, আউয়ালু মাঁই ইউহাররিকু বাবাল জান্নাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই জান্নাতের মালিক

ছাহিবুল কাওছার, ছাহিবুল  মাহ্শার, ছাহিবুল  মাক্বামিল  মাহমূদ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মত মানুষ নন

ছাহিবুল আয়াত, ছাহিবুল হাদীছ, ছাহিবুল বুরহান, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ শরীফ ব্যতীত কালামুল্লাহ শরীফ বুঝা এবং আমল করা সম্ভব নয়

ছাহিবুল মদীনাহ, ছাহিবুল মক্কাহ, ছাহিবুল হাত্বীম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত ইলমের অধিকারী ॥ সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখন তাঁর মু’জিযা ॥ তিনি মুয়াল্লিম হিসেবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু  তায়ালা আনহুমগণকে আক্ষরিক জ্ঞান শিক্ষা দিতেন